Skip to main content

Full text of "Tarunima Ed. 2nd"

See other formats


স্্স্লক্ব্িল। 


ভরুণিম। 


শ্ীদেবপ্রসাদ ঘোষ এম এ. বি. এল্‌ 
প্রণীও 


€দভ্বিতীর সংক্ষরণ ) 


স্বদেশবাণী ভবন 
&৯বি আচাধ্য প্রফুলচন্ত্র রোড 
কলিকাতা-৯ 


১৩৬৩ 


প্রকাশক 

শ্রীঅসমঞ্জ ঘ্বোন্ব 

ত্বদেশবাণী ভব 

€৯বি আচাব্য প্রফুললচন্দর বোড 
কলিকাতা-৯ 


মুলত জাড়ে চাবি টাক? মত্ত 


মুদ্রাকর £ 

শ্রীচরিনারায়ণ দে 

শ্রীগোপাল প্রিন্টিং ওয়ার্ক স্‌ 
২৫।১এশ্কালিদাস সিংহ লেন 
কল্িকাতিা-৯ 


ভূমিক! 


পস্ছি 


এই গ্রন্থখানি কতিপয় প্রবন্ধের সমাবেশ মাত্র। তন্মধ্যে 
কয়েকটি কোন কোন সভায় সভাপতির অভিভাষণ-বূপে 
পঠিত হইয়াছিল। 

প্রথম প্রবন্ধটির নামানুসারে গ্রন্থখানির নামকরণ করা 
হইয়াছে । তাছাড়া আরও একটু কারণ আছে। বর্তমানে 
আমাদের দেশে নানাদিকে নানাভাবে যে “তরুণ”-রোগের 
সংক্রামকতা। পরিলক্ষিত হইতেছে, এই প্রবন্ধ গুলিতে বিভিন্ন 
দিক্‌ দিয়া-_বিশেষতঃ সাহিত্য ও শিক্ষা ও আচার-বাবহারের 
দিক্‌ দিয়া_সেই রোগের লক্ষণ নির্দেশের সামান্ কিছু চেষ্টা 
কর গিয়াছে । কোন কোন স্থলে হয়ত প্রসঙ্গক্রমে এই 
আলোচনা আসিয়া পড়িয়াছে | গ্রন্থখানির নামের ইহাই 
দ্বিতীয় কার্ণ। 


1%০ 


ভাষাতত্বে 15175090107 0৫ ০7৭5 বলিয়া একটা ব্যাপার, 
বণিত আছে । নানা কারণে মাঝে মাঝে শব্দার্থের অধঃপতন 
ঘটিয়া৷ থাকে । আমাদের “আধুনিকত।”-গ্রস্ত “প্রগতি”-যুগের 
বাঙ্গালাতে “তরুণ” শব্দটর এই প্রকার অধঃপতন ঘটিয়াছে। 
“তরুণ” শবে এখন আর টাটকা তাজা যৌবনের নিভাঁক 
পৌরুষ ও অটুট বীর্যের স্চনা করে না, নবীন জীবনের স্বতঃ- 
্ুর্ত স্বচ্ছন্দ সতেজ অভিব্যক্তির দ্যোতন। করে না : শুধু একটা! 
কৃত্রিম নধর চুল লালায়িত ভঙ্গিমার আবেশের স্থষ্টি করে, 
কিংবা একট নিস্তেজ নিববীধ্য ক্রান্ত-শ্রান্ত ক্ষয়-শিথিল অকাল- 
বাদ্ধক্যের ব্যথাতুর করুণ শ্লানিমার ব্যঞ্জম্না করে মাত্র । হালের 
বাঙ্গালী সমাজে “তরুণিমা” একটা 1201010) 2138217310 
ব্যাধিগ্রস্ততাতে পর্যাবসিত হইয়াছে ₹ এবং এই ব্যাধির লক্ষণ 
সমাজের নানাবিভাগে--সাহিতো, শিলে। শিক্ষায়, রাষ্ত্ীয় 
আন্দোলনে-_ প্রায় সব্বত্রই প্রকট হইয়াছে । প্রকৃত যে তারুণ্য 
-স্সুস্থ সবল যে তারুণা-_যে তারুণ্যের লক্ষণ খজুতা দৃঢ়তা 
নিঃশঙ্কতা, যে তারুণ্যের পরিচয় আদর্শ-নিষ্ঠায়, অদম্য উৎসাহে, 
একাগ্র সাধনায়--আমাদের দেশে ও সমাজে সেই প্রকৃত 
তারুণ্যেরই একান্ত অভাব ঘটিয়াছে, এবং পুনরায় ইহার 
বিকাশ ন। করিতে পারিলে আমাদের ভবিষ্যৎ,অন্ধকা রাচ্ছন্ন । 

এই প্রসঙ্গে তথাকথিত “আধুনিকত।” ও “তারুণ্য” সম্বন্ধে 
বিখ্যাত জান্মীণ মনীষী 1%9ফ 0:৭75-এর বজ্রনিত্ধোষ-বাণী 
স্বতঃই মনে উদিত হয় £ 


1৩/০ 


“1 01909516101 6০ 128105 210 11010 002% 
0217106 25 [01155 2:00 21361002620) 00০52 400006]]- 
155? 01:26210. 60 12101592170 চ০0000. 4১10 111-201920 
01101015100 1025 2:00091]5 10261 021051) 05 00212: 11106) 
৪200 2031911951525 0106117 500001 ৮7100 00105021) 
11009, ৬৬1)96 011200511)055 1 4১5 16 21 200: ঠা 
[182 ৮7010 ০0]9. 021211০ ০0615 0138170 €0০ ড9020 
“0005--01715 555920619] 70610201811] 0186 19 
01901701175 2187. 10০51, 01215 17066 01 02 09৮৮2 2100 
176 51011175- 8180 0081550000 16 11060 2 [91002 01 
12701092901, 200 1175016171705 00009 100৮72%21 15 
01780 010650 47000617015 0252102177665 812 1706 01315 
[06 5০010, ০0৫০৮ 01026 0055 212 11019 ৪21011০. 
61112 15 01061 59121072010  081001701019010170 0 0100 
৮0110 2100 110; 5210116921০ [10611 10210011755, 
001ড6111176) 1210755 210.0 01596910105 ; 8210116 0611 
10001621006 91012601625, 200 00611 0191059 101 ৪1] 
6102 56100018175 0: 2201870561010. 70 ০92 ৮০05 19 (0 
[00০ ; 60 02 50006 15 €0 1052 51001)15 2100 1090 
12115; €0 1702 50010 15 60 610106 11) 01005 1128161 
৪80 50515059800 10. 0056 06 2]1 10017791 0211)55 
210 0 01১2 10105 06 009 811 210 01) 02960165 11) 016 


॥৩ 


£855 5 2100 01 01552 00911055066 15 1000 0136 
€০ ০2 2866 ভা 2100106 0252 50100-5100019 0185 
06909.5 90 05521219125, 

50126 2000185 (1)650 0250172191055 11 11021900105 
10711510210 19911700106 17050 1) 120216 ড6215 00206 
11060 20201010205 00101761006, 100 21211250120 
05 10000101015 2.0.00110215 2.5 01990975 05. 106৬৮ 01 
2170 1)61:9105 0: 0172 ০0101175 02101001105. 

৮৬/০077157 1:9501776215 926 01215015 ]া 
91000516101. (0 01)052 10152191012 17001052175 ৮9100 52126 
[10010 0731: 0221250 ড৮9601-৬50105, 1) 10101 00 
27019100106 10017000101. 1[170 %05000100 800 
40009012101) [00 400050595 200. 40000 0£ 0059০ 
1211055 8172 3706 0019. ৬৬০ 178৮2 11000110011) 
50100100017 100 €100100.1010% 291) 01 9911 
11000150106 ; ৮৮2 ৬151) 000 01], 101225 ৮7151) 00 
010৮1) 0015210090555 10 010 00150109015 ; ০ 
৮৮15) 609 50121700007, 270 20010 0015010051395. 
1725 ৬1517 101 2ড851৬2. 10020018 200. 0201012 : ৮৩ 
1519 101 20021001005 01955196100 220. 1000ড19009. 
7102 01016201012, 0৮ 1107 00০ 00000085778 172 


12005101220 2120 015611750151120 0177 11000956015 


1/০ 


০8111776 039105015295 40000617)05 10050 102 019 : 
৬/106৮০1: 7015901095 9052002 0 0150)]91100 15 21 
০18010% 01 00109512597 200 ড1700৬1 50191911995 115 
“1, 15 21 210210 €0 ৪001915, 

45001665195 101 165 01:5 701:210152 102121010010115 
10৬2 810 08090105101 5017-580171902 ) 810 70057695 
15 013০ 209০6 01 21 ০০1: 10015 11001005 50- 
10696101001 00011002950 11) 10210, 0210 2৮০1 (21501 
591-530191]0, 21 ০৬০]: 15212 32752 ০0 00 210. 
12500751011, 7016 2009110100901010 101 0101) 6 
৪10 50015106 15 0 00০ 10051000610 0£ 006 
81019501625,” (1৬8৯ 02070 : 1962676121107), 

এই বাণী আমাদের ব্যাধিগ্রন্ত বর্ধমান সমাজ-শরীরে সপ্তীবনী 
শক্তির সঞ্চার করুক-__ইহাই প্রার্থনা । 

এই সামান্য গ্রন্থখানি যদি এই ব্যাধি ও তাহার প্রতিকার 
সন্বন্ধে আমার দেশবাসীকে সঙ্গাগ করিতে কিঞ্চিন্মাত্রও সহ'যত 
করে, তবেই শ্রম সফল জবান করিব। অলমতিবিস্তরেণ। ইতি 


১৯শে বৈশাখ, ১৩৪৬ ীদেবপ্রসাদ ঘোষ 


বৈশাখী পৃণিম। | 
কলিকাতা 


দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা 


বিশ বৎসরের উপর হইল আমার কয়েকটি সাময়িক প্রবন্ধ 
ও বক্তৃতা প্রধানতঃ শিক্ষা, সাহিত্য ও সমাজ-বিষয়ক-_ 
“তরুণিমা” নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হইয়াছিল। সে 
গ্রন্থখানি এখন আর ছাঁপা। নাই । 

সেই প্রবন্ধ ও বক্ুতাগুলি পুনমুর্্রিত করা হইল ; এবং 
তৎসঙ্গে আরও কয়েকটি প্রবন্ধ ও বন্তৃতা এই সংস্করণে সংযোজিত 
হইল । ফলে, গ্রন্থের আকার দ্বিগুনের উপর বাভিয়া গিয়াছে । 

গ্রন্থখানির এই পরিবদ্ধিত সংস্করণের প্রতি দেশবাসীর 
পুর্ের ন্যায় দৃষ্টি আকৃষ্ট হইলেই আনন্দিত হইব। ইতি 

রাখী পুণিম। 


২২শে আাবণ) ১৩৬৭ শ্ীদেব প্রসার ঘোৰ 
কলিকাত 


সুচীপত্র 


বিষয় 

তরুণিম। 

লেখা ও পড়। 

বাঙ্গালীর পত্রিকা 
বঙ্গসাহিত্যে অব্বাচীন যুগ 
বহ্কিমচন্দ্র ও বাঙ্গালার নবযুগ 
বাঙ্গালায় লোকশিক্ষা 
রাষ্ট্রভাষা-সমস্থা ৮১৭ ৮৮৭ 
বাঙ্গাল। ভাষার রূপ 

বৃহণ্ডর বঙ্গ 

সাহিত্যে প্রলাপ ও বিলাপ 
ছিন্ন-বঙ্গে শিক্ষা-সঙ্কট 
বিবেক-বুদ্ধি 


শ্ভ্ভবকান্ি মা 


তরুণিমা 


ভাত্র মাসের প্রায় শেষ। বহুদিন অনাবৃষ্টির পর গুমট 
কাটিয়া গিয়া কয়েকদিন হইল ধারাবর্ণ আরম্ভ হইয়াছে । 
আজ সারাদিনই মেঘৈমেছুরমন্বরম হইয়া রহিয়াছে, এবং 
ক্ষণে ক্ষণেই আকাশ ভাঙ্গিয়া এক এক পশল। বৃষ্টি হইয়! 
যাইতেছে । এখন ঘোর সন্ধ্যা। সারাদিন কাজ কন্মের 
খাটুনীর পরে চুপচাপ করিয়। বৈঠকখানায় বসিয়া আছি। এখন 
আর জোর বর্ধা নাই, শুধু টিপ টিপ. করিয়া একটু একটু 
পড়িতেছে। প্রাত্যহিক সান্ধ্ভ্রমণে বাহির হইতেও আর ইচ্ছা! 
হইতেছে না। কি করিয়া যে সময়টা কাটাই তাহাই বসিয়া 
বসিয়া ভাবিতেছি | চারিদিকে যেন একট অবসন্ন আচ্ছন্ন ভাব। 


৯১. 


ক ভরুণিম। 


সে তাঁবের কতকট ছোয়াচ যে মনেও ন। ল্লাগিয়াছে এমন নয় । 
বাড়ীতেও কোন কোলাহল নাই--সব নিঃঝুম । গৃহিণী বর্ধারস্তের 
গোড়াতেই পিত্রালয়ে প্রস্থান করিঘাছেন_ বোধ করি বিরহরস 
নিবিড়ভাবে অনুভব করিবার নিমিত্ত । সুতরাং কবির বর্ণনা, 
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর 
শুন্য মন্দির মোর, 

একেবারে অক্ষরে অক্ষরে আমার বন্তনান অবস্থার উপরে খাটিয়া 
গিয়াছে । এই মেঘমন্তর বধামন্দ্রিত সন্ধ্যায় একাকী বসিয় 
বসিয়া! কতকটা যে তন্দ্রাতুর হইয়া আসিতেছিলাম তাহ স্বীকার 
না করিলে বোধ করি সভোর অপলাপ হইবে | 

হঠাৎ এক চমকে এই তন্দ্র: ভাক্িয়া দিয়া, এই টিপ টিপ. 
বর্ধার মধো, আমাদের বাড়ীখানিব স্তাংস্যোতে গলির স্চিভেচ্য 
অন্ধকার ভেদ করিয়া, এক বন্ধবরের আবিগাব। আমি ত 
অবাক্‌। এমন বর্ধা-কাদার মনো আবার মানুষ বাহির হয় ? সিক্ত 
ছত্রখানি বৈঠকখান। ঘরের এক কোণে রাখিয়া দিয়! বন্ধু বিনা 
উপক্রমণিকাতেই প্রশ্ন করিলেন, "ভ্ুনি যে বসে বসে ঢুল্ছ 
বড়? বিমুচ্ছ কেন? আফিম টাফিম ধরেছ নাকি ?” 

আমি বলিলাম, "আর আফিম পরতে হবে কেন? যা! 
2208০] হয়েছে, এতেই যথেস্টু আফিতমর কাজ করে । কোন 
ভদ্রলোকে এই সময়ে রাস্তায় বেরোয় নাকি ? আর ক।জকম্মও 
হাতে কিছু নেই, খবরের কাগজেও ছুচারবার চোখ বুলিয়ে 
দেখলুম__সেই পুরোণো থোড বড়ি খাড়।৷ আর খাড়া বড়ি খোড়, 


ভক্ষণিম। 


যা তিন মাস থেকে পড়ে আসছি--সেই আদন্দিস্‌ আব্বার. 
আর রোম, মুসোলিনির পায়তাড়া কৰা আর রাস্‌ তাফারির 
কান্নাকাটি, আর জেনিভার স্বয়ংসিদ্ধ কন্তাদের অফুরন্ত কচায়ন। 
এ পড়ে পড়ে ঘেন্ন। ধরে গেছে । তাই খবরের কাগজে পাথর 
চাঁপা দিয়ে একটু যোগনিত্র। অভ্যাস করছিলুম ।” 

বন্ধুবর অসহিষ্ণুভাবে বলিয়া উঠিলেন. “এ যোগনিত্রাই ত 
দেশটাকে খেলে। হেম কবি ঠিকই বলেছিলেন, ভারত 
শুধুই ঘুমায়ে রয়' । বলি, আদ্দিস্‌ আবাবা আর রাস্‌ তাফারির 
সমস্তা ভেবে ভেবে মাথা খারাপ না করে, ঘরের সামনে যে 
ভীষণ কাগণ্ডকারখানা হচ্ছে তার খবর রাখলেও ত পার ?” 

আমি বলিলাম, "ঘরের সামনে আবার কি এমন ভীষণ কাণ্ড 
ঘটল ?" 

বন্ধু বলিলেন, “শোন নি? বেশ লোক যা! হোক্‌! এই 
সেদিন জয়পুর থেকে গান্ধীর চেলা এক পণ্ডিত রামশন্্না 
কল্কাতা এসে উপস্থিত । তিনি পণ করেছেন, যেঃপধ্যন্ত ন! 
কালীঘাটে ম কালীর সামনে পাঠা বলি বন্ধ হবে, সে পর্যযস্ত 
তিনি অনাহারে থাকবেন । এই ভীষণ পণের কথ। শুনে 
কল্কাতাময় একটা হুলুস্ুলু পড়ে গেছে । জান না ?” 

আমি বলিলাম, “জানব কোথেকে ? আমি কি ছাই 
তোমাদের এলবাট হলের দৈনন্দিন মীটিংএ যাই; আর 
খবরের কাগজের ভেতরে পড়ি “্রেট্স্মান, তাতে ত কোন 
রামশন্মার টিকিটিও খুঁজে পাই নি। আমি তজানি পৃথিবীতে 


ভক্রণিম! 


এক রাঁমশন্মাই জন্মেছেন, ধারা বিচক্ষণতা প্রবাদে পরিণত 
হয়েছে 5 
ঘত হাসি তত কান্না, বলে গেছে রামশন্মা ।' 

তা তোমার এ রামশন্মাটি কে হে? শএ্রার চেহারাখান। 
কিরকম? আর নধর কচি তরুণ পাঠাসম্প্রদায়ের প্রতি তার 
এত সদয় করুণ ভাবই ব। হঠাৎ জেগেছে কেন যে তিনি খোদ 
মা কালীকে পরধস্ত নিরানিধাশী করে গান্ধীজীর চেলা বানাতে 
চান? ব্যাপারট! কি বল দেখি? এ কি শুধু কালীমাইজীকে 
শুদ্ধি করবার চেষ্টা, ন! শ্রেক জীবে দয় ? জীবে দয়াই যদি হয়, 
তবে কা'লীঘাটে হত্যা না দিয়ে উনি গিয়ে একবার ট্যাংরার 
কসাইখানায় গিয়ে অহিংসামন্ত্র প্রচার করুন না, যেখানে ইয়া 
ইয়া দাঁড়িওয়ালা পেশোয়ারী হাজারে হাজারে গরু মোষ ভেড়া 
পার করে দিচ্ছে ? হ্যা, সেখানে অহিংসা চালাতে পারলে বুঝি 
রামশশ্মা বটে | 

বন্ধু ঈষৎ বেজার হইয়া! বলিলেন, “ত। তুমি যত সব কথা 
বলে অতটা ত ভেবে দেখিনি ভাই। মোদ্দা কি জন্তে যে 
এমন একটা পণ করে বসলে, তা ঠিক আমিও বুঝতে 
পারছিনে । তবে হ্যা,. কি বলছিলে, চেহারা কেমন? তা! 
যাই বল, চেহারার জৌলুষ আছে। দিব্যি নধর কান্তি, চুল 
বাবরীর মত করে মাথার চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, ধবধবে 
ফর্সা চেহারা, বয়সেও নবীন, অর্থাৎ এক কথায়, আন্কোরা 
একখানি তরুণ ।” 


তক্রুণিস! 


এতক্ষণে কতকটা হালে পানি পাইয়া! আমি বলিলাম, 
“তাই বল, তরুণ ! তবে ত ব্যাপারট। অনেকটা পরিক্ষার হয়ে 
আসছে ভাই। তরুণ যদি, তবে সেট্যাংরার কসাইখানায় 
যাবে কেন? সে বড় 010528:০ জায়গ। । কোন তরুণকে কোন 
দিন কোন 059০ জায়গায় যেতে দেখেছ ? তাদের প্রধান 
কায়দাই হচ্ছে এই, যাহোক একটা নতুন কিছু করে 
লোকের চমক লাগান। এ যে সেই সাবেক দ্বিজু রায় গেয়ে 


গিয়েছিলেন না, 
“নতুন কিছু করো, একটা নতুন কিছু করে! 


যা হয় একট। করো-_কিছু রকম নতুনতরো । 

পাহাড় থেকে পড়ো, সমুক্দে দাও ডুব, 

মর্বেব, না হয় মর্কবে_-একট নতুন হবে খুব । 

নতুন রকম বাঁচো। কিংব। নতুন রকম মরো। 

_ নতুন কিছু করো”, একটা নতুন কিছু করো ।” 
- এটি একেবারে তরুণের হুবহু ৪1915170 । তবে কবি কিনা, 
তাই একটু বাড়িয়ে বলেছেন । কারণ, নতুন কিছু করতে হবে বলে 
যে বেঘোরে পড়ে সত্যি সত্যিই পৈত্রিক প্রাণ হারাতে হবে 
অথব! নেহাৎ খুঁচিয়ে ঘা করতে হবে, এমন কথা তরুণ শাস্ত্রে লেখে 
না । তাই দেখছ না, দিব্যি নিরাপদ্‌ কালীঘাটের মন্দির-প্রাঙ্গণে 
আগে থেকেই অনেক সভাসমিতি করে বিজ্ঞাপনাদি প্রচার 
করে- অর্থাৎ পুরোমাত্রায় গান্ধী-ষ্টাইলে আড়ম্বরটি করে-_ 
ঢ100615 £,00০৪ দিয়ে-__আ-রবীন্দ্র-হীরেন্দ্রনাথকে প্রকম্পিত 


৭ 


তরুশিসা 


করে--এই মহান অনশন-যজ্ঞ সুরু হল। ট্যাংরাঁয় এমনটি 
হলে হয়ত বা কসাইয়ের হাতের শাণিত খড়গা গো ছেড়ে 
ব্রাহ্মণের ঘাড়েই গিয়ে পড়ত। কালীঘাটের হালদারগো্গী 
আর যাই করুক নরবলি যে দেবে না, এট। একেবারে নিদ্ধারিত ৷ 
সুতরাং তরুণ অহিংসবীর সদয়হৃদয়দশিতপশুঘাত হয়ে কালী- 
ঘাটই আশ্রয় করেছেন, ট্যাংরায় যান নি।” 

বন্ধু বলিলেন, “তা ত যেন বুঝলুম। কিন্তু তুমি যা বললে 
তাতে পুরোপুরি সায় দিই কি করে? এই যে আমাদের তরুণ 
রামশন্মার উদয় হয়েছে, ইনি ত মরতে ভয় পান না । অবিশ্ঠি 
জবেহ হতে হয়ত রাজী নন, তবে না খেয়ে খেয়ে উপোষ 
করে করে নেহাত অহিংসভাবে মরতে এর ত খুবই উৎসাহ 
দেখ। যাচ্ছে । এর তুমি কি বল? 

আমি বলিলাম, “আমি ছাই আর কি বলব ? অবিশ্তি এ'র 
ইতিহাস ত আমি কিছু জানিনে, কাজেই আমার অবিশ্বাস 
হয়ত এর প্রতি কিছু অবিচার করছি। কিন্তু তুমি যাই বল্লে 
তরুণ “নদের নিমাই' প্যাটার্ণ চেহারা এবং রকমসকম, তাইত 
আমার মনে হচ্ছে যে মরবার মত অমন একট গগ্ভময় বিচ্ছিরি 
ব্যাপার কোন তরুণ হতেই দিতে পারে না। আর, তাছাড়৷ 
তুমি না বলছিলে যে এই নবীন সন্ন্যাসীটি আস্ত একটি 
গান্ধীর চেলা ? তা হলে এ মরবে কি করে? গান্ধী মহাত্মা 
স্বয়ং কতবার অনশন করেছেন, কিন্তু কোন বার মরেছেন 
দেখেছ ? 


তন্রলিস। 


“সেই গয্লার গল্প জান ত? মস্ত বড় নেমন্তন্ন । বাড়ীর কর্ত। 
গয়লার কাছে দৈএর বায়না দিয়েছেন। খাওয়াতে হবে অনেক 
লোককে, অথচ সম্তায় সারতে হবে। তাই গর়লার সঙ্গে কর্তা- 
বাবুর বন্দোবস্ত হল, “বেট, তুই বেশ করে জলো। দৈ দিবি, কিন্তু 
খেতে বসলে লোকের যখন হৈ চৈ করে উঠবে, দে ভারী খারাপ 
হয়েছে বলে, তখন আমি তোকে খুব বকে দেব। বুঝলি ? 
'আজ্দে কর্তা, এ আর বুঝিনি ? বলে গয়ল। ত চলে গেল এব: 
যথারীতি সজল দধি সরবরাহ করল । তখন দৈএর রকম দেখে 
সব লোক যেখানে খেতে বসেছে সেই সভার মধ্যে কর্তাবাবুর 
কি রাগ ! বলেন, “বেটা তুই করেছিস্‌ কি? এত করে পই পই 
করে তোকে বুঝিয়ে বললুম যে সভায় যেন আমার মান থাকে, 
এমন দৈ দিবি যে হাড়ি ওপ্টালেও ন। পড়ে । আর তুই কিনা 
দৈএর ভেতর পুকুর পুকুর জল ঢেলেছিস্‌। ঢোকের ভেতর 
আমার মাথা কাটা গেল। ছিঃ ছিঃ ছিঃ |, এই ন। বলে 
কর্তীবাবু দিলেন গয়লার গালে সটান এক থাঞ্গড় বসিয়ে। 
থাপ্পড় খেয়ে গয়লার পে। ত একেবারে ভড়কে গেল ; বলে ফেল্লে 
থাপ্পড় দেবেন এমন ত কথ ছিলন। কর্তাবাবু, ছটো৷ গালমন্দ 
দেবেন এই ত বলেছিলেন । বুঝলে ভায়া এও ঠিক তাই। 

অনশন হবে, তার আক্ষালন হবে, আড়ম্বর হবে, অনশন 
থেকে ফেরাবার জন্যে 75102691101. যাবে, হৃদযন্ত্রের ও রক্তচাপের 
অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বড় 'বড় ডাক্তারদের 'একটা ৮৩৪1 
বসবে, তার রোজ রোজ 170112617) 'বেরুবে, তারপর একটা 


৪৯ 


ভক্রণিসণ 


5101:018 ০0000010665 তৈরী হয়ে ঘোঁষণ। করবে যে তার 
পশুহত্য।'নিবারণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে । তারপর অনেক 
অনুনয় বিনয়ের পর, অন্থুরোধ উপরোধের পর, অনশনব্রত থেকে 
বিরতি হবে--কমলামধু কি এরকম একট। কিছু পান করে-_ 
দেশময় হৈ হৈ পড়ে যাবে । দ্বিজুরায়ের নন্দলাল যে একদা করিল 
ভীষণ পণ-_তার উদযাপনের পাক্ক। প্রোগ্রামই ত হচ্ছে এই । 
এই প্রোগ্রামের মধো মরবার কথা তুমি কোথায় পেলে ? হঠাৎ 
মরণের মত একট অঘটন ঘটলে আমিও সেই গয়লার মতই 
বিস্মিত হব। এমন যদি হয়েই পড়ে তবে এই নকীন সন্্যাসীর 
তারুণ্য সম্বন্ধে আমি অন্ভতঃ ঘোরতর সন্দিহান হব ।” 

বন্ধু বলিলেন, “থাক্‌ গে রামশন্মা পণ্তিত । সে যা হয় একট। 
হবে অখন । কিন্তু তরুণদের ওপর তৃমি এত খাপ্পা কেন বল ত ?” 

জিভ. কাটিয়। আমি বলিলাম, “রাম বল ! কি কথা বল্লে 
তুমি? খাপঞ্প। ? তরুণদের ওপর খাপ্না আমি? কদাপি ন। 
আমি কেন, তরুণদের ওপর কেউই কি খাঞ্সা হতে পারে ? যদি 
কারুর ওপর তোমার খাগ্না হতে হয়, তা হলে অন্ততঃ তার 
একট মেরুদণ্ড থাক। দরকার--একট। সবলত'!, একট! দার্টা 
থাক। দরকার । ত। হলেই তার উপর ক্রোধ করা সম্ভবে। 
খড়েগ খড়েগই সজ্ঘাত হওয়। সম্ভব _খড়েগতে জলেতে কি সঙ্ঘাত 
হয়? বিশাল বনস্পতিই প্রভঞ্জনে উন্মলিত হয়, শম্পতৃণগুচ্ছকে 
ঝড়ে কোনদিন পড়তে দেখেছ ? কিন্তু দা, মেরুদণ্ড, সবলতা, 
এসব থাকলে তরুণ হবে কি করে? তরুণের থাকবে কায়দা, 


২০ 


ভক্ষশিস। 


পালিশ+ 5009710255১ ঠা6596১ 951০১ কেমন যেন একটা 
এলিয়ে পড়। নেতিয়ে পড়া ভাব-__একটা। 98191 1110 
ধরণের গড়ন, দেহ ও মন উভয়েরই--একটা এলাঘিত, 
লীলায়িত, দোলায়িত ভঙ্গী-_তবেই না হবে [51109] তরুণ 1!” 

বন্ধু বলিলেন, “এ সব তুমি কি বলছ? আঁমর। ত জানি 
তরুণ মানে যুবক। তার থাকবে যুবকজনোচিত দৃঢ়বলিষ্ঠ 
ভাব। এলিয়ে পড়। নেতিয়ে পড়া, এসব কি বলছ ?” 

আমি একেবারে হাসিয়া ফেলিলাম ; বলিলাম, “দেখ ভায়া, 
য। বল্পে আজ আমার কাছে, একথা যেন আজকাল আর রাস্তায় 
ঘাটে বলো না । বল্লে মুক্ষিলে পড়বে । হতে পারে. শব্দকল্সক্রমে 
লেখ। আছে, তরুণ মানে যুবক ; এবং এও হতে পারে যে এক 
কালে সেই অর্থেই ওশব্দটির প্রয়োগ ছিল। কিন্তু আজকাল 
ও সংজ্ঞা একেবারেই অচল । তুমি আজকালকার কোন উদীয়- 
মান তরুণকে একবার যুবক কিংবা! যুবাপুরুষ বলে দেখ দেখি__- 
সে যদি না তোমায় মানহানির দায়ে ফেলে তা হলেই তোমার 
পরম ভাগ্যি বলতে হবে। পৌরুষ ভাব, রুট কর্কশ 78500]1- 
17105, জু মেরুদণ্ড, এসব থাকলে সে আবার তরুণ? সেত 
একটা 0০০: অসভা বব্ধর। তেজন্বী যুবক যে, সে ভাঙ্গে 
কিন্ত মচকায় না। আর নধর তরুণ যে, সে মচকায় কিন্ত 
ভাঙ্গে না_-সত্যি বলতে কি, সে ভাঙ্গেও না, মচকায়ও না; 
স্থিতিস্থাপক বেত্রদণ্ডের ন্ঠায় সে বেগতিক দেখলে বেশ মোল?” 
যেমভাবে সুয়ে পড়ে, তার পর আবার অবসর বুঝে সোজা 


১৯ 


তক্রুলিস। 


হয়ে ওঠে ৷ এই নমনীয়তা কমনীয়তা। রমণীয়তাই হচ্ছে আধুনিক 
তরুণিমার প্রাণ। শঙ্করাচাধ্যের মোহমুদগর পড়েছ ত? 
সেখানে তরুণের একটি অতি স্ুন্দর ৪১-৮০-৫০৪০ 06617210101) 
আছে । মনে পড়ে? 
“তরুণস্তাবৎ তরুণীরক্ত. 

অর্থাৎ কি ন! দেহের তাবৎ রক্ত যাদের তরুণীদের ন্যায়, তারাই 
হচ্ছে খাটি তরুণ। ওকি হাসছ যে ?” 

বন্ধু একেবারে হো-হে! করিয়া অট্হাস্ত করিয়া বলিয়া 
উঠিলেন, “এবার যা হোক একটা! 01181099] শাঙ্কর-ভাব্য বার 
করেছ তুমি ? “তরুণীরক্তঃ মানে “তরুণীর ম্যায় রক্ত যার? ? 
হাঃ হাঃ হাঃ! আমরা ত চিরকাল জানতুম যে আচাধ্য শঙ্করের 
ওকথার অর্থ হচ্ছে এই যে, তরুণরা! তরুণীতে অন্তুরক্ত হয়ে 
থাকে । সমাস সপ্তমীতৎপুরুষ |” 

আমি বললাম, “দেখ ভায়া অত হাসবার কোন কারণ নেই। 
আপ্তবাক্যের কি একটি মাত্র অর্থই হয় ? তা হলে ত 796170110 
00::8০1-এর পেশাই বন্ধ হয়ে যেত। যত সব টীকা-টিপ্ননী- 
ভাস্তকার ত একেবারে বেকার হয়ে পড়তেন ! বুঝলে ? শান্ত- 
বাক্যের, মহাজনবাক্যের নানা অর্থ সম্ভবে । যুগে যুগে নানাবিধ 
ব্যাখার আবশ্যক হয়। এখন আমার বিংশ-শতাব্দীয় মোহমুদ্গরের 
ব্যাখ্যা বুঝিয়ে বলি শোন । তুমি বললে, যে তরুণীতে অন্থুরক্ত 
হবে সেই তরুণ? এও ত বড় তাজ্জব ব্যাপার, তরুণীতে 
অন্থুরক্ত ত অনেক গোম্বামী মহাপ্রহদেরও হতে দেখা যায়। 


টি 


তক্শ্শি্' 


তা ছাড়া শাস্ত্রেইে ত লেখা আছে, 'বৃদ্ধস্ত তরুণী'ভাধ্য। প্রাণে 
ভ্যোহপি গরীয়সী |” তা বলে সেই সব বৃদ্ধ স্থবিরকে তরুণ 
বলবে নাকি তুমি? তা হলেই হয়েছে আর কি? আসলে 
ভেবে দেখলে, ও একট। অর্থই নয়। তাছাড়া, সপ্তমীতৎপুরুষ 
দ্বারা কোন তরুণ নিম্পন্ন হতে পারে না_-কোন পৌরুষের 
সংযোগ থাঁকলে তরুণিম! ফুটতেই পারে না। সমাসটি হচ্ছে 
নিছক বহুব্রীহি । ব্যাসবাক্য ত আগেই ব্লুম । এখন আসল 
তাৎপর্য্টটি বুঝিয়ে দিচ্ছি। যাদের রক্ত অর্থাৎ প্রকৃতি চেহার' 
রকম সকম--রক্তের ধারার উপর যা নির্ভর করে সেই সব-_ 
তরুণীর ন্যায় অর্থাৎ রমণীজনসুলভ, তাঁরাই হচ্ছে খাঁটি 
তরুণ ।” 

বন্ধু একটু ক্ষুণ্ন হইয়। বলিলেন, “এ তুমি বড্ড বাড়িয়ে বলছ । 
আজকালকার তরুণ ছোকরারা--অথব। বল। উচিত তরুণিমা- 
প্রয়ামী ছোকিরারা-_-একটু ফিন্ফিনে বাবুগিরি করে বটে, একটু 
মিহি মিঠে চাল দোরস্ত করতে চায় বটে; কিন্ত তা বলে 
একেবারে তরুণী !” 

আমি বলিলাম, “বেশ, এবিষয়ে তর্কই যদি করতে চাও, তাই 
সই। তরুণী চেন! যায় কিসে বল ত? অন্ততঃ সভ্যসমাজে । 
কেশে বেশে ভাবে ভঙ্গীতে চাহনীতে চলনে। প্রথম, কেশই 
ধর! যাক | শিরোজকেশই যদি ধর, তবে দেখতে পাবে যে তরুণী 
আর তরুণের কুস্তলবিহ্যাসে বেশ একটা_যাকে আমরা গণিত- 
ব্যবসায়ীরা বলি ০195 ৪০0:০310286101--সেটা সম্যক 


১৩ 


ভরভ্পিসা 


ভাবেই পুরিক্কুট্‌ হচ্ছে। একবার ইংরিজীতে ওদেশের সমাজের 
1০1350039 অংশের একটা বর্ণন। পড়েছিলুম মনে পড়ে, 3০1১০- 
38012 29 57126160136 70206771276 90104179175 270. 0০ 
0002 10100191169? 7; এও অনেকটা তদ্বং ৷ তারুণ্যাভিমাঁনী 
€ছলেরা তাদের,মস্তক-আবরণকারী কেশদামকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে 
বাঁকিয়ে চুরির়্ে এমনই অপুর্ব নয়নবিমোহনভাবে পল্লবিত 
তরঙ্গিত করে তোলে যে রমণীর চিকুরদাম থেকে তার ভিন্নতা 
অনেক গবেষণা না করলে মালুম হয় না। তারপর, বদন- 
মগ্ডলস্থ যে কেশ তাঁর কথাই যদ্দি ধর, তবে ত প্রমাণ আরও 
সুস্পঈ। বদনমগ্লে কেতশর ভাব অর্থাৎ অভাবই তরুণীসমাক্তের 
লক্ষণ । ন্লতরাং ভৎস্থানীয় কেশের প্রতি তরুণ-সমাজের সন্ভাব 
থাকতে পারে না । অতএব তরুণসমাজ সে কেশের প্রতি খড়গা- 
হস্ত__খুড়ি ক্ষুরহস্ত। তাই শাণিত ক্ষুরপ্রয়োগে গুক্ষশ্মশ্রব 
সমূল নির্বাসন। অথচ ভেবে দেখ ভায়া এই গুক্ষশ্যশ্রুই 
চিরদিন পৌরুষের লক্ষণ বলে পরিচিত হয়ে এসেছে । এখনও 
শুনি ফরাসী সৈনিকদের গুক্ষ রাখা 001201015015 £ তাই 
তাদের এক নাম 12০14--অর্থাৎ কেশবান্‌। 

“আমাদের পরশুরাম এবিষয়ে তার স্বভাবসিদ্ধ তীক্ষদৃষ্টি 
দিয়ে কি লক্ষ্য করেছেন, মনে নেই ? তিনি বলেছেন যে আজকাল 
বুদ্ধ কেউ নেই-__অন্ততঃ কেউ থাকতে রাজী নন, অথবা ও 
অপবাদ কেউ স্বীকার করেন না। আছেন তিন প্রকার মানব-- 
ক্র, যুবক ও তরুণ। প্রৌঢ় হচ্ছেন তার ধাদের গৌফদাড়ি 


ভতক্ুণিসা 


উভয়ই আছে, যথা, আছেন “বিশ্বকবি রবীন্দ্রন[থ, 

ছিলেন সুরেন্দ্র বাড়য্যে। যুবক তারা দের ছা কিন 
গোঁফ আছে, যথা ছিলেন আশু মুখুষ্যে এবং এখন আছেন ঠ 
নরেন দেব। আর তারাই তরুণ ধাঁদের গৌঁফ দান্ডি কোনটাই: 
নেই, যথা! শরৎ চাটুষ্যে, প্রমথ চৌধুরী । এই শ্রেী-বিভাগটি:. 
একেবারে অকাট্য । অনেকে অবিশ্যি দাড়ি গোঁফ রেখেই তরুণ 
হতে সময়ে সময়ে কামন। করেন-__শিং না ভেঙ্গেই বাছুরের দলে 
প্রবেশ করতে চান-_কিন্ত সে চেষ্টা সফল হয় না । তার জ্বলন্ত 
প্রমাণ স্বয়ং বিশ্বকবি--তিনি তরুণ সাহিত্যিকদের অজন্র 
অযাচিত সার্টিফিকেট দিয়েও তরুণের দলে তেমন আমল পেলেন 
না । অথচ বয়সে বৃদ্ধ শরৎচন্দ্র ্ষুরের দৌলতে তরুণ হয়ে পৃর্ধবেরই 
হ্যায় তরুণমণ্ডলকে চন্দ্রাহত করে রেখেছেন । তরুণের কেশতত্ব-- 
অথবা নিক্ষেশ-তত্ব_ এতক্ষণে বুঝেছ ত? 

“তারপর ধর বেশতত্ব । পৌরুষ-ব্যঞ্জক যে সব বেশ-পদ্ধতি 
আছে__যেমন শক্ত আটসশাট বাঁধন_আমাদের কম্মিষ্ঠদের 
মালকৌচা অথবা! গৌরুসদয়িক ব্রতচারী কৌচা না হয় ছেড়েই 
দিলুম__সেরকম শক্ত বাধন তরুণের পেলব তন্থৃতে সইতে 
পারে না। কাজেই তাদের বেশবিন্যাস কি একপ্রকার টিলেঢালা 
আলগোছ রকম-_কোন্টা যে কাছ। কোন্টা বা কৌচা তাও 
নির্ধারণ কর দূর থেকে ছুরহ। শরীরের অধোবাস কি এক 
রকম গোলগাল ফুলো ফাঁপা গোছের--তরুণীর জড়ান শাড়ী ব৷ 
91:0এর বোধ হয় একট সচেষ্ট সযত্ু অনুকরণ । উদ্ধাবাস 


৯৫ 


ভক্ষণিসা 


একটা টিলে পাঞ্জাবী ব' শার্-_আর যদি কোন উত্তরীয় ব্যবহার 
করাই হয়, তবে সেট। এমন পড় পড় ভাবে থাকে বে মাটি ছু'ল 
কি ছু'লনা ঠিক মালুম হয় না _অনেকট। তরুণীর বসনাঞ্চলের 
হ্যায়ই চকিতচঞ্চল । আর যে পাঞ্জাবী ব! শার্ট উদ্ধদেহ বিমণ্ডিত 
করছে, তারও হাতের ও গলার বোতাম ধাকবে খোল 1--এও 
বোধ করি আজকালকার তরুণীদের 59152৮61955 পোষাক এবং 
হালফ্যাসানের ৫০০০11০09৪০-এর সশ্রদ্ধ অনুসরণ । কেমন যেন 
একটা। সতর্ক উদাসীনতা বা সযত্ব আলুথালু ভাবেভোলা। ভাব-_ 
যাকে ইংরিজীতে বলে 216০] 20015557০35-স্থরভির ম্যায় 
তরুণ-প্রসাধনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে 1? তারপর যদি 
ধর প্রসাধন ও অঙ্গরাগের অন্যান্য উপকরণ -যেমন পাউডার, 
লা, ক্রীম, সাবান, এসেন্স, ইত্যাদি--তা হলে তুমি যে কোন 
তরুণ ছাত্রাবাসে গিয়ে চাক্ষুব দেখে আসতে পার যে সত্যি 
সত্যিই তরুণের ধমনীতে তরুণীর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে কি ন।। 
“তারপর বলছিলুম, ভাবে ভঙ্গীতে কথায় বার্তায় চাহনীতে 
চলনে। সে বিষয়েও কি তোমায় বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে হবে ? 
সরল সবল খুতা, দৃপ্ত তেজন্ষিতা, অনমনীয় মেরুদণ্ড _যৌব- 
নোন্নত পুরুষের যা সৰ লক্ষণ-_-"শালপ্রাংশু মহাভুজঃ চিত্র দিয়ে 
কালিদাস যে পৌরুষের ব্যঞ্জনা করতে চেয়েছিলেন_-ত। ত তুমি 
তরুণের কাছে পাবে না । তরুণ ষে অতি নধর অতি কোমল, 
সে যে ফুলের ঘায়ে মৃচ্ছা যায়, পুষ্পবাঁণবিলাস অবধি সে হয়ত 
বরদাস্ত করতে পারে, অন্যবিধ শরাঘাত যে তার প্রতি একেবারেই 


১৬ 


তক্রুণিস?। 


নিছক ০961 6০ 8:0102915 ! বিশ্বের সব ব্যথ। যে তার 
ওপর চেপে বসেছে-_€সই চাপেই যে তার তন্ু বেপথুমতী ৷ 
শকুস্তলার সে দৃশ্য তোমার মনে আছে? যেখানে ছুম্স্ত 
হরিণশিশুদের দিকে লক্ষ্য করে বাণ ছু'ড়ছিলেন, আর অতি 
কোমল মবগশাবকদের গীড়া দেওয়া যে অতি নিষ্ঠুরতা এই কথ! 
বলে আশ্রমবাসিগণ তাকে প্রতিনিবৃত্ত করছিলেন ? সে কথ। 
আমাদের তরুণদের পক্ষেও একেবারে খেটে যায় £ 
ক বত তরুণকানাং জীবিতপ্চাতিলোলং । 
কক চ নিশিতনিপাতাঃ বজ্রসারাঃ শরাস্তে ॥ 
এই যে অতিলোলজীবিত অতিক্ষীণপ্রাণ তরুণবৃন্ন আমাদের-_ 
এরা খাড়া হয়ে উচু করে মাথা তুলে দাড়াবে কি করে ঃ 
তাই তরুণ যখন দগায়মান হয়, তখন তার 79০950৮:০ অথব! 
ঢংটা হয় অনেকটা বস্কিম, ত্রিভঙ্গভঙ্গিম--ইংরিজীতে যাঁকে বলে 
11550170, 11016, 5৮615 1 সংস্কৃত-সাহিত্যে তরুণীকে বহু 
স্থলেই লতার সঙ্গে উপমিত কর! হয়েছে__'সঞ্চারিণী পল্লবিনী 
লতেব, “এহুরণ্ময়ী শাললতেব জঙ্গমা । আমাদের তরুণদেরও 
ঠিক সেই ধরণের লতানে পল্লবিত ভাঁব--নিজের ছুপায়ের ওপর 
স্বপ্রৃতিষ্ঠ হয়ে খাড়। হয়ে যেন দাড়াতে পারে না__একটি সহকার 
তরুর সহকারিত! নিতান্তই যেন তাদের আবশ্যক । 
“তারপর যদি ধর ভাষা--তা' ত অতি স্থচিক্ণ ভাবে মোলা- 
য়েম এবং মিহি এবং মাজ্জিত এবং 2005108] অর্থাৎ মেয়েলী ; 
এবং ভাব তার অতি গায়ে পড়া, অতি বিগলিত, অথবা অতি 


৯৭ 


তক্লিসা। 

সৃক্প্, অথবা অতি 51281 1 সহজ সরল সুবোধ্য সুম্পষ্ট হলে সে 
ভাষা ও ভাব তরুণের নয়--তা হবে কতক হেয়ালী কতক 
ছেনালী কতক শ্যাকামীর বিচিত্র মিশ্রণ--যাকে ইংরিজীতে বলে 
51990750002 01217). 1০৪ এবং ফরাসীতে বলে ৫০516 
6772757--সেই জাতীয় আর কি? ভাব ও ভাষার ধাচ। 
তরুণের হাতে পড়ে এই রকম হওয়াতে, যাকে বলা হয় বিশেষ 
করে তরুণ সাহিত্য তাও এই ভাবাক্রান্ত হয়ে উঠেছে । 

“সেই তথাকথিত তরুণ সাহিত্যে--দেশের মধ্যে সমাজের 
মধ্যে যে সমস্ত জটিল প্রশ্ন মাথা! তুলে উঠেছে, যে সমস্ত জীবন- 
মরণ সমস্তা সমাজকে চঞ্চল করে তুলেছে, অর্থনৈতিক রাজ- 
নৈতিক যে সব বিপ্রব দেশকে মথিত করে তুলেছে-_-এই 
তরুণ সাহিত্যে সে সব সন্ন্ধে কোন গভীর চিন্তা, কোন নিপুণ 
বিশ্লেষণ, কোন সরল সমাধান-প্রচেষ্টা, এর কিছুই পাওয়া যায় 
না। মামুলী এবং ধার করা তথাকথিত শ্রমজীবী সমাজের চিত্র 
মাঝে মাঝে দেখতে পাওয়া যার বটে-_কিস্ত তাও অত্যন্ত 
0199] এবং 50152121101891--এ জাতীয় পাশ্চাত্য উপন্যাসের 
বার্থ অন্থকরণ । তবে তরুণ সাহিত্যে আসল কোন্‌ চীজটি পাঁওয়। 
যায়? সে চীজটি-হচ্ছডে অর্থাৎ তরুণ সাহিতোর প্রধানতম 
002106-ই হচ্ছে--জনৈক প্রণয়ী এবং তদীয় প্রণয়িনী, এবং 
তাদের ভাব-বিলাস । অবিশ্যি একাধিক প্রণয়ী প্রণমিনীও হতে 
পারে, আজকাল 20101:911577-এর দিনে তারই রেওয়াজ বেশী-- 
6 10026 0096 0250৫ আমাদের কলিযুগের পরশুরাম যার 


৯৮৮ 


জন্ষন্দিস। 


সংস্কৃত অনুবাদ করেছেন, “যো বৈ ভূম। তত সুখং নাল্লে স্থুখমস্তি । 
ত৷ প্রণয়াস্পদ একই হোক ব। অনেকই হোক, একমাত্র আখ্যান- 
বস্তু হচ্ছে প্রণয় । নায়ক-নায়িকার ব। নায়ক-নাফ্িকাবর্গের খেয়ে 
দেয়ে আর কোন কাজই নেই-__এবং খাবার দাবার জন্যেও তাদের 
যে কোন কাজ করতে হয় এরকম বোধ হয় না। সবই বেশ 
1101; 21156090180 চালে চলছে, নিয়তই ভ্রয়িংরুমে পিয়ানোর 
টং টাং ধ্বনি শোন! যাচ্ছে, এবং 78901% [3915051, 8520০- 
৮213১ ইস্তক তাদের [,0180106107, 1065026] 9017819-রও 
উল্লেখ মাঝে মাঝে পাওয়। যাচ্ছে--যদিচ কয়জন বঙ্গীয় আলোক 
প্রাপ্ত তরুণ-তরুণীও এ সব যুরোপীয় সঙ্গীত ও সঙ্গীতজ্ঞদের সঙ্গে 
পরিচিত সে বিষয়ে আমার কিঞ্চিৎ সন্দেহ আছে । আর সেই 
70510-এর ভালে তালে বা অন্তরালে নায়ক-নায়িকার অবিশ্াম 
প্রণয়গুঞ্জন চলছে । একেবারে 195111০ অবস্থা-যেন 2621089] 
10765050012 17 0102 1210 0: 002 10635-226219--- 
কৌমুদ্রীবিধৌত মদ্রির নিশিতে অফুরস্ত মদন-মহোৎসব। এই 
নেহাঁৎ অবাস্তব, একেবারে 2175, 121755 50021:5251, কলপ- 
লৌকিক যে জীবন--এরই রঙ্গীণ চিত্র যে তরুণ সাহিত্যে ফুটে 
উঠেছে-_-সেই সাহিত্যই নাকি আবার দাবী করে যে সেই হচ্ছে 
75211501০ ব। বস্তৃতন্ত্রতামূলক সাহিত্য ? শুনে হেসে আর বাচিনে । 

“তুমি বল্লে তরুণদের ওপর আমি খাপ্সা ? আরে খাগ্সা যে 
হব, তার ফুরসং কোথায় ? এই তরুণিমার যে অপরূপ ভঙ্গী 
ভাষাতে, সাহিত্যে, আচারে, ব্যবহারে প্রকটিত হচ্ছে, তাতে আর 


, ৯৪১ 


. ভক্রণিসা 


যেরসেরই সঞ্চার করুক না কেন, রৌদ্র রসের সার যে করে না 
তাতে সংশয় মাত্র নেই । সত্যি যে রসের সঞ্চার করে তার নাম 
হচ্ছে হাস্তরস। অন্ততঃ আমার ত তাই করে। তবেধার৷ 
আমার চাইতে গম্ভীর প্রকৃতির লোক, ধারা সমাজের ভবিষ্যৎ 
ভেবে আকুল হন, তাদের কাছে হয়ত সঞ্চার করে করুণরস। 
আর বর্তমানের তরুণ-প্রকৃতি যে বলপরিমাণে একটি করুণ 
চিত্রেরই উদ্রেক করে লোকহিতৈষীদের চিত্তে, সে কথাও যথার্থ । 
সে বাই হোক, এখন তুমি মানছ কি না যে আমার মোহ- 
মুদগরের বাখ্যা কিছু উড়িয়ে দেবার মত নয় ?”" 

বন্ধুবর এতক্ষণ অতি নিবিষ্ট চিত্তে আমার চুলচের1 বিশ্লেষণ 
শুনিতেছিলেন। আমার প্রশ্সে যেন তার চমক ভাঙ্গিল। তিনি 
বলিলেন, “তা বাখা। ত মন্দ শুনলুম না। একবার শুনেছি 
গান্ধীজী গীতার কন্মচক্রের ব্যাখ্যা! করতে গিয়ে বলেছিলেন, 
প্্চক্র আর কিছুই নয়, ওটা হচ্চে চর্কা। তাতে মনীষী 
বিপিনচক্্র পাল শুধু মন্তব্য করেছিলেন, "9 ৪ 9159065 ০0: 
91581019818 ! তোমার মোহমুর্দগরের ব্যাখ্যা শুনে আমারও শুধু 
সেই কথারই পুনরারত্তি করতে ইচ্ছে হচ্ছে । যাকৃগে। 
তরুণীর রক্তই হোক আর উরুণীতে রক্তই হোক, আমরা বুড়ো- 
হাঁবড়া সেকেলে [1)206221/010-052181015-র লোক, আমাদের 
তাতে ভারী এসে গেল। আর ছাই এতও তুমি বকতে 
পাঁর। কোথায় তুল্গুম রামশশ্মার' কথা, আর তুমি কিন 
সুর করলে তরুণিমার কৈশিক, বৈশিক, পেশিক বিশ্লেষণ__ 


ন্ই০ 


ভক্ষণিসা 


আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ব্যাখ্যা । একেবারে 
ধান ভানতে শিবের গীত। যাক, আর বকৃ বক করতে 
ইচ্ছে করে না-রাতও অনেক হয়েছে- এখন তা হলে 
উঠি ?” 

আমি বলিলাম, “বিলক্ষণ ! এই ভরা বাদলের অদ্ধেক রাতট। 
এখানে কাটিয়ে দিলে, এখন উঠবে কি রকম ? গিন্গী নেই বলে 
গেরস্থালী ত বন্ধ হয় নি। বেশ গরমাগরম খিচুড়ী রান্ন। হয়েছে, 
পেঁয়াজ দিয়ে ডিম ভাজ দিয়ে, তাই ছুটি খেয়ে যাও ।” 

বন্ধুবর সোৎসাহে আমার পিঠ চাপড়াইয়া৷ বলিয়। উঠিলেন, 
“তাই নাকি? এতক্ষণ বলতে হয়। তথাস্ত। চল, খেতে চল । 
বিলম্বে নালম্‌।” 


ভাদ্র, ১৩৪২ । 


তলা শুভ ৩ ব্ডডি7 


লেখা ও পড়া 


তখন জুলাই মাস। দৈনন্দিন সান্ধ্যভ্রমণ সমাপন করিয়া 
বাড়ীতে ফিরিয়া বাহিরের বৈঠকখানায় বসিয়া একটু বিশ্রামসুখ 
উপভোগ করিতেছি আর এটা-ওটা কাগজ-পত্তর অলসভাবে 
নাডাচাড়া করিতেছি । এমন সময় হঠাৎ একটি যুবক আসিয়া 
উপস্থিত। দেখিতে যুবকটি একটু তরুণভাবাপন্ন__বেশ-বাস 
নুচিন্ণ, কেশপাশ যেন সযত্বে অযত্ব-বিন্যস্ত, এবং রকম-সকম 
হইতে একটু সাহিত্যিকের মিহি আন্রাণ যেন টের পাওয়া যায়। 

আমি জিজ্ঞাস। করিলাম, “কি চাই ?” 

যুবকটি নমস্কার করিয়া, বলিল, “এই এসেছি, আপনার সঙ্গে 
একটু আলাপ করতে ।” 


৫ 


তরুণিস! 


আমি বলিলাম, “কি কর! হয় ?” 
_ উত্তর হইল, “বিশেষ কিছু করি নে। কলেজের পড়া এক 
রকম সাঙ্গ করেছি । এখন মাঝে মাঝে লিখি টিখি। সম্প্রতি 


কয়েকজন বন্ধুতে মিলে চাদ তুলে একটা মাসিক পত্রিকা বার 
করবার চেষ্টা করছি ।” * | 


জিজ্ঞাসা! করিলাম, “তোমাদের কাগজের নামটি কি দিচ্ছ ?” 

যুবক বলিল, “কুজ্বাটিকা 1” 

আমি বলিলাম, “নামটি ত বেশ হেঁয়ালী আবছায়া ধরণের 
বার করেছ, তা বেশ। আর তোমার লিখবার অভাস আছে, 
অথব! অভ্যাস করছ, এত উত্তম কথা । তা এদিকে পড়াশুনো 
কেমন করেছ ? আমি কলেজের পড়ার.কথা বলছি নে-_এই 
বাইরের বই টই |” 

ষুবকটি একট বিনয়ের প্রক্ষেপ-মিশ্রিত গর্রবভরে উত্তর 
করিলঃ “আজ্ঞে, আজকাল একটু ৮০106101225 1162126015- 
এর চর্চা করছি ।” 

০০010010202 11065180015 মানে 2” 

“এরই আজকাল চারদিকে পুথিবী টলমল করছে কিনা 
স্পআয়লর্ণা্ড রাশিয়া, জার্মেণী, এই সব। এদেরই সব 
কথা, এদের নানান 190109£5--এই সবের একটু খবর 
নিচ্ছি ।৮ 

এই.)৭০০1085-র অবতারণা শুনিয়া আমার কিঞ্চিৎ কৌতৃহল 
হইল ; কারণ হালের তরুণ মহলে এই কথাটির কিঞ্চিৎ অত্যধিক 


হ্ঙ 


০লখ। ও পড়! 


ছড়াছড়ি দেখিতে পাই। হাল ফ্যাশীনের এই সব বাগাঁড়ম্বর 
শুনিলেই একটু সন্দেহ হয় যে বোধ করি বক্তার মস্তিক্ষের কিঞ্চিৎ. 
শৃগ্ঠতা৷ এবং শিরোদেশের কিঞ্চিৎ স্ষীতি ঘটিয়াছে। তাই একটু 
পরথ করিয়া লইবার প্রলোভন সংবরণ করিতে পারিলাম না । 

আমি বলিলাম, ““ত। বেশ ; বিদ্রোহ-বিপ্রবের সাহিত্য পড়ছ, 
তার £৭96০19£5-র সন্ধান নিচ্ছ, বেশ কথা। শুধু একটু সাবধানে 
থেক- নেহাত পুলিশের খপ্পরে না পড়ে যাও ।” 

যুবক একট মৃছ হাসিয়া বলিল, “তা! নেহাঁৎ মিথ্যে বলেন 
নি। আমার এক ভাই ত 1706217)59 হয়েই আছে । আর 
আমিও দিন কয়েকের জন্যে শ্রীঘর দর্শন করে এসেছি ।” 

আমি বলিলাম, “তা। বেশ করেছ, কিন্তু বিদ্রোহ-বিপ্লব ত 
পৃথিবীতে আজই যে নতুন করে হচ্ছে এমন নয়, পুর্ব্বেও 
অনেক হয়ে গেছে, তার খবর রাখ কিছু £” 

_-“তা কিছু রাখি বই কি? আমার ত এ বিষয়ে লিখতে 
টিখতেও হয় কিনা ।” 

আমি প্রশ্ন করিলাম, “এখন ত জুলাই মাস, বল দেখি ৪ঠ' 
জুলাই পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত কেন ?” 

যুবক নিরুত্তর । 

আমি বলিলাম, “বটে, ৪ঠ জুলাইএর কথা কোনদিন 
শৌননি ? আচ্ছা, বলতে পার, ১৭৭৬ খুষ্টাব্যে 'কি ঘটন। 
ঘটেছিল ?” 

পুনশ্চ নিরুত্তর | 


৭ 


'ভব্রণিসা। 


পুনরায় বলিলাম, “আচ্ছা, জুলাই মাসের আর একটা 
তারিখ কেন প্রসিদ্ধ বলতে পার ? ১৪ই জুলাই ?” 

নেহাৎ আর কিছু ন। বলিলে ভাল দেখায় ন। বুঝিয়া যুবক 
বলিল, “কৈ, এ সব যে তারিখ আপনি জিজ্ঞেস করছেন, এ ত 
কোনদিন শুনি নি ?” 

আমি বলিলাম, “শোন নি? অথচ তুমি বিপ্রবি-সাহিত্যে 
একজন ওস্তাদ এবং একজন লিখিয়ে । তবে শোন। আমেরি- 
কার 01516659 599655 যে এক সময়ে ইংলগ্ডের অধীন ছিল 
এবং তারপর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, সে খবর রাখ? 
আচ্ছা, সেই স্বাধীনতা-ঘোষণার তারিখ হচ্ছে ১৭৭৬ খুষ্টাবের 
৪ঠা জুলাই ৷ পৃথিবীর বিপ্লবের ইতিহাসে একটা স্মরণীয় দিন । 
আর ফরাসী ব্রাষ্ট্রবিপ্রবের কথ। শুনেছ ? কয়বার 21501) 
[২০৮০10৫০1) হয় তা জান? না? তিনবার। প্রথমবারের 
বিপ্রবই সব চাইতে বড়। তার তারিখ জান? না? এই 
বিপ্লব সুরু হয় ১৭৮৯ খুষ্টাব্দে এবং এর স্ুরুতেই একটা গুরুতর 
ঘটনা ঘটে । প্যারিসে একট। বড় জেলখানা! ছিল--এই 
ধর আমাদের কল্কাতার প্রেসিডেন্দী জেলের মত। বিপ্লবোন্বত্ত 
জনতা! একদিন লাঠি সেটা কুড়ুল খন্তা বন্দুক নিয়ে 
সেই জেলখানার দরজ। ভেঙ্গে ফেলে । সেই জেলখানার 
নাম ছিল 995011, আর সেই ঘটনাকে বলে 901007175 
06 65০  9561116--এই ঘটন। ঘটেছিল ১৪ই জুলাই 
তারিখে । এখন বুঝলে ? যেমন ৪ঠা জুলাইকে মাকিণীর! 


৮ 


তলখ। ও গড়? 


[1)061921)001)02 1085 বলে, সেই রকম ১৪ই জুলাইতে ফ্রান্স 
দেশে স্বাধীনতা-উৎসব হয় । চন্দননগরে যদি যাও, ত সেখানেও 
১৪ই জুলাইএর উৎসবের ঢেউ দেখতে পাবে । 

“দেখ ছোকরা, তোমায় আমি একটা কথা! বলি, কিছু মনে 
করে৷ না । তুমি দেশের স্বাধীনতার স্বপ্প দেখ, কিছু অন্যায় 
কথা নয়। কিন্তু শুধু স্বপ্ন দেখলেই ত হয় না। অন্যান্য 
দেশ কি করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, কোথায় কোন্‌ পদ্ধতি 
অবলম্বন করতে হয়েছে, এসব বিচিত্র ইতিহাস একটু পড়ে 
দেখতে হয়। শুধু 7৬09০5%/1065 কিংবা 106৬ 91610, 
[97] 1%াস কিংবা [2101 সম্বন্ধে উচ্ছসিত 15770 পড়লেই 
বিপ্রোহ সম্বন্ধে জ্ঞান জন্মে না। ইটালীতে মাত.সীনি, গারিবাল্দি, 
কাতর কি করেছিলেন, টিরোৌলের £১0076595 [70:51 হাল্গেরীর 
০5980, পোল্যাণ্ডের 89501091009, স্বদেশের স্বাধীনতা 
অর্জনের জন্য কি অসাধ্য সাধন করেছিলেন, এসব একটু আধটু 
পড়তে হয়। কি বল্লে? এদের তুমি নামও শোঁননি ? তাহলে 
তোমায় বলি কি, তুমি তোমার 'কুজ্বাটিকা” আপাততঃ বন্ধ 
রেখে, একটু পড়াশুনো কর ত? একটু জেনে শুনে, তারপর 
লিখতে সুরু করো ।” 

কিঞ্চিৎ বেজার হইয়া যুবক বলিল, “তা য। বল্লেন ঠিকই 
বল্লেন বুঝতে পারছি । আচ্ছা, আপনি আমায় কয়েকখান! ভাল 
ভাল বইয়ের নাম বলতে পারেন, য। পড়লে অন্ততঃ মোটামুটি 
রকম একটা এঁতিহাসিক এবং রাজনৈতিক জ্ঞান জন্মে ?” 


২৯ 


তব্রগ্পিম। 


আমি খুব উৎসাহ-সহকারে বলিলাম, “পারব না কেন? 
তোমায় আমি অবিশ্তি বই বাতলে দেব। আর এর জন্যে তুমি 
নিরুৎসাহ হয়ে। না । এজন্যে তোমায় গোটা? 70০5 ০1070990198 
13101 81017105 খান। মুখস্থ করে ফেলতে হবে না। আর 
তোমায় যে এতগুলি প্রশ্ন করলুম* তুমি হয়ত" মনে মনে ক্ষু্ণ 
হয়েছ । এ আমি তোমায় 58 করবার ব! নিরুৎসাহ করবার 
জন্যে করিনি। তোমার ভালর জন্যেই বলেছি। তুমি বল্লে 
কিনা যে তোমার লিখবার সখ আছে, অভ্যাসও আছে । 
তাই তোমায় একটু সম্ঝিয়ে দেবার আমার লোভ হল যে 
লিখবার এবং ছাপাবার একট গুরুতর দায়িত্ব আছে। কিছু ন। 
জেনে শুনে লেখা শুধু যে নিরর্থক তা. নয়, তা এক হিসেবে 
০5179] ; কারণ আমাদের দেশের এখনও য1 অবস্থা, ছাপার 
অক্ষরকে এখনও লোকে বেদবাক্য মনে করে- সুতরাং ছাপার 
অক্ষরে য। ত। ভুলভ্রান্তিতে লোকের অতান্ত অপকার হয়। 
বুঝলে ?” 

যুবক বিনীতভাবে বলিল, “বুঝলুম ত ঠিক। কিন্তু আজ- 
কাল দেখুন অসংখ্য লেখ! বেরুচ্ছে । আপনার কি মনে হয়ঃ 
এরা সব কিছু জেনে শুনে পড়ে তারপর লেখে 1” 

আমি বলিলাম, “তাত লেখেই না। অন্ততঃ এদের 
অধিকাঅই কিছুনাত্র পড়াশুনে। ন করেই লেখে । আর তুমিই 
ত ধর ন৷ “কুজ্মটিক।' লিখতে সুরু করেছিলে প্রায়! আজকাল, 
সস্তা সাপ্তাহিক ছেড়েই দাও না, লম্বা চওড়া আকারের মাসিক, 


৩5 


তলখা। শু পড়! 


এমন কি পাচসিকে দেড় টাকা দামের আধুনিক উপন্যাস অনেক 
দেখেছি--তার ভেতরের লেখাতে এমন সব হাস্যকর বাণান ভূল, 
ব্যাকরণ ভূল, 11079 ভূল আছে যে, চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রও সে 
রকম লিখলে মাষ্টার মশাই তাকে 9০£150০ করে দিতে চান। 
আর তার ফলও হয়েছে তাই, আজকালকার চল্তি সাহিত্য, 
অন্ততঃ সাময়িক সাহিত্য, একেবারে চতুর্থ শ্রেণীর সাহিত্য হয়ে 
পড়েছে । একটা গল্প শুনেছি । এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল। 
আমাদের এক জন নবীন সাহিত্যিক-_বাজারে তখন ভার খান 
দশ বার তকৃতকে উপন্তাস বেরিয়েছে তাকে নাকি শরং 
চাটুষ্যে মশাই বলেছিলেন, “দেখুন মশাই, আপনি উপন্যাস ত 
হরদম লিখছেন, সে কিছু মন্দ কথা নয়, কিন্ত দয়া করে লিখবার 
আগে একবার করে ব্যাকরণকৌমুদ্রীর পাতা কখানা ওপ্টাতে 
পারেন ?, গল্পটি সত্যি কিনা জানি নে , তবে ইটালিয়ানর। যেমন 
বলে থাকে, 99 202 1 ৮61০, ০১ 010 0:০৮৪০--সত্যি ঘদি 
না-ও হয়, সত্যি হওয়া উচিত বটে । কথাট। একেবারে খাঁটি ।” 

যুবক বলিল, ““বাণান ভুল ব্যাকরণ ভুলের কথা যে বল্লেন, 
ও ত আজকাল আর কেউ মানেই না। স্বয়ং রবিবাবু ক-এ দীর্ঘ 
ঈকার দিয়ে “কী” চালিয়েছেন ।” 

আমি বলিলাম, “দেখ, সে কথা আর এ কথা ঠিক এক নয়। 
আমি “নিরস্কুশাঃ কবয়ঃ, এই কথ। বলে রবিবাবুকে খালাস দিতে 
চাই নে। একবার রবিবাবু 'প্রত্যুব্' অর্থে প্রদোষ' শব্দ ব্যবহার 
করেছিলেন ; করে ভূলই করেছিলেন_কারণ ওশব্দটি সম্বন্ধে 


৩১ 


ভব্রুণিস! 


তার একটু অস্পষ্ট ধারণা ছিল । ভূল সবারই একটু আধটু হতে 
পারে। ধর, যদি কোন বড় সাহিত্যিকও এক্রন্দসী' শব্দটি 
'্রন্দনশীল! রমণী' অর্থে ব্যবহার করেন-_সেটণ তার ভূলই হবে । 
কিন্ত এখানে সে কথা নয় ৷ রবিবাবু যে “কী” কোন কোন স্থলে-_ 
সব স্থলে নয়, এট] মনে রাখবে_ ব্যবহার করেন, তা ভুল করে 
করেন না; একট পার্থক্য বোঝান দরকার মনে করে 
তিনি ওরকম করেন। তিনি অজ্ঞতার দরুণ করেন না, 
কারণ তার স্কত-সাহিত্যে দখল অসাধারণ এবং 
সংস্কৃত ভাষ। বাঁংল। ভাষার জননী ; এবং সংস্কৃত ব্যাকরণ আর 
কিছু না করুক বাংল! শব্দের কাঠামট। নিয়ন্ত্রিত করছে-_নেহাৎ 
দেশজ শব্দ বাদ দিলে। আজকালরার “বাজারে'-সাহিত্যে 
ধারা বত্বণত্বের কোন ধারই ধারেন ন।, হুম্বদীর্থের তফাৎ যারা 
করেন না, র এবং ডু উভয়ই যাঁদের লেখনী-মুখে তুল্যমান 
-_তাদের যে ভুল, তা নেহাৎ অজ্ঞতা-জনিত ভুলই, এর মধ্যে 
বি্রোহাত্মক বাহাছুবীর কণামাত্র নেই। একমাত্র ব্যাকরণ- 
কৌমুদীই এর দাওয়াই । 

“আসল বাপার কি হয়েছে জান? বিশুদ্ধির ওপর একট 
সম্ভ্রম, 2০০০::৪০%-র প্রতি একট? নিষ্ঠা, অজ্ঞতার জন্যে একটা 
সহজ লজ্জা__এই ভাবটাই যেন কেমন কমে গিয়েছে । তাই 
সর্ব্বত্রই একট 51195790. ০2161555 ভাব । ভাবটা যেন এই 
রকম, ভুল হয় হোক গে, শুদ্ধ করবার জন্য কে অত ০0015 
নেয়? কত দিকে যে এর দৃষ্টান্ত দেখতে পাঁওয়া যায়, তার অন্ত 


৩২. 


তজদখা। ও গাড় 


নেই। আজকাল ত অলিতে গলিতে সিনেমার সঞ্চার হয়েছে ; 
আর তার 2০5০:-গুলি ত রাস্তায় ঘাটে দেয়ালে একেবারে 
চিত্রবিচিত্র হয়ে চোখে বি'ধছে। এগুলোর মধ্যেই যে কত 
রকমারি ভূল দেখতে পাওয়া যায়, তার কি আর সংখ্যা আছে ? 
ছেলে-বেলায় 5:57,09:-এর হাস্তাস্পদ ভুলের উদাহরণ শুনতুম 
_-“বিই,পুরের উৎকৃষ্ণ তামাক'। কিন্তু আজকালকার 995061- 
এর কাছে ত! কোথায় লাগে? হঠাৎ একদিন বেড়াতে বেড়াতে 
দেখি, রাস্তায় ঘাটে প্রকাণ্ড 595০০7: লাগান, কোন একটি 
বিখ্যাত সিনেমায় নতুন একখানা ছবি আসছে-_নাম তার 
“ঘাউল' ! আমি ত দেখে চমকে উঠলুম, “ঘাউল' আবার কি? 
অনেক ইংরিজী শুনেছি, এ রকমট। ত শুনিনি । শেষে ঠিক 
পেলুম, যে এটি হচ্ছে ইংরিজী “£1০.” শব্দের বঙগীকরণ। এ 
ইংরিজী শব্দটির উচ্চারণ যে বাংলায় লিখলে 'গুল' হয়, একটু 
চেম্বার্স ডিক্শনারীখানা দেখলেই সে তথ্যটি জানা যেত-_আ'র 
শব্দটিও নেহাৎ অপরিচিত শব্দ নয়। আর একদিন দেখি 
1৬1০11৩1১0 [)120105 মোলেনে ভীটি.ষ) নাকী বিখ্যাত জাম্মাণ 
অভিনেত্রীব নামের বঙ্গীকরণ করা হয়েছে__মালিন ডায়ে্রিচ। 
: এ রকম কি করা উচিত ? যার। সিনেমার কারবার করেন, অন্ততঃ 
খাতনাম। অভিনেতা-অভিনেত্রীদিগের নামের প্রকৃত উচ্চারণ 
একটু চেষ্টা করলেই তারা জানতে পারেন । কিন্তু আসল কথ 
কি জান, সে চেষ্টা করবার আবশ্যকতাই কেউ দেখে না । ভুল 
হয়েছে, হোক গে, বয়ে গেল। 


২৩০৩ 


তরু ণিস। 


«সিনেমা! পোষ্টারের কথ। ত শুধু এখন প্রসঙ্গতঃ মনে এল 2 
এতে হয়ত বেশী কিছু এসে যায় না কিন্ত এই 5210ট1 প্রায় 
সর্ব্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে । বিশুদ্ধি, ৪০০৪:৪০৮, নিভূলিতা, এর 
যে কত বড় মূল্য তা-ই যেন লোকে ভূলে যাচ্ছে । তাই ক্রমেই 
দেখতে পাওয়া যাচ্ছে যে লিখবার পুর্বেবে যে একটা 9০007:906 
ঢ১০/1০৪০ আয়ত্ত কর দরকার-_তা-ই বড় একটা কেউ মনে 
করেনা । আর অসংখ্য 201১6106198] পত্রিকা প্রভৃতি হয়ে 
ফল ঠাাড়িয়েছে এই যে তার “কলম” সব ভরতে হবে, কাজেই যে 
কোন €55 আসে তাই কোথাও না কোথাও ছাপ! হয় । আর 
এমন অঘটনও যদি ঘটে যে কোন লিখন-কগু.তি-সম্পন্ন তরুণ 
কিছুতেই কোথাও তার লেখ বার করতে পারছে না, তার যদি 
পকেটে কিঞ্চিৎ কাচা পয়স1 থাকে, অন্নি নিজে সম্পাদক হয়ে 
বসে একখানি “বেতালা" কিংবা “বেপরোয়া” কিংবা “কুজ্মাটিকা, 
বার করে ফেলে মনের সাধে নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখে 
আত্মপ্রসাদ লাভ করে। কাজেই দাড়িয়েছে এই যে বঙ্গ- 
সরস্বতীর সর্ববা যেন ছুষ্টব্রণে একেবারে কন্টকিত হয়ে উঠেছে । 

“একট। জিনিষ তোমরা লক্ষ্য করো । ইংরিজীতেও কত সন্ত! 
সাহিত্য বার হয় ; ০০110901219] কিংবা 10909] 919160০65-এও 
অনেক থাঁকে--যেমন সংস্কৃত-নাটকে স্ত্রীলোক এবং ছোটলোকের 
কথ। সচরাচর প্রাকৃতে লেখা থাকে । কিন্তু যেখানে প্রচলিত সাধু 
ইংরিজী ভাষ। প্রয়োগ হচ্ছে সেখানে কোন বাণান ভুল কিংব! 
10103 ভূল কেউ দেখতে পাবে না ; এবং যদি হঠাৎ অজ্ঞতা বা 


৩৪ 


তলখা। ও পড়? 


'অনবধানতাবশতঃ কেউ এ প্রকার ভুল করে ফেলেন, তবে তিনি 
লঙজ্জিতই হন, বাহাছুরী করে অর্বাচীনতার পরিচয় দেন না। 
এবং সেই সব পত্রিকা ও পুস্তকাদদি পড়লেই মনে হয় যে 
তাদের লেখার পেছনে অনেকখানি তথ্যান্্ুসন্ধান, অনেকখানি 
চিন্তাশীলতা৷ রয়েছে । একেবারে “কলমস্ত চোটাৎ” ভূ'ইফৌড় 
কলমবাজ সেখানে সাহিত্যিক বলে গণ্য হয় না এবং তাদের 
রচনাকে কেউ সাহিত্য বলে না। 

“আমাদের ছূর্ভাগ্য এই যে লেখার ও লেখকের 597005- 
10695 ও দায়িত্বের অনুভূতি আমরা যেন হারিয়ে ফেলেছি । 
আমাদের দেশে লেখা ও পড়ার ভেতরে একটা 415০০ 
হয়ে দাড়িয়েছে । তাই বঙ্কিমবাবু শুনতে পাই একবার আক্ষেপ 
করে বলেছিলেন, “দেখহে, আমাদের ভেতরে যারা পড়ে তারা 
লেখে না, আর যার। লেখে তার পড়ে না, এর যদি একট 
বিহিত না৷ করা যায় তবে সাহিত্যই ব! গড়ে উঠবে কি করে, আর 
লোকশিক্ষাই বা হবে কি করে ? যাক্‌, কথায় কথ বেড়ে গেল। 
তোমার লিখবার ইচ্ছে আছে, লিখবে না কেন? তবে বেশ 
একটু তৈরী হয়ে নিয়ে লিখো-তাহলে হয়ত তোমার 
'কু্াটিকা'র ভেতর থেকেও আলোক বিচ্ছুরিত হবে । কেমন ?” 


“সত্যিই তৈরী হয়ে নিতে চেষ্ট করব, বলিয়। যুবক বিদায় 
গ্রহণ করিল। 


আশ্বিন, ১৩৪২। 





বাঙ্গালীর পত্রিক! 


এই কিছুদিন হইল 4456706 নামক দৈনিক সংবাদপাত্র-- 
যাহ! শ্রদ্ধেয় ৬যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত মহাশয় প্রতিষ্ঠিত করিয়া 
গিয়াছিলেন-_-তাহা উহার পরিচালকগণ চালাইতে অসমর্থ 
হওয়ায় জনৈক অ-বাঙ্গালী ব্যবসায়ীর হস্তে চলিয়া গিয়াছে । 
দিনের পর দিন কত খবরই ত আমাদের কাণে আসে; কিন্ত 
স্পষ্ট মনে আছে যে এই সংবাদটি পড়িয়। বাঙ্গাল! ও বাঙ্গালীর 
ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে মনে বেশ একটা অবসাদ আসিয় পড়িয়াছিল । 

এক সময় ছিল-_যখন ধীরে ধীরে ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর 
মারফতে ব্রিটিশ রাজত্ব এদেশে প্রতিষ্ঠিত হইতে থাকে__-তখন 
আমাদের বাঙ্গাল দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রায় সম্পূর্ণভাবেই 


৩৯ 


তক্ষিম। 

বাঙ্গালীর হাতে ছিল। বড় বড় হৌসের মুচ্ছুদ্দি, বেনিয়ান, 
মহাজন, বাঙ্গীলীই'ছিল। কলিকাতার যত বড় বড় বদ্ধিষ্ণ ধনী 
পরিবারের নাম আমরা এখনও শুনিতে পাই, তাহাদের ভাগ্য- 
লক্ষ্মীর প্রতিষ্ঠা ব্যবসারবাণিজ্য দ্বারাই হইয়াছিল। কিন্তু 
ব্যবসায়ক্ষেত্রে বাঙ্গালীর প্রতিষ্ঠা যখন নানা কারণে ক্রমে 
ক্রমে মান হইয়া আসিতে লাগিল, তখনও শিক্ষাক্ষেত্রে, 
রাজনীতিক্ষেত্রে, সংবাদপত্রক্ষেত্রে, মোটামুটি ভাবে সব 
10621160659] ব্যাপারেই, বাঙ্গালী শীর্বস্থানে রহিল । 

অন্যান্য বিষয়ের আলোচনা! এখানে ছাড়িয়াই দিই-__সংবাদ- 
পত্র বিষয়েই দেখ! যাউক। সংবাদপত্র পরিচালন! একাধারে 
রাজনৈতিক এবং ০5160] প্রতিষ্ঠার একট। মস্ত উপায় এবং 
নিদর্শন । বাঙ্গাল!র রাষ্ট্রনৈতিক নেতৃগণ যেমন রাজনৈতিক ক্ষেত্রে 
সমস্ত ভারতময় প্রভাব বিস্তার করিয়াছিলেন, তেম্নি সংবাদপত্র 
প্রতিষ্ঠা করিয়। এবং সুন্দরভাবে তাহ! পরিচালন। করিয়া সমস্ত 
সমাজের মধ্যে অসামান্য শক্তির সঞ্চার করিয়াছিলেন। আর 
শুধু বাঙাল! দেশেই যে বাঙ্গালীরা সংবাদপত্র নিয়ন্ত্িত করিতেন, 
তাহা নহে । ভারতের অন্তান্য প্রদেশে- পঞ্জাবে আগ্রা- 
অধোধ্যা প্রদেশে, আরও নানা স্থানে, বাঙ্গালী সম্পাদক ও 
বাঙ্কালী সংবাদপত্র-পরিচালক নিজেদের প্রতিভা ও কন্মশক্তি- 
বলে বাঙ্গালার গৌরব বদ্ধিত করিতেন । আর আজ কলিকাতার 
বুকের উপরে একটির পর একটি করিয়া বাঙ্গালীর সংবাদপত্র 
তাহাদের হস্তচ্যুত হইয়া যাইতেছে । কি শোচনীয় অবস্থা ! 


&০ 


ম্বাঙ্গালীন্ম”গানজ্রক্ক। 


শুধু ফে-গ্রই সেদিন 44০০?০৩ কাগজখানি এইরূপ হস্তচ্যুত 
হইয়া গেল তাহা নহে, বিগত কয়েক বৎসরের মধ্যে কতগুলি 
লব্বপ্রতিষ্ঠ ইতিহাস-প্রসিদ্ধ কাগজ যে হস্তাস্তরিত এবং ছুর্ঘশা- 
গ্রস্ত হইয়াছে তাহ? ভাবিলে আশ্চর্য হইতে হয়। 

সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য দেশপূজ্য সুরেন্দ্রনাথের 767 £815৩ ; 
তিনি রাজনীতিক্ষেত্র হইতে অবসর গ্রহণ করিবার পর ' হইতে 
সে কাগজ রক্ষা করিনার তেমন চেষ্টা আর কেহই করিল না, 
কিছুর্দিন অ-বাঙ্গালী বিরল ও শন্মার হাতে টিম্টিম্‌ করিয়া 
চলিয়া পরে একেবারেই উঠিয়া গেল। এখন আর তাহার 
চিহুমাত্র নাই ? তাহারই ভগ্মীবশেষের উপর 'এখন মুসলমানগণের 
9167০ 177014-র নক্ষত্রভাতি শোভা পাইতেছে। অথচ 
বাঙ্গালী হিন্বুগণের মধ্যে ধনী গুণী জ্ঞানীর অভাব নাই। 
তারপরে উল্লেখযোগ্য পণ্ডিত শ্যামনুন্দর চক্রবন্তী মহাশয়ের 
58747 সংবাদপত্র । কয়েক বৎসর, বিশেষতঃ অসহযোগ 
আন্দোলনের সময়ে, খুব জোরের সঙ্গে চলিয়া ধীরে ধীরে বন্ধ 
হইয়া গেল। তারপর ৬চিত্তরঞ্জন দাস মহাশয়ের 1০77--- 
ইহার বিচিত্র কাহিনী ত সকলেরই মনে আছে । কত রকম- 
ফেরই ঘষে ইহার হইল ! 1075947 বন্ধ হইয়া হইল 16 
1207507, তারপর 1,478, আবার 1০77৫ ! কতবারই 
যে এই কোম্পানী গণেশ উল্টাইল তাহার ইয়ত্তা নাই, এখন 
কোনমতে কায়ক্লেশে সপ্তাহান্তে আত্মপ্রকাশ করিয়া দিন 
গুজরান করিতেছে । 


৪১ 


তক্ুণিম। 


কি ছঃখের বিষয়! এখন মাত্র গুটি ছুই তিন সংবাদপত্র 
বাঙ্গালীর পরিচালনায় সুশৃঙ্খলভাবে চলিতেছে । এপ্রকার 
ইতিহাসের পর ইহা আর আশ্চধ্যের বিষয় কি যে বাঙ্গালীকে 
কেহ আর আজকাল গ্রাহোর মধ্যেই আনে না? কেন গ্রাহা 
করিবে ? বাঙ্গালার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান, 
যাহাতে বাঙ্গালী এযাবৎ প্রভূত্ব করিয়া আসিয়াছে, সেই সব 
পর্ধ্যস্ত আজকাল অ-বাঙ্গালীর অর্থে পুষ্ট, প্রতিপালিত এবং 
তাহাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও শাসিত হয়, বাঙ্গালীর আর লজ্জ। 
রাখিবার স্থান কোথায় ? 

বাঙ্গালার সাময়িক সাহিত্যের আর একট দিকের কথাও 
মাঝে মাঝে মনে হয়--প্রসঙ্গতঃ এই স্থলেই তাহা বলিয়া 
ফেলি। কথাটা হইতেছে 291165 সম্বন্ধে । দৈনিক সংবাদ- 
পত্রের কথ এস্থলে বলিতেছি না, বলিতেছি সাপ্তাহিক, কি 
পাক্ষিক, কি মাসিক পত্রিকাদির কথ।। 

আজকাল যদি নবীন ফাশন্মেসীর গাড়ীবারান্দার নীচে অথবা 
এস্প্লানেডের ট্রাম-শেডের ভিতরে ছুই চারি মিনিট দাড়ান তাহা! 
হইলেই দেখিতে পাইবেন কত বিচিত্র রকমের বিবিধ ঢংএর 
রং-বেরংএর সাময়িক পত্র রূপের পসরা লইয়। আপনার চক্ষু 
যেন ধাধাইয়া দিতেছে । আর সংখ্যাই ব! তাহাদের কত ? রোজই 
যেন ছুই একখানি নৃতন নৃতন পত্রিকার আবির্ভাব দেখা যায়। 
আবার হয়ত ছুই চারি সপ্তাহ বা মাস যাইতে না যাইতেই 
ইহাদের মধ্যে অনেকগুলিই অলক্ষ্যে তিরোহিত হয় । সে কথা 


৪২ 


ব্বাঙ্গালীক্স পজ্জিকা। 


যাক, এত অজস্র ফুল ফুটিলে যে তাহার অধিকাংশই ঝরিয়া 
পড়িবে, তাহাতে আর আশ্চর্য কি ? 

কিন্তু লক্ষ্য করিবার বিষয় এই, এত যে অগুন্তি পাত্র পুষ্পিত- 
পল্লবিত হইয়া আপাতদৃষ্টিতে বাঙ্গালীর মস্তিষ্ষের উর্ববরতাঁর 
পরিচয় প্রদান করিতেছে, ইহার মধ্যে 5212005-বিষয়ক পত্র 
কয়টি? একটিও আছে কিন! সন্দেহ । গল্প, উপন্যাস, নাটক 
ও চিত্রসংবলিত সাময়িক পত্রিকা ত থাকিবেই, এবং হয়ত 
অধিকাংশই এইরূপ হইবে--সব দেশেই হইয়া থাকে । কিন্ত 
গম্ভীর বিষয়ে চিন্তাপূর্ণ আলোচনার জন্য কি একখানি পত্রিকাও 
থাকিবে না? এইরূপ 52110935 পত্রিকার অভাব সমাজের 
মানসিক দৈন্যেরই পরিচায়ক । ইউরোপ ও আমেরিকায়, 
কত বিচিত্র রকমের তরল-সাহিত্য-সংবলিত পত্রিকার সঙ্গে 
সঙ্গে আবার কত 92110905 ধরণের পত্রিক। রহিয়াছে, ্বি6-, 
0656161) 0210005 2180 2021) [70160151015 1২০৬1০৮৮, 
০10 /£১70211027 ২০1০৮, 1596 ৫25 05047 770771053, 
প্রভৃতি__যাহাতে গল্প, উপন্যাস, চিত্র একদম থাকে না। 
অথচ সেই সব কাগজ ক্রেতার অভাবে উঠিয়। যায় নাই ; বরঞ্চ 
বিশ পঞ্চাশ বৎসর ধরিয়া সতেজে সেই সব কাগজ চলিতেছে । 

যদি কেহ বলেন যে পাশ্চাত্যের কথা স্বতন্ত্র সেখানে 
পাঠক-সমাঁজ অতিবিস্তত, অত পাঠক, অন্ততঃ গুরুগম্ভীর 
বিষয়ে অত পাঠক আমাদের দেশে নাই, সুতরাং আমাদের 
দেশে ওরকম কাগজ চল। সম্ভব নহে ; তাহা হইলে তদুত্তরে 


৪৩ 


তরুণিষা 


কি ছুঃখের বিষয় ! এখন মাত্র গুটি ছুই তিন সংবাদপত্র 
বাঙ্গালীর পরিচালনায় সুশৃঙ্খলভাবে চলিতেছে । এপ্রকার 
ইতিহাসের পর ইহা আর আশ্চর্য্যের বিষয় কি যে বাঙ্গালীকে 
কেহ আর আজকাল গ্রাহ্যের মধ্যেই আনে না? কেন গ্রাহা 
করিবে ? বাঙ্গালার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান, 
যাহাতে বাঙ্গালী এযাবং প্রভুত্ব করিয়া আসিয়াছে, সেই সব 
পর্য্যস্ত আজকাল অ-বাঙ্গালীর অর্থে পুষ্ট, প্রতিপালিত এবং 
তাহাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও শাসিত হয়, বাঙ্গালীর আর লজ্জা 
রাখিবার স্থান কোথায় ? 

বাঙ্গালার সাময়িক সাহিত্যের আর একটা দিকের কথাও 
মাঝে মাঝে মনে হয়--প্রসঙ্গতঃ এই স্থলেই তাহা বলিয়া 
ফেলি। কথাট। হইতেছে 0921165 সম্বন্ধে। দৈনিক সংবাদ- 
পত্রের কথা এস্থলে বলিতেছি না, বলিতেছি সান্তাহিক, কি 
পাক্ষিক, কি মাসিক পত্রিকাদির কথা! । 

আজকাল যদি নবীন ফান্মেসীর গাডীবারান্দার নীচে অথবা 
এস্প্রানেডের ট্রাীম-শেডের ভিতরে ছই চারি মিনিট দাড়ান তাহা 
হইলেই দেখিতে পাইবেন কত বিচিত্র রকমের বিবিধ ঢংএর 
রং-বেরংএর সাময়িক পত্র রূপের পসর! লইয়া! আপনার চক্ষু 
যেন ধাধাইয়া দিতেছে । আর সংখ্যাই বা তাহাদের কত ? রোজই 
যেন ছুই একখানি নূতন নৃতন পত্রিকার আবির্ভাব দেখা! যায়। 
আবার হয়ত ছুই চারি সপ্তাহ বা মাস যাইতে ন। যাইতেই 
ইহাদের মধ্যে অনেকগুলিই অলক্ষ্যে তিরোহিত হয়। সে কথা 


৪২ 


বাঙ্সালীন্ম পক্জিকা। 


যাক, এত অজত্র ফুল ফুটিলে যে তাহার অধিকাংশই ঝরিয়া 
পড়িবে, তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি? 

কিন্তু লক্ষ্য করিবার বিষয় এই, এত যে অগুস্তি পত্র পুষ্পিত- 
পল্পবিত হইয়া আপাতদৃষ্টিতে বাঙ্গালীর মস্তিষ্কের উর্্বরতার 
পরিচয় প্রদান করিতেছে, ইহার মধ্যে 56120905-বিষয়ক পত্র 
কয়টি? একটিও আছে কিন। সন্দেহ | গল্প, উপন্যাস, নাটক 
ও চিত্রসংবলিত সাময়িক পত্রিকা ত থাকিবেই, এবং হয়ত 
অধিকাংশই এইরূপ হইবে--সব দেশেই হইয়া থাকে । কিন্ত 
গম্ভীর বিষয়ে চিন্তাপূরণণ আলোচনার জন্য কি একখানি পত্রিকা 
থাকিবে না? এইরূপ 5210055 পত্রিকার অভাব সমাজের 
মানসিক দৈন্েরই পরিচায়ক । ইউরোপ ও আমেরিকায়, 
কত বিচিত্র রকমের তরল-সাহিত্য-সংবলিত পত্রিকার সঙ্গে 
সঙে আবার কত 9০110945 ধরণের পত্রিকা রহিয়াছে, বি 6-, 
€52170) 52000752100 26610, 701015151615 [২2৮1০ 
[0100 /১006101027 [২০৮৬1০৬৮, 1২6906 ৫5 0209 7101705, 
প্রভৃতি__যাহাতে গল্প, উপন্যাস, চিত্র একদম থাকে না। 
অথচ সেই সব কাগজ ক্রেতার অভাবে উঠিয়া যায় নাই ; বরঞ্চ 
বিশ পঞ্চাশ বংসর ধরিয়। সতেজে সেই সব কাগজ চলিতেছে । 

যদি কেহ বলেন যে পাশ্চাত্যের কথা! স্বতন্ত্র সেখানে 
পাঠক-সমাজ অতিবিস্তৃত, অত পাঠক, অন্ততঃ গুরুগন্ভীর 
বিষয়ে অত পাঠক আমাদের দেশে নাই, স্থুতরাং আমাদের 
দেশে ওরকম কাগজ চল। সম্ভব নহে ; তাহ হইলে তদুত্তরে 


৪৩ 


তর্ুলিসা 


এইটুকু বলিলেই বোধ হয় যথেষ্ট হইবে যে, গল্প-উপন্যাস 
চিত্রবজ্জিত গম্ভীরবিষয়ক প্রবন্ধসংবলিত সাময়িক পত্র বাঙ্গালা 
দেশে চল। ষে শুধু সম্ভব তাহা নহে, বস্তুতঃ বহু বৎসর পর্যন্ত 
সগৌরবে এই রকম পত্রিক' চলিয়াছিল। তবে তাহা আমাদের 
95০861% প্রগতিযুগের বাঙ্গালাতে নহে, ছুই এক পুরুষ পূর্বের 
গৌরবমণ্ডিত 5971005-17214০0 বাঙ্গালাতে চলিয়াছিল । 

সুবিখ্যাত ৬দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরী মহাশয়ের “নব্যভারত” 
এই ধরণের একখান খুব উচ্চাঙ্গের পত্রিকা ছিল। বোধ হয় 
পঁচিশ বৎসরেরও অধিক কাল আগাগোড়া ০015151 এবং 
52110705 প্রবন্ধাদি প্রকাশ করিয়া বাঙ্গালার চিন্তাশীল শিক্ষিত 
সমাজের ধ্যানের ও মনের খোরাক “নব্যভারত” যোগাইয়াছে । 
তাছাড়া, বঙ্কিমচন্দ্র “বঙ্গদর্শন”, অক্ষয়চন্দ্রের ওত 

“নবজীবন”, ঠাকুরবাড়ীর “সাধনা” ও “ভারতী”, 

সমাজপতির “সাহিত্য” নারীসমাঁজের জন্য জি 
“অস্তঃপুর” প্রভৃতি পত্রিকা গল্প ও উপন্যাসের চাহিদ। 
কিয়ৎপরিমাঁণে যোগাইলেও বিচিত্র প্রবন্ধ-সম্ত!রে বঙ্গীয় সমাজে 
লোকশিক্ষা বিস্তার করিয়াছে । এ সব পত্রিকায় প্রকাশিত 
প্রবন্ধার্দি এখনও পড়িলে বিস্মিত হইতে হয় যে কত গভীর 
বিষয়ে কত স্থুনিপুণ আলোচনা তন্মধ্যে সন্নিবিষ্ট রহিয়াছে । 

সেই সব পত্রিকা তাহাদের নিজ নিজ পাঠক-সম্প্রদায়ের স্যষ্টি 
করিত ; শুধু বিকৃতরুচি গড্ডলিকা-প্রবাহের কলিত মনোরঞ্জন 
করিবার নিমিত্ত সেই সব পত্রিক! তাহাদের আদর্শচ্যুত হইত ন1। 


88 


ব্বাঙ্গালীক্ম পত্রিকা! 


আজকাল শুধুই শুনিতে পাই 5:89915 210. 061091)0-এর 
বুলি- লোকের চাহিদ। অন্ুসারে মালের যোগান দিতে হইবে । 
কাজেই ব্যাপারও ছ্াড়াইয়াছে একেবারে “বাজারিয়া” অথবা 
1061521791২ এমন সম্পাদক ব! পত্র-পরিচালক পাওয়া ছুর্ঘট 
হইয়া পড়িয়াছে যিনি বিকৃত রুচি বা ইতর মনোবুত্তির প্রতি 
পৌরুষের সহিত তীব্র কশাঘাত করিতে সাহস পান__যেমন 
পাইতেন বঙ্কিমচন্দ্র, স্বরেশচক্দ্র, দেবীপ্রসন্ন । সেই মেরুদণ্ডেরই 
যেন একান্ত অভাব ঘটিয়াছে। কাজেই সকলেই যেন একই 
শআ্োতে গ! ঢালিয়া দিয়াছে । স্থতরাং সাময়িক সাহিত্যও 
একঘেয়ে অন্তঃসারশুন্ত বৈচিত্র্যহীন আদর্শ-বিবজ্জিত হইয়া 
চলিয়াছে। বাঙ্গালী সমাজের ০০109191 অবনতির ইহা! আর 
একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন | 

তাই এই প্রশ্নই শুধু মনে আসে, এই যে সব্বাজীণ 
06০8901,০০ বা অধোগতির আ্োত--যাহার কতক পরিচয় 
বাঙ্গাল। সাময়িক সাহিত্যের এই অতি সংক্ষিপ্ত আলোচনায় 
প্রদত্ত হইল-_-এই আ্রোতের গতিরোধ করিবার একাস্তিক 
প্রচেষ্টা কি বাঙ্গালী করিবে না? না করিলে বাস্তবিকই 
বাঙ্গালীর ভবিষ্যৎ ভয়াবহ ও নিবিড-নৈরাশ্যপূর্ণ । 


আশ্বিন, ১৩৪২। 


লবঙ্গস্না্ছিভ্যে অকন্ব্ালীনল ব্ুগ্গ 


বঙ্গসাহিত্যে অর্ধাচীন যুগ 


[ রাচি বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মেলনের পঞ্চম বাধিক অধিবেশনে 
সভাপতির অভিভাষণ ] 


আজ রাচির বঙ্গ-সাহিত্য-সম্মেলনের বাধষিক অধিবেশনে 
আপনারা! যে আমাকে সভাপতিপদে বৃত করিয়াছেন তজ্জন্য 
আমি আপনাদিগকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞত। জ্ঞাপন 
করিতেছি । আপনাদিগের এই নিব্বাচনে আমি নিজেকে 
সাতিশয় গৌরবান্িত বোধ করিতেছি সন্দেহ নাই; কিন্তু 
একথাও সত্যের খাতিরে বলা আবশ্যক যে এই সম্মান গ্রহণ 
করিতে আমি অত্যন্ত সঙ্কোচ অন্নুভব করিতেছি । 

এই সঙ্কোচের অনেক কারণ আছে । প্রধান কারণ এই যে 
যদিও কারণে ও অকারণে, সময়ে ও অসময়ে, আমার লিখন- 
কণ্ডতি জাগিয়া উঠে, এবং তাই মাঝে মাঝে লিখিয়াও ফেলি, 


৪৯ 


তরুণিম। 


কিন্ত তাই বলিয়া যে আমি একেবারে সাহিত্যিকের পদবীতে 
উন্নীত হইয়া গিয়াছি একথ। আমি নিজে অন্ততঃ মনে করি ন! । 
আর দ্বিতীয় কারণ এই যে, আজ এই নগরে এবং এই সভাতে 
আমার অপেক্ষা স্থপরিচিত, বয়োবৃদ্ধ এবং জ্ঞানবৃদ্ধ বহু ব্যাক্তি 
উপস্থিত আছেন, সভাপতির গুরুভার তাহাদের কাহারও উপর 
স্যস্ত হইলেই সর্বতোভাবে শোভন হইত | 

সে যাহাই হউক, আমার মত অব্যবসায়ী ব্যক্তিকে যে 
আপনার! সাহিত্যসভার পুরোহিত রূপে বরণ করিলেন, ইহাতে 
আমি স্থানমাহাত্ম্যই প্রকট দেখিতেছি ; কারণ আপনার জানেন 
আশ করি উপস্থিত বন্ধুগণ আমার এই কথাতে মনংক্ষুগ্ 
হইবেন না_যে রাচি সহরের একুটি বিশেষ খ্যাতি আছে, 
এবং তন্দরুণ এখানে যে প্রকৃতিস্থ ভাবে, 5206 ভাবে, কেহ 
কিছু করিবে এ রকম বড় কেহ একটা প্রত্যাশ। করেন না । 
সুতরাং, অপরং কিং বা ভবিষ্যতি ? 

কিন্ত রশচি শহরের লোকেরা আমি বিশেষতঃ র'চি- 
প্রবাসী বাঙ্গালীদের কথাই বলিতেছি--581)-ই হউন বা 
তদ্ধিপরীতই হউন, তাহাদের মধ্যে বন্ধুপ্রীতি, দেশব্রীতি ও 
সৌহার্দ্যবন্ধনের অভাব নাই। আমি এই যে অল্প কয়েকটি 
দিন রাঁচিতে কাটাইয়াছিঃ তাহাতেই এবিযয়ে আমার দৃঢ় 
প্রতীতি হইয়াছে । রখচিবাসী বাঙ্গালীকে প্রবাসী বাঙ্গালী 
বলিতে আমার মোটেই অভিরুচি হয় না, প্রত্যুত মনে বড়ই 
ব্যথা লাগে। বস্ততঃ পঁচিশ বৎসর পুর্ব্বেও তাহার প্রবাসী 


৫৬ 


হঙ্গসাহিতত্য অশ্বালীন ষুগ 


বাঙ্গালী ছিলেন না, বাঙ্গাল! মায়ের ঘরের ছেলেই ছিলেন; বৃহত্তর 
বঙ্গের প্রত্যস্তদেশে তাহার। বাঙ্গালীর প্রতিভা, বাঙ্গালীর 
কর্মশশক্তি, বাঙ্গালীর সভ্যতার প্রকৃষ্ট পরিচয় প্রদান করিতেন, 
এবং যথেষ্ট সম্ত্রম ও সম্মানের পাত্র ছিলেন । রাজশক্তির এক 
অভাবিত-পূর্ব্ব বিধানে অকম্মাৎ বঙ্গমাতার ক্রোড় হইতে বিচ্যুত 
হইয়া আজ এই স্থান 13675016 :87750614-তে পরিণত 
হইয়াছে, স্বদেশী বাঙ্গালী প্রবাসী .বাঙ্গালীতে পরিণত হইয়াছে । 
বাঙ্গালীর এই সমস্ত উপনিবেশ এখন আশ্রয়চ্যুত হইয়! যেন 
“ন ঘরকা ন ঘাটকা” অবস্থায় আসিয়। দাড়াইয়াছে। বাঙ্গালীর 
পক্ষে ইহা গভীর পরিতাপের বিষয় । 

তবে কোন ছুঃখ কোন কই জগতে অবিমিশ্র নহে ; তাহা 
হইলে এ সংসারে জীবন-যাপন ছুর্বহ হইয়া উঠিত। স্বদেশ 
ও স্বজন হইতে বিচ্ছেদের এই গভীর মন্মব্যথার মধ্য দিয়াও 
একটা। বস্ত ধীরে ধীরে মহৎ কল্যাণরূপে আত্মপ্রকাশ করিতেছে ; 
এবং সেই কল্যাণরূপটিই আমাকে এ কয় দিন মোহিত 
করিয়াছে । সে কল্যাণটি এই যে এই প্রবাসের অন্ভূতি, এই 
বিচ্ছেদের বেদনা! হইতেই বোধ করি আজ এই দেশে যে সমস্ত 
বাঙ্গালী রহিয়াছেন তাহাদের মধ্যে স্েহের বন্ধন, প্রীতির যোগ, 
সহানুভূতি ও সমবেদনা র সুত্র অতি আন্তরিক ও নিবিড় হইয়া 
উঠিয়াছে। বাঙ্গালীর সর্ধববিধ আচার-অনুষ্ঠান, পৃজা-পদ্ধতি, 
সংস্কার-সভ্যত। তাহারা এমন ভাবে, আপনার করিয়া লইয়াছেন, 
এমন সন্দেহের সহিত আকড়িয়া ধরিয়াছেন্? যে বোধ. করি 


৫৭. 


'ভব্র্ণিস! 


বাঙ্গালাতে থাকিলে এভট। হইত্ত.না। এই সেদিন শারদীয়া 
৬ছুর্গাপূজ! সমাপনান্তে বিজয়া-দশমীর জ্যোতস্নাপুলকিত সন্ধ্যায় 
বাগীতটে প্রতিম।-বিসর্জনের সময়ে প্রবাসী বাঙ্গালীর আবাল- 
বৃদ্ধবনিতার যে সপ্ুলক সমাবেশ, যে উৎসবমুখর কোলাহল 
দেখিয়াছি, তাহাতে. এই কথাটাই আমার মনে বারংবার উদ্দিত 
হইয়াছে । বাঙ্গালার গৌরবময় স্বদেশী আন্দোলনের যুগের 
সন্ধিক্ষণে কবি রবীন্দ্রনাথ মে আশীর্ববাণী উচ্চারণ:করিয়াছিলেন £ 
“বাঙ্গালীর প্রাণ, বাঙ্গালীর মন, 
. বাঙ্গালীর ঘরে যত ভাই বোন, 
এক হউক, এক হউক, এক হউক, 
হে ভগবান্‌ !? 

দেই পুণ্য আশীবর্বাদ এবং একান্ত প্রার্থনা আজ যে বর্তমান 
বাঙ্গালার বাহিরে এমনভাবে পুর্ণ ও সফল হইয়াছে, ইহ 
সন্দর্শন করিয়া কত আনন্দে যে আমার হৃদয় ভণরয়া। উঠিয়াছে, 
তাহা ভাষায় প্রকাশ করা দৃক্ষর। আমি কেবল এই প্রার্থন। 
করি, এই দৃশ্য চিরন্তন হউক, এই চিত্র অক্ষয় হউক, এই ক্েহের 
বন্ধন অটুট হউক ।. 

আজ সাহিত্য-সম্মেলনে আমরা উপস্থিত। আজ এখানকার 
প্রবাসী বাঙ্গালীগণ স্বতঃই স্বদেশের সাহিত্য-সন্দেশের কিঞ্চিৎ 
স্বাদ পাইবার জন্য:সমুৎস্ুক 1, তাহারা নিজের! বিদেশে পড়িয়া 
রহিয়াছেন, নান। ক্ষম্মকাধ্যে ব্যাপুত রহিয়াছেন, জীবিকানি্র্বাহ- 
প্রচেষ্টায় অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্যে 'ভাহারা অল্পই সময় পান. 

৫ 


বঙ্গ সাহিচত্য আশ্বালীন যুগ 


সাহিত্যের খবর লইতে, হয়ত বিরল জবকাশে সামান্য ছিটা- 
ফোটা মাত্র আহরণ করিবার ফুরসৎ পান-”আমি অবশ্য মোটা- 
মুটি কর্থক্লাস্ত চাকুরীজীবী অথবা ব্যবসায়রত বাঙ্গালীর কথাই 
বলিতেছি, অবসরসম্পন্ন অপেক্ষাকৃত সম্দ্ধ সাহিত্যরসিক প্রবাঁণ, 
জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিদিগের কথা বলিতেছি না। বোধ করি 
সেই জন্যই, যখন ৬পুজাবকাশে বাঙ্গাল। দেশ হইতে অনেক গুণী 
ও জ্ঞানী ব্যক্তি ভরমণোপলক্ষ্যে রাঁচিতে সমাগত হন, এবং 
ইহারাও সার৷ বছরের হাড়ভাঙ্গ। খাটুনী হইতে একটু ছুটি পান, 
তখন ইহাদের মনে এই ইচ্ছাই জাগিয়া.-উঠে, "পাচ জন বাহিরের 
লোককে লইয়। একটু সাহিতণালোচন। করিলে, একটু বাঙ্গাল! 
দেশের খবর লইলে, বাঙ্গালা মারের স্পেহনিবিড় ক্রোড়খানির 
একটু স্পর্শ আবার পাইতে পারিলে মন্দ কি? সময়ট। ব্ড় 
আনন্দে কাটান যায়ঃ উপকারও হয় প্রচুর । আমার মনে হয়, 
প্রবাসী হৃদয়ের এই আকাজক্ষ। হইতেই আপনাদের বাধিক 
সাহিত্য-সম্মেলনের উদ্ভব, এবং এই আকাঙ্ক্ষা অতি স্বাভাবক ও 
অতি সুন্দর ৷ 

সুতরাং কলিকাত। হইতে আগত একজন বন্ধুর মুখে দেশের 
চিন্তাধারার একটু পরিচয়, বাঙ্গাল! সাহিত্য এখন কি ভাবে 
কোন্‌ মুখে চলিতেছে সেই বিষয়ে একটু বিবৃতি, ইহ পাইবার 
জন্য আপনার স্বভাঁবতঃই উৎসুক | পুব্রধেই বলিয়াছি ষে আমা- 
অপেক্ষা যোগ্যতর ব্যক্তিকে পাকড়াইলে সে পরিচয় ও বিবৃতিটুকু 
আরও পূর্ণ তর ও ন্মুন্দযনতর ভাবে আপনার। ,প্াইতেন। তবে 


উড. . 


ভক্ুুপিসা 


অ।পনাদের কৃতকণ্মের. ফল আপনাদিগকে নিশ্চয়ই ভোগ করিতে 
হইবে। “মধ্বভাবে গুড়ং, দদ্যাৎ”" নীতি অনুসারে আমার নিকট 
হইতেই যাহা হউক কিছু আপনাদিগকে শুনিতে হইবে । 
আমিও সংক্ষেপেই এবিষয়ে ছুই একটি কথা আপনাদের কাছে 
বলিতে চেষ্টা করিব। আঁশ! করি আপনাদিগের ধৈর্যাচ্যুতি 
ঘটাইব না। 8 

প্রথমেই আমার কিন্তূ. একটু দ্বিধায় পড়িতে হইতেছে । 
লোকে সু-খবর 'শুনিবার জন্যই বাগ্র হইয়। থাকে, এবং স্থ-খবর 
দিতেই লোকে পঞ্চমুখ হইয়! থাকে ; কিন্তু খবর যদি ভাল না 
হইয়া মন্দ হয়, তবে সে প্রকার সন্দেশ বিতরণ করা বড় 
লোভনীয় মনে হয় না। তাই আমার কিঞ্চিৎ দ্বিধা বোধ হইতেছে । 
দ্বিধার কারণ এই যে আমি বাঙ্গাল সাহিত্যের যেট্রকু সংবাদ 
রাখি-_-এবং সংবাদ কিছু কিছু যে রাখি তাহাঁও ঠিক-_-তাহাতে 
আমার ধারণ এই যে, সংবাদ অশুভ। বিগত কয়েক বৎসর 
ধরিয়া বাঙ্গালার সাহিত্যিক প্রচেষ্টা যে দিকে ক্রমশঃ চলিতেছে, 
সাহিত্য-রচনার ধার! ঘষে খাতে প্রবাহিত হইতেছে এবং ইদানীং 
কিছু দ্রুত গতিতেই প্রবাহিত হইতেছে, আমার ধারণা যে তাহা 
দেশের ও জাতির কল্যাণের দিকে নহে, পরস্ত দারুণ ছুর্গীতি ও 
অধঃপতনের দিকে লইয্বা ঘাইতেছে। 

কথাটা অত্যন্ত রূঢ় ও কঠোর শুনাইতেছে সন্দেহ নাই; 
কিন্ত আমার বিশ্বাস ষে ইহ! অতি রূঢ় ও কঠোর সত্য। এক 
এক সময় মনে 'হয়, এবং 'রাচিস্থ ছুই একটি বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে 


৫৪8 


ন্বঙ্গসাহ্ছিত্য অর্শ্বাচীন মুগ 


কথা-প্রসঙ্গে বোধ হয় এভাব আমি ব্যক্তও করিয়াছি ষে, 
যে পঙ্কিল আবর্তের মধ্যে আজ বাঙ্গাল! সাহিত্য হাবুডুবু 
খাইতেছে, কলুষ-কালিম। অঙ্গের ভূষণ করিয়া ষে বীভৎস উলঙ্গ 
নৃত্য বঙ্গসরস্থতীর উপবনে আরম্ভ হইয়াছে, সে পঙ্কিলতা ও সে 
বীভৎসতার সংস্পর্শে আপনাদের যে বিশেষ আসিতে হয় নাই, 
ইহা আপনাদের পক্ষে বিশেষ সৌভাগ্যের কথা । কিন্তু বাঙ্গাল। 
দেশে ত সংস্পর্শ বীচাইয়া। চল। ছুষ্ষর ; যেখানটায় হাত পড়ে, 
সেইখানটাই দেখি কালি-মাখান পচ। পরু্তষিত ন্যক্কারজনক । 
ত্য কথ! বলিতে, বাঙ্গালাদেশে, বঙ্গীয় সমাজে এ এক বিষম 
বিপদ্‌ উপস্থিত । 
আপনার হয়ত মনে করিতেছেন, কথাটা অতিরঞ্জিত, কিন্তু 
তাহা নহে। আমি সংক্ষেপেই বলিব, কিন্ত একটু পরিষ্কার 
করিয়। বলিতে চেষ্টা করিব। 
বাঙ্গালাদেশে বাঙ্গাল! সাহিত্য এক অতি গৌরবের সামগ্রী ॥. 
আমাদের দেশে রাষ্্ীয় পরাধীনতা। ও নান বিড়ম্বনা সত্বেও এই 
সাহিত্যের মধ্য দিয়া বিগত দেড় শতাব্দী ধরিয়া জাতীয় 
সাধনাকে, জাতীয় আদর্শকে, জাতীয় রসবোধকে প্রস্ফুটিত ও 
সংরক্ষিত করিবার চেষ্টা অব্যাহত ভাবে চলিয়া আসিতেছে; কত 
লোকশিক্ষার আয়োজন এই সাহিত্যের মধ্য দিয়াই হইয়াছে ; 
আর এই সাহিত্যের মধ্যে বাঙ্গালীর বহুমুখী প্রতিভ। কত বিচিত্র 
রকমে ক্ফৃত্তি পাইয়াছে। মধ্যযুগের বৈষ্ণব-গীতিমুখরিত বাঙ্গালা- 
সাহিত্যের কথা! না-ই বলিলাম, আধুনিক ব্রিটিশ যুগের কথাই 


৫৫ 


ভক্ুণিচ্সা 


বলি।*'রাজবি রামমোহন, মহষি দেবেন্দ্রনাথ, রাজা রাজেন্দ্রলাল, 
পণ্ডিত মৃত্যুঞ্জয় হইতে আরম্ত করিয়। প্রাতঃম্মরণীয় বিদ্যাসাগর, 
অক্ষয়কুমার, মধুন্দন, ভূদেব, পাযারীচাদ, রঙ্গলাল, বঙ্কিমচন্দ্র, 
দীনবন্ধু, অক্ষয়চ্দ্র, রাজকৃষ্ণ, নবীনচন্দ্র, হেমচন্দ্র, রমেশচন্দ্র, ন্দ্রনাথ, 
ইন্দ্রনাথ, কালী প্রসন্ন, শশধর, কেশবচন্দ্র, রাজনারায়ণ, শিবনাথ, 
অশ্বিনীকুমার, স্বামী বিবেকানন্দের মধ্য দিয়া, গিরিশচন্দ্র, 
অম্ৃতলাল, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, সতোন্দ্রনাথ, দেবকুমার, 
প্রভাতকুমার, সুরেশচন্দ্র প্রমথন'থ, অতুলপ্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ 
পর্যন্ত এই সাহিত্যের ধার। অবিচ্ছিন্ন ভাবে চলিয়। আসিতেছে । 

এই সমস্ত প্রাতঃস্মরণীয় সাহিত্যক্সষ্টাদিগের সকলেরই রুচি 
যে একই প্রকার ছিল, প্রচেষ্টা যে একমুখী ছিল তাহা৷ নহে, 
নানা বিভিন্ন দিকে, নান! বিভিন্ন রীতিতে ইহাদের বিচিত্র 
প্রতিভা প্রকাশ পাইয়াছে। কেহ পছ্যে, কেহ গছ, কেহ 
কাব্যে, কেহ নাটো, কেহ গাঁনে, কেহ সমালোচনায়, কেহ প্রবন্ধে, 
কেহ উপন্য'সে, কেহ ছোট গল্পে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছেন ; 
কাহারও রচনা ভাঁবগন্ভীর, কাহারও রচনা হাম্তচটুল ₹ কেহ 
সনাতনপস্থী, কেহ পাশ্চাত্যপন্তী । এইরূপ নানা ভাবের, নানা 
রুচির, নানা রীতির সমাবেশেই বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বিচিত্র 
রত্বসস্তারে সমৃদ্ধ হইয়া উঠিয়াছে, এবং আজ জগতের সাহিতা- 
সভায় স্থান পাইবাব অধিকারী হইয়াছে । কিন্তু এই সমস্ত 
বৈচিত্রের মধ্যেও একটি একাধারা অন্তঃসলিল। ফল্তধারার 
স্টায় “নিরন্তর প্রবাহিত হইয়াছে । সেই এঁক্যধারাটি এই যে, 


৫৬ 


্বঙ্গসাহিত্ত্যে অস্ত্বালীন ষুগ 


এই সমুদয় সাহিত্যপ্রচেষ্টাই সমাজের ও দেশের কল্যাণ গ 
স্বাস্থেযর উন্নতিকল্পেই নিয়ে।জিত ছিল | ছুই একটি উদাহরণ দ্রিই। 
বাঙ্গালাদেশে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মনীষীরা 


দেখিলেন যে লোকশিক্ষাকল্ে বাঙ্গাল ভাষায় নানাবিধ জ্ঞান- 
বিজ্ঞানের কথ। রচনা কর। আবশ্যক ; তাই রাজ। রাজেন্দ্রলালের 
“বিবিধার্থ-সংগ্রহ”? হইতে আরন্ত কৰিয়। বঙ্কিমচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক 
প্রবন্ধাবলী পর্যযস্ত কত শিল্ষা-গ্রন্থই রচিত হইল। 


অন্তঃপুরে স্ত্রীশিক্ষ' প্রচারের আবশ্যকতা অন্ুভূত হইল, 
অম্নি তৎসাহাযাকল্ে স্ত্রীপাঁঠা কত পত্রিকা প্রকাশিত হইল, 
“অস্তঃপুর,” “বামাবোধিনী-পত্রিকা,” “ভারত-মহিলা” প্রভৃতি 
_ আজকালকার উদীয়মান তরুণ-সমজে বোধ করি ইহাদের 
নামও অপরিচিত। কি সুন্দর ছিল ইহাদিগের প্রবন্ধীবলী ! 
কত মহৎ আদর্শ, যাহ। সমাজকে পরিবারকে কল্যাণ শ্রী-মণ্ডিত 
করে, ইহাদিগের পত্রে পত্রে প্রতিফলিত হইত ! 


তারপর প্রাচ্য ও পাশ্চাতোর সজ্ঘাতে কত ধনম্মান্দোলেন, 
কত সমাজসংস্কার-প্রচেষ্টা আরম্ভ হইল বাঙ্গালার বকে । সেই 
সকল প্রচেষ্টা ও আন্দোলনই সাহিত্যে ছাপ রাখিয়া গিয়াছে, 
এবং তাহার ফলে সাহিতা কত সমৃদ্ধ হইয়াছে । ব্রহ্মানন্দ 
কেশবচন্দ্রের “জীবন-বেদ” এবং প্রার্থনীবলী, আচাধ্য শিবনাথের 
বক্তৃতা ও কবিতাবলীদম্বামী বিবেকানন্দের অগ্নমাদ্গারী রচনাবলী, 
বিদ্যাসাগর মহাশয়ের স্গম্ভীর সুযুক্তিপূর্ণ অথচ স্মুললিত 


€৫৭ 


তব্ণিমা। 


গ্রস্থাবলী, এই সমস্ত বাঙ্গালার মনীষাকে কত সংস্কৃত, কত 
মাজ্জিত, কত পরিণত আকার দান করিয়াছে, তাহা ভাবিলে 
আশ্চর্য বোধ হয়। 

তারপর আসিল রাজনৈতিক জাগরণের যুগ--কবি রঙ্গলাল 
তাহার “ম্বাধীনতা-হীনতায় কে বাচিতে চায় রে কে বাঁচিতে 
চায়” গীতিতে যে জাগরণের প্রথম উদ্বোধন করিয়াছিলেন-_- 
বস্কিমচন্দ্র তাহার “আনন্দমঠ” ও “দেবী চৌধুরাণী”তে দেশভক্তি 
ও নিষ্কাম সাধনার উদাত্ত মন্ত্রে _হেমচন্দ্র তাহার “বাজ রে শিঙ্গা 
বাজ. এই রবে” “বারেক এখনও কিরে দেখিবি না চাহিয়া” 
প্রভৃতি চিত্বোন্নাদকারী গীতিকার তৃর্ধ্যনিনাদে,_নবীনচন্দ্ 
“রৈবতক”-“কুরুক্ষেত্র”-প্প্রভাস”"-এ ধন্মরাই্রসংস্থাপনের বিরাট 
আদর্শে, “রজমতী”তে মহারাষ্ট্রসমরে বঙ্গীয় যুবক বীরেন্দ্রনাথের 
অলৌকিক বীরত্বগাথায়, “পলাশীর যুদ্ধ”-এ আম্রকাননে কামান- 
গঙ্জনের সঙ্গে সঙ্গে, রমেশচন্দ্র “রাজপুত জীবন-সন্ধ্যা” ও 
“মহারাষ্ট্র জীবন-প্রভাত”-এর অরুণরাগরঞ্জিত গৌরবোজ্জল 
চিত্রোন্মেষ সহকারে-__যে রাত্বীয় নবজাগরণের আবাহন 
করিয়াছিলেন__সেই জাতীয় জাগরণে সাহিত্যের দান কি কিছু 
কম ছিল? আজ ভাবিলেও বিস্মিত হইতে হয়, বাঙ্গালী 
লেখকের কোন উপন্যাসের অন্তর্গত একটি সঙ্গীত আজ সমগ্র 
ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বলিয়। পরিগণিত হইয়াছে । এই অমর 
সঙ্গীত “বন্দে মাতরম্”-এর ইতিহাস এক কথায় আমাদের 
রাষ্থীয় প্রচেষ্টায় সাহিত্যের দানের ইতিহাস বলিলেই হয়। 


৫৮ 


ববঙ্গসাহিতত্য অর্বীলীন যুগ 


তারপর আসিল যুগাস্তর-কারী স্বদেশীর যুগ । রবীন্দ্রনাথের 
“সার্থক জনম মাগো জন্মেছি এই দেশে, 
সার্থক জনম মাগে। তোমায় ভালবেসে” ; 
দ্বিজেন্দ্রলালের 
“কিসের ছুঃখ, কিসের দৈন্য, কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ, 
বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ” ? 
রক্তনীকাস্তের 
“আমর! নেহাত গরীব, আমরা নেহাঁৎ ছোট, 
তবু আছি সাত কোটি ভাই জেগে ওঠো”; 
অশ্বিবীকুমারের 
“অগ্নিময়ী মাগো আজি, ডাকি সকলে মা” ; 
আরও কত শত খ্যাতনামা ও অখ্যাতনামা কবি ও লেখকের কত 
লেখা, কত কবিতা, কত সঙ্গীত বাঙ্গালার বুককে উচ্ছ,সিত, 
তরঙ্গিত করিয়া তুলিয়াছিল, আজ ত্রিশ বংসর পরেও তাহার 
রেশ যেন থাকিয়া থাকিয়। বাঁজিয়া উঠিতেছে। নিজেকে ধন্য 
মনে করিতেছি, সৌভাগ্যবান মনে করিতেছি যে বাঙ্গালার 
স্বদেশী যুগের সেই গৌরবময় আদর্শের সহিত কিঞ্চিম্াত্রও 
পরিচয় লাভের সুযোগ আমার ঘটিয়াছিল। সাহিত্য সমাজকে 
কি করিয়া তুলিতে পারে, জাতীয় আদর্শকে কি রকম উজ্জ্বল 
করিয়। তুলিতে পারে, কত শুষ্ক তরু সাহিত্যের যাছদণ্ড-স্পর্শে 
পত্রে পুষ্পে পল্পবে মুগ্তরিত হয়, এবং সমাজ-সাধনা ও সামাজিক 
সাহিত্য পরস্পরের অভিঘাতে কি পরিমাণে সমৃদ্ধ ও শক্তি” 


৫৯ 


তকণিস। 


সম্পন্ন হুইয়া উঠিতে পারে, বাঙ্গালার স্বদেশীযুগই তাহার 
নিদর্শন । 

আমার বক্তব্য বোধ হয় কতকটা সুপরিস্ফুট হইয়াছে । 
বক্তব্য এই যে বঙ্গীয় প্রতিভ। সাহিত্যকে সমাজের কল্যাণসাধনের 
উপকরণরূপে, সমাজের শক্তি, স্বাস্থ্য ও সম্দ্ধিবদ্ধনের অস্্রূপেই 
ব্যবহার করিয়াছে ;ঃ শুধু একটা ব্যক্তিগত অসংঘত খেয়াল 
বা উচ্ছজ্খল লালসার প্রসাধনরূপে ব্যবহার করে নাই। 

সাহিত্য ও সমাজের সম্পর্ক কি, বাষ্টি ও সমষ্টির হিত- 
প্রচেষ্টার মধ্যে সীমারেখা কোথায়, সাহিতো নাতি ও ধন্দের 
কোন শাসন-বাধন মানা উচিত কিনা, এ সম্বন্ধে বু গবেষণা 
কর! যাইতে পারে, বহন গ্রন্থ রচিত হইতে পারে। বস্তৃতঃ নান। 
দেশে নানা সমাজে একদিকে আর্ট ও সাহিত্য ও ব্যক্তিস্বাতন্্, 
অপর দিকে ধন্ম ও নীতি ও সমাজকল্যাঁণ, ইহাদের পরস্পরের 
সম্পর্ক বা সম্পর্কের অভাব সম্বন্ধে বু আলোচনা হইয়। 
গিয়াছে, বন্থ গ্রন্থ রচিত হইয়াছে । আজিকার এই সভায় 
বর্তমান প্রসঙ্গে এই অতি জটিল বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনায় 
প্রবৃত্ত হইবার প্রয়োজন দেখি না । 

মোটামুটি এইটুকু বলিলেই যথেষ্ট হইবে ষে প্রচলিত নীতিও 
সামাজিক ব্যবহার-সংস্কার সমাজ-হিতের প্রয়োজন হইতেই উদ্ভূত 
হইয়াছে । তাই সমাজের বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন স্তরে নৈতিক 
'াদর্শেরও বিভিন্নত। পরিলক্ষিত হয়। বিশুদ্ধ বিবেকান্মোদিত 
£003505 এবং অভ্রান্ত' নৈতিক য়াপকাঠি কিছু আছে কিনা 


৬০ 


ন্বঙ্গসান্িত্ভ্যে অর্জশ্রাচীন যুগ 


জানি না__ইহ। [:001০5-এর মস্ত বড় একট! প্রশ্র- কিন্তু একথা 
ঠিক যে বহুকালব্যাগী অভিজ্ঞতাতে, বনু পিতৃপুরুষের প্রত্যক্ষ 
পরিচয়লব্ধ ব্যবহারে যে সমস্ত কর্মপ্রণালী সমাজ-বিধ্বংসী, 
৪1061-5090181) বা! সমাজের অকল্যাণকর বলিয়। প্রতিপন্ন হইয়াছে, 
ভাহাকেই পাপ বা দুর্নীতি ব। অপরাধ বলিয়! সাব্যস্ত কর! 
হইয়াছে । স্থুতরাং মানিতেই হইবে যে নীতিজ্ঞান ও ধন্মজ্ঞান 
সাক্ষাৎ দেবলোক হইতে যদি আগত না-ও হইয়! থাকে, তবু. 
পরম পবিত্র পিতৃলোক হইতে বংশপরম্পরায় প্রস্থত, বদ্ধিত, 
মাজ্জিত হইয়। আদিতেছে । 
“যেনাস্ত পিতরো বাত যেন যাতাঃ পিতামহাঃ । 
তেন যায়াৎ সতাং মার্গং তেন গচ্ছন্ন রিষ্যতে ॥* 

ইহাই নীতিধন্মের সনাতনতম ও আধুনিকতম ব্যাখ্যা । সমাজ- 
বিধ্বংসী যে নীতি তাহাই ছূন্নীতি । 

পূর্বেই বলিয়াছি বিভিন্ন অবস্থায়, বিভিন্ন সমাজে, হয়ত 
একই কম্মপদ্ধতি বিভিন্ন ফল প্রদান করে, তাই এক সমাজে 
এক সময়ে, যে নীতি অনুমোদিত হয়, অন্ত সমাজে কিংব! 
অন্য সময়ে সেই সমাজেই সেই নীতি বজ্জিত হয়। বিবাহাদি 
সামাজিক সংস্কারে ইহার যথেষ্ট উদাহরণ পাওয়। যায়-_-কোথাও 
একপত্বীত্বই (প্রচলিত, কোথাও বা বনহুপত্বীত্বও অনুমোদিত, 
কোথাও বা আবার বহুপতিত্বও প্রচলিত । 

কিন্ত এমন অনেক নীতি অনেক প্রচেষ্টা আছে যাহ চিরকাল 
ধরিয়া সমাজের অহিত প্রস্থ বলিয়! দেখা গিয়াছে.সকল সমাজে ৮" 


৬১ 


তর্ুণিম। 


এবং শুধু যে সমষ্টিহিসাবেই সমাজের অহিতপ্রস্থ তাহা নহে, ব্যষ্টি 
হিসাবেও অহিতপ্রন্থ । অর্থাৎ সেই সমস্ত অভ্যাস, সেই সমস্ত 
চেষ্টা ব্যক্তিকেও পঙ্গু, নিস্তেজ, অকন্মণ্য করিয়া তুলে, সমাজকে 
ত করেই ; স্থুতরাং তাহ! বিষবৎ পরিত্যাজ্য । 

এইবূপ সর্বধাঙ্গীণ অকল্যাণকর ব্যাপারের একটি প্রধান 
হইতেছে যৌন-উচ্ছ জ্বলতা । সেই জন্যই খষিগণ কামকে 
মানুষের উচ্চতর জীবনের প্রধান রিপু বলিয়া অভিহিত 
করিয়াছেন । বস্তুতঃ কাম--কিংব। ক্রোধ কিংবা লোভ-_ 
কোনটাই স্বরূপতঃ রিপু নহে, কিন্ত ইহাদিগের অসংযত ব্যবহার, 
যথেচ্ছ পরিচালনা, এক কথায় ইহাদিগের উচ্ছঙ্খল বিকারই 
মানুষের পরম রিপু। এইরূপ বিকারগ্রস্ত হওয়াতে কোনও 
বাহাছুরী নাই; কোন বিদ্রোহাত্মক দস্ত প্রকাশের অবকাশ 
ইহাতে নাই--ইহাতে বিদ্রোহের নামগন্ধও নাই, ইহা মানবের 
আদিম জৈব প্রবৃত্তির হস্তে আত্মসমর্পণ মাত্র । এই প্রকার 
আত্মসমর্পণের দ্বার। কি ব্যক্তি, কি সমাজ্জ, কিছুই শক্তিমান্‌ ও 
তেজন্বী হইতে পারে না-শ্নিস্তেজ নিববীর্ধ্য ক্লীবত্বেই ইহার 
পরিণতি । 

আমার এবিষয়ে এত কথ। বলিবার উদ্দেশ্য এই যে, বাঙ্গাল! 
সাহিত্যে আজকাল যে হাওয়া বহিতেছে, যে ধার৷ প্রবাহিত 
হইতেছে, তাহ। মোটামুটি এক কথায় বলিতে গেলে এই যৌন- 
উচ্ছজ্থলতার ধার। ; এবং এই কয়েক বসরের মধ্যে এই ধারার 
পৃঙ্কিলত। ও ক্লেদ অতি ন্যক্কারজনক ভাব ধারণ করিয়াছে । ভাল 


৮৬২ 


ব্ঙ্গসাহিঢত্য অস্বীচীন যুগ 


রচনা, ভাল কবিত। কি গল্প যে একেবারে বাহির হয় না তাহা 
নহে, কিন্তু সে সব এতই কোণঠাস। হইয়া পড়িয়াছে এই পৃতি- 
গন্ধময় আবর্জনার চাপে, যে তাহ বড় একটা চোখে পড়ে না ; 
এবং সর্বাপেক্ষা পরিতাপের বিষয় এই যে, নৃতন যে সব লেখক 
লেখনী ধারণ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন, ধাহাদের নিকট হইতে 
বাঙ্গাল। সাহিত্য অনেক কিছু আশ। করিতে পারিত, তাহাদের 
মধ্যে অধিকাংশই এই যৌনবিকারগ্রস্ত ৷ 

এক একবার মনে হয়, অতি কুক্ষণেই কবি রবীন্দ্রনাথ 
তাহার সবুজের অভিযানে তরুণকে ডাক দিয়। বলিয়াছিলেন, 

“ওরে নবীন, ওরে আমার কাচ। ! 
ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, 
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাঁচ1।” 

এখন সেই কাচ! সবুজের পুচ্ছোত্তলনকারী নৃত্য একেবারে সলোম 
(9819196) নৃত্যে পরিণত হইয়াছে! এই সব নর্তক-নর্তকীদিগের 
কাহারও কাহারও ছন্দের মনোহারিত্ব আছে, তাহার কুফল এই 
যে যৌন-বিকার আরও চিত্বাকর্ষক হইয়া উঠে, সামাজিক 
হিসাবে ইহারাই বেশী অনিষ্টকারী , কিন্তু অধিকাংশেরই ছন্দ- 
তান-লয়ের সহিত কোনও সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ এই জাতীয় 
অধিকাংশ তরুণ লেখকেরই রচনাকৌশল কিছুই নাই, ষন্বণত্ব- 
জ্তানেরও অভাব, তবে ইহারা জানে যে খুব মোট যৌন তারে 
ঘা দিলে তাহ বাজিবে বেশ এবং বিকাইবে বেশ, সুতরাং 
তাহার। এই প্রকার সহজিয়া-পন্থীই হইয়। দাড়াইয়াছে। 


ডও 


তক্ুণিস্া 


এই সেদিন ৬পুজার কয়েকদিন পূর্বে আমি এক দোকানে 
বসিয়। আজকালকার ফ্যাশান-মাফিক কয়েকখানি পত্রিকার 
পৃজা-সংখ্যা দেখিতেছিলাম। ইহার মধ্যে কয়েকখানি নাকি 
আবার ০০010700151500 বা 1191য01575 বা সাম্যবাদের মুখপত্র । 
ইহাদের প্রচ্ছদপটের দিকে নজর পড়িতেই সাম্যবাদের এক 
বিচিত্র,প্রতিকৃতি চোখে পড়িল- নগ্ন নারীমৃত্তি। তখন মনে হইল, 
তা হইবেও বা,কারণ শুনা যায় যে সাম্যবাদের এক প্রধান মন্ত্রই 
হইতেছে 90101591158 001) 0£ ৮005618, অর্থাৎ নারীদিগকে 
সাধারণ-ভোগ্যা করিয়া তোলা । আরও পাতা উপ্টাইলাম, 
শেষ পধ্যন্ত দেখিলাম ; দেখিলাম যে আরম্ত হইতে শেষ পধ্যস্ত 
একেবারে নগ্ন-চিত্রে ভরপুর €( এবং বোধ করি নগ্র-গল্পেও, তবে 
পড়িবার মত অবকাশ ছিল না, তাই ঠিক বলিতে পারি না )-- 
সাম্যবাদ বটে ! 

এইরূপ একখানি পত্রিকাতে শুনিতে পাই যে সাহিত্য- 
অভিজাত ঠাকুর পরিবারের কোন কুলাবতংস অশুভ গ্রহের 
ন্যায় 'আবিভূতি হইয়াছেন। তেই সাম্যবাদী পত্রিকাখানিতে 
গত বর্ধাকালে একটি “প্রমসংখা?” বাহির হইয়াছিল । ইহ 
কালধন্ম বটে, কারণ “আবাটস্তয প্রথম দিবসে” প্রেমের সঞ্ধার 
হওয়। কবিজনানধুমোদিত । সেই সংখ্যাতে প্রথম প্রবন্ধই 
ছিল প্রেমের বিচিত্র ধারা সন্বন্ধে__তাহাতে কবি বায়রণ কি 
প্রকারে তাহার এক ভগিনীর সহিত যৌন-সম্পর্কান্বিত হইয়া- 
ছিলেন, ভি. এইচ. লরেন্দকে কেমন করিয়া তদীয়া জননীদেবী 


নঙ্গসাহিতত্য অর্থ্থালীন বু 

যৌন-ধন্মে দীক্ষিত করিয়াছিলেন, ইত্যাদি বিচিত্র রসাল বার্তা 
বধিত ছিল। আর ছিল উক্ত ঠাকুর মহাশয় রচিত একটি 
“গবিতা” অর্থাৎ গগ্ভ-কবিত। ; তাহাতে বণিত বিষয় ছিল এই যে, 
একটি অশান্ত ব্যাকুল তরুণ প্রেমের সন্ধানে পথে বাহির 
হইলেন, এবং নিদারুণ বর্ধাতে ঢাকুরিয়া লেকের প্রাস্তদেশ হইতে 
আরম্ভ করিয়৷ বালিগঞ্জ, ভবানীপুর, চৌরঙ্গী ঘুরিয়া অবশেষে 
চিৎপুরস্ছিত “স্বর্--তরু”' অঞ্চলে প্রেমের সন্ধান পাইয়া পরিতৃপ্ত 
হইলেন; এই “গবিত।”-টির সঙ্গে সঙ্গে আবার প্রেম-পরিতৃপ্তির 
পরিপূর্ণ চিত্র নগ্র-ছবি যোগে প্রক্ষুটিত করা হইয়াছিল। 

পূজা-সংখ্য। পত্রিকার কথ। বলিতেছিলাম ; কেবল যে এই 
একটি দুইটি পণ্রিকা এইরূপ তাহা নহে, অধিকাংশই অশ্লীল 
ছবি, কবিতা ও গল্পে ভরপুর । ইতঃপুব্বেও ছুই চারিটি 
665150901৬০ প্রচেষ্টা যে ন।.দেখিয়াছি 107741510-এর দিকে বাঙ্গাল। 
পত্রিকার, এমন নহে ; কিন্তু এতটা! খোলাখুলি ও নির্লজ্জ ও 
ব্যাপকভাবে পুব্রধে দেখিয়াছি বলিয়া মনে হর না। 

বল যাইতে পারে যে. এই জাতীয় অশ্লীল চিত্র-সাহিত্যাদি 
সব দেশেই অল্পাধিক আছে | কিন্তু তাহার উত্তর এই যে, তাহ! 
থাকিতে পারে, কিন্তু অল্প ও অধিকে যথেষ্ট তফাৎ ; এই সমস্ত 
ইতর চিত্র ও পত্রিক! তথায় ইতর বলিয়াই গৃহীত হয়,লুকাইয়া 
ইহুণর বিক্রয় হয়, ধরা পড়িলে ইহার ব্যবসায়ীরা রাজদ্বারে দণ্ডিত 
হয়, ভদ্রসমাজে সদন্তে ইহা আত্মপ্রকাশ করে না, প্রচ্ছন্ন 
লুক্কায়িত ভাবেই ইহাদের অস্তিত্ব কথঞ্চিং রক্ষিত হয়। 


৬৫ 


ভক্ষশণিসা 


'আবজ্জনাময় নর্ধম। যেমন নগরের স্বাস্থ্যরক্ষার পক্ষে আবশ্টক, 
হয়ত এইরূপ ক্লেদাক্ত আট ও সাহিত্যেও সমাজশরীরের কোন 
প্রয়োজন সাধিত হইতে পারে ; কিন্তু সেই নর্দম1! যত আবৃত 
হয়, সেই 01811895০ যত 217.0612:09520 হয়, ততই সমাজ- 
স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকুল । রাস্তাঘাট, বাড়ী-ঘর-ছুয়ার, সবই যদি 
নর্দমায় পরিণত হয়, তবে ত তছুথিত বিষবাম্পে সমাজের 
অপঘাত-মৃত্যু অনিবার্ধ। নগরের পল্লীবিশেষে “সুবর্ণতরূ”-র 
অবস্থিতি বর্তমান মানবসমাজের অবস্থা এবং ব্যবস্থায় অবশ্যন্ত[কী 
হইতে পারে_ “যত্র নানাদিগ্দেশাদাগত্য রাত্রো পক্ষিণে। 
নিবসন্তি”-_কিন্তু সেই তরুর শাখাপল্লব যদি সমস্ত নগরকে 
আবৃত করিয়। ফেলে, তবে তাহার আওতায় ত কিছুই বাড়িয়। 
উঠিতে পারে না। 

কিন্ত বিপদ্‌ যেট। আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছে, ০সটা 
প্রকৃতপক্ষে তাহাই । এই যে পন্কিলতার, অশ্লীলতার ধারা, 
ইহা! যে ছুই একটি 2,0:071003 পত্রিকাতেই আবদ্ধ তাহ। নহে, 
পরন্ত অল্পাধিক পরিমাণে প্রায় সমস্ত সাময়িক সাহিত্যকেই 
আক্রমণ করিয়াছে-__বোধ হয় ছুই একটি ছাড়া এমন মাসিক বা 
সাপ্তাহিক নাই, যাহাতে অশ্ীল রচন। ও চিত্র আজকাল স্থান 
পায় না । ফল হইয়াছে এই যে বাঙ্গাল! পত্রিক! গৃহ-পরিবারে 
প্রবেশ করিতে দেওয়াই বিপজ্জনক হইয়া দাড়াইয়াছে । 

পূর্বেই বলিয়াছি যে অল্পে ও অধিকে অনেক তফাৎ । 
ক্ল্লাংশ ছুষ্ট হইলে তাহ। সহজেই বজ্জন করা যায়, কিন্তু ছচ্টি 


৬ 


ন্বঙ্গসাহিতেভ্য অশ্ভ্রালীন যুগ 


যদি অধিকাংশতে ব্যাপ্ত হইয়। পড়ে, তবে ইহার সংস্পর্শ এড়ান 
অসম্ভব। আর এই উচ্ছঙ্ঘখলত। দোষ শুধু যে সাময়িক 
সাহিতোই আবদ্ধ এমন নহে ; অধিকাংশ উপন্যাস, বিশেষতঃ 
তরুণ লেখকদের, এই দোষে তুষ্ট । অস্্রীল গল্প, উপন্যাস ও 
কবিত। লেখ। যেন একট বাহাছুরীর মধ্যে দাড়াইয়াছে, ইহ! 
যেন একট বড় বীরত্বের কাধ্য । কিন্তু বস্তুতঃ এ কদধ্যতার 
মধ্যে বীরত্ব নাই, আছে ছুর্বলতা ; নৃতনত্ব নাই, আছে 
আদিমত1 ; ইহ] দস্তের বিষয় নহে, লজ্জার বিষয় । 

সর্বাপেক্ষা আক্ষেপের বিষয় এই যে, যাহারা আমাদের 
সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবীণ, ধাহার। ইচ্ছা করিলে সাহিত্যকে শাসন 
করিয়া সংযত রাখিতে পারেন, তাহারাও যেন কি রকম পক্ষা- 
ঘাতগ্রস্ত হইয়ী “ন যযৌ ন তস্থোৌ” অবস্থায় রহিয়াছেন-__প্রবল 
প্রতিবাদের শক্তিও যেন তাহারা হাবাইয়া ফেলিয়াছেন । কেহ 
কেহ ত অপর দল ভারী দেখিয়া এবং তাহারাই আসর 
জমাইতেছে দেখিয়া একেবারে শিং ভণঙ্গিয়। বাছুরের দলে প্রবেশ 
করিবার চেষ্টা করিতেছেন । 

প্রবীণ সাহিত্যিকদিগের মধ্যে শরৎ চাটুয্যে ও নরেশ সেন 
গুপ্ত মহাশয়ের কথ। ত ছাড়িয়াই দিই, কারণ বর্তমান 
বাঙ্গালায় উচ্ছ.ঙ্খল সাহিত্যধারার প্রবনধ্ধনের তাহারা ত এক 
প্রকার নাটের গুরু বলিলেই হয়। শরৎ বাবুর রচনার আদর্শ 
সম্বন্ধে বাঙ্গালাদেশে ত 5:91301755 )০76-ই দাড়াইয়া গিয়াছে যে 
- আমাদের দেশে রমণীর আদর্শ যে সাবিন্রী তাহা ঠিকই আছে, 


টি 


ভব্রুণিসা 


তবে কিনা মহাভারতের সাবিভ্রী নয়, “চরিত্রহীন”-এর সাবিত্রী ! 
কাজেই তাহাদিগকে এই সংযম ও শ'লীনতার চেষ্টার আসরে 
টানিয়া আনিবার চেষ্টা করা বিডন্বন। মাত্র । কিন্ত আরও ত 
অনেক প্রবীণ সাহিত্যিক রহিয়াছেন_-জলধর রহিয়ীছেন, 
দীনেন্দ্রকুমার রহিয়াছেন, হেমেব্দরপ্রসাদ রহিয়াছেন, সৌরীন্দ্রমোহন 
রহিয়াছেন, গমথ চৌধুরী রহিয্লাছেন, আরও কত জন রহিয়াছেন 
-_ সর্ব্বোপরি কবি রবীন্দ্রনাথ রহিয়ীছেন। কিন্তু সাহিত্যের এই 
ক্লেদ নিবারণের যে একটা সজোর প্রচেষ্টা তাহা! ত কই দেখিতে 
পাই নাঁ। গবীণ সম্পাদকও কত রহিয়াছেন, কই এ বিষয়ে 
প্রবল জনমত সংগঠনের প্রয়াস ত দেখিতে পাই না। 

সমাঁজদেহে এই উচ্ছংজ্ঘলতী-বিষ যে অব্বাচীন সাহিত্যের 
মারফতে ছুরারোগ্য কুষ্ঠব্যাধির ন্যায় গ্রবেশ করিতেছে, তদ্বিষয়ে 
আমাদের সাহিত্যরথিগণ ও জননাযকগণ এক রকম উদাসীন 
বলিয়াই বোধ হয়। কিন্তু এবিষয়ে তাহাদের দায়িত্ব গুরুতর £ 
সমাজ তাকাইয়। আছে তাহাদের দিকে, তাহারা এ বিষয়ে কি 
বিধি-ব্যবস্থা অবলম্বন করেন, তাহা দেখিবার জন্য । কিন্তু কি 
এক অস্বাভাবিক মেরুদণ্ডহীন্তা এবং কাপুরুষতা যেন আজ 
সমাজপতিদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া! ফেলিয়'ছে ! 

আজ তাই মনে পড়ে বন্কিমচন্দ্রের কথা-_যষে বন্ধিমচন্দ্রের 
“বঙ্গদর্শন”-এর তীব্র কশাঘাতে সকল উচ্ছ.জ্ঘলতা। ভীত সন্ত্স্ত 
হইয়া দমন হইয়া যাইত, সাহিত্যিক আগাছা। আমূল উৎপাটিত 
হইয়া যাইত । তাই কবির ভাঁষায় বলিতে ইচ্ছা! হয়, 


৬৮ 


বক্সাহিত্ত্যে অন্্রালীন সুজ 


“13210001101 0000. 51038195006 1151196 20 0019 1001: £ 
[21059] 10901 10620 01 0172০ : 91০ 19 2.2] 
€01 509£152176 ৮৮2025.+ 
আজ মনে পড়ে সম্পাদক হিসাবে সুরেশচন্্র সমাজপতির 
কথা, দেবীপ্রসন্ন রায় চৌধুরীর কথা, কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদের 
কথা-__সত্য কথা বলিতে যাহার ভয় পাইতেন না, আবশ্যক 
হইলে অপ্রিয়ভাষণেও খাহার। পবাজ্মুখ হইতেন না, ন্বর্ণ- 
গর্দভ-পৃজা যাহাদের ধাতে ছিল ন।, এবং কাঞ্চনকৌলীন্য 
ধাহাদিগের নিকট কে'নদিন কোন মর্যাদা লাভ করে নাই। 
সতাই মনে হয়, তে হি নে। দ্িবসা গতাঃ ! 
আপনার! কি মনে করেন, সে রকম তীব্র শাসন আজিকার 
দিনে অসম্ভব, সে রকম উদ্দীপ্ত জনমত গঠন অসম্ভব ? মোটেই 
নহে। আজ চক্ষের সমক্ষে আমেরিকায় কি ঘটিয়া গেল £ 
আমেরিকার চলচ্চিত্রজগতের কর্তৃপক্ষগণ অর্থের লালসায় জন্য 
প্রবৃত্তি-উত্তেজক চলচ্চিত্রের অ'মদানী কিছুকাল হইতে উত্তরোত্তর 
অধিক মাত্রায় করিতেছিলেন-_ আদিম মান্থষের কামি নী-কাঞ্চন- 
লিপ্লাতে ক্রমশঃই ঘ্বতাহুতি প্রদান করিতে অগ্রসর হইয়। 
কুৎসিত ছবিতে দেশ ছাইয়। ফেলিতেছিলেন। এমন সময়ে 
জনকতক জননায়কের দৃষ্টি এই বীভতসতাঁর দিকে আকুষ্ট হইল, 
[০950০ 0£ [0502155 92 65105 সঙ্ঘবদ্ধ হইল, এই সমস্ত 
জঘন্য চিত্রের বয়কট ঘোষণা কর! হইল * সুতরাং এই জাতীয় 
চিত্রে দর্শকের ভীড় আর জমিল না, লোকসান হইতে লাগিল । 





৬৯ 


. সরুপিসা 


কাজেই 4৯110161265 [)9119২-এর রাজ্যে নগ্রচিত্রের কর্তাদিগের 
টনক নড়িল, এবং বাধ্য হইয়। ভদ্রতর চিত্রে তাহাদের অর্থ ও 
সামর্থ্য নিয়োজিত করিতে হইল । 

কিন্তু যদি সামাজিক পবিত্রতা! রক্ষা করিবার চেষ্টা বাস্তবিক 
করিতে হয়, যদ সরম্বতীর কমলবনে এই পাশব বপ্রক্রীড়া সতা 
সত্যই বন্ধ করিতে হয়, তবে চাই এবিষয়ে একাগ্রতা চাই সাহস, 
সর্বোপরি চাই মেরুদণ্ড! আমার মনে হয় বাঙ্গালা সাহিতো 
বর্তমান অনাচার একদম বন্ধ করিয়া সমাজকে এই কলুধিত 
বাম্পের কবল হইতে মুক্ত করিতে এই সবল মেরুদণ্ডেরই 
বিশেষ আবশ্যক হইয়। পড়িয়াছে । 

জান্মাণ ডিক্রেটর হিটলার এক মুহুর্তে এই যৌন-জঞ্জাল সাঁফ 
করিয়াছিলেন,_-বালিন নগরে প্রকাশ্য ময়দানে যৌন- 
সাহিত্যের বহুুৎসব ব! 9901 করিয়া। আমাদের দেশে ত 
ডিক্লেটর হঠাৎ খুঁজিয়। পাওয়। যাইবে না, আমাদের জননায়ক 
ও সাহিত্যরথীদিগেরই এই দায়িত্ব গ্রহণ করিতে হইবে । নচেৎ 
ব্যাপার যেরূপ দ্াড়াইয়াছে তাহাতে বাঙ্গালীর শিক্ষিত 
পরিবারের সুকুমারমতি  বালক-বালিকা এবং অ-কুমারমতি 
ফুবক-যুবতী, উভয়েরই ভবিষ্যৎ ভয়াবহ । 

আমাদের বাঙ্গালীজাতির সম্মুখে নানান দিকে নানান্‌ 
সমস্যা ত রহিয়াছেই-__-আমর। রাজনৈতিক হিসাবে পরাধীন ও 
অর্থনৈতিক হিসাবে ছুর্বল ও পঙ্গু--ইহার উপরে যদি নগ্ন চিত্র 
এবং অশ্লীল সাহিতোর দৌলতে আমাদের সমাজবন্ধন, 


৭৩ 


ন্বঙ্গসাভিত্জ্য অর্জ্ালীন যুগ্গ 


আমাদের পারিবারিক পবিত্রতা, শুচিতা ও শালীনতা নষ্ট হইয়া 
গিয়া, বঙ্গ-সমাজ অবিমিশ্র 010271500005 যৌন-চর্চার 
সাধন-ক্ষেত্র হইয়। উঠে, তবে কি যে আমাদের ভবিষ্যৎ 
হইবে তাহ! ভাবিলেও হৃৎকম্প উপস্থিত হয়। 

মনের আবেগে বোধ করি অনেক কথ! বলিঘ্না' ফেলিলাম, হয়ত 
অনেক অপ্রীতিকর কথাও বলিয্ন। ফেলিলাম, আপনার আমাকে 
তজ্জন্য ক্ষমা! করিবেন। বাঙ্গাল সাহিত্য আমাদের সকলেরই 
অতি আদরের ধন, অতি গৌরবের সামগ্রী ; তাই এই সামগ্রী 
এব্নপভাবে-_উচ্ছ.জ্খল লম্পটের ক্রীড়নক ভাবে-_ব্যবহৃত হইতে 
দেখিলে মনে বড় কষ্ট হয়, তাই এত কথ! বলিয়া ফেলিলাম । 

বস্তুতঃ আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে এই অশ্লীলতার বিষয় ছাড়াও, 
আরও অনেক লক্ষণ দেখ! যাইতেছে £ তাহ1ও মোটেই আশা প্রদ 
নহে। বাঙ্গাল সাহিত্যের আসর হইতে সুগভীর চিন্ত। ও 
স্বাধীন মনীষার পরিচয় ক্রমশহঃই লুপ্ত হইতেছে । সাহিত্যে 
শুধু এক রকম লেখাই থাকে ন। + গদ্য, পদ্য, কাব্য, নাটক, গান, 
প্রবন্ধ, সমালোচনা, ইতিহাস, ইত্যাদি নান বিষয়ের নানা 
রীতির পাচমিশালীতেই সাহিত্য গঠিত । আমাদের বর্তমান 
বাঙ্গালা সাহিত্যে শুধু যা একটু গল্প কবিতা নাটক উপন্যাসেরই 
আবির্ভাব আমরা দেখিতে পাই ; এবং ইহাদের মধ্যেও 9621009 
ধরণের বড় বেশী কিছু দেখি না। 

আমাদের সমাজের পারিপাশ্বিক অবস্থাবিষয়ক, দেশের 
সমস্যাবিষয়ক, চিন্তার খোরাক যোগাইতে পারে এমন উপন্তাস 


৭১ 


ভক্রণিসা' 


আজকালকার অব্ধাচীন যুগের সাহিত্যে বড় একট বাহির 
হয় না। এতিহাসিক উপন্যাস ত লোপই পাইয়াছে ; অথচ 
এতিহাসিক উপন্যাস কত শিক্ষাপ্রদ, ইহা জাতীয় জীবনকে 
কত পরিপুষ্ট করে__বন্ষিমচন্দ্রের ও রমেশচন্দ্রের এতিহাসিক 
উপন্যাসে গোটা বাঙ্গালী জাতিকে গড়িয়া -তুলিয়াছে বলিলে 
অত্যুক্তি হয় না--সেই এতিহাসিক উপন্যাস বন্তটিই আজ 
উঠিয়া যাইতে বসিরাছে। ইহারও কারণ আমাদের লেখক- 
দিগের শ্রমবিমুখতা। ও লঘ্ুচিত্ততা__ওরকম একখানি উপন্যাস 
লিখিতে হইলে শুধু ওঁপন্তাসিক প্রতিভ। ছাড়া আরও অনেক 
বিষয় চর্চা করিতে হয়, অনেক অধায়ন করিতে হয়, শুধু 
““কলমস্ত চোটাৎ" ওসব ক্তিনিষ হয় না-_সুতরাং ওবিষয়ে 
আমাদের আধখুনিক-আধুনিকাদের অভিরুচি নাই । তৎপরিবর্তে 
মামুলী প্রেমের ব! অবৈধ প্রগয়ের চুল গল্প লেখ। অনেক সহজ । 
সম্প্রতি আবার আর এক প্রকার ওপন্যাসিক সাহিত্যের রেওয়াজ 
হইয়াছে ; ইহাতে তথাকথিত শ্রমজীবি-সমাজের কাহিনী 
পাশ্চাত্য লেখকদিগের অনুকরণে লিপিবদ্ধ করিবার . প্রচেষ্টা 
দেখ! যায় , কিন্ত রচন। অভি প্রাণহীন এবং চিত্র একেবারেই 
অবাস্তব-_-ইহাঁকে বল! যাইতে পারে বস্তি-সাহিত্য । 

প্রবন্ধ কিংবা সমালোচনা সাহিত্যেও কাহারও বিশেষ 
মনোযোগ দেখিতে পাই না। পড়িবার মত প্রবন্ধ পড়িতে 
হইলে সেই 'প্রচীন ভূদেব বাবু, বঙ্কিম বাবু, চন্দ্রনাথ বাবু, ত্রিবেদী 
মহাশয়ের রচনাই পড়িতে হয়, না হর রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য 


৭২ 


বঙ্গসাহিতেত্য অব্দ্রীলীনদ যুগ্গ 


প্রবন্ধগুলি পড়িতে হয়,__তা তিনিও ত, শত নারীন্ৃত্যু ও খতুরঙ্গ 
ও তরুণ সাহিত্যিকদিগকে অজস্র প্রশংসাপত্র দান সত্বেও, একজন 
প্রাচীনই, অর্থাৎ সেই ভিক্টোরীয় যুগেরই অন্যতম পুরাতন স্তত্ত | 
সেই সব প্রবন্ধ যখন পড়ি, তখন তাহাদের রচনার পারিপাট্য, 
যুক্তির সারবস্তা, এবং চিন্তার গভীরতা ও মৌলিকতা৷ আমা- 
দিগকে মুগ্ধ করে, এবং সঙ্গে সঙ্গে এই আক্ষেপও জন্মায় যে 
এ ধরণের লেখা-_-এ ধরণের কেন, ইহার কাছাকাছি ধরণেরও 
গাভীর আলোচনা_-আজকাল বড় একট চোখে পড়ে না! । 

সমালোচনা এক প্রকার আজ কাল খুব রপ্ত হইয়াছে 
বটে; সে সমালোচনার অর্ধ হয় নিছক্‌ মুখ-খিস্তি, নয় নিছক্‌ 
স্তবস্তুতি; এই সব লেখাকে যুক্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ সাহিত্যিক 
সমালোচন। বলিলে সত্যের অপলাপ করা হয়। বস্ততঃ যাহ! 
দেখিতেছি তাহাতে একদিকে এই খিস্তি-সাহিত্য, অপরদিকে 
এ বস্তি-সাহিত্য, এই উভয়ে মিলিয়! প্রকৃত সাহিত্যকে 
উদ্ধান্ত করিয়া! তুলিয়াছে । 

জীবনচরিত লেখা ত উঠিয়াই গিয়াছে ; যে কয়েকখানি 
জীবনী বাঙ্গলা সাহিত্যের গৌরব, যেমন মাইকেলের জীবনী, 
বিদ্যাসাগরের জীবনী, রামতন্ লাহিড়ীর জীবনী, মহষির জীবনী 
প্রভৃতি, তাহাঁদের লেখকগণ ত আর মর-জগতে নাই । 

সহজ সরল অনাড়ম্বর বর্ণনা, ভ্রমণ-বৃত্তাস্ত, আমাদের 
দৈনন্দিন জীবনের প্রাকৃত কাহিনী, এই সব 1911901%5 বিষয়েও 
লেখ। বড় একট। দেখি না। যতীন্দ্রমোহনের “উভিষ্যার চিত্র”-এর 


৭৩) 


ভক্ষণিমা। 


ন্যায় বই, কিংবা দীনেন্দ্রকুমারের “পল্লীচিত্র” ও “পল্লী- 
বৈচিত্র্য”-এর ন্যায় বই, কিংবা জলধর বাবুর “হিমালয় ভ্রমণ”- 
এর ন্যায় বই আর ত কই বাহির হইল না। এই সব বইয়ের 
সুন্দর ঝর্ঝরে লেখ। মনকে যেন আবিষ্ট করিয়া তুলে । এই 
ধরণের গ্রন্থে গ্রন্থকার নিজেকে যতট। প্রচ্ছন্ন রাখিতে পারেন, 
ততই জিনিষটি উপভোগ্য ও ৪16156০ হইয়া উঠে । ইদানীং 
ছুই একখানি ভ্রমণবৃত্তীস্ত যাহ বাহির হইয়াছে, তাহাতে 
গ্রন্থকারের এই যে অত্যাবশ্যক সংযম তাহারই অভাব, পরস্ত 
উত্তম পুরুষকে জাহির করিবার প্রচেষ্টা তাহাতে এত প্রকট যে 
পাঠকের রীতিমত বিরক্তি উৎপাদন করে । 

এক কথায় বলিতে গেলে বলা যায় যে, এই অব্বাচীন 
যুগের সাহিত্যের লক্ষণই হইতেছে কোন রকম কষ্টম্বীকারে 
অনিচ্ছ, সবত্বসাধনায় বিমুখতা, দাস্তিক আড়ম্বরপ্রিয়ত?, একটা 
72007315105 ৪006005-_একখানি বই লিখিবার শ্রম স্বীকার 
করিয়া তাহারা যেন পাঠকের মস্তকটি ক্রয় করিয়া রাখিয়াছেন, 
এমনই একটা ভাবের অভিব্যক্তি-_সব্বোপরি পরমতের চব্বিত- 
চর্র্ণ, পাশ্চাত্যের বস্তাঁপচা মালের পুনরুদিগিরণ, অক্ষম 
অন্থচিকীধা, এবং এই সমস্তু লক্ষণের অন্তরালে একটি আদিম 
জৈবিক যৌন বৃভুক্ষা এবং একটি অন্তঃসারশুন্য নিক্ষিয় মস্তিক্ধ। 

এই প্রকার অবস্থার সমাবেশে যাহা হওয়া অবশ্যস্তাবী, 
তাহাই এই অব্বাচীন সাহিত্যে ঘটিয়াছে। অথচ আমরা 
আধুনিকতা ও ০810:-এর চটকে এতই মুগ্ধ ও গর্ববন্কীত হইয়া 


৫. 


বঙ্গসাহি5ভ্য অন্্রালীন মুগ 


পড়িয়াছি যে আমাদের পিতৃপিতামহকে সব ৪01--0102-এর 
কোঠায় ফেলিয়! রাঁখিয়াছি-_-৮০ 6১1010 031: 18015215 10019, 
50 ₹156 /৪ £10৬ ! অথচ আমাদের পিতৃপিতামহের মেরুদণ্ড, 
মনীষা ও তেজস্থিতার শতাংশের একাংশেরও যদি আমরা 
অধিকারী হইতাম, তবে আমাদের নিজেদের জীবন, আমাদের 
সমাজের জীবন অন্য আকার ধারণ করিত । 

সাহিত্যের বর্তমান ধারার বিষয়ে ত কিছু আলোচনা করা 
গেল, কিন্তু এখন আবার আর এক উৎপাত দাড়াইয়াছে, সে 
উৎপাত ভাষার উপরে । 

শত শত বধ ধরিয়া নান। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়া, নান! 
বিচিত্র এতিহাসিক ঘটনার ভিতর দিয়া বঙ্গভাষা আজ যে 
আকার ধারণ করিয়াছে, তাহা আমাদের আধুনিকদের পছন্দ 
হইতেছে না। তাহারা ভাষা-জননীর পুরাতন রূপে আর সন্তুষ্ট 
নহেন; তাহাকে ঘষিয়া মাজিয়। নবীনারপে না সাজাইতে 
পারিলে আর তাহাদের মন উঠিতেছে না । ভাই আজ বিরাট 
উদ্যমে ভাঁষা-সংস্কার, বর্ণমালা-সংস্কার, বাণান-সংস্কার, ইত্যাকার 
নানাবিধ সংস্কারের দাপটে বঙ্গ-সরম্বতীর জীবন হূর্ববহ হইয়! 
উঠিয়াছে। 

কোন পণ্ডিত বলেন, অ আ ক খ প্রভৃতি ভারতীয় বর্ণমাল! 
বর্জন করিতে হইবে অর্থাৎ যে বর্ণমালা মানব-সভ্যতার 
আদি যুগ হইতে বেদ-বেদাঙ্গ-বেদাস্তের মধ্য দিয়া, সংস্কৃত- 
প্রাকৃত-পালি-শৌরসেনী-মাহারাষ্্রী-মাগ ধী-অদ্ধমাগধীর মধ্য 


ণ৫ 


ভক্ষণিসা। 


দিয়া আধ্য-মঙ্গল-দ্র।বিড়ের মধ্যে বিদ্যার সভ্যতার ও সংস্কৃতির 
বিস্তার করিয়াছে-_যে বর্ণমাল। ধ্বনিবিচারের দিক্‌ হইতে দেখিলে 
পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুসন্বদ্ধ এবং বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে 
স্ুবিন্যত্ত বর্ণমালা_সে বর্ণমাল। দ্বারা আর চলিবে না; 
তৎপরিবর্তে [২0102 5০11706 অর্ধা২ৎ রোমক বর্ণমালার 
৪১ 0১ ০১ 0১ ০, বাহ, যব, বর, ল আমদানী না করিতে 
পারিলে, আর সভ্যসমাজে মুখ দেখান যায় না। 

কোন পণ্ডিত বলেন, বাঙ্গালা গণিত চিহ্ুগুলি__অর্থাৎ 
১, ২, ৩, প্রভৃতি-_এগুলিকে নির্বাসনে পাঠাইয়া তৎপরিবর্কে 
1, 2, 3, প্রভৃতি ইংরাজী চিহ্ুগুলি না প্রবন্ভন করিলে আর 
ভদ্রেতা রক্ষা হয় না। , 

সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ব-পণ্তিত (অর্থাৎ বিশ্ববিষ্ভালয়-চিহিি 
পণ্ডিত, সমাস- মধ্যপদলোগী কনম্মধারয় ) স্থির করিয়াছেন ফে 
বঙ্গ-সরম্বতী বর্ণ-দিত্বের চাপে, বিসর্গের দাপটে এবং দীর্ঘ ঈ-এর 
উৎপাতে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছেন ; সুতরাং “কাধ্য' কে “কার”, 
“পধ্যন্ত” কে “পিষস্ত” “পুনঃপুনচ”। কে এপুনহপুন”, এধন্মা? 
কে ধর্ম”, “রানী” কে “রানি”, “পাখী” কে “পাখি”, ইত্যাদি 
লিখিয়। ভাহাকে মুক্তিদান করিতে হইবে । আমাদের মাসী- 
পিসী-মামী প্রভৃতি এত কাল স্ত্রীত্বশুচক ঈ-কারের অবগুঠনের 
আওতায় তাহাদের ব্যক্তিত্বকে অভিব্যক্ত করিতে পারেন নাই--+' 
এতকাল পরে ঈ-এর অপসারণে পদ্দা ফাক হওয়াতে তাহারা 
মুস্তবাযুর আম্বাদন পাঁইলেন- _512171577-এর জয়জয়কার ! 


ন৬ 


হঙ্গসাহি5ভ্য অন্্রালীন যুগ 


ব্যাপার ধ্রাড়াইয়াছে এই যে, বাঙ্গীল। ভাষাট। যেন এক তাল 
কাদা, ইহাকে লইয়া ইহা হইতে শিব হইতে বানর পধ্যস্ত যাহা 
কিছু গড়িয়া তুলিবার পরণীয়ানা যেন ইহাদিগের প্রত্যেককেই 
দেওয়। হইয়াছে। 


ভাবার একট। ইতিহাস আছে, ইহা একটা 01:691730 
£1০০/0, ইহার বর্তমান রূপ একটা আকস্মিক ব্যাপার নহে, 


প্রত্যেকটি শব্দের বর্তমান রূপের পশ্চাতে বিচিত্র কাহিনী 
রহিয়াছে । ইংরাজী ভাষ। সম্পর্কে আপনারা অনেকেই 
[1610015 50805 ০0£ ৬৬০95 বইয়ের কথা জানেন-_ভাষার 
রূপের মধ্যে কত যে ইতিহাস কত যে পুরাতত্ব কত বে উপন্যাস 
লুক্কারিত থাকে, অতি স্ুনিপুণ তুলিকায় সেই চিত্র তিনি 
দেখাইয়াছেন। কিন্তু এসব আমাদিগের অব্বাচীন যুগের 
সংস্কারকদিগের চিন্তার পরিধির মধ্যেই আসে না--কারণ 
তাহারা যে নেহাংই সংস্কারক, কোন সন্ত্রম বা দরদ ব। 
সঙ্কোচের বাধা ত তাহাদের থাকিবার কথা নহে । খুব বেশী 
ভাবিবার বিষয় হইলে হয়ত ভাবিতে পারেন যে লাইনো-টাইপে 
ছাপিতে হইলে কি রকম বাঁণান হইলে সুবিধা__কারণ তাহাদের 
মতে ভাষার জন্য টাইপ নহে, টাইপের জন্য ভাষা-_-এমন ন। 
হইলে সংস্কারক ? 

বাঙ্গালা ভাবা শিক্ষা কর! হঠাৎ অত্যন্ত ছবরহ প্রতিপন্ন 
হইয়! উঠিয়াছে বলিয়া এই সব পণ্তিতগণের নিকট কোন শিশু- 
ডেপুটেশন প্রেরিত হইয়াছে বলিয়া জানা যায় নাই, অথবা 


৭৭ 


তক্রণিস। 


“আধ্য”জাতির টিকি কাটিতে, কিংবা “ধর্ম” “কর্ম্ম*-এর ভিস্তিমূল 
শিথিল করিতে কেহ তাহাদিগকে আম্মোক্তারনাম। দিয়াছে 
বলিয়াও শুন। যায় নাই, কিন্তু সেজন্য ত এই সব সংস্কারকগণ 
তাহাদের স্বকপোলকল্লিত কর্তব্য হইতে বিরত থাকিতে পারেন 
না; সুতরাং শাণিত-কুঠার হস্তে ধারণ করিয়া এই নবীন 
পরশুরাম-গণ, এবার আর পিতৃ-আজ্ঞায় নহে, স্বয়ংসিদ্ধ হইয়াই 
ভাষা-জননীর বধসাধনে দৃঢ়সঙ্কল্প হইয়াছেন । 

আমি এই অভিভাবণের গোড়াতে আপনাদিগকে রাচির 
অধিবাসী বলিয়া কিঞ্চিৎ ব্যঙ্গ করিয়াছিলাম ; কিন্তু এখন 
দেখিতেছি যে সে ব্যঙ্গ ছার আপনাদের প্রতি আমি অবিচারই 
করিয়াছি । বস্ততঃ রাচির অধিকার সুদূর-প্রসারিত, অন্ততঃ 
অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ-সমতটে রাচির অধিকার যে দৃঢ়-প্রতিষ্চিত 
তদ্ধিবয়ে সন্দেহমাত্রং নাস্তি | 

কথায় কথ! বাড়িয়া গেল। খুব সম্ভব ইতিমধ্যেই 
আপনাদের ধের্যাচাতি ঘটিয়া থাকিবে । আমার আজিকার দিনে 
যাহ। বলিবার ইচ্ছা ছিল তাহাও প্রায় সবই বলা হইয়া গিয়াছে। 
এখন উপসংহার করাই শোভন হইবে । 

আপনার! দেখিয়াছেন যে রিরংস। ও কামোদ্দীপক সাহিত্যের 
কথ! বাদ দিলেও বাঙ্গাল সাহিত্যের বর্তমান অবস্থ। ব্যান্ছ্যের 
পরিচায়ক নহে, পরস্ত ইহার চারিদিকে এবং সব বিভাগেই যেন 
একট। 1777-15-55 015 ৭7608061০০-এর ভাব-স্বাধীন চিন্তার 
অভাব, একাগ্র সাধনার অভাব, সর্ধ্বোপরি পৌরুষের ও দাঢের 

৭৮ 


বঙ্গসাহিঢত্য অর্জালীন যুগ 


অভাব। গল্পে উপন্যাসে শুধু কামায়ন, কাব্যে শুধু ফাগুন 
মাসের দখিণ হাওয়া, গানে শুধু পীরিতি আর ভাটিয়ালী, 
চিত্রে শুধু নগ্ননারী--এই উপজীব্যে ত কোন সজীব সমাজ 
কোন সতেজ জাতি গড়িয়া উঠিতে পারে না। 

1,071 ০০27 1৫71--অথবা আর্টের জন্থই আর্টের 
সার্থকতা আর্ট ও জাহিত্য অ:হতুক ও অন্ুদ্দিষ্ট__এই সব বুক্নী 
আমরা অনেক শুনিয়াছি। কিন্তু এই প্রবচনের অর্থ যদি এই 
হয় যে যাহ। সমাজবিদ্রোহী তাহাই প্রকৃত আর্ট, যাহা! ছুর্নীতি- 
মূলক তাহাই উচ্চাঙ্গের সাহিত্য, এবং আমাদের রুচির উচ্চতা! 
ও দৃষ্টির সৃক্ষ্মতার প্রতিপাদশকলে তাহাতেই আমাদের বাহবা 
দিতে হইবে, তবে আমি স্পষ্টুই বলিতেছি যে এ প্রবচন মানি 
না। যেআর্ট ও সাহিত্য মানুষকে দুর্বল করে, নিস্তেজ করে, 
21821৬9:02 করে, যাহ। এক কধায় মানুষকে অমান্য করে? সে 
আর্ট ও সাহিত্যের উচ্চতা মানি না । কারণ, 

“সবার উপরে মানুষ সতা, 
তাহার উপরে নাই |” 

সমগ্র মানব-সমাজের পক্ষেই ইহা সত্য ; আমাদের বাঙ্জালার 

মাজের পক্ষে ইহ! আরও গুরুতর সত্য । ছূর্বলত", 
তামসিকত।, ক্লীবতার চর্চ। আমর যথেষ্ট করিয়াছি-_-““মধুরে 
বহিবে বায়ু, ভেসে যাব রঙগে”--এই  00165-797-77167715- 
এর হাওয়া বাঙ্গালীকে বহুকাল জড় বিবশ মৃতপ্রায় করিয়! 
রাখিয়াছে। আজ যদি ঘটনাচক্রে বাঙ্গালী তাহার দীর্ঘ স্ুযুপ্তি 


নি 


তব্রণিস। 


হইতে জাগরণের সাড়। দিতেছে, প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রান 
করিতে প্রবুত্ত হইবার উপক্রম করিতেছে, আজ আমার বিনীত 
প্রার্থনা এই যে বাঙ্গালার সুষুত্তিপ্রিয় যুব-সমাজকে দ্খিণ , 
হাওয়ার দোছুল-দোলায় দোল দিয়! আবার দ্বুম পাড়াইবেন না । 
আবার ঘুম পাড়াইলে জাতীয় অপঘাত অনিবাধ্ধ্য। 
আজ জাতির পক্ষে সমাজের পক্ষে চাই পৌরুষের মন্ত্র, চাই 
বীরত্বের দীক্ষা, চাই তেজন্বিতার সাধনা £ 
“দাও আমাদের অভয়-মন্ত্, 
অশোক-মন্্ব তব, 
দাও আমাদের অমূৃত-মন্ত্ 
দাও গে। জীবন নব।” 
এই পৌরুবের সাধনে, এই তেজস্বিতার আবাহনে, এই বীধ্যের 
আমন্ত্রণে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা, আমাদের সমস্ত সঙ্ল্স, 
আমাদের সমস্ত সাহিত্য উৎস্ষ্ট হউক । 
“অবনত ভারত চাহে তোমারে. 
এস সুদর্শনধারী মুরারি, 
সম্মান-শৌধ্যে পৌরুষ-বার্য্ে 
কর পুরিত নিপীড়িত ভারত তোমারই ।” 
আজ বাঙ্গালার জাতীয় জীবনের এই সঙ্বট-সুহুর্তে সুদর্শন. 
ধারী মুরারি আমাদের সকলের সমবেত সাধনার সহায় হউন । 
বন্দে মাতরম্‌। 


কাত্তিক, ১৩৪৩। 


লু তিল চ্ত 


১০০ 
জাতগাভ্লাহ্ ম্শ্বজ্লু তা 


বন্কিমচন্দ্র ও বাঙ্জগালার নবধুগ 
[ মেদিনীপুর বস্কিমচন্দ্র-শতবাধষিক উৎসবে সভাপতির অভিভাঁষণ ] 

আজ মেদিনীপুরবাসীর পক্ষ হইতে বঙ্কিমচন্দ্র-শতবাধিক- 
উৎসবের যে অন্ুষ্ঠানের আয়োজন আপনারা করিয়াছেন, তাহাতে 
আমাকে সভাপতিরূপে যোগদান করিতে আহ্বান করিয়। 
আপনার আমাকে সত্যই গৌরবান্বিত করিয়াছেন । দিন কয়েক 
পুর্বে আপনাদের প্রতিনিধি-স্বরূপে কতিপয় শ্রদ্ধেয় বন্ধু যখন 
আমার ভবনে শুভাগমন করিয়। আমার নিকটে আপনাদের এই 
আহ্বানবার্তী জ্ঞপন করিলেন তখন বাস্তবিকই আমি চমকিত 
হইয়াছিলাম, কারণ বাঙ্গালার সাহিত্যক্ষেত্রে আমি একজন অতি 
অকিঞ্চন পথচারী পদাতিক মাত্র, এবং সামান্ত পদাতিককে হঠাৎ 
উচ্চপদে আরূঢ় করিলে তাহার অপদস্থ হইয়। পড়িবারই সমূহ 


৮৩ 


অক্ুপ্রিয়! 


রঃ 
সম্ভাবনা । তাই আপনাদের এই প্রস্তাব গ্রহণ করিতে আঙ্মি 
যথেষ্ট সঙ্কোচ বোধ করিয়াছিলাম । 

কিন্তু আপনাদের প্রতিনিধিগণ ছাড়িলেন না। আমার 
প্রতীতি হইল ষে, কেন জানি না, আমার প্রতি এক অহেতুক 
স্েহ আপনাদের হৃদয়কে অধিকার করিয়া থাকিবে ; এবং স্েহ 
যুক্তির শাসন মানে না । তাই আপনাদের সেই স্সেহের আহ্বান 
আমি অমান্য করিতে পারিলাম না; এবং সেই স্সেহের উপর 
নির্ভর করিয়াই আজ আমি আপনাদের গৃহ-প্রাঙগণে আসিয়। 
উপস্থিত হইতে সাহসী হইয়াছি। আমার সকল দোষক্রটি 
আপনার! নিজেদের স্সেহগুণে মাজ্ঞন! করিয়া লইবেন, ইহাই 
আমার ভরসা । আর আজিকার এই পুণ্য অনুষ্ঠানে খষি 
বস্কিমচন্দ্রের স্মৃতিপুজার মন্দিরে এই সামান্য পূজারীকে যে 
আপনারা তাহার. সামান্য অর্থা প্রদান করিবার সুযোগ 
প্রদান করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি আপনাদিগকে আমার 
আস্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি । 

বহ্কিমচন্দ্র যে বসর জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, তখন হইতে 
আজ শতবর্ষ অতীত হইয়াছে । তাই আজ তাহার অমর স্ব্বৃতি 
উপলক্ষ্য করিয়া শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান । বাঙ্গালার সর্বত্রই এই 
অনুষ্ঠান উদযাপিত হইতেছে ; বাঙ্গীলার বাহিরেও, ভারতের 
বিভিন্ন প্রদেশে, নানাস্থানে, এই উৎসর সম্পন্ন হইতেছে । 
হইবারই কথ। ; কারণ বাঙ্গালার তথা ভারতের নব-জাগরণের 
অন্যতম অগ্রদূত বন্ধিমচন্্র! মিট 


৮৪ 


ব্ক্ষিমভ্ত্দর ও শাক্সাবলাব্ম নবযুগগ রি 


কিন্তু বঙ্কিমচন্দ্রের উপর মেদিনীপুরের, অথবা মেদিনীপুরের 
উপর বঙ্কিমচন্দ্রের আরও দাবী আছে এবং বিশেষ ঘনিষ্ঠ 
দাবীই আছে; কারণ আপনারা বোধ করি অনেকেই জানেন ষে 
বহ্কিমচন্দ্রের শৈশব-জীবনে শিক্ষার প্রথম উন্মেষ এই মেদিনী- 
পুরেই হইয়াছিল। তাহার পিতৃদেব স্বর্গীয় যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 
মহাশয় তখন মেদিনীপুরে ডেপুটি কলেক্টর। মেদিনীপুরে 
একটি হাই-স্কুল ছিল, ভাহাতে বঙ্কিমচন্দ্রের অগ্রজ জঙ্জীবচন্দ্ 
পড়িতেন। দাদার সঙ্গে সঙ্গে বহ্কিমচন্দ্রও মাঝে মাঁঝে এ স্কুলে 
বাইতেন। এই প্রসঙ্গে বস্কিমের কনিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র বেশ 
কৌতুকের কাহিনী লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন, 
“শুনিয়াছি,বস্কিমচন্দ্র এক দিনে বাঙ্গাল। বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়! 
ছিলেন। টিড নামে একজন বিলাতী সাহেব মেদিনীপুর 
হাই-স্কুলের হেড-মাষ্টার ছিলেন। একদিন এ সাহেব ক্লাস 
পরিদর্শনে আসিয়। বস্কিমের পরিচয় লইলেন। সঞ্জীবচক্তর 
অন্থুজের কথ। বলিবার সময়ে তাহার যে এক বেলার মধ্যে 
বর্শ-পরিচয় হইয়াছিল, সে কথার উল্লেখ করেন। টিড. সাহেব 
শুনিয়। 'ল্লীত হইলেন, এবং পরে তাহারই অনুরোধে অতি 
শৈশবে ইংরাজী শিক্ষার জনতা পিতৃদেৰ বঙ্কিমচন্দ্রকে এ স্কুলে 
ভন্তি করিয়া দেন।”* এগার বৎসর বয়স পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্র 
এই মেদিনীপুর স্কুলেই পাঠাভ্যাস করেন। যে অলৌকিক 
প্রতিভা উত্তর-জীবনে সমগ্র বাঙ্গালাকে উদ্ভীমিত ও চমতৎকৃত 
করিয়াছিল, তাহার প্রথম শৈশবের ক্ষুরণ এই মেদিনীপুরেই 


৮৮৫ 


' তক্রণিস। 


হইয়াছিল, ইহা! মেদিনীপুরের কম গৌরবের কথা নহে ; এব 
বন্ধিমের উপরে এই নিবিড় ন্নেহবন্ধনের দাবী হইতে কেহই 
মেদিনীপুরকে বঞ্চিত করিতে পারে না । তাঁই বলিতেছিলাম, 
আজ যে মেদিনীপুরে বহ্কিমচন্দ্রের শতবাষিকী-উপলক্ষ্যে উৎসব- 
অনুষ্ঠান হইতেছে, ইহা শুধ গুণমুগ্ধ দেশবাসীর বিন্ময়াগ্তত 
শ্রদ্ধার নিবেদন নহে, ইহা সন্তানের গৌরবে উচ্ছ'সিত মাতৃ- 
হৃদয়ের স্বত:স্ফর্ত আনন্দের আকৃতি । মেদিনীপুরের এই 
আনন্দ-অনুষ্ঠান সার্থক হউক । 

বস্কিম যে সময়ে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, বাঙ্গাল'র ইতিহাসে 
তখন এক নবযুগের সূচনা । বস্ষিমের জীবনের বিচিত্র অভি- 
ব্যক্তির ভিতরে নিগৃঢ় ধার!টি আবিষ্কার করিতে হইলে, সেই 
যুগের লক্ষণের সহিত কিঞ্চিৎ পরিচয় আবশ্যক । আর সে 
পরিচয় যদি আমরা পাই, তাহা হইলে শুধু বঙ্কিম কেন, সে 
যুগের বহু মনীষীর, আমাদের জননী মাতৃভূমির বহু স্থুসন্তানের, 
জীবন-ইভিহাসই সুস্পষ্ট সুসঙ্গত হইয়া উঠে । আর সেই ষুগে 
কত গুণী জ্ভানীই যে আমাদের এই বঙ্গমাতার ক্রোড় আলোকিত 
করিয়াছিলেন, তাহার ইয়ত্তা নাই। দৃষ্টান্তত্বরূপ শুধু একটি 
কথা বলিলেই বোধ করি যথেষ্ট হইবে । এই ১৮৩৮ খুষ্টাবে, 
যখন বঙ্কিম জন্মগ্রহণ করিয়ায়াছিলেন, সেই বৎসরেই জন্মগ্রহণ 
করিয়াছিলেন কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র 
সেন, এবং বিখ্যাত বাদী ও দেশহিতৈষী কৃষ্দদাস পাল । এক 
একজন এক এক দিকে দিকৃপাল বলিলেই হয়। আর বস্কিমের' 


৮৬ 


হহ্কিমছজ্দ্র ও বাঙ্গালাম্ম নবযুগগ 


জন্মের কয়েক বংসর পুর্বে ও কয়েক বংসর পরে আবির্ভূত 
ব্যক্তিগণের নাম যদি উল্লেখ কর! যায়, তবে ত মনে হইবে যেন 
ত্রিদিব-লোক হইতে একট জ্যোঁতিত্ষপুঞ্জ আসিয়া বাজাল'র 
আকাশকে ঝলসিত করিয়া তুলিয়াছে। সেষুগ সত্য সত্যই 
বাঙ্গালার একট অতি গৌরবময় যুগ, অতি বিস্ময়কর যুগ । 
ইংবাজের ভারতাগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাচা ও পাশ্চাত্যের 
সংঘর্ষে যে বিপুল ভাববিপর্য্যয় ঘটিয়াছিল--রামমোহন হইতে 
ডিরোজিও পরাস্ত যে আলোড়ন চলিয়াছিল--ততদিনে সে 
আলোড়ন কতকট। প্রশমিত হইয়া আসিয়াছিল। পাশ্চাত্য 
সভ্যতার মোহময় আবেশ বঙ্গীয় সমাজে যে উদ্বেলতা আনয়ন 
করিয়াছিল, সে উদ্বেলতাঁর ফেনিল উচ্ছাস কতকট। পরিমাণে 
স্তিমিত হইয়। আসিয়াছিল। তখন পাশ্চাত্য ভাবধারার ফেনিলতা। 
বহুলপরিমাণে লুপ্ত হইয়া গভীরতাতে রূপাস্তরিত হইয়াছিল । 
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগের ফরাসী রাগ্রবিপ্রবের মদমত্ত 
তাণ্ডবের মধ্যে অট্রারাবে নিখোধিত সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার বাণী 
যেমন উনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় সমাজে ও রাস্ত্ীয় সংস্থানে 
ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হইয়া গভীর পরিবর্তন সংঘটিত করিয়াছিল 
বাঙ্গালার সামাজিক ইতিহাসে অনেকট। অনুরূপ প্রণালীতেই 
পাশ্চাত্য ভাব-প্রবাহ ধীরে ধীরে পরিবর্তন সংসাঁধন করিয়াছিল ; 
এবং আদর্শের অন্ুপ্রেরণাও উভয়ক্ষেত্রেই ছিল একই প্রকার । 
এই যুগে বাঙ্গালার সমাজে ধাহারা জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, 
তাহ'র। সেই যুগের যুগধন্্ন এড়াইতে পারেন নাই । তাহাদের 


৮৭ 


তক্ুণিসা। 


অধিকাংশেরই জীবনে অল্পাধিক পরিমাণে এই আদর্শ-নিষ্ঠাই 
পরিলক্ষিত হয়। সকলের আদর্শ ই যে একবিধ ছিল তাহা 
নহে; বস্ততঃ আদর্শ-সঙ্ঘাতের দিনে তাহ। হওয়া সম্ভবপর নহে । 
কিন্তু আদর্শ ধাহার যে প্রকারই থাকুক না কেন, সেই আদর্শে 
অচলা নিষ্ঠা সে যুগের প্রধান লক্ষণ ছিল । 
শিক্ষিত সমাজে ধাহাঁরা অগ্রণীন্বরূপ ছিলেন, তাহাদের চুরি 

এই আকাজ্ক্ষাই সদা জাগরূক থাকিত-_আমর। যে জ্ঞানের 
আলোক পাইয়াছি তাহা দেশের জনসাধারণের মধ্যে বিকীর্ণ 
করিয়া! দিতে হইবে; আমরা যে আদর্শের সন্ধান পাইয়াছি সেই 
আদর্শের অন্থসরণে দেশকে সমাজকে জাতিকে গড়িয়া তুলিতে 
হইবে; আমাদের শুধু নিজের জ্ঞানটুকু নিজের পুঁজিটুকু লইয়া! এক 
কোণে স্বার্পরের মত নিজের আনন্দে বিভোর হইয়া৷ থাকিলেই 
চলিবে না ; আমাদের জ্ঞানের আমাদের শিক্ষার দায়িত্ব আছে, 
যেটুকু আমরা ভাগ্যবশে লাভ করিয়াছি তাহার উপর সমগ্র 
সমাজের দাবী আছে অধিকার আছে, সে দাবী সে অধিকার 
আমাদের উপেক্ষা করিলে চলিবে না; আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি- 
বিবেচনা মত দেশকে উন্নত কিরিতে হইবে,জাতিকে জীবস্ত জাগ্রত 
করিয়া তুলিতে হইবে, সমাজকে সতেজ সবল করিয়া গড়িতে 
হইবে । এই প্রকার ভাবের প্রেরণায়, এই প্রকার অস্থিরতার 
তাড়নায় নানা জনে নানং দিকে বাহির হইয়া পড়িলেন। 

বিনি বৈচ্ছানিক, তিনি নানা দেশবিদেশ হইতে বিজ্ঞানের 
বার্থ) আহরণ করিয়া সরল ভাষাতে সেই সব সন্দেশ দেশবাসীকে 


৬৮ 


বহ্িমচ্ত্দ্র ও স্বাঙ্গালান্ব নব্যুগ্গ 


পরিবেশন করিতে লাগিলেন ; ধিনি এতিহাসিক, তিনি পুরাণ- 
ইতিহাসের ভিতর দিয়! প্রতুতত্বের ভিতর দিয়া আমাদের দেশের 
বিচিত্র ইতিবৃত্তের ভাগুারদ্বার খুলিয়! দিয়। দেশের প্রনষ্ট গৌরব 
পুনরুদ্ধার করিয়া আমাদের জাতির আত্মপ্রত্যয়লাভের নুতন 
উৎস উন্মুক্ত করিলেন; যিনি সাহিত্যিক, তিনি নান। ভাষার নানা 
দেশের সাহিত্য-সম্ভার হইতে নান।রত্ব আহরণ করিয়া বঙ্গভাব।- 
ভাষীকে সেই রত্বমাল। উপহার দিতে লাগিলেন ; যিনি কবি, 
তিনি দেশের প্রাচীন গৌরব-গাঁথা গাহিয়! দেশাত্মবোধ উন্দ্ধ 
করিতে লাগিলেন; যিনি ধন্ম ও সমাজ-সংস্কারক, তিনি আমাদের 
প্রাচীন জরাজীর্ণ সমাজের যাহ! কিছু ছুব্বলতা। বাহ! কিছু কুসংস্কার 
তাহা। বজ্জন করিয়া, কতকটা। পাশ্চাত্যের নৃতন রঞ্জন-রশ্মিতে, 
কতকটা' প্রাচ্যেরই বেদ-উপনিষদের অরুণালোকসম্পাতে তাহাঁকে 
নবরূপ নবজীবন দান করিবার প্রচেষ্টা করিতে লাগিলেন । 

জাতির সমস্ত বিভাগেই যেন একটা নব-চেতনার সাড়া 
পড়িয়া গেল। ঘুমাইয়া থাকিবার সময় নাই, আলস্ত্ে 
কাটাইবার সময় নাই, নষ্ট করিবার সময় নাই-- অবিলম্বে 
জাতিকে উদ্ধদ্ধ করিতে হইবে, সমাজকে জাগাইতে হইবে, 
জগতের উন্নতিশীল জাতিগণের সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে পা 
ফেলিয়া চলিতে হইবে । 

“আগে চল্‌ আগে চল্‌ ভাই, 
প'ড়ে থাকা পিছে ম'রে থাকা মিছে, 
বেঁচে ম'রে কিবা ফল ভাই ?” 


৮৯ 


ভকরুশিম' 


_-জাতির জীবনে ইহাই মূলমন্ত্র হইয়া উঠিল। রামমোহন, 
দেবেন্দ্রনাথ, কেশবচন্দ্র রামকুঞ্জ ধন্মপ্লাবন আনিলেন ; বিদ্ভাসাগর 
সমাজবিপ্রবৰব আনিলেন, আবার সংস্কত-সাহিত্যসাগর মন্থন 
করিয়। বঙ্গভাষাকে নান। রতুরাজিতে বিভূবিত করিলেন ; অক্ষয়- 
কুমারও তৎপথান্ুবন্তণ হইয়! বঙ্গভাঁষাকে সমৃদ্ধ করিতে লাগি 
লেন ; রাজেন্দ্রলাল “বিবিধার্থ-সংগ্রহ” ও নানা সন্দর্তে দেশের 
অতীত গৌরব-কাহিনী উন্বাটিত করিতে লাগিলেন ; রামদাস 
সেন তাহার সহকন্মী হইলেন ; কাব্য-সাহিত্যে ঈশ্বর গুপ্ত, মাউ- 
কেল, রঙ্গলাল, দীনবন্ধু, প্রভৃতি নানা দিন দিয়া নূতন জীবনের 
সঞ্চার করিলেন । বাঙ্গালার ইতিহাসে সে কি যুগই গিয়াছে ! 
বন্ধিমচন্্ও সেই যুগেরই লোক; সুতরাং তাহার জীবন-নাটে 
সেই যুগের উদাত্ত স্বরই নিয়ত ধ্বনিত হইয়াছে । লেখাপড়া 
শিখিয়া তিনি সংসারক্ষেত্রে প্রবেশ করিলেন ; রাজকাধ্যে নিযুক্ত 
হইলেন, নিপুণতার সহিত তাহার সরকারী কার্ধা পরিচালন। 
করিলেন, কাধ্যসমাপনান্তে সরকার কর্তৃক নানাবিধ উপাধিতে 
মণ্ডিত হইলেন, নিতান্ত সংসারিক হিসাবেও লোকসমাজে যথেষ্ট 
সন্মান অর্জন করিলেন_-এ সবই ঠিক ; কিন্তু তাহার জীবনের 
ইতিহাসে এই সবের স্থান কতটুকু ! একট বিষয় অনেকেই লক্ষ্য 
করিয়া থাকিবেন যে, সে সময়কার অনেক বিখ্যাত লোকই, 
বিশেষতঃ বহু সাহিত্যসেবীই, দারিত্বপূর্ণ রাজকাধ্য্যে ব্যাপূত 
ছিলেন, এবং সেই গুরুতর কাজের ও দায়িত্বের ফাঁকে ফাকে 
ফেটুকু স্বল্প অবসর মিলিত তাহাতেই ভাহার! তাহাদের জীবনের 


£১০ 


বছ্িমচ্ত্দ্র ও ব্বাঙ্গালাক্স নবযুগ 


সাধনা সফল করিয়া গিয়াছেন। রঙ্গলাল, বন্কিমচন্তর ও 
নবীনচন্দ্র ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিষ্রেট, রমেশচন্দ্র ম্যাজিষ্ট্রেট, 
দীনবন্ধু পোর্টাল স্ুপরিপ্টেণ্ডেণ্ট, ভূদেব স্কুল-ইন্স্পেক্টর, হেমচন্দ্র 
গভর্ণমেন্ট প্লীডার, ইত্যাদি। শুধু অলস বিলাসে লালিত 
পালিত হইয়। সুমধুর কাব্যচর্জায় স্ুৃপ্রচুর অবসর-বিনোদনের 
অবকাশ ইহাদের কাহারওই হয় নাই । কিন্ত ইহাতে বিস্ময়ের 
বিষয় কিছুই নাই । কোন একট) কিছু উপার্জন-পন্থা অবলম্বন 
করিয়। গ্রাসাচ্ছাদনের সংস্থ'ন করিতে হইবে, তাই ইনাদিগের 
এই সমস্ত কাজ করা; কিন্ত এইটুকুতে ত তাহাদের চিত্তের পরি- 
তৃপ্তি ছিল না ; তাহাদের মনে তখন অফুরন্ত আকাতক্ষা, অতৃপ্ত 
পিপাসা দেশকে জাগাইতে হইবে, জ্ঞাতিকে উন্নত করিতে হইবে : 
সুতরাং তাহাদের চিন্তবৃত্তির সমস্ত শক্তিই সেই সাধনায় তাহারা 
প্রয়োগ করিলেন, এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে যশহ্বী হইয়া দেশমাতৃকার 
সেবায় আত্মনিয়োগ করির। জীবন সার্থক করিলেন । 

কৈশোর বয়ল হইতেই বঙ্কিমের সাহিতারচনার দিকে ঝেণিক 
ছিল; পনের ষোল বংসর বয়সেই তিনি "ললিত। ও মানস” 
রচন! করিয়াছিলেন : কুড়ি বংসরের সময়ে তাহার এক ইংরাজী 
উপন্যাস 13777070175 77716” নামে প্রকাশিত হইতেছিল। 
কন্মক্ষেত্রে প্রবশ করিবার পরেই তিনি রীতিমত সাহিতা 
চর্চাতে মনোনিবেশ করিলেন । এতিহাসিক উপন্যাসের দিকেই 
স্বভাবতঃ তাহার মন প্রথমে ঝু"কিল ; কারণ জাতীয় চেতনাকে 
জাগাইতে, জাতীয় গৌরব-বোধকে উদ্দীপিত করিতে, চিত্তাকর্ষক 


৪১১ 


ভল্ষহশিম। 


ভাবে জাতির অত্রীত ইতিহাসকে মানসপটে ফুটাইয়া৷ তুলিতে 
এঁতিহাসিক উপন্তাসের হ্যায় বোধ করি আর দ্বিতীয় অস্ত্র নাই ; 
জাতীয়তার পূজারী বঙ্কিমচন্দ্র তাই বাঙ্গালার ইতিহাসের নানান্‌ 
স্তর তন্ন তন্ন করিয়াঅন্ুসন্ধান করিতে লাগিলেন--জাতীয় গৌরবের 
কি কি অধ্যায় তিনি উদঘাটিত করিতে পারেন, এই উদ্দেশ্যে । 

মাত্র যখন তাহার সাতাইশ বৎসর বয়স, তখন বন্কিমের 
“ছুর্গেশনন্দিনী” প্রকাশিত হইল । বস্কিমের এই প্রথম উপন্যাসেই 
বঙ্গীয় সমাজ চমতকৃত হইল, সমগ্র জাতির মধো যেন এক বিষম 
চাঞ্চলোর সাড়। পড়িয়া গেল। রমেশচন্্র লিখিয়াছেন, “যখন 
“র্গেশনন্দিনী' প্রকাশিত হইল তখন যেন বঙ্গীয় সাহিত্যাকাশে 
সহস! একটি নৃতন আলোকের বিকাশ হইল ।” তারপর একবংসর 
ছুই বৎসর অন্তর অন্তরই বস্কিমের এক একখানি প্রাণোন্মাদকর 
উপন্তাস বাহির হইতে লাগিল, আর বাঙ্গালার অতীত ইতিহাসের 
এক একখানি উজ্জল পৃষ্ঠ! লোকচক্ষের সমক্ষে গুতিভাত 
হইতে লাগিল। “কপালকুগুল।” বাহির হইল, “মৃণালিনী” 
বাহির হইল, কিছু দীর্ঘ অবকাশের পরে “চন্দ্রশেখর” বাহির 
হইল; আরও পরিণত বয়সে “রাজসিংহ”, ““'আনন্দমঠ”, 
“দেবীচৌধুরাণী”, “সীতারাম” প্রকাশিত হইল । 

বাঙ্গালার রাষ্রনৈতিক জীবনে এই এতিহাসিক উপন্যাস- 
পরম্পরা এক অভিনব বিপ্লব আনয়ন করিল। বঙ্কিমের এই 
রচনাগুলি সাহিত্য হিসাবে উপন্যাস হিসাবেও অনবদ্য সন্দেহ 
নাই * কিন্তু বাঙ্গালার জাতীয় ইতিহাসে শুধু সাহিত্যিক রচন' 


৯২ 


ব্হ্ষিমচ্ত্দ্র ও ব্বাঙ্গালাম্ম নবযুগ্স 


হিসাবে, শুধু রূপদক্ষ শিল্পীর কারুকৌশলের নিদর্শনরূপে ইহাদের 
স্থান নহে, ইহাদের স্থান তাহার অনেক উদ্ধে একট। পরাধীন 
পরাসক্ত মুমূর্ষু আত্ম-বিস্থৃত জাতির সঞ্জীবন-মন্ত্রের আধারভূত 
কুলকুগুলিনী শক্তির উৎস হিসাবে ইহাদের স্থান। এই শক্তির 
একাগ্র সাধনার পুণ্যফলেই এই একনিষ্ঠ সাধক মাতৃপুজার 
চরম মন্ত্র লাভ করিয়া বিস্মিত চমকিত দেশবাসীকে উদ্দ্ধ 
করিয়া উচ্চারণ করিলেন__“বন্দে মাতরম্ঠ ; আর সেই নবীন 
মন্ত্র উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এই সনাতনী মাতৃভূমিতে 
এক নব-জীবনের সঞ্চার হইল । 

কিন্তু বন্কিমের প্রতিভা ছিল নব-নবোন্মেষশালিনী-_ শুধু 
এক দিকেই ইহ! আবদ্ধ ছিল না। মনীষ! ছিল তীক্ষু, চিত্ত 
ছিল পৌরুষপূর্ণ, মেরুদণ্ড ছিল দৃঢ় । জ্ঞাতীয় জীবনের বিভিন্ন 
বিভাগে, চিন্তারাজোর বিভিন্ন দিকে তাঁই স্বতঃই তাহার 
মনোযোগ আকৃষ্ট হইত । পাশ্চাত্য জগতের নব নব ভাবধারা 
তিনি আয়ত্ত করিতে চেষ্টা করিতেন, আবার ভারতীয় চিন্তার 
ও ধন্মতত্বের গহনরাজ্যেও তিনি বিচরণ করিতে ভয় পাইতেন 
না; কিন্ত কি প্রাচ্য কি পাশ্চাত্য, সমস্ত তত্ব সমস্ত যুক্তিই তিনি 
তাহার নিজের চিত্তের, নিজের বিচার-বিবেচনার কষ্টিপাথরে 
যাচাই করিয়। লইতেন। 

আধুনিকতার মোহ যে আজই কেবল আমাদিগকে পাইয়া 
বসিয়াছে তাহ। নহে ; সেকালেও আধুনিকতা ছিল এবং তাহার 
মোহ কিছুমাত্র কম ছিল না; বিশেষতঃ পাশ্চাত্যের অগ্রগতি 


৯৩ 


তব্রণিসা 


তখন পধ্যস্ত ছিল অপ্রতিহত, প্রাচ্যে তখনও নৃতন জাগরণ বিশেষ 
দেখ! দেয় নাই; সুতরাং পাশ্চাত্য আধুনিকতার মোহ তখন 
অতিমাত্রাতেই প্রবল। কিন্তু এই মোহগ্রস্ততার আবর্তে বঙ্কিম 
কোন সময়েই তলাইয়া যান নাই, তাহার বলিষ্ঠ মস্তিষ্ষের সমগ্র 
শক্তির সহিত সত্যাবধারণে সচেষ্ট হইয়াছেন । ইংরাজ মনীষী- 
দিগের সহিত সমানে সমানে লড়িয়াছেন, প্রতিবাদ করিয়াছেন, 
সম্গালোচন। করিয়াছেন ; 106621101105-00207916 তাহার ধাতে 
ছিল না; তাই তাহার তত্কালীন নানাবিষযিণী আলোচন। 
আজও পাঠ করিলে যেন একট। শক্তির একটা পুলকের সঞ্চার 
হয । আলোচনা-সমালোচনায় তর্ক-বিতর্কে বাদ-প্রতিবাদে 
বন্কিমের মধ্যে “তুণাদপি সুনীচেন”গ গোছ বৈষ্ণব ভাব মোটেই 
দেখা যাইত না; এবিষয়ে তিনি ছিলেন একেবারে পুরাপুরি 
শান্ত । বস্কিমের ভিতরে এই যে শক্তি, এবং শক্তি সম্বন্ধে 
তাহার নিজের সম্পূর্ণ সচেতনত', ইহাই তৎকালীন সমাজে ও 
সাহিত্যে বঙ্কিমকে অপ্রতিদ্বন্থী আসনে উন্নীত করিয়াছিল, 
একচ্ছত্র সম্রাট ব! ডিক্টেটর করিয়! তুলিয়াছিল বলিলে অত্যুক্তি 
হয় না। 

বস্কিমচন্দ্রের এই যে বহুমুখী প্রতিভা, ইহা৷ প্রথম প্রকটিত 
হইল “বঙ্গদর্শন”-এ | “বঙ্গদর্শন” পত্র যখন বঙ্কিমচন্দ্র প্রতিষ্ঠা 
করেন, তখন তাহার বয়স কত ? চৌত্রিশ বৎসর মাত্র । ভাবিতে 
গেলে আশ্চর্য্য বোধ হয় যে এই বয়সেই বাঙ্গালী জাতি বস্কিম- 
চিন্্রকে চ্ত। ও ভাবের জগতে অন্যতম নেতা। বলিয়। বরণ করিয়া 


৯৪ 


ব্বহ্ষিমভ্জ্দর ও ব্যাঙ্গালান্ম নন্বযুগ 


লইয়াছিল। প্রতিভার শক্তি বাস্তবিকই অদ্ভুত । এই “বঙ্গদর্শন” 
পত্র বঙ্কিমচন্দ্র মাত্র চারি বৎসর কাল সম্পাদন করিয়াছিলেন ; 
কিন্তু এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই পত্রিক। তাহার বিচিত্র প্রবন্ধ- 
সম্ভারে, তাহার সমালোচনার নিপুণতা ও অকুতোভয়তায়, 
তাহার সাহিত্যিক গৌরবে, বঙ্গীয় শিক্ষিত সমাজে যে প্রভাব 
বিস্তার করিয়াছিল ও যে ছাপ রাখিয়। গিয়াছিল,তাহ।বোধ হয় 
অন্য কোন এবংবিধ সাময়িক পত্রিকার ভাগ্যে ঘটে নাই। মাসিক 
পত্রের রাজো উহ? যেন একট! যুগান্তর আনয়ন করিয়াছিল । 
বঙ্কিম নিজে ত বহু প্রবন্ধ, উপন্যাস, সমালোচনাদি উহাতে 
লিখিতেনই ; আর তাহার বিশেষ কৃতিত্ব ছিল নৃতন নৃতন 
শক্তিধর লেখকর্দিগকে উৎসাহ দান করিয়। তাহাদের সাহিত্যিক 
প্রতিভা স্ফুরিত করিতে । কত নবীন লেখক বঙ্কিমের আহ্বানে 
““ব্্গদর্শন”-এ লিখিয়। হাত পাকা ইয়াছেন এবং উত্তরজীবনে 
যশন্বী সাহিত্যিক হইয়াছেন, তাহার ইয়ত্তা নাই । আর শুধু 
““বঙ্গদর্শন”-এ লিখিবার জন্যই যে তিনি উৎসাহ দিতেন তাহ 
নহে ; শিক্ষিত শক্তিশালী লোক তাহার নিকটে গেলেই তিনি 
তাহাকে বাঙ্গালাতে লিখিতে বলিতেন_ লোকশিক্ষার জন্, 
দেশের জনসাধারণের উপকারের জন্য | 

রমেশচন্দ্র দত্ত মহাশয় নিজে গল্প করিয়াছেন-_- 
তিনি একদিন বস্কিমের সঙ্গে দেখা করিতে গেলে, বঙ্কিম তাহাকে 
অন্থযোগ করিয়। বলেন,আপনি কেন বাঙ্গালাতে লেখেন না?” 
রমেশবাবু বিনীতভাবে বলেন,“বাঙ্গীল। ভাল করিয়া জানিই না; 


৯৫ 


তরুপিস। 


আমার ছার। কি বাঙ্গালাতে ভাল কিছু লেখা সম্ভব 1” বঙ্কিম 
তাহাতে বলিলেন, “বলেন কি? আপনি একজন উচ্চশিক্ষিত 
প্রতিভাবান যুবক; আপনি বাঙ্গালা লিখিতে পারিবেন না ? 
আপনার মত লেক যে বাঙ্গাল। লিখিবে তাহাই ত ভাল বাঙ্গাল! 
হইয়। উঠিবে 1” বঙ্কিমচন্দ্রের এই উতসাহরাণী ও প্রেরণার 
ফলেই রমেশচন্দ্রের বঙ্গসাহিত্যে প্রবেশ ; আর উপযুক্ত গুরুর 
যে উপযুক্ত শিন্য হইয়াছিল, তাহ! রমেশচন্দ্রের শতবর্ষের 
উপন্যাস-চতুষ্টয় “বিঙ্গবিজেতা”, “মাধবীকম্কণ”, “জীবন- 
প্রভাত” ও “জীবন-সন্ধ্যা”-তেই স্ুপ্রকাশ। 

উদীয়মান লেখকদিগকে এই ভাবে বন্কিম উৎসাহ প্রদান 
করিতেন সত্য, কিন্তু অযথা পিঠ চাপড়াইতেন না। ইহার 
কারণ এই যে সমাজ-কল্যাণের প্রতি সাহিত্যিকের ও লেখকের 
গুরুতর দায়িহ সম্বন্ধে তাহার চিত্ত সদাই সজাগ ছিল । যা তা 
লেখা এবং তাহাই তত্ক্ষণাৎ ছাপাইতে দেওয়া__ইহ] তাহার 
প্রকৃতিবিরুদ্ধ ছিল। একট গল্প বস্থিমের সম্বন্ধে শুনিয়াছি--সত্য 
কিন! জানি না,তবে সত্য হওয়া খুবই সম্ভব-_ 56 1)012 € ৮6:০0 
০ (212 €০৮৪৫০-_গল্লটি এই যে, একদা। একটি' যুবক সাহিত্য 
রচন। জন্বন্ধে বন্কিমের সহিত্ত আলোচন। করিতে গিয়াছিলেন ; 
তাহাকে নাকি বহ্কিম বলিয়াছিলেন, “দেখ, কোন বিষয়ে কিছু 
লিখিতে আরম্ভ করিবার সময়ে একটু ভাবিয়া দেখিবে যে 
তোমার বাস্তবিকই সে বিষয়ে কিছু বলিবার আছে কিনা ২ 
যদি থাকে, তবে অতি সহজ সরাসরি ভাবে তাহ। লিখিয়। 


৯৬ 


বক্িসিচ্জ্র ও বাঙ্গালান্ “নবযুগ্গ 


ফেলিবে, ভাষার চটক লাগাইবার প্রয়াস করিবে না। আর 
একটা মোটা উপদেশ তোমাকে দিই । লিখিবামাত্রই উহ? 
প্রকাশ করিবার জন্য ব্যাকুল হইবে না__দেরাজের ভিতর লেখাটা 
এক বৎসর ফেলিয়া রাখিও-_বৎসরান্তে দেরাজ খুলিয়া পুনরায় 
লেখাটি পড়িয়া যদি প্রকাশযষোগ্য মনে কর, তবেই প্রকাশ 
করিও, নচেৎ নহে 1৮ জানি না আজকালকার তরলবীধ্য 
“তরুণ”-রোগাক্রান্ত সাহিত্যের আসরে প্রবীণ চিকিৎসকের এই 
স্তম্তনের উপদেশ মনংপৃত হইবে কি না। 

কিন্তু বন্কিমের এই উপদেশ বস্কিমেরই উপযুক্ত; কারণ 
লেখকের দায়িত্ব তিনি কখনও বিস্মৃত হন নাই ।)তাই সাহিত্যিক 
আগাছাকে তিনি আগাছাই মনে করিতেন, এবং সাহিত্যের 
উদ্যান হইতে সেই সমস্ত আগাছা উৎপাটন করিবার নিমিত্ত 
তাহার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করিতেও তিনি কিছুমাত্র পশ্চাৎপদ 
হইতেন না। শিং ভাঙ্গিয়! বাছুরের দলে প্রবেশ করিয়া হাততালি 
কুড়াইবার যে ছুনিবার মোহ, তাহ! কোন দিন বস্কেমের সবল 
চিত্তক আচ্ছন্ন করে নাই । সুতরাং স্থানে অস্থানে অসাধারণ 
প্রতিভার আবিষ্কারপুর্বক যত্র-তত্র প্রশংসাপত্র বিতরণের যে 
বিষম বাতিক বর্তমান সাহিত্যরথীদিগের মধ্যে প্রায়শঃই দেখ! 
যাইতেছে, সে বাতিক বন্কিমকে পাইয়া বসে নাই। এবং এই 
জনপ্রিয়তার মোহ ও বাহবার বাতিক হইতে বঙ্কিমচন্দ্র বন্ু উদ্ধে 
অবস্থিত ছিলেন বলিয়াই, তিনি ভালকে প্রাণ ভরিয়া ভাল 
বলিতে পারিতেন এবং মন্দকেও অতি সুস্পষ্টভাবে মন্দ বলিয়াই 


৯৭ 


তনুভণিহ 


নির্দেশ করিতে পারিতেন । এই জন্যই বঙ্কিমের সমালোচনার 
এতট। প্রতাপ ছিল, প্রতিষ্ঠা ছিল; আজকালকার ন্তায়ি, 
“বঙ্গদর্শন”-এর যুগে সমালোচনা একটা বাজারিয়া। ব্যাপার 
হইয়া দাড়ায় নাই। 

বস্কিমচন্দ্র সাহিত্যের নান! বিভাগেই লেখনী চালনা! করিতে 
লাগিলেন। এতিহাসিক উপন্যাস রচনার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক 
উপন্যাস “বিষবৃক্ষ”, “কৃষ্ণকান্তের উইল”, “ইন্দিরা”, প্রভৃতি 
প্রকাশ করিতে লাগিলেন ; “ৰঙ্গদর্শন”-পত্রে যুগপৎ সাহিত্য- 
স্থষ্টি ও সাহিত্য - সমালোচনা করিতে লাগিলেন ; কত বিবিধ 
বিষয়ে প্রবন্ধাদি লিখিতে লাগিলেন-_-এতিহাসিক, রাজনৈতিক, 
সামাজিক, বৈজ্ঞানিক ; রস-রচনাই ব। কত লিখিলেন, তাহার 
“ব্যান্রাচার্ধ্য বৃহল্লাঙগ,ল”, তাহার “ফুটন্ত সুন্বরীকে পালিশ 
কর।”-র ব্যবস্থা ইত্যাদি পাঠক-সমাজে হাস্তের তরঙ্গ তুলিল, 
আবার সঙ্গে সঙ্গে চিস্তার খোরাকও যোগাইল কিছু কম 
নহে ; সর্বোপরি, তাহার অপূর্বব স্থষ্টি “কমলাকান্তের দপ্তর” 
দেশবাসীকে উপহার দিলেন। 

সম্ভবতঃ, ওপন্যাসিক ও কথা-শিল্পী হিসাবে বহ্কিমচন্দ্রের 
খ্যাতি সাহিত্যের অন্যান্য বিভাগে তাহার দানকে কিয়ংপরিমাণে 
নিষ্রভ করিয়াছে, কিন্তু আমার ত মনে হয় প্রবন্ধকার হিসাবে 
বঙ্কিমের স্থান অতি উচ্চে। “বাঙ্গালীর বাহুবল”, “ভাঁরত- 
কলঙ্ক” পবঙ্গে ব্রাহ্গণাধিকার””, প্বাঙ্গালার ইতিহাস সম্বন্ধে 
কয়েকটি কথা”, “সাম্য”, “বঙ্গদেশের কৃষক”, প্রভৃতি প্রবন্ধ 


৯৮ 


বক্িসভ্ত্র ও শ্াঙ্গালাক্স নবযুগগ 


রচনার সরসতায়, ভাবের গা-্তীধ্যে, যুক্তির স্বচ্ছতায় এবং ভাষার 
স্পষ্টতাঁয় অপূর্ব উপভোগ্য সামগ্রী; এবং সমস্ত লেখার ভিতরেই 
মাঝে মাঝে কৌতুক-রসের সমাবেশ তাহার এই সকল গম্ভীর 
রচনাকেও অতীব উপাদেয় করিয়। তুলে। 

একটা কথা মাঝে মাঝে আজকাল কোন কোন পণ্ডিত 
ব্যক্তির মুখে শুনিতে পাই যে বস্কিমের রচনার মধ্যে নাকি 
হে'য়ালী, এবং চিন্তাধারার মধ্যে নাকি বহুৎ গোঁজামিল আছে। 
এই কথাট। আমি সত্যই বুঝিয়া উঠিতে পারি না। হে'য়ালী ও 
গোঁজামিল থাক। সাহিত্যের দোষ কিংবা গুণ সে বিচারে প্রবৃত্ত 
হইতে ভরস। করি না,কারণ আধুনিক মতে ধেয়াটে সাহিত্যই 
নাকি উ'চু-দরের সাহিত্য, এবং যে রচন। “বুঝবার জন্যে নয়, শুধু 
বাজ বার জন্যে” তাহাই ন:কি উচ্চাঙ্গের রচনা; কিন্তু সে যাহাই 
হউক না কেন, যদি কাহারও রচনা হো"য়ালী গৌজামিলের 
ত্রিসীমানার ধার দিয়।ও না গিয়। থাকে তবে তাহ বস্কিমচন্দ্রের 
রচনা-_কারণ বঞ্ষিমের রচনার প্রধান গুণই যুক্তির স্বচ্ছতা , 
ভাষার প্রাঞ্জলতা ও বক্তব্যের স্পষ্টতা, যাহাকে ইংরাজীতে বলে 
0100051105653 ) তাহার সুস্পষ্ট রচনাভঙ্গী তাহার বলিষ্ঠ 
চিত্তের পৌরুষেরই প্রতিচ্ছবি । 

মতের পরিবর্থন বঙ্কিমের হইয়াছিল । কাহারই বা না 
হয়? কিন্তু যখন যে মত ভিনি পোষণ করিতেন , অনেক 
বিচারের পরই তিনি সে মতে উপনীত হইতেন, এবং সে 
মত নুযুক্তি- সহকারে সুনৃঢ়ভাবে ও সুস্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ 


৯৪) 


ভক্রুণিম। ! 

করিতে তিনি কুষ্টিত হইতেন না। মনীষার এই প্রগাঢ়তা, 
প্রকাশের এই বলিষ্ঠতা, ভাষার এই প্রাঞ্জলত। থাকার দরুণই 
আজ অদ্ধ-শতাব্দীর অধিক পুরাতন হইলেও বঙ্কিমের রচনাগুলি 
পাঠকের চিন্ডকে অভিভূত করিয়া ফেলে । 
মতের পরিবর্তনের কথা বলিতেছিলামু ৷ বঙ্কিমেরও পরিণত 
বয়সে নানা বিষয়ে মতের ক্রমিক পরিবর্তন হইয়়াছিল। বিশেষতঃ, 
সমাঁজ-ব্যবস্থা! ও ধশ্মান্্শীলন বিষয়ে ক্রমশঃ ভারতীয় ধারার 
দিকেই তিনি বেশী ঝু'কিয়। পড়িয়াছিলেন। কোন সময়েই যে 
তিনি বি-জাতীয় ব। অতিমাত্রার পাশ্চাত্যভাবাপন্ন ছিলেন, তাহা 
নহে; সে ছুর্ভাগ্য হইতে তাহার গভীর দেশভক্তি ও আত্ম- 
মধ্ধ্যাদাবোধই তাহাকে রক্ষা করিয়াছিল । কিন্তু তথাপি জীবন- 
মধ্যান্ছে পাশ্চাত্যের ভাবধার। তাহার উপরে যতটা প্রভাব বিস্তার 
করিয়াছিল, জীবনের সায়ান্কে তাহার অনেকটাই বিলুপ্ত হইয়া- 
ছিল, এবং প্রাচ্য আদর্শ ও ভাবধারার প্রতি শ্রদ্ধা তুল্যান্থুপাতেই 
বৃদ্ধি পাইয়াছিল। এক সময়ে তিনি তাহার বন্ধু আচার্য্য 
কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্যের ন্যায় মিল-বেস্থামের হিত-বাদ (00011- 
19101911570) )১ এবং তৎপরে ওগুস্ত কৌোত্‌ (55555 
€5012062)-এর 70586157500 2120. 1২০11510101 [লে 910917105 
দ্বার! যথেষ্ট প্রভাবিত হইয়াছিলেন ; কিন্তু শেষ জীবনে তাহার 
চিত্তের উপর উক্ত মতবাদের প্রভাব ততট। ছিল না । 

কিন্ত যাহাকে গোড়া হিন্দ্ধন্ম বল যায়, যে হিন্দু পুন- 
রভ্যুর্খানের একটা প্রকাশ শশধর-শ্রীকৃষ্ণগ্রসন্নের আন্দোলনের 


১০৩ 


ববন্িসচত্দর ও শ্াঙ্গালান্ম ননযুগ্গ 


মধ্য দিয়া হইয়াছিল, তাহার সঙ্গেও বস্কিমের ঠিক মত-সামঞ্জস্ 
ছিল না। বঙ্কিমচন্দ্রের শেষ জীবনের ষে প্রধান কীত্তি, তাহার 
“ধন্মতত্ব্” “কৃষ্ণচরিত্র” ও “গীতা *-ব্যাখ্যা, তাহা ঠিক প্রচলিত 
হিন্দুধন্মান্ধমোদিত ছিল না৷ অধিক বলিতে কি, “কৃষ্ণচরিত্র-এ 
বঙ্কিম মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণকে আদর্শ মানবরূপে চিত্রিত করিবার 
যে প্রয়াস করিয়াছিলেন, তাহাতে প্রীকৃষ্ণের অবতারত্বের অপহৃব 
হইয়াছে মনে করিয়। হিন্দ্ুসমাজ যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হইয়াছিল । 
শুনিয়াছি, স্থুরসিক ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় নাকি বিদ্রপ 
করিয়া বলিয়াছিলেন যে, বস্কিমচন্দ্রের সকল উপন্যাসের মধ্যে 
মেরা উপন্যাস তাহার “কৃষ্ণচরিত্র” ! বস্তুতঃ ধন্ম ও সমাজ- 
ব্যবস্থাবিষয়ক এই সমস্ত বন্কিমচন্দ্রের শেষ বয়সের রচন! 
হিন্দুধন্মের ও সমাজ-তন্বের একটা। যুক্তিমূলক (9610108115610) 
ব্যাখ্য। এবং আকার দিবার প্রয়াস। এবং সে প্রয়াস ছিল 
একটা। বিরাট্‌ প্রয়াস,_এই প্রয়াসে তিনি তাহার বিপুল ধীশক্তি 
এবং অসামান্য বিচার-নৈপুণ্য পরিপূর্ণ মাত্রায় নিয়োজিত করিয়া- 
ছিলেন । বাঙ্গাল সাহিত্যে ইহার ভুলন। আছে কিন। অন্দেহ। 

বঙ্কিমের অলোকসামান্য প্রতিভার এই সামান্য মাত্র একটু 
আলোচনা করা গেল। আজিকার এই সভায় খুব বেশী 
আলোচনার বোধ করি আবশ্যকতাও নাই । তাহার প্রতিভার 
অল্লান জ্যোতি স্বপ্রকাশ ; ক্ষীণ বন্তিকাহস্তে তাহা দেখাইতে 
যাওয়া ধৃষ্টত। মাত্র। কত গুনীজ্ঞানী লোক বস্কিমের বহুমুখী 
প্রতিভার এক একটি মাত্র দিক অবলম্বনে কত আলোচন! 


১০৯ 


ভকর্ুলিসা 


করিয়া গিয়াছেন_-তবু আলোচনার শেষ পান নাই; কারণ 
এই কাহিনী অফুরন্ত। আমাদের বঙ্গজননীর এই অমর 
সন্তানের অব্দান-পরম্পরা এক অক্ষয় ভাগ্ডার। বাঙ্গালার 
বন্কিম যে মধুচক্র রচন। করিয়া গিয়াছেন, বাঙ্গালার অপর এক 
অমর সন্তান মাইকেলের ভাষায় | 
“গৌড়জন তাহে 
আনন্দে করিবে পাঁন সুধা নিরবধি 1” 

বস্কিমের জন্ম সার্থক হউক * বাঙ্গালার বরণীয় মনীধিগণের 
জন্ম সার্থক হউক ; আমাদিগের পুব্বন্থরিগণের জন্ম সার্থক 
হউক । তাহাদিগের প্রাণের আকাজ্! পুর্ণ হউক, তাহাদিগের 
জীবনের সাধন। সফল হউক । তাহাদিগের আদর্শে, তাহাদিগের 
প্রেরণায়, তাহাদিগের পুণ্যে, এক নবীন বলিষ্ঠ জীবন্ত জাতি 
আমাদের এই মুল! সুফল! মলয়ুজশীতল? শস্তশ্যামল। মাতৃ- 
ভূমিতে গড়িয়া উঠুক। বঙ্কিমচন্দ্রের অমর আত্ম! তৃপ্ত হউক, 
আমাদের পিতৃপুরুষের তর্পণ সমাপিত হউক । গঙ্গাজলেই 
গঙ্গাপুজা। সমাপন হইয়া থাকে ; আজ বন্কিম-স্মৃতি পূজার এই 
পুণ্য-বাসরে বস্কিমেরই সাধনা-লন্ধ তর্পণ-মন্ত্র উচ্চারণ করিয়া 
আমরা ধন্য হই-_“বন্দে মীতরম্” | 


ভাদ্র, ১৩৪৫ । 


লাজ্গালাম্ন নোলোক্ষম্শিক্ষ। 


বাঙ্গালায় লোকশিক্ষ! 


[ হাওড় প্রাথমিক-শিক্ষক-সম্মিলনীতে সভাপতির অভিভাষণ ] 


আজ আপনাদের এই শিক্ষক-সম্মিলনীতে আপনারা যে 
আমাকে সভাপতির পদে বরণ করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি 
আপনাদিগকে আমার ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন 
করিতেছি । আপনারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষা-বিস্তারের পুণ্য 
কার্যে ব্রতী,অথচ এবিষয়ে সাক্ষাৎ-সন্বন্ধে আমরা নিজের কোন 
অভিজ্ঞতাই নাই ; এমত অবস্থাতেও ষে আপনার। আমাকে 
আপনাদিগের সহিত যোগদান করিতে আহ্বান করিয়াছেন, 
ইহা! আমার প্রতি আপনাদের েহেরই পরিচায়ক । ভরসা 
করি এই সম্মিলনীর কাধ্য পরিচালন! বিষষেও আপনাদের 
সেই স্পেহে আমি বঞ্চিত হইব ন!। 


১০৫ 


ভব্রণিস। 


প্রায় চব্বিশ বৎসর কাল ধরিয়ী কলেজে উচ্চশিক্ষা দান- 
কাধ্যে আমি লিপ্ত আছি; কিছুদিন হইল নান! সভাসমিতি 
উপলক্ষ্যে মাধ্যমিক-শিক্ষা-ব্রতী শিক্ষকগণের সহিতও কিঞ্চিৎ 
পরিচয় ঘটিবার অবসর আমার হইয়াছে ; কিন্তু আদত যাহাকে 
লোকশিক্ষা বা জনশিক্ষা বলা যায়, সেই প্রাথমিক শিক্ষায় 
ব্রতী শিক্ষকগণের সাহচর্য লাভের সৌভাগ্য এযাবৎ আমার 
হয় নাই। বিশেষতঃ এই জন্যও আমি আজ আপনাদের 
সানিধ্যে আসিবার সুযোগে নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান্‌ মনে 
করিতেছি । 

বাস্তবিকই, ষে কাধ্যে আপনার লিপ্ত রহিয়াছেন, প্রাথমিক 
শিক্ষার বে ভার আপনাদের উপরে অপিত হইয়াছে, সেই 
কাধ্য অতীব মহৎ, সেই ভার অত্যান্ত গুরুতর ; কারণ এই 
প্রাথমিক শিক্ষাই একট! জাতিকে গড়িয়া তুলে । ইহার বনিয়াদ 
যদি পাক। হয়, তাহ! হইলেই সেই ভিন্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত 
মাধ্যমিক শ্িক্ষ। এবং উচ্চশিক্ষা সকল হয়, সার্থক হয় ; আর 
ইহার বনিয়াদ যদি কীচ। হয়, তবে উপর দিকে শত চেষ্টা 
করিলেও দেশে সুরম্য সুদঢ় শিক্ষা-সৌধ নিশ্মীণ কর! জন্তবপর 
হয় না। ন্ুুতরাং কি ভাবে, কোন্‌ দিকে, কি কি আদর্শ সম্মুখে 
রাখিয়া, লোকশিক্ষার প্রচার ও বিস্তার করিতে হইবে, সে 
বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তা, আলোচন। ও সাবধানতা আবশ্যক ; কারণ 
এই ব্যাপারে ভূল পথে চলিলে শুধু যে অনর্থক সময় ও 
শক্তি-সামর্্ের অপচয় হয় তাহ নহে, শুধু ষে “অর্থনাশং 


১৪৬ 


বাঙ্গালায় তলণকশ্িক্ষা। 


মনস্তাপং” ভূগিতে হয় তাহা নহে, পরস্ত জাতির অপরিমেয় 
অনিষ্ট সংসাধিত হয়, উন্নতির মূলে কুঠারাঘাত করা হয়, জাতির 
' ভবিষ্যৎ গাঢ় অন্ধকারাচ্ছন্ন হইয়া পড়ে । তাঁই বলিতেছিলাম, 
লোকশিক্ষার প্রণালী ও আদর্শ সম্বন্ধে সাবধানে সতর্কভাবে 
আলোচনা আবশ্যক । এক্ষেত্রে সত্যসত্যই *অবিবেকঃ 
পরমাপদাং পদং”” । 

তাই আমি এবিষয়ে গোড়ার কথা কিঞ্চিৎ আলোচন। 
করিতে চাই। আমাদের দেশের, বিশেবতঃ বাঙ্গাল দেশের, 
একট। ছুর্নাম আছে যে, ইহা অতি হুজুকপ্রিয় দেশ, ভাব- 
বাতিকগ্রস্ত দেশ। যখন যে কোন নূতন ভাবের বন্যা নামে, 
তাহাতেই আমরা তখন ভাসিঘা! যাই ; যখন যে কোন নৃতন 
মন্ত্র উচ্চারিত হয়, তখনই আমরা তাহাতে অভিভূত হইয়' 
পড়ি । ফলে হয় এই যে, সেই ভাবের বন্যা সরিয়। গেলে, সেই 
মন্ত্র নিক্ষল হইলে, আমর! পুনরায় অবসাঁদগ্রস্ত হইয়া! নিজেদের 
ভাগ্যলিপিকে ধিক্কার দিতে থাকি । তাই শুধু মন্ত্র শুধু 
বাগাড়ন্বর, শুধু ০৪০,-৮০:5, শুধু ভাবুকত দ্বারা বিচলিত 
ও সঞ্চালিত না হইয়ী আসল সমস্যাটির ভিতরে ধীরভাবে 
প্রবেশ করা আবশ্যক । 

লোকশিক্ষা কাহাকে বলে ? প্রথমেই মনে রাখ। উচিত 
যে শিক্ষা (বা 200০৪01017 ) এবং সাক্ষরতা ( বা 11661505 ) 
সমার্থক নহে । অক্ষর-পরিচয় না থাকিলেও শিক্ষিত হওয়া 
যায় ; আবার অক্ষর-পরিচয় থাকিলেই যে শিক্ষিত বলা যায়, 


১০৭ 


ভব্রণিস। 


এমন নহে । জীবনে সমাজে বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়া 
নান। ইন্ড্রিয়ের ছার দিয়া মানুষ নানাভাবে জ্ঞান অর্জন করে, 
শিক্ষা লাভ করে ; পুস্তকস্থ বিদ্যা শিক্ষালাভের অন্যতর উপায় 
মাত্র। আমাদের দেশে, আর শুধু আমাদের দেশে কেন, 
সব দেশেই, বর্তমান যুগের পূর্বে মুদ্রাষন্ত্রের প্রচলন বিশেষ 
ছিল না, সুতরাং মুদ্রিত পুস্তকের অভাব, অস্ততঃ ছুলভতা 
ছিল। ৰই-খাঁতা-পত্র যোগাড় কর ব্যয়সাধ্য ও কষ্টসাধ্য ছিল, 
কাজেই অধিকাংশ শিক্ষাই মুখে মুখে দেওয়। হইত । প্রাথমিক 
বিদ্যালয়ে বা পাঠশালাতে সামান্তই লেখাপড়া শিখান হইত ; 
কিন্তু তাহার সঙ্গে সঙ্গে কত কাহিনী, কত যাত্রা, কত কথকতা, 
কত পাঁচালী, কত রামায়ণ-মহাভারত-প্ুরাণাদি-পাঠ প্রভৃতির 
ভিতর দিয়া শিশুদিগের কোমল মানসপটে ব্যক্তিগত জীবনের, 
পারিবারিক জীবনের, সামাজিক জীবনের, মহত্তম আদর্শগুলি 
দুঢ়ভাবে অক্কিত করিয়া দেওয়া হইত; এবং এইরূপে সহজ 
সরল স্বাভাবিক ভাবে জাতীয় শিক্ষা গড়িয়া উঠিত। অথচ 
শুধু সাক্ষরত! বা 110619০5-র £55 ধরিলে হয়ত সেই প্রাচীন 
সমাজে শিক্ষিতের শতকর। হার কমই উঠিত। 

কিন্ত আপনারা কি বলিতে চাহেন যে সে সমাজ আঁশক্ষিত সমাজ 
ছিল? আমাদের মাতৃজাতি, আমাদের ম1, মাসী, পিসী, ঠাকুরমা, 
ঠান্দিদিরা, ধাহাদের ক্রোড়ে আমরা লালিত পালিত হইয়। 
বাড়িয়া উঠিয়াছি, ধাহাদের মুখে মুখে রাম-লক্ষ্ণ কর্ণীর্জবনের 
বীরত্ব-কাহিনী,সীতা-সাবিত্রী বেছলা-লক্ষ্মীন্দরের পুণ্য আখ্যানের 


১০৮ 


ব্বঙ্গালায় হলাকশিক্ষা। 


সরস কথ শুনিয়া শুনিয়া আমাদের মন্মে গাথ। হইয়া গিয়াছে, 
ধাহার। দেশের বালকবালিকাঁদিগের জীবনপথে অমূল্য পাথেয় 
দান করিয়। গিয়াছেন,__সেই মাতৃ-জাতির অক্ষর-পরিচয় অতি 
সামান্যই ছিল, কিন্তু আপনারা কি সেই জন্য তাহাদিগকে 
অশিক্ষিত বলিয়া অবজ্ঞ'র চক্ষে দেখিতে চাহেন ? নিশ্চয়ই নহে। 
শিক্ষার শরিচয় যদি হয় ভদ্র-ব্যবহাকে, শিক্ষার সার্থকতা যদি 
হয় চরিত্র-গঠনে, শিক্ষার পরিপুর্ণতা যদি হয় আদর্শ-জীবনে, তবে 
আমাদের প্রাচীন সমাজে যে লোকশিক্ষা-পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, 
তাহাতে অক্ষর-পরিচয় বিষয়ে কিঞ্চিৎ ক্রটি থাকিলেও, সে 
শিক্ষা-পন্ধতি সাফল্য-মপ্তিত হইয়াছিল । | 

এ গেল একট। দ্রিক। আর একটা দিক হইতেছে এই যে, 
একবার একটু অক্ষর-পরিচয় করাইয়া দিলেই, একবার একটু 
লেখাপড়া শিখাইয়! দিলেই যে প্রাথমিক শিক্ষার কাজ ফুরাইয়! 
গেল, লোকে শিক্ষিত হইয়া উঠিল, তাহা নহে। শিশুর মধ্যে 
জানিবার জন্য শিখিবার জন্য প্রবৃত্তি ফুটাইয়। তুলিতে হইবে, 
জিজ্ঞাসার উদ্রেক করিতে হইবে ঃ নচেৎ এই যে অক্ষর-পরিচয়ের 
উপর আজ এত অতিরিক্ত মাত্রায় ঝোক দেখিতেছি, এই 
অক্ষর-পরিচয়ও শিশুর মনে বেশী দিন টি“কিয়। থাকিবে না; 
অনভ্যাসে চর্চার অভাবে ছদিন বাদেই শিশু আবার নিরক্ষরের 
কোঠায় গিয়। দ্াড়াইবে ; এবং কোন দিন যে সেই শিশু 
কিছুমাত্র লেখাপড়া শিখিয়াছিল তাহাও তাহার বয়সের কালে 
প্রতীত হইবে না । ্বক্স-শিক্ষিত শিশুর যে এই পুননিরক্ষর্তা। 


১৪৪) 


তক্ুলিস। 


-্্যাহাকে বলে 15151051155 17000 1111661805- প্রাথমিক 
শিক্ষাব্যাপারে ইহা একটা বিষম সমস্যা । তাই নিয্-প্রাথমিক 
বিদ্যালয়ের [1)09170 01955-এর শিশু-সংখ্যাছারা জনশিক্ষার 
পরিমাপ করার মত ভ্রান্ত প্রণালী আর কিছু হইতে পারে না । 
সুতরাং লোকশিক্ষা ব্যাপারে প্রথম বিবেচাই এই যে কি 
উপায়ে এই শিক্ষাটুকুকে স্থায়ী করা যায়, সুদৃঢ় কর! যায়; কি 
রকমে শিক্ষার ছাপাট শিশুর মনে চিরতরে অঙ্কিত করিয়া 
দেওয়া বায় । এ সমস্যাটি বেশ গুরুতর | 


আর বিগ্ান্থুশীলনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর চরিত্র-গঠনে কি 
উপায়ে সাহায্য কর! যায়, সেটি আর একটি গুরুতর সমস্ত। | 
সকলেই আমাদের প্রচলিত প্রবাদটি জানেন, “অল্পবিদ্ধা 
ভয়স্করী।” স্তরাং প্রাথমিক বিগ্ভালয়ে প্রদত্ত সেই অল্পবিদ্ধা। 
ক্রমশঃ অবিগ্ভাতে পরিণত হইয়া একেবারে ভয়ঙ্করী হইয়া ন। 
দাড়ায়, এবিষয়ে বিশে সাবধান হওয়। দরকার । এই ভয় 
একেবারে অমূলক নহে ; পাশ্চাতা বহু দেশে অল্পবিদ্ভাজনিত 
এই ছুর্নাতি ও উস্ছজ্খলতার সমন্ত। খুবই উৎকটভাবে দেখ! 
দিয়াছে । সুতরাং যদ্দ্বার। ব্যক্তির কল্যাণ সমাজের মঙ্গল সমস্তই 
বিধৃত থাকে, সেই নীতির বন্ধন ও সংষমের শাসন শিথিল 
করিয়। ব্যাহত করিয়। দেশে উদ্দাম উচ্ছ.জ্ঘলতার উন্মত্ত তাগুব 
যাহাতে ন। দেখ। দিতে পারে, তজ্জন্য পুর্বাহেই সতর্ক হওর৷ 
প্রয়োজন । খ্যাতনাম। ইংরাজ মনীষী রাস্কিনের সাবধান-বাণী, 


৯১৩ 


াঙ্গালায় ০লাকশিক্ষ' 


4৬০12 11116215805 15 09060 0020 ৪ 11061505 012 
€010)5 11621096012 60 1056 200 20161000260 €০0 
4০001)1176--অক্ষরে অন্দরে সত্য । 

লোকশিক্ষার আদর্শ বিষয়ে গোড়ার কথা লইয়া সামান্ত 
একটু আলোচনা কর! গেল। এখন একটু ব্যাবহারিক জগতে 
আসা যাউক। পূর্বব-যুগের অবস্থা যাহাই হউক না কেন,বর্তমান 
যুগে, বিশেষতঃ এই গণতন্ত্রের যুগে_ অর্থাৎ যখন ভোট-রাজ 
প্রচলিত হইয়াছে--তখন অক্ষর-পরিচয়মূলক জনশিক্ষা বাস্ত- 
বিকই খুব দরকার হইয়া পড়িয়াছে। তাই এখনকার রাষ্ট্রনৈতিক 
'নেতৃগণের মুলমন্ত্রই হইয়াছে, “৬০ 10856. 60 200096০ 
00 10950215 100৮,--অর্থাৎ জনসাধারণই যখন ভোটের 
জোরে প্রকৃতপক্ষে আজকাল দগ্ু-সুণ্ডের মালিক হইয়া উঠিতেছে, 
তখন সেই গণ-দেবত। যাহাতে শিক্ষার অভাবে ভ্রান্ত পথে 
পরিচালিত হইয়া! অপ-দেবতাতে পরিণত ন। হইতে পারে,সেজন্ 
ত আপ্রাণ চেষ্টা করা আবশ্যক । তাই, মোটামুটিভাবে যাহাতে 
দেশের জনসাধারণ দেশের বিষয় জানিতে পারে বুঝিতে পারে, 
সভা-সমিতি বাবস্থা-পরিষদ প্রভৃতির কাধ্যকারিতা উপকারিতা 
হৃদয়ঙ্গম করিতে পারে, অস্তৃতঃ খবরের কাগজগুলি পড়িয়া 
সংবাদাদি সংগ্রহ করিতে পারে, পুস্তিকাদি ও সরকার-কর্তৃক 
প্রচারিত সহজ প্রবন্ধ ও ইস্তাহারাদি পড়িয়া নিজেদের কৃষিকাধ্যে 
'শিল্পকাধ্যে উন্নতি-সাধন করিতে পারে, পল্লী-জীবনের দৈনন্দিন 
'লোকব্যবহারে, জমিদার মহাজন উকীল মোক্তার প্রভৃতির সহিত 

১১১ 


ভক্রণিস। 


কারবারে, দেনা-পাওন। বিষয়কশ্মাদিতে নিজেদের হিসাবটুকু 
ঠিক রাখিতে পারে, স্বার্থটুকু বজায় রাখিতে পারে, প্রতারিত 
প্রবঞ্চিত উতপীডিত ন' হয়, অন্ততঃ এতটুকু পরিমাণ বিদ্যা- 
প্রচারের আবশ্যকত। আজ প্রায় সর্ববাদিসম্মতই হইয়াছে । 
স্থৃতরাং এই উদ্দেশ্য কি প্রকারে সংসাধিত হইতে পারে তদ্দিষয়ে 
এখন খুবই চিন্তার প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। 

প্রাথমিক শিক্ষাকে প্রধানত: পল্লীশিক্ষা বলিলে অন্যায় 
হইবে না ; কারণ আমাদের জনসাধারণ সাধারণতঃ পল্লীবাসী ৷ 
পৌরজন বা নাগরিকদের সংখ্যা খুবই কম-- গোট। বাঙ্গালাদেশে 
কলিকাত। হাওড়া ও ঢাকা বাদ দিলে মকঃম্বলে আর যে সমস্ত 
সহর আছে তাহাও প্রায় সবই পল্লী-ভাবাপন্ন, এবং সেই সমস্ত 
সহরের লোক-সংখ্যা যোগ দিলেও সংখ্যা অতি সামান্যই হইবে। 
স্থতরাং আমাদের দেশে লোক-শিক্ষা প্রধানত? পল্লী-শিক্ষ। 
€ বাঁ 1019] 52000860100. )। তাছাড়! সহরে প্রাথমিক শিক্ষার 
প্রতিষ্ঠান থাকিলেও তথায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার দিকে ঝৌোক 
বেশী; এবং সহরেও সমাজের যে স্তর হইতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের 
ছাত্র বেশী পরিমাণে আমদানী হয় অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত নিম্নশ্রেণী 
এবং দরিদ্র শ্রমজীবী সম্প্রদায়, সেই স্তরের সমস্তাও প্রায় 
পল্লীজীবনের সমস্তারই অন্থরূপ ; কারণ সমাজের উচ্চতর শ্রেণীর 
শিশুগণ প্রারই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানের দিকেই 
গোঁড়া হইতে ঝুঁকিয়া থাকে, তাহারা কদাচিৎ সহরের প্রাথমিক 
বিদ্যালয়ে ভগ্ভি হয়। কাজেই পৌর-শিক্ষা। (9212 ০78০2:000)- 


৯৯২ 


নাঙ্গালায় লোক শিক্ষা 


ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষার স্থান অনেকট। অপ্রধান। এই 
কারণেই বাঙ্গালার লোকশিক্ষা-বিষয়ে আলোচনা পল্লীজীবনের 
সমস্ত। ও অবস্থা-সমাবেশের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া করিলেই সঙ্গত 
* স্ুফলগ্রদ হয়। 

বঙ্গে পল্লীর অধিবাসিব্ন্দকে মোটামুটি ছই ভাগে ভাগ কর! 
যায়; এক ভাগ তথাকথিক উচ্চশ্রেণী বা ভদ্রলোক অর্থাৎ 
ব্রাক্ষণ-বৈদ্য-কায়স্থাদি, যাহাদের মধ্যে লেখাপড়ার চর্চা 
বহুকালাবধি চলিয়া আসিতেছে, এবং অপর ভাগ তথাকথিত 
নিম্বশ্রেণী, অর্থাৎ কামার, কুমার, তাতী, জোলা, তেলী, 
জেলে, নাপিত, ছুতার, চাষাভূষ। প্রভৃতি, যাহারা হাতের কাজ 
করিয়া জীবিকানিব্বাহ করে। এই শেষোক্ত শ্রেণীর মধ্যে 
লেখাপড়ার চচ্চা পুর্ব্বে বড় একটা প্রচলিত ছিল না, এখন 
আধুনিক সময়ে ক্রমশঃ প্রসারিত হইতেছে। উচ্চশ্রেণীর 
শিশুগণ প্রায়ই শুধু প্রাথমিক শিক্ষাতে সন্তুষ্ট থাকে না, 
মাধানিক এবং উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুকিয়া চাকুরী, ওকালতী, 
ডাক্তারী প্রভৃতি “ভদ্রলোকী” পেশায় নিযুক্ত হইবার চেষ্টা 
করে। সুতরং বাঙ্গালার প্রাথমিক শিক্ষা প্রধানতঃ পল্লীস্থ 
নিম্মশ্রেণীর শিশুগণের প্রয়োজনানুসারেই পরিকল্পিত হওয়া 
উচিত; অর্থাৎ যাহার খুব সম্ভবতঃ উচ্চতর শিক্ষার দিকে 
যাইবে না, তাহারা এই প্রাথমিক শিক্ষা পাইয়াই যাহাতে 
মোটামুটি শিক্ষিত ও কর্ম্মপটু হইয়। উঠিতে পারে সেই দিকে 
দৃষ্টি রাখা উচিত। 


তল্রভশিস। 


এই দিকে দৃষ্টি রাখিলে প্রাথমিক শিক্ষার পরিকল্পন৷ 
অনেকটা? সহজ হইয়া উঠে। সহজেই বুঝা! যায় যে, শিশুগণ 
পল্লীতে তাহাদের নিজেদের ঘরে বসিয়া যে সব বিষয় সহজে 
এবং অনায়াসে বুঝিতে পারে, শিখিতে পারে, বিদ্যালয়ে সে সব 
বিষয়ের চচ্চাতে সময় ও অর্থ ব্যয় কর! অনাবশ্যক। আজকাল 
৬০9০8010928] :056201018 ব। শিল্পমূলক শিক্ষার খুব একট 
রব উঠিয়াছে ঃ এদিক দিয়া বিবেচনা করিলে পল্লীর প্রাথমিক 
শিক্ষালয়গুলিতে তাহার আবশ্যকত। খুবই সামান্য, এমন কি 
নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। কামারের ছেলে বাড়ীতেই 
হাতুড়ি পিটিতে শিখে, কুমারের ছেলে বাড়ীতেই চাক ঘ্বুরাইতে 
শিখে, তাততী-জোলার ছেলে বাড়ীতেই চরক তাত চালাইতে 
শিখে, তজ্জন্য ইক্কুলে বসিয়া ঘন্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট কর 
তাহাদের পক্ষে মোটেই আবশ্যক নহে । ইস্কুলে বসিয়া তাহাদের 
আবশ্যক সেই সব বিষয় শিক্ষা করা, যে সব বিষয় বাড়ীতে 
শিখাইবার কেহই নাই, অর্থাৎ প্রধানতঃ ষাহাকে “লেখাপড়া” 
বল। হয়, অর্থাৎ কিছু ভাষা, কিছু অস্ক, কিছু ইতিহাস-ভূগোল, 
ইত্যাদি । উন্নতভাবে বিশেব-শিল্প শিক্ষা দিবার আবশ্যকতা 
আছে সত্য, কিন্তু সেজন্য বিশেষ-শিক্ষালয় (50251911520 
10501000100) স্থাপন করিতে হইবে, সাধারণের জন্য প্রতিষ্ঠিত 
প্রাথমিক শিক্ষার বিদ্যালয়গুলি তাহার উপযুক্ত ক্ষেত্র নহে। 

তারপর “লেখাপড়া” যেটুকু শিক্ষা দিতে হইবে, সে সম্বন্ধেও 
বক্তব্য এই ষে পল্লীজীবনে সুষ্ঠুভাবে জীবন-যাপনের জন্য ও 


১১৪ 


ন্বাঙ্গালায় ০লাকশিিক্ষা। 


মোটামুটি দেশ-বিদেশ জন্বন্ধে সজাগ হইবার জন্য যেটুকু বিদ্যা 
আবশ্যক, প্রাথমিক স্তরে সেইটুকু শিক্ষা দেওয়াই সমীচীন, এবং 
সেইটুকুই এমনভাবে শিক্ষা দেওয়া, যে শিক্ষার্থী উত্তর-জীবনে 
তাহ একেবারে ভূলিয় ন। যায়-_-ইহাও খুব কম কাজ বা সামান্য 
ব্যাপার নহে । নিতান্ত অনাবশ্যক বিচ্ভার বোঝ। আমাদের নিরীহ 
পল্লীবাসীর হুর্ধবল স্কন্ধে চাপাইয়। দেওয়া বিশেষ বুদ্ধিমত্তার 
পরিচায়ক নহে, জীবে দয়ার পরিচাঁয়ক ত নহেই। সেই দিক্‌ 
দিয়া মনে হয় যে বর্তমানে নিম্ন ও উচ্চ প্রাথমিক বিগ্ভালয় গুলিতে 
যে সমস্ত পাঠ্য-তালিকা আছে, তাহ! মোটামুটি ভাবে যথেষ্টই ; 
সামান্য কিছু অদল-বদল করিলেই বোধ করি উহাকেই 
পলীজীবনের পক্ষে উপযোগী করিয়া লওয়। যাইতে পারে । 

এই প্রসঙ্গে দুই একটি কথা আমার মনে হয়। পাঠ্য- 
বিষয়গুলি এমন ভাবে নির্বচন করা উচিত যে পল্লীজীবনে 
সেগুলি একেবারে £০915157॥ বা অপরিচিত ন। হয়, গ্রামের 
বাস্তব আবেষ্টনীর ভিতরে যাহাতে তাহার অনুরূপ বিষয় থাকে । 
এসম্বন্ধে সামান্য কিছু আলোচন। কর। যাউক। 

ধারাপাত-শুভস্করীর মধ্য দিয় অঙ্ক শিখান আধুনিক প্রণালী 
অপেক্ষা বেশী উপযোগী মনে হয়। বিঘাকালি, কাঠাকালি, 
নৌকাকালি ও পুকুরকালি, সুদকষা, মাসমাহিনা, বংসরমাহিনা 
প্রভৃতির আধ্য। এত সহজে গ্রাম্য-জীবনের গণিত-সমস্যাগুলির 
সমাধান করে যে ভাবিলে আশ্চধ্য হইতে হয়-_ আধুনিক 
প্রণালীতে করিতে গেলে বহু সময় ব্যয় করিয়া অনেক কাঠখড় 


১৯৫ 


ভক্ুণিস। 


পোড়াইতে হয়, অনেক ভগ্নাংশ, দশমিক, ত্রেরাশিক, বহুরাশিক 
প্রভৃতির অবতারণং করিতে হয় । 

কৃষিপ্রধান গ্রামে সহজেই উতদ্ভিদ-তত্ব শিক্ষা দেওয়া যায়, 
নানাপ্রকার শস্তের সঙ্গে বৃক্ষাদির সঙ্গে পরিচয় করাইয়া 
দেওয়া যায়, পশুপক্ষীর সহিত সাধারণ পরিচয়ও অতি 
চিন্তাকর্ষক ভাবে করান যায় পাগাবিষয়ের বিভীষিক! দূর 
হইয়া তৎস্থলে স্বত:ই সরসতা৷ আসিয়। পড়ে । 

গ্রামে প্রচলিত ছড়া, 'প্রবাদ, কাহিনী, পুরাতত্ব, পু্গাপার্ধণ, 
রীতিনীতি,মেলা-উৎসবাদির আলোচনা ও তথ্যসংগ্রহে মনোযোগ 
দিলে শিক্ষার সঙ্গে কত আনন্দ লাভ হয়, এবং দেশের 
ইতিবৃত্ত-সংগ্রহের দিক্‌ দিয়াও কত উপকার হয়। 

প্রজাজমিদার খাতক-মহাজন সম্পর্ক ও ইহাদের মধ্যে 
আদান-প্রদান ত পল্লীজীবনের প্রাণ বলিলেই হয় ; এই সব 
বিষয়-সম্পকীয় বিছা, মহাজনী হিসাব, খত তমঃস্ুক দাখিল 
পাট! কবুলিয়ত দলিল দস্তাবেক্ত প্রভৃতি বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান 
শিক্ষার্থীকে দিতে পারিলে তাহার খুবই উপকারে লাগে । 

ইংরাজীও কিছু শিখান ভাল মনে হয়, কারণ দেশের 
রাষ্ট্রভাষা ইংরাজী ; চিঠিপত্র, টেলিগ্রাম, ষ্টেশন, রাস্তার 
নির্দেশ, প্রভৃতি পড়িতেও ইংরাজী জান! দরকার হয়, এবং 
পরে উচ্চতর শিক্ষার দিকে গেলে ত দরকার হয়ই । স্মুতরাং 
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিয়ৎপরিমাণে ইংরাজী শিখাইলে 
পল্লীবাসীর উপকারই হয় । 


১৯৬ 


ব্বাচ্ছালাক্স হলাকশিক্ষ। 


ইতিহাস সম্বন্ধে আমার মনে হয় যে বাঙ্গালীর 
ছেলেমেয়েদের বাঙ্গালার ইতিহাস সম্বন্ধে যাহাতে একটু 
সুস্পষ্ট জ্ঞান জন্মে সে বিষয়ে অবহিত হওয়। উচিত। একথ। 
আমার মনে হইল এই জন্য যে, যেটুকু ইতিহাস পড়ান হয় 
প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে, তাহার সবটুকুই ভারতবর্ষের ইতিহাস। 
গোটা ভারতবর্ষের ইতিহাসের কাঠামটুকু জান। ভালই, কারণ 
সমস্ত ভারতবর্ধই একট। ব্াষ্ট্র। কিন্তু বাঙ্গালীর নিকট বাঙ্গাল। 
দেশের একট বিশেষ দাবী আছে, একটা আকর্ষণ ত আছেই। 
স্থদূর পাটলীপুত্র বা দিল্লী হইতে দৃরবীণ লাগাইয়া ভারতের 
ইতিহাসে বাঙ্গালার থে চিত্র মান্ধে মাঝে দেখা যাঁয়, তাহাই 
বাঙ্গালার প্রকৃত চিত্র নহে" পরিপূর্ণ চিত্র ত নহেই। বস্ততঃ 
বাঙ্গালী ছেলেমেয়েদের বঙ্ষেতিহাস সম্বন্ধে অজ্ঞতা ভয়াবহ । 
বাঙ্গালার সুদীর্ঘ বিচিত্র ইতিবুত্তের অন্ধ-তমিআার মধ্য হইতে 
হই একটা মহনীয় নামের জ্যোতি--আদিশুর, কি বল্লাল সেন, 
কি হুসেন শাহ, কি শ্রীচৈতন্ত-_ আমাদের শিশুগণের মানস- 
নয়নে প্রাতফলিত হয় বটে; কিন্তু ইহাদের পৌব্বাপত্্য ও 
সন্নিবেশ সম্বন্ধে অজ্ঞানত। একান্তই নিবিড় । বাঙ্গালার সভ্যতার 
বৈশিষ্ট্য, বাঙ্গালার ইতিহাসের বৈচিত্র্য ও ঘটনা-পরম্পর! 
সম্বন্ধে, শুধু শিশুগণের বলি কেন, বাঙ্গালী যুবকগণেরও সুস্পষ্ট 
হান অতি সামান্য বলিলেও অতুযুক্তি হয় না । 

ভূগোল জন্বম্বেও সেই কথাই প্রযোজ্য । বাঙ্গালার 
ভৌগোলিক সংস্থান সম্বন্ধে বাঙ্গালীর ছেলেমেয়েদের একটু 


১১৭ 


ভব্ুণিস। 


পরিক্ষার জ্ঞান থাঁক। উচিত। নদীর কথাই ধরুন। যদি 
নদীমাতৃক দেশ কোথাও থাকিয়া থাকে তবে তাহা এই 
বাঙ্গালা দেশ__নদীর কল্যাণেই বঙ্গমাতা স্ুজলা সুফল! 
শশ্শ্যামলা-_-অথচ বাঙ্গালার ভাগীরথী-পদ্মা-ব্রন্মপুত্র-সমা শ্রিত 
যে নদী-সংস্থান তৎসন্বন্ধে কয়জন শিক্ষিত বাঙ্গালীর ব্মুস্প্ট 
ধারণা আছে বলিতে পারি না । 

এই বিষয়ে আর বেশী বলা নিপ্প্রয়োজন । আমাদের দেশের 
শিক্ষা, বিশেষতঃ প্রাথমিক শিক্ষা, দেশের বাস্তব-জীবনের সহিত, 
পল্লীর প্রয়োজনের সহিত, বর্তমান অবস্থার সহিত, আুসঙ্গত ও 
স্থুসমঞ্জস হওয়া আবশ্যক ; এবং যথাসম্তা দ্রুত গতিতে এবং 
অল্প ব্যয়ে ইহার প্রচার ও প্রসারও তুলারূপে আবশ্যক । 

এই সম্পর্কে মহাত্রা গান্ধী পরিকল্পিত একটি প্রাথমিক 
শিক্ষা-পদ্ধতি-_যাহা ওয়াদ্ধা শিক্ষাপদ্ধতি বলিয়া পরিচিত 
হইয়াছে-__তদ্বিষয়ে ছুই একটা বল। বোধ করি অপ্রাসঙ্গিক 
হইবে না। মহাত্স! গান্ধীর ন্যায় অসামান্য প্রভাবসম্পন্ন ও 
আদর্শনিষ্ঠ ব্যক্ত পরিকল্পন! করিয়াছেন বলিয়াই এই পদ্ধতিটি 
সম্বন্ধে বর্তম[নে বু আলোচন! হইতেছে । 

এই শিক্ষাপদ্ধতিটির প্রধান বিশেষত্ব এই যে কোন একটি 
শিল্পকে কেন্দ্রন্বরূপ (2510 ০12) ধরিয়া লইয়া সমস্ত শিক্ষাই 
তাহার মধ্য দিয়! দিতে হইবে; দ্বিতীয়তঃ, সেই শিল্পজাত 
দ্রব্য-সাঁমগ্রী ৰিক্রয় করিয়া তল্লন্ধ অর্থদ্বার শিক্ষার ব্যয় বহুল- 
পরিমাণে নির্বাহিত হইবে; আর তৃতীয়তঃ, সঙ্গে সঙ্গে ফল হইকে 


১১৮ 


ব্বাহ্ণলাক্ম তলাকশিক্ষ। 


এই যে শিল্পেতে শিক্ষিত হইবার দরুণ ছাত্রগণ উত্তর-জীবনে 
উপাজ্জন করিয়া খাইতে পারিবে । কিন্তু আমার মনে হয় 
এই তিনটি আশার কোনটিরই সফল হইবার সম্ভাবন। নাই । 
উত্তর-জীবনে অর্থোপার্জনের কথাই প্রথমে ধরা যাঁউক। 
বিদেশের ও স্বদেশের যন্ত্রশিল্পের প্রতিযোগিতার দরুণ, 
দেশে যে সমস্ত কামার কুমার তাতী শিল্পী রহিয়াছে 
তাহারাই খাইতে পাঁয় না, ইহার উপর আবার এই সব ওয়ার্ধা- 
শিক্ষিত হাজার হাজার বালক বা যুবক যদি আসিয়া উপস্থিত 
হয়, তবে ত একেবারে গগণ্ুস্তোপরি পিগুঃ সংবৃত্তঃ” হইয়া 
দাড়াইবে। খাটিয়া আর কাহারও খাইতে হইবে না । 
দ্বিতীয়তঃ, ছাত্রদিগের স্বহস্তের শিল্পজাত দ্রব্যাদি 
বিক্রয় করিয়। বিদ্যালয়ের ব্যয় নির্ধাহ হইবে, স্তরাং সরকার 
হইতে বিশেব কোন সাহায্যের প্রয়োজন হইবে না, ইহা ত 
একেবারে অকেজে। কথা । ছাত্ররিগের কাচা হাতের তৈয়ারী 
দ্রব্য বাজারে অমনি হু-হু করিয়া কাটিয়া যাইবে, ইহা কেহ 
কল্পনা করিতে পারে ? লাভের মধ্যে হইবে এই যে শিক্ষকদিগের 
নজরই থাকিবে যাহাতে নধর.কচি ছৃপ্ধপোষ্য ছেলেগুলি অবিশ্রাম 
খাটিয়া পয়সা রোজগার করিয়া তাহাদের বেতনের যোগাড় 
করিতে পারে । এতদপেক্ষা ভয়াবহ অবস্থার কল্পনা করা 
ছুঃসাধ্য। তাহাড়া, যদি এই প্রকার ব্যবস্থা সম্ভবও হইত, তাহ! 
হইলেই বা! আমরা সরকারকে রেহাই দিব কেন ? জনশিক্ষার 
প্রচলন কর ত সভ্যজগতে সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য 


৯৯৪৯১ 


ভল্রনণিসা 


বলিয়া স্থিরীকৃত হইয়াছে, এবং সে কর্তব্য হইতে তাহাকে 
রেহাই দিতে আমরা প্রস্তুত নহি । 

তৃতীয়তঃ, কোন একটি শিল্পের মধ্য দিয়া সমস্ত বিদ্যাশিক্ষা 
দেওয়া অতি কৃত্রিম প্রণালী--ইহাতে কখনও স্বাভাবিক ভাবে 
শিক্ষ। হয় না। একট উদাঁহরণই ধরুন। ওয়ার্ধা-পরিকল্পনায় 
চরকায় স্ৃতাঁ কাটাকেই কেন্দ্রীয় শিল্পে পরিণত করিতে 
বিশেষ আগ্রহ দেখা যাইতেছে । ইহা কিছুই আশ্চর্য্য 
নহে; কারণ সকলেই জানেন যে মহাত্মাজী চরকা- 
পাঁগল। যাক্‌, মোটামুটি চরকা-মূলক শিক্ষার রকমটা এই । 
ধরুন, চরকায় সুতাঁকাটার মধ্য দিয়া ভুগোল শিক্ষ। দিতে 
হইবে__কি প্রকারে ? তুলা কোথায় জন্মে? পঞ্জাবে, মিশরে, 
আমেরিকাতে । বস্ত্র কোথায় প্রন্তঠ হয় ? বোস্বাইতে, বাঙ্গালাতে, 
ইংলগ্ে। অতএব এই সব দেশের বিবয় কিছু জানা উচ্তি-_ 
হইল ভূগোল শিক্ষা । তারপর ইতিহাস ৷ বস্ত্রশিল্প কতদিনের ? 
কোন্‌ কোন্‌ জাতি ইহাকে উন্নত করিয়াছে? সে সব জাতির 
ইতিহাস একটু জানা গেল। তারপর চরকা। যন্ত্রটির ঘূর্ণনের তত্ব 
কি? বলবিচ্ছান (705017215109) শিক্ষা হইল । আট ঘণ্ট। চরক। 
ঘুরাইয়া। যদি ছুই আনার সুতা. প্রস্তুত হয়, তবে একমাসে একটি 
বালক কত আমর করিতে পারিবে ? ত্রেরাঁশিক শিক্ষা হইল, 
এবং সঙ্গে সঙ্গে গোটা? গণিত-শান্্ই অনন্ত হইল । কোন্‌ 
গাছের কাঠে ভাল চরক। হয়? ইহা জানিবার চেষ্টায় উদ্ভিদ্‌- 
তত্ব শিক্ষা হইল । ইত্যাদি ইত্যার্দি। অর্থাৎ স্ুত্র-চক্রের 


১২০ 


বাজ্ললাক় তলোকশিক্ষা। 


উর্ণনাভ-জালে গোটা? জাগতিক ব্যাপারই ধর! পড়িয়। গেল। 
যাহাকে ইংরাজীতে বলে, 776 01000509570, 7501500 016 
7010709009512--একেবারে তাহাই । শিক্ষা-ব্য।পারে এইরূপ 
715000110৫৫ ৫52700177 যে কিরুপে কল্পিত হইল তাহাই 
ভাবিয়া আশ্চর্য্য হইতে হয়। 

তারপর, এতৎসম্বন্ধে ডাঃ জাকির হোসেন প্রমুখ করেক 
ব্যক্তির স্বাক্গরিত যে একটি বিবৃতি বাহির হইয়াছে 
তাহাতে এবম্প্রকারে শিক্ষণীয় বিষয়ের যে তালি! 
দেওয়া হইয়াছে, তাহাতে ত একেবারে আকেল গুড়,ম ! 
সংক্ষেপে তালিকাটি এই £ মাতৃভাষা এবং হিন্দী (ইংরাজী 
নহে) ॥ ইতিহাস, ভূগোল, রা তত্ব (001103 20.. 70116010), 
ধশ্মতত্ব (330 ০: 7২211610:)9), সমাজতত্ব, দেশবিদেশের গল্প ও 
কাহিনী +* প্রকৃতি-পরিচর়, উদ্ভিদ্তত্ব, প্রাণিতত্ব,র শীরীরতত্ব, 
স্বাস্থ্যতত্ব, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিচ্যা, জ্যোতিষ, অঙ্কন, গীত- 
বাছ্ধ। এত সব বিবিধ বিষয় চৌন্দবৎসর বয়সের মধ্যেই 
শিশুকে শিখাইতে হইবে ; এবং এই সব যে বিদ্যালয়ে পঠিত 
হইবে, তাহার ক্লাসের সময়-নির্দেশ ( বাঁ 9002) হইয়াছে 
এইরূপ £ মোট ৫২ ঘণ্টা ক্লাস বসিবে, তন্মধ্যে ৩ ঘণ্টা ২০ 
মিনিটই চরকা কাটা হইবে, ছুটি থাকিবে ১০ মিনিট, বাকী 
যে ২ ঘণ্টা, তন্মধ্যে গীত-বাছ্য, অঙ্কন ও গণিতে মোট ৪০ মিনিট, 
ভাষা-শিক্ষায় ৪০ মিনিট, সমাজ-বিজ্ঞান ( ইতিহাস প্রভৃতি ) ও 
প্রকৃতি-বিজ্ঞ।নে মোট ৩০ মিনিট, আর বাকী ১০ মিনিট ব্যায়ামে! 


১২৯ 


ভল্ভণিসা। 


অর্থাৎ শাদা কথায় বলিতে গেলে, ইস্কুলগুলি হইবে 
চরকা-ইস্কুল, এবং সেই চরকারই ফাঁকে ফাকে বিশ্বের যাবতীয় 
বিচ্া স্থযোগমত নিরীহ শিশুগণের কোমল মস্তিষ্ধে ঢুকাইয়া 
দিতে হইবে। ইখন্তৃত বে শিক্ষা তাহাই প্রাথমিক শিক্ষা। বলিয়। 
পরিচিত হইবে, এবং তাহাই নাকি বাধাতা-মূলক করা হইবে-.. 
অবস্থা কিছু গুরুতরই বোধ হইতেছে । ছেলেবেলায় ছড়াঘ্ 
পড়িয়াছিলাম, | 

“এক পো ছুধ কিনেছি, কি হবে তা বল না? 

ক্ষীর হবে, সর হবে, ছাঁন। হবে, মাখন হবে 

ও বৌমা, আর কি হবে বল না! ?” 
আমাদের এই অতি-বিজ্ঞাপিত ওয়াদ্ধী-শিক্ষার পরিকল্পন। যে 
ইহাকেও ছাড়াইয়া গেল ! ্‌ 
এতদ্ুপরি আবার এই মাত্র সেদিন মহাত্ম। গান্ধী বলিয়াছেন 

যে পাটাগণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, প্রভৃতি অহিংসভাবে পড়াইতে 
হইবে-৮৮0৭0 20160706010) 0015032170১ 09101156015 511] 
1022 2. 1301)-৮10161) 210797092.01)5 80150 015 01019361705 112 
01552 50015005 ৮511] 02 509100750 105 1019-৬10161302 ! 
কবিবর রবীন্দ্রনাথ একদ। বলিঘাছিলেন, আমাদের বিদ্যালয়-সমূহে 
আজকাল বেতের চাব উঠিয়া গিয়াছে, তৎস্থলে ইক্ষুর আবাদ 
করিতে হইবে । সে কবি-কথ। তবু বুঝা যায় ; কিন্ত অহিংস 
পাটীগণিত কি প্রকার, তাহ! বহু পাটাগণিত-পুস্তকের প্রণেতা 
হওয়া সত্বেও কিছুতেই আমি মালুম করিতে পারিতেছি না। 


১২২ 


ব্বাঙ্গালাক় লাকশিক্ষা। 


তারপর হিন্দী। বাঙ্গালার পল্লীগ্রামে কম্মিন-কালেও 
হিন্দীজানার আবশ্যকতা ন। থাক। সত্বেও, প্রতিটি ছাত্রকে হিন্দী 
শিখিতে বাধ্য করা হইবে ; অথচ যে ইংরাজী সর্বদাই দরকার 
হয়, তাহার ত্রিসীমানায়ও কেহ যাইতে পারিবে ন। চতুর্দশ বসর 
বয়স পধ্যস্ত | 

সত্য কথা বলিতে. এরকম অকেজো এবং আজগুবি 
প্রস্তাব কেহ যে গম্ভীরভাবে দেশের সম্মুখে উপস্থাপিত করিতে 
পারে, এবং সেই প্রস্তাব আবার কাধ্যে পরিণত করিবার 
চেষ্টা চলিতে পারে, ইহাই ধারণার অতীত । মহাত্মা গান্ধী 
ছাড় অন্য কোন ব্যক্তি এবংবিধ প্রস্তাব উত্থাপন করিলে লোকে 
হাসিয়াই উড়াইয়। দিত। 

আমার মনে হয় কি জানেন? মহাতআ্াজীর চির-পরিচিত 
যে কয়েকটি স্বরাজের অব্যর্থ দাওয়াই আছে, চরকা হিন্দী ও 
অহিংসা--সেই ত্রিফলার রসায়নটি দেশের বাত-পিত্ত-কফের 
প্রশমনের নিমিত্ত তিনি এই ওয়াদ্ধাতে প্রস্তত শিক্ষা-বটিকারূপে 
ব্যবস্থা করিয়াছেন । ইহার অতিরিক্ত ইহ! আর কিছুই নহে। 
তবে আমাদের বাঙ্গালী বুদ্ধিতে এই অবধৌতিক মুষ্টিযোগট 
একেবারে ত্রযহস্পর্শফোগ বলিয়াই প্রতীত হইতেছে । 

লোকশিক্ষার আদর্শ ও পরিকল্পন। সন্বদ্ধে কিঞ্চিৎ আলোচন। 
কর গেল। কিন্তু সে যাহাই হউক, শিক্ষার আদর্শ, শিক্ষার 
পদ্ধতি, শিক্ষণীয় বিষয়াদি সন্বন্ধে যে মতই অবলম্থিত হউক না 
কেন-_এবং এবিষয়ে নানান্‌ মুনির নানান্‌ মত হওয়া মোটেই 


১২৩ 


ভব্রণিচ! 


বিচিত্র নহে-_কিন্তু একট। বিষয়ে আশ! করি সকলেই একমত 
হইবেন যে শিক্ষা ধাহার। দান করিবেন, শিক্ষাব্রত ধাহার। গ্রহণ 
করিবেন, তাহারা যাহাতে জীবনধারণ করিতে পারেন- আমাদের 
প্রধান মন্ত্রী ফজলুল হক্‌ সাহেবের ভাষায়, অন্ততঃ “ডাল-ভাত”- 
এর সংস্থান যাহাতে তাহাদের হয়-_তাহার'ত একটা৷ ব্যবস্থা 
কর। অত্যাবশ্যক । নচেৎ কোন আদর্শ, কেন প্রণালী, কে 
পদ্ধতিই টি'কিবে না। এই বিবয়ে ছুই একটি কথ। বল! 
আবশ্যক--তা যতই কেন ন! অপ্প্রিয় হউক । 

বাঙ্গালাতে প্রাথমিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা ও 
শিক্ষকদিগের ছুোগ সম্বন্ধে আমি নিজে কোন কথা ন। বলিয়া 
বাঙ্গালা গভর্ণমেন্টের সরকারী বিবরণ হইতেই সামান্য কিছু 
উদ্ধত করিতে চাই | 

“বাঙ্গালার ছাত্রদত্ত বেতন হইতেই প্রাথমিক শিক্ষার ব্যয়ের 
অধিকাংশ নির্বাহিত হয়। অনেক দেশে প্রাথমিক শিক্ষা 
অবৈতনিক ; কিন্ত বাঙ্গালা প্রত্যেক ছাত্র গড়ে বেতন হিসাবে 
প্রায় ১॥০ টাক। দেয়; এবং অভিভাবকেরা যত টাক! দেন, 
সরকার তত টাক! দেন না। অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় 
বাঙ্গালার অবস্থ। শোচনীয় । * বাঙ্গালায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যয় 
অন্যান্ত সকল প্রদেশের ব্যয় অপেক্ষা শতকরা অল্প । প্রাথমিক 
শিক্ষার জন্য জিলাবোর্ড প্রভৃতির ব্যয়ও অন্যান্য প্রদেশের 
তুলনায় অল্প, বাঙ্গালার লোক প্রতি ব্যয় সর্বাপেক্ষা অল্প, কেবল 
বাঙ্গালার ছাত্রদত্ত বেতনের হার অন্য সকল প্রদেশ অপেক্ষা 


১২৪ 


ব্বাজ্ণলায় তলাকশিক্ষা। 


অধিক। উপরে যাহ! বঙ্গ হইল তাহাতে বুঝ! যায়, বাঙ্গালার 
অবস্থ! শোচনীয় । অত্যন্ত হীন আদর্শের বিদ্যালয়, শিক্ষকগণের 
বেতনের অল্পত।, উপযুক্ত শিক্ষাপ্রাপ্ত শিক্ষকদিগের অভাব, 
উপযুক্তরূপে বিদ্ভালয় পরিচালনের ত্রুটি ও পরিদর্শন-ব্যবস্থার 
অভাব--এই সকলই বাঙ্গালার প্রাথমিক শ্িক্ষাসংক্রাস্ত সমস্থ্যা |” 

এই বর্ণনার উপর আর টীক! নিশ্রয়োজন । এ বিবরণের 
অন্যত্র লিখিত আছে যে, জিলাবোর্ড প্রভৃতি দ্বার! সাক্ষাৎ ভাবে 
পরিচালিত বিদ্যালয়ে শিক্ষকের গড়ে মাসিক বেতন টা. ১৫৮০ ; 
ও অন্ঠান্ত বিগ্ভালয়ে গড়ে টা. ৬1০ মাত্র, অর্থাৎ গৃহস্থের বাড়ীতে 
ভূত্যের বেতনের অপেক্ষাও ন্যান। এই ভয়াবহ অবস্থার 
নিরাকরণ যদি না! করা যায়, তবে বড় বড় উদ্দেশ্য আদর্শ ও 
পরিকল্পনার জল্পন। কর। নিছক্‌ পণুশ্রম মাত্র। 

নীরস 998050355 দিয়া আমি আপনাদের ধের্ধ্যচ্যুতি 
করিতে চাহি না, কিন্তু ভারতবধেরই কয়েকটি প্রদেশের সঙ্গে 
বাঙ্গালাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যয়ের পরিমাণ একটু তুলন। 
করিলেই দেখিতে পাওয়া যায় যে, জনসংখ্যা বঙগদেশে 
সর্বাপেক্ষা বেশী হইলেও প্রাথমিক শিক্ষাতে ব্যয় বঙ্গদেশেই 
সর্বাপেক্ষা কম--শুধু কম বলিলে ঠিক বল! হয় না, 
আত্যন্তিকরূপে কম। মান্দ্রাজে যেখানে বৎসরে প্রায় দেড় 
কোটি টাকা ব্যয় হয়, বাঙ্গালায় হয় সেখানে মোটে ত্রিশ লক্ষ 
টাক ; এবং 'এই ত্রিশ লক্ষেরও প্রায় অধিকাংশই 11555015 
509:-এর বেতনার্দি ও যানবাহনের ব্যবস্থাতেই ব্যয়িত হয়। 


১২৫ 


ভক্রুণিস। 


সুতরাং সুদূর পল্লীগ্রামে যে শিক্ষক মহাশয় কোনক্রমে 
কয়েকটি অপোগণ্ড শিশু যোগাড় করিয়। কথঞ্চিং কায়ক্রেশে 
একটি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় চালাইতেছেন, তিনি কাধ্যতঃ 
সরকার হইতে কিছুই পান না বলিলেই হয়-_কোন মতে 
ছেলেদের অভিভাবকদের খোসামুদী করিয়া দিনাস্তের 
অন্ন কয়টি যোগাড় করিবার প্রয়াস পান । জিলা-বোর্ডের যে 
সাহায্য, তাহার পরিমাণ গড়ে মাসিক ৩২ টাকার অধিক 
নহে ; তাহাও রীতিমত পাওয়া যায় না, অনেক চেষ্টা তদ্বিরের 
পর আদায় হয়। 

তারপর গুরু-ট্রেণিং শিক্ষাপ্রাপ্ত শিক্ষকদিগের কথা । 
তাহারা যখন ট্রেনিং পান তখন মানিক ১০২ টাকা ব্যয় করিয়। 
বৃত্তি পান; কিন্তু যখন ট্রেণিং পাস করিয়! শিক্ষকতা কাধ্যে 
ব্রতী হন, তখন তাহাদের ভাতার বরাদ্দ মাসিক ৬২ টাকা 
মাত্র । এবং এখন ট্রেণিং-পাস শিক্ষকদিগের সংখ্য। বৃদ্ধি হওয়াতে 
অবস্থা! াড়াইয়াছে এই যে সেই ৬২ টাকারও কোন নিশ্চয়ত! 
নাই ; কেহ আজ পাইলেন ত কাল পাইলেন না, এখানে 
পাইলেন ত ওখানে পাইলেন না । 

এইরকম বায়্ভূত নিরাশ্রয় অবস্থায় বাস করিয়া, এইরূপ 
অনিশ্চিত অসহায় ভাবে দিন গুজরান করিয়া কেহ কি কোন 
বিষয়ে মনোনিবেশ করিতে পারে ? অথচ ইহার্দিগেরই হস্তে 
জাতির ভবিধ্তের আশাভরস।-স্থল শিশুগণের সমগ্র প্রাথমিক 
শিক্ষার ভার ন্যস্ত । এই দুর্ভাগ্য শিক্ষাত্রতীদিগের দেষ কি? 


১২৬ 


বাজ্ললাক্ম তলোকশিক্ষা। 


এমত অবস্থায় যতটুকু করা সম্ভব তাহ তাহার। করিতেছেন, 
বহুস্থলে সম্ভবের অতিরিক্তও করিতেছেন ; কিন্তু জনগণের 
ধাহারা প্রতিনিধি, জাতির ধাহার৷ রাষ্ট্রনেতা, ধাহাদের উপর 
অ'জ দেশের শাসনভার ন্যস্ত, তাহারা যদি এবিষয়ে অবহিত 
না হন, তাহা হইলে পরিত্রাণ কোথায় ? 

সরকারী খাতাপত্রে দৃষ্ট হয় যে দেশের প্রাথমিক বি্ভালয়ের 
সংখা। ৬১০০০ (৪৩০০০ বালকদিগের, ও ১৮০০০ বালিকা 
দিগের ), ছাত্রসংখ্যা ২১০০০০০; বঙ্গদেশের আয়তন ও 
জনসংখ্যার অনুপাতে আশানুরূপ না হইলেও এই সংখ্যাগুলি 
শুনিতে মন্দ শুনায় না; কিন্তু শিক্ষকদিগের যে ছুরবস্থ 
এবং ভন্নিমিত্ত শিক্ষর যে ছুর্দশ।, তাহা স্মরণ রাঁখিলে, 
বাস্তব শিক্ষার দিক্‌ দির দেখিতে গেলে এই সমস্ত বড় বড় সংখ্য। 
একেবারেই অলীক বলিয়া মনে হয়। বিগ্ভালয়-সংখ্য। ইহার 
চারিভাগের একভাগ হইয়াও যদি শিক্ষকেরা ভাল ভাবে শিক্ষা" 
দানের সুযোগ পাইতেন, তবে দেশে প্রকৃত শিক্ষার বিস্তার 
অনেক বেশী হইত । 

যাহা হউক, এই ছুঃখের কাহিনী বেশী বাড়াইয়া আর 
আপনাদের চিত্ত ভারাক্রান্ত করিতে চাহিনা। আমি কেবল ইহাই 
কামন। করি, শুধু ইহাই প্রার্থনা করি ষে অতীতে যাহাই হইয়। 
থাকুক ন। কেন, বর্তমানে আমাদের যতই ছূর্গতি হউক না কেন, 
আজ যখন দেশের শাসনযন্্ব আমাদেরই নির্বাচিত মনোনীত 
প্রতিনিধিদিগের হস্তে ন্যস্ত, তখন যেন অদূর ভবিষ্যতে বাঙ্গালার 


১২৭ 


তক্তুশিস। 


এই কলঙ্ক দূর হয়। আমাদের কর্তৃপক্ষগণ দেশের নেতৃগণ 
যেন ধন্ুর্ভঙ্গ পণ করেন যে, যে প্রকারেই হউক, যত কষ্ট স্বীকার 
করিয়াই হউক, তাহার! বাঙ্গালার পল্লীর ঘরে ঘরে স্ুুশিক্ষার 
আলোক ধিকিরণ করিবেন । 

বাঙ্গালীর আর কিছু নাই থাকুক, তাহার মস্তি আছে, 
প্রাণ আছে, উৎসাহ আছে । যদি স্ুুশিক্ষাদ্বারা সেই মস্তি 
সক্রিয় হয়, যদ স্তুব্যবস্থায় সেই প্রাণ সতেজ হয়, যদি স্ু-আদর্শে 
সেই উৎসাহ সন্দীপিত হয়, তবে বাঙ্গাল! মায়ের যে ভুবন- 
ভূলান রূপে আত্মহার। হইয়া কবি গাহিয়াছিলেন, 

“আমার সোণার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি, 
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, 
আমার প্রাণে বাজায় বাশী”, 

সেই বাঙ্গালা মায়ের “পাধীডাক। ছায়ায় ঢাকা” পল্লীবাট 
আবার প্রাণবন্ত হইয়া উঠিবে--বাঙ্গালার হাটে মাঠে পল্লীতে 
নগরীতে আবার লক্ষ্মী-গ্রী সঞ্চারিত হইবে । “এ নহে কাহিন 
এ নহে স্বপন, আসিবে সেদিন আসিবে |” বন্দে মাতরম্‌। 


জ্যৈষ্ঠ, ১৩৪৫ । 


লাভ ভঙগাজ্লা-ভ্নম্্স্ভ্া 


রাষ্টুভাবা-সমস্থ্য। 
[ নিখিল-বঙ্গ অধ্যাপক-সমিতির দৌলতপুর অধিবেশনে প্রদত্ত বক্তৃতা ] 


ভারতবর্ষে রাষ্থ্রভাষ! কি হওয়া উচিত এই সম্বন্ধে যে 
আন্দোলন চলিতেছে, এবং যে আন্দোলনকে উপলক্ষ্য করিয়া! 
হিন্দী, উর্দ্‌, হিন্দুস্থানী, বাঙ্গাল। প্রভৃতি ভাষার রাষ্ট্রভাষারূপে 
গৃহীত হইবার দাবী সম্বন্ধে বিভিন্ন সভাসমিতিতে নানারপ 
আলোচনা ও বাগবিতগ্ডা হইতেছে, সেই রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে 
অনেকেরই কোন সুস্পষ্ট ধারণা আছে বলিয়া মনে হয় না 
বাহোক একট কিছু রাষ্ট্রভাষা খাড়া করিতেই হইবে, এটা যেন 
একেবারে স্বতঃসিদ্ধ কথ। ৷ 

সমগ্র ভারতবর্ষে আপামর জনসাধারণকে একটা কোন 
ভাষা শিখিতেই হইবে, নহিলে ভারতের রাস্ত্বীয় এঁক্য অজস্তব ; 


১৩১ 


তন্রভণিস। 
এবং এই প্রকার রাষ্ট্রভাষার প্রচলন হইলেই এঁক্য অতি 
সহজে অবলীলাক্রমে আসিয়া পড়িবে_-এই একটা 
ধারণা যেন আমাদিগের নেতাদিগকে চারার 
আমাদের দেশ রাম না! হইতেই রামায়ণের দেশ ; তাই * 
স্বাধীনতার সঙ্গে দেখা নাই, অথচ *ম্বাধীনতা-দিবস” 
বৎসর বৎসর পালিত হইতেছে; এবং স্বাধীন ভারতীয় যু 
এখনও সুদূরপরাহত, অথচ রাষ্ট্রভাা কি হইবে সে বিষয়ে : 
ব্যাকুলতার অস্ত নাই । 

সে কথা যাক। কিন্ত এক সাধারণ রাষ্ট্রভাষার সহিত 
রাষ্থীয় এ্রক্যের সম্পর্ক কত দূর, এবং আদৌ কোন*সম্পর্ক আছে 
কিনা, সেটা একটু পরখ করিয়া দেখা আবশ্যক । এ বিষয়ে 
প্রথম কথাই এই যে, ইতিহাস এই এঁকোর দাবীর অনুক্ুলে 
বিশেষ সাক্ষ্য দের না। ইতিহাস বলে যে এক রাষ্ট্রভাষা, 
এমন কি এক মাতৃভাষাভাষী হইয়াও জাতির মধ্যে মোটেই 
রাধ্রীয় এক্য না থাকিতে পারে ; আবার বিভিন্নভাষাভাষীর 
মধ্যেও সুদৃঢ় সুদীর্ঘ রাষ্ত্ীয় এক্য সংঘটিত হইতে পারে । ছুই 
একট। মোট? মোট উদাহরণ দেওয়া যাউক। 

প্রাচীন ভারতবর্ষে মোটামুটি সংস্কৃত ভাষ! প্রচলিত ছিল ; 
ভারতের বিভিন্ন অংশের মধ্যে এই ভাষাতেই ভাবের আদান- 
প্রদান চলিত ; সংস্কৃত সাহিত্য সমস্ত ভারতের সাধারণ সম্পর্তভি 
ছিল; কিন্তু ভারতবর্ষ এক অখণ্ড রাষ্ট্র ছিল না--কুরু, পঞ্চাল 
কোশল, মংন্য, বিদর্ভ, মদ্র ইত্যাদি বহু রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। 


১৩২ 


ল্লাহ্ভাবা-সমস্' 
ঈউবোপেও মধ্য যুগ হইতে আধুনিক যুগ পর্যাস্ত জার্মাণ- 
ভণ্বাভাবী জাতিসমূহ নান। বিভিন্ন বাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল, এই সবে 
সেদিন "ঁইটলারের দাপটে অদ্রিয়া ও সুদেতেন অঞ্চল জার্মেশীৰ 
কুক্ষিগত হওয়ায় এখন অনেকটা! এক বাষ্ট্রে পবিণত হইয়াছে । 
ইটালীবও সেই অবস্থা । সমস্ত মধ্যঘুগে ইটালীয-ভাষাভাধিগণ 
ছোঞ্টু বড মাঝাবী না'না। প্রকাবেব বাষ্টে শতধ। বিচ্ছিন্ন ছিল। 
তাবপব ধবন মধা ও দক্ষিণ আমেবিকা ৷ .মক্সিকো। হইতে 
আবন্ত কবিষা চিলি আত্জঞেন্টিনা পর্যন্ত ( এক ব্রেজিল 
বা7দ ) সব্বত্রই এক স্পানিশ ভাষাব প্রচলন, তাহাতে লাটিন 
আমেবিক' প্র বাষ্টে পবিণত হয় নাই । 

অপব পক্ষে ধকন অগ্রিযা-হাঙ্গেবীব কথা । ছয় শত 
বংসবেবও উদ্ধকাল ধবিয়। হাপ স্বুর্-বাজেব শাসনে নান! 
বিভিন্নভাষাভাষী জাতি স্তসণ্হত বণ্্রীঘ একা বক্ষা কবিষ। 
আন্সয়াছিল। তাবপব ধকন কশ-সাআজা । জাবেব আমল 
হইত আবস্ত কবিযা আজ ্টালিনেবক আমল পরাস্ত 
কশ-সাআাজোব মধো নান। জাতি ও নানা ভাষাভাষীর 
লসম'বেশ, তাহাতে বাঙ্ী এঁক্য কিছুমাত্র বাহত হয নাই। 

স্ুতবাং স্পষ্টই দেখ। যাইতেছে যে, ভাষাগত এঁক্যের 
সহিত বাষ্ট্রগত একোব সম্পর্ক অতি সামান্--কোনই সম্পর্ক 
নাই বলিলেও অতুযাক্তি হয ন।। কাজেই ভাবতে বাস্ীয় এক্য 
স্থাপন কবিতে হইলে কোন একট। ভাষাকে সর্বত্র চালু 
কবিতেই হইবে, ইহ। একবাবেই অশ্রদ্ধেষ কথ।। 


১৩৩ 


তব্রন্লিসা 


রাষ্ট্রভাষার আবশ্যকতা সম্বন্ধে এই বড় দাবীটাই যদি অগ্রান্ত 
হইয়া বায়, তবে বাকী থাকে শুধু সুবিধা বা ০01৮619161706- 
এর কথা । সে বিষয়ে একটু ধীরভাবে, একটু ঠাগ্াভাবে 
আলোচন। চলিতে পারে--বিশেষ উষ্ণতার আবশ্যক করে না। 
এ সন্বন্ধেও আমার মনে হয় রাষ্ট্রভাষার প্রবক্তারা কি চাহেন, 
তদ্বিষয়ে তাহাদের নিজেদেরই কোন স্পষ্ট ধারণ নাই । 

কোন একট। সর্বজনবোধ্য ভাষার প্রচলন দ্বার কি উদ্দেশ্যে 
সাধন করিতে হইবে? কি অর্থে ভাষাটা রাষ্ট্রভাবা-রূক্প 
পরিগণিত হইবে? সমস্ত আফিস-আদালতে আইন-কানুন 
ব্যবস্থা-পরিষদে সেই ভাষ! ব্যবহৃত হইবে, ইহাই কি রাষ্ট্রভাষার 
পাগডারা চান? ধরুন একটা উদাহরণ । হিন্দীই যেন রাষ্ট্রভাষ। 
হুইল । তৎক্ষণাৎ বাঙ্গালার, মান্দ্রাজের, মহারাষ্ট্রের, পঞ্জাবের 
সমস্ত আফিস-আদালতে নথিপত্র আজ্জি-বর্ণনা সওয়াল "জবাব 
হিন্দীতে চলিতে আরম্ভ করিবে? সমস্ত সরকারী আইন, 
নোটিস ইত্যাদি হিন্দীতে লেখা হইবে ? ব্যবসায়ের কিংবা 
রাজ্য বিভাগের হিসাব-কেতাব হিন্দীতে রক্ষিত হইবে ? তাহা 
হইলে ত সমূহ বিপদ দেখিতেছি । এতদিন যে ইংরাজ-রাজত্ব 
চন্সিতেছে, তাহাতেও হাইকোর্ট ভিন্ন নিয় আদালতের কাজকন্্ম 
সব যে প্রদেশের যে ভাষা তাহাঁতেই চলে--কিস্তু কংগ্রেসী 
আমলে বোধ করি আর তাহ চলিবে না। 

আর একটা কথা রাষ্ট্রভাষ। সম্পর্কে শুনিতে পাই-__সেটা 
এই যে হিন্দী শিখিলে ভারতের নান। প্রদেশে গমনাগমনের' 


১৩৪ 


স্াউভ্ান্বা-সমস্যা! 

স্থুবিধ। হইতে পারে । যদি একথ। ঠিকও ধরিয়া লওয়। যাঁয়--. 
ঘদিও সম্পূর্ণ ঠিক নহে, কারণ দক্ষিণ ভারতে হিন্দী জানিয়াও 
বিশেষ কিছুই সুবিধা হয় না-তাহা হইলে ভাবিতে হয় 
ঘে, সমাজের মধ্যে শতকর। কয় জন লোক বিভিন্ন প্রদেশে ভ্রমণ- 
ব্যপদেশে গমনাগমন করেন 1 হাজারের মধ্যে একজনও করেন 
কি না সন্দেহ। অথচ এই যে বিপুল জনসাধারণ, যাহার! 
চিরকাল তাহাদের স্ব স্ব প্রদেশেই বসবাস করিবে, কম্মিন্কালেও 
যাহাদের অন্য প্রদেশে যাইবার আবশ্যকতা হইবে না--এমন 
কি মাতৃভাষারই অক্ষর-পরিচয় যাহাদের মধ্যে অধিকাংশেরই 
নাই--তাহাদের উপর কল্িত সুবিধার অজুহাতে মাতৃভাষার 
উপরেও আবার আর একটি বিদেশী ভাষা অবশ্য-পঠিতব্য 
করিবার প্রয়াস হইতেছে ; এবং এই প্রয়াসে কংগ্রেসী প্রধান 
প্রধান ঠাই-_যথা ব্বয়ং মহাত্মাজীর বৈবাহিক রাজগোপালাচারী 
মহাশয়---05111001091 1,2৮৮ £৯0021)001702170 £৯০0-এর বলে 
শত শত লোককে জেলে পাঠাইতেও দ্বিধা করিতেছেন না । 

রাষ্ট্রভাষ। সম্পর্কে এই ছুইটি যুক্তিই যদি অবাস্তব এবং 
অনাবশ্যক বলিয়া গ্রতীত হয়, তবে বাকী থাকে শুধু আর একটা 
যুক্তি । সেটা এই যে, সমাজের মধ্যে ধাহারা সুশিক্ষিত 
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি তাহারা যখন নিখিল-ভারতীয় সভা-সমি তি- 
কাউন্সিল প্রভৃতিতে যোগদান করেন, তখন তাহাদের মধ্যে 
ভাবের আদান-প্রদানের জন্য একট। সাধারণবোধ্য ভাষ। থাকিলে 
কাজের সুবিধা হয়। কথাট। খুব বড় নয়। যে কোন দেশেই 


১৩৫ 


তক্ুপণিস। 


আস্তজঙ্জাতিক সভ।-সমিতির অধিবেশন হয়, তথায়ই এই অভাব 
এবং সাধারণবোধ্য ভাষার এই প্রয়োজনীয়তা অস্ুভূত হয়; এবং 
নানাভাবে এই অভাবমিট।ন হয়। শুনিয়াহি জেনিভায় জাতিসঙ্ঘ 
(1.59855 ০£ 13201০775)-এর অধিবেশনে, সমস্ত প্রতিনিধিই 
নিজের নিজের ভাষায় বক্তৃতা দেন। কিন্তু দোভাষীর বন্দোবস্ত 
থাকে, তাহারা সব বক্তৃতাই ইংরাজীতে ও ফরাসীতে অনুবাদ 
করিয়।দেন; কাধ্য চলিয়। ষায়। যখন ১৯১৯ খুষ্টাব্দে ভের্সাই-সন্ধি 
সম্পর্কে বৈঠক বসে, তখনও এই পদ্ধতিই অবলম্থিত হইয়াছিল । 
এখনও শুনিতে পাই যে ইউরোপীয় কণ্টিনেন্টে বিভিন্ন রাষ্ট্র-_ 
মনে করুন তুরক্ষ ও রুশ--ইহাদের মধ্যে সন্ধি হইলে সন্ধিপত্র 
ফরাসীতে লেখা হইয়া থাকে । ইউরোপের বাহিরে ইংরাজীর 
বহুল প্রচলন হেতু ইংরাজীই বেশীর ভাগ আন্তর্জাতিক ব্যাপারে 
ব্যবহৃত হইয়া থাকে । এ সমস্তই কাঁজের স্ুবিধা-অস্ুবিধাঁর 
কথা-_-02506109] ০097.৮2112105-এর কথা । প্রথিবীর মন্যান্ত 
জাতি 779001০91 জাতি : কাজের সুবিধার জন্য যেটুকু আবশ্যক 
সেইটুকুই করিয়া তাহারা সন্তষ্ট থাকে, আমাদের মত খামখ। 
চেঁচামেচি করিয়। আকাশ ফাটায় নী। যেহেতু ইউরোপের 
আস্তর্জাতিক ব্যাপারে ফরাসীর প্রচলন আছে, তদ্ধেতু ইংলগু, 
রুশ, জান্মেণী, স্পেন, ইটালী ইত্যাদির আবালবৃদ্ধবনিতার যে 
ফরাসী শিখিতে হইবে, এই অদ্ভুত কল্পনা তাহাদের সমাজে স্থান 
পায় না। আমাদের দেশের রাষ্ট্রভাষাবিলাসী অত্যুৎসাহীদিগের 
উর্বর মস্তিষ্ষেই এই সব আজগুবি ধারণা গজায়। 


১৩৬ 


স্লাউ্ভাবা-সমস্থ্য 

বস্তুতঃ, এই হিসাবে রাষ্ট্রভাষা প্রচলনের 10009065905 
খুব বেশী নহে। কাজেই শুধু এইটুকু প্রয়োজন সাধন করিবার 
জন্য এত অতিরিক্ত মাথাব্যথার কোন সঙ্গত কারণ দেখিতে 
পাই না, কারণ এখনও ইংরাজ-রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে । 
এ যাবৎ নিখিল-ভারতীয় সভা-সমিতিতে আইন-কান্গুনে 
ইংরাজীই ব্যবন্ৃত হইয়। আসিতেছে ; স্বাদেশিকতার খাতিরে 
এখনই যে তাহা উল্টাইয়! ফেলিতে হইবে, নহিলে মহাভারত 
অশুদ্ধ হইবে, এমন কোন কারণও দেখি না; বিশেষতঃ এই 
ইংরাজী জানাতে যখন আরও উপকার হয়, বিদেশের জ্ঞান- 
বিজ্ঞানের ভাণ্ডার উন্মুক্ত হয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সহিত্ত 
ভাবের আদান-প্রদানের স্থৃবিধা হয়। তাছ|ড়া, শতবর্ষের ও 
অধিককাল ধরিয়া ভারতের শিক্ষিত সমাঁজ ইংরাজী শিখিতেছে, 
ইংরাজী ব্যবহার করিতেছে-- এই এঁতিহাসিক ঘটন। ত 
অন্বীকাঁর করিবার নহে । নিখিল-ভারতীয় ব্যাপারে ইংরাজী 
তুলিয়া দিয় আবার নৃতন একটি ভাষা জোর করিয়! চালাইতে 
হইবে, এই প্রকার ধন্ুঙ্গ পণের কোন হেতু দেখি না। 
রাষ্ট্রভাষার পাণগ্ডাদের কথা অনুসারে চলিলে ফল দ্াড়াইবে এই 
যে তিনটি ভাষ। শিখিতে হইবে £ প্রথম--মাতভাবা, দ্বিতীয়__ 
ইংরাজী ভাষা, তৃতীয়__-তথাকথিত রাষ্ট্রভাষা । এ যে একেবারে 
01021 [0 0110915 ! 

আরও একটা। মোট। কথ! মনে রাখিতে হইবে । কমিটি 
করিয়া পরামর্শ করিয়া কোন ভাষা চালু কর! যায় না। 


১৩৭ 


তক্রণিচ্স! 


এতিহাসিক কারণে, রাজ্য-বিস্তার বাণিজ্য-ব্যবসায়ের ফলেই 
এক একটা ভাষার পরিধি বিস্তৃত হয়। এই কারণেই 
ইউরোপের মধ্যযুগে ইটালিয়ান-ফরাসী-আরবী-মিশ্রিত এক- 
প্রকার খিছুড়ী বাজারিয়া ভাষা ভূমধ্যসাঁগরের পুর্বাঞ্চলে 
লেভান্ট প্রদেশে প্রচলিত হইয়াছিল, তাহাব্রই নাম হইয়াছিল 
[812809. ঢ191)06- ফরাসী ভাষার নাম 11069. ঢা1008 
নহে। ইংলপ্তের বিপুল বাণিজ্য ও সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলেই 
পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই ইংরাজীর প্রচার হইয়াছে; শেকৃস্পীয়রের 
কাব্য-কুশলতার জন্য নহে । স্পেন লাটিন-আমেরিক। আবিষ্কার 
ও অধিকার করিয়াছিল বলিয়াই তথায় স্পানিশ প্রচলিত, ডন 
কুইক্সটের বিচিত্র কার্যকলাপের জন্য নহে । পগ্ডিতদিগের 
রচিত [:5767981,00 কুত্রাপি চালু হয় নাই । সুতরাং ভারতবর্ষেও 
ষদি কালক্রমে কোন ভাষ! রাষ্ট্রভাষা হইয়া দরীড়ায়ই, তবে 
তাহা এতিহাসিক ঘটনা-সমাবেশের ফলেই হইবে-_-কমিটি 
করিয়া হইবে না। 

শুনিতেছি যে হিন্দু-মুসলমান-এক্য সাধন করিবার জন্য 
এক বিচিত্র হিন্বুস্থানী-ভাষার স্যষ্টি হইতেছে, এবং তাহার অভিধান 
রচনার ভার কংশ্রেস-কর্তক- একটি পণ্ডিত-মৌলানা-সংবলিত 
কমিটির উপরে অপিত হইয়াছে । তাহাদের ধারণ। মোটামুটি 
এইরূপ 2 4[15:510781025]” কথাটির হিন্দৃস্থানী করিতে হইবে ; 
“7657 হইল “অন্তঃ৮”) “296101” “জাতি” হইলে চলিবে না, 
সেট! ষে একেবারে হিন্দ্রভাবাপন্ন হইয়া গেল। ওটা হইবে 


১৩৮ 


স্লাক্রভাবা-সমস্। 

“কৌম।” আুতরাং মোট দ্াড়াইল “'আন্তঃকৌমিক”-+কিন্ত 
“আস্তঙ্জাতিক” অচল । এবংবিধ “আস্তঃ্কৌমিক” ভাষার 
সাহায্যেই নাকি ভারতের রাষ্ত্রীয় এক্য গড়িয়া তুলিতে হইবে । 
আমাদের “পরিস্থিতি সত্য সত্যই গুরুত্বপূর্ণ” ! 

তবে বল! যায় কি? কংগ্রেসের মধ্যে হিন্দী-ভাষীদের 
যেরূপ প্রতাপ, মহাত্মা গান্ধীর ষে প্রকার দাপট, তাহার! যদি 
বিশুদ্ধ হিন্দী বক্তৃতা এবং 5০০-০::০০-এর কল্যাণে দিল্লীর 
যুক্তরাষ্ট্রের রাঁজতক্তে গদীয়ান হইয়াই বসেন, তবে ত তাহারা 
জোর করিয়াই হিন্দী চালাইবেন। বাপুজীর বেয়াই মহাশয় ত 
পূর্বেই পথ দেখাইয়াছেন। এখন আমাদের একমাত্র ভরসা 
জিন্ন7া সাহেব । তিনি সাবধান করিয়া দিয়াছেন যে ও সব হিন্দী- 
মিন্দী চলিবে ন। : চালাইতে হইবে উদ্দ, | উহাই খাঁটি জাতীয় 
ভাষা-মোগল-আমলে হিন্দ্র-মুসলমানের সহযোগিতায় উহার 
উদ্ভব । আর আমাদের গান্ধী মহাত্মা__তিনি পৃথিবীর আর সব 
কিছুর বিরুদ্ধেই তাহার 18৪50 08০50155 চালাইতে পারেন, পারেন 
ন। শুধু জিন্না সাহেবের সঙ্গে । তাই রাজকোট-জয়পুর-ত্রিবাস্কুর 
সব টলমল; কিন্ত নিজামরাজ্য নিথর নিশ্চল। সুতরাং 
আমাদের অর্থাৎ “ভেতে। বাঙ্জালী”-দের একট. মস্ত ভরসা 
আছে যে এক্যের ধান্দায় এখনই যা মারামারি লাগিয়া গিয়াছে, 
আমাদের আর বিশেষ কিছু করিতে হইবে না ; হিন্দী-উর্দ,র 
এই সংঘর্ষে নব-বিরচিত “আস্তঃঠকৌমিক” ভাষা 1/6210091 
501001739010-এই ভস্মসাতৎ হইবে । 


১৩৯ 


ভল্ষণিম' 


তবে নেহাত নিশ্চিন্ত থাকাও উচিত নয়। যদি হিন্দী উর্ধ্‌ 
প্রভৃতি একট। কিছু রাষ্ট্রভাবারপে গজাইয়া উঠিবার উপক্রম 
করেই, তখন ত একট কিছু বিহিত করিতে হইবে । কাজেই 
পূর্ববানেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন । সংস্কতের দাবী যদি না-ও 
তোল যায়-_প্রাচীন ও অপ্রচলিত ভাষা বলিয়া আমাদের 
আধুনিকতাগ্রস্ত তরুণগণ নাসিক! কুঞ্চন করিতে পারেন-__ 
যদিও ভারতবর্ষের সংস্কৃতি সংস্কৃত ভাষার উপরই প্রতিষ্ঠিত__ 
কিন্তু বাঙ্গাল। ভাষার দাবী ত আমাদের বড় গলায় জানা ইতেই 
হইবে। যদি নানাপ্রদেশের মধো সভা-সমিতিতে ভাবের 
আদান-প্রদানের জন্য কোন একটা ভাষাকে বাহনব্ধপে 
ঠিক করিতেই হয়, সেই ভাষার উৎকর্ষ কতট। উচ্চাঙ্গের, 
সাহিত্যিক রাষ্ট্রনৈতিক ভাব প্রকাশ করিবার ক্ষমতা কতটা, 
এটাও ত দেখিতে হইবে । বাজার 7৪915 দিয়া ত গুরুগম্ভীর 
বিষয়ে আলোচনা চলে না-স্ুতরাং বাজার-হিন্দী দ্বারাও 
চলিবে না। পুর্ণ তর উন্নততর সমৃদ্ধতর ভাষার আবশ্বাক : 
এবং এদিক্‌ দিয়া দেখিলে বাঙ্গাল। ভাষার দাবী ভারতীয় ভাষার 
মধ্যে সর্ধাগ্রগণ্য । এ বিষয়ে কোন দ্বিমত হইতে পারে না ১ 
এবং বঙ্গভাষাঁভাবীদের সংখ্যাও কিছু নগণ্য নহে । সুতরাং 
বাঙ্গাল। ভাষাকে ভারতের রাষ্ট্রভাষারূপে প্রচলিত করিবার 
দাবীকে নেহাংই বাঙ্গালী-জন-স্থবলভ প্রাদেশিকতা-দোষ-ছুষ্ট 
বলিয়া মনে করিবার কোন সঙ্গত কারণ নাই । 
চৈত্র, ১৩৪৫ । 





১৪৩ 


জলাতাভ্লা' ভ্ডাজ্লাশিল শ্হঞ্প 


বাঙ্গালা ভাষার রূপ 


[ প্রবামী বঙ্গসাহিত্য-সম্মেলনের জামশেদপুর অধিবেশনের 
সাহিত্য-শাখায় প্রদত্ত বন্তৃত1 ] 


আজ এই সভার বাঙ্গাল? ভাষার রূপ-নিয়ন্ত্রণের আলোচনা 
উত্থাপন করিতে সম্মেলনের কর্তপক্ষগণ যে আমাকে অন্ুরোধ 
করিয়াছেন, তজ্জন্য আমি কৃতজ্ঞ । এই সুযোগে এ বিষয়ে ছই 
চারিটি কথা বলিতে আমি চেষ্টা করিব। তবে গোড়াতেই কিন্তু 
আমার একটু ভয়ের সঞ্চার হইতেছে । ভয়ের কারণ বিবিধ । 

প্রথমটি আমার নিজের *সন্বন্ধে। শুনিলাম নাকি পাঁচ 
মিনিটের অতিরিক্ত সময় পাওয়া যাইবে না, বক্তবা বলিবার 
জন্য । এতটুকু সময়ের মধ্যে কি রকমে যে আমার বক্তব্য 
গুছাইয়। বলিব তাহ! ঠিক করিতে পারিতেছি না ; অপর পক্ষে 
সভাপতির আদেশ উল্লঙ্ঘন করিয়া 0151] 10150129161,06 


১৯৪৩ 


তল্রন্লিস! 


আচরণ করিবার হুঃসাহসও হইতেছে না। বিশেষতঃ আমাদের 
অগ্কার সভার সভাপতি মহাশয় শুধুই যে সভাপতি তাহা নহে, 
তিনি একজন হাকিম*+এবং সম্ভবতঃ জবরদস্ত হাকিমই হইবেন। 
এমন হাকিমের হুকুম অমান্য করিবার মত সাহস আমার নাই । 
শুনিয়াছি মহিব-গল-ঘণ্টার নিনাদ নাকি অতীব ভয়াবহ, কারণ 
স্বভাবতঃই তদ্দার। 'শেষের সে দিন ভয়ঙ্কর" স্মরণ-পথে আনীত 
হয়; কিন্ত এক্ষণে আমার মালুম হইতেছে যে সভাপতি-বেল- 
ঘণ্টাও তদপেক্ষা কিছুমাত্র কম বিভীষণ নহে, কারণ সেই ঘণ্ট। 
যখন নিনাদিত হইবে তখন আমার পেটে যতই বৈয়াকরণী বিদ্যা 
থাকুক না কেন, অম্নি মনে পড়িবে যে “প্রান্তে সন্নিহিতে মরণে 
নহি নহি রক্ষতি ডুকুঞ্,-করণে', এবং তৎক্ষণাৎ আমার বক্ত- 
লীলা! সংবরণ করিতে হইবে । তাই আপনাদের নিকট অকপটে 
কবুল করিতেছি যে সেই ভয়ে আমার মুনুমুহুঃ হৃৎকম্প 
উপস্থিত হইতেছে । (সভাপতি মহাশয় বলিলেন ৪ আপনাকে 
পনের মিনিট সময় দেওয়। হইবে । ) যাক্‌, সভাপতি মহাশয়ের 
আশ্বাস-বাক্যে আমার যেন ঘাম দিয়া জ্বর ছাঁড়িল। আমার 
নিজের ভয় বোধ করি অনেকট। কাটিয়া গেল । 

এখন দ্বিতীয় ভয়ের কারণ বলিতেছি। সেটি আমার নিক্তের 
সম্বন্ধে নহে, আপনারা ধাহার। শ্রোত। তাহাদের সম্বন্ধে । আজ 
সকালবেল। আমার পরমশ্রদ্ধাস্পদ বন্ধু আপনাদের এখানকার 
চিফ. টাউন এঞ্জিনীয়ার শ্রীযুক্ত জিতেন্দ্রনাথ দাশ গুপ্ত মহাশরের 


পপ পপ পাপা পাপ পাও 


*সানিত্য-শাখার সভাপতি ছিলেন শ্রীযুক্ত অন্নদাশঙ্কর রায়, আই.সি* এস্‌। 


488 


আহ্ষাল। ভ্তঞাষান্ম জপ 


সমভিব্যাহারে সুবর্ণরেখার পরপারে দল্ম। পাহাড়ে বেড়াইতে 
গিয়াছিলাম। শুনিয়াছি যে এই পার্বত্য প্রদেশ অতিমাত্রায় 
শ্বাপদ-সন্কুল-_ব্যস্র-ভল্ুক-বন্তহস্তী দ্বারা অধ্যুষিত; আর সাক্ষাৎও 
হইয়াছে-স-অবশ্থট বাঘ ভালুকের সঙ্গে নহে-_তাহা হইলে আর 
আজ আপনাদের উপর আপতিত হইবার সুযোগ আমার হইত 
না-_কিন্তু সাক্ষাৎ হইয়াছে, বন্যহস্তীর বিরাট বিপুল বিস্তৃত পদ- 
চিহ্কের সঙ্গে । সেই প্রকাণ্ড গোলাকৃতি হাতীর পায়ের পাড়া 
দেখিয়া আমার ত প্লীহা চম্কাইয়া গিয়াছিল। আমার সেই 
অভিচ্ঞতার পর আর কাহাকেও কোন প্রকার অরণ্যের ভিতর 
লইয়া যাইতে আমার প্রবৃত্তি নাই। কিন্তু যে আলোচন৷ 
উত্থাপনের ভার আমার উপর অপিত হইয়াছে-_অর্থাৎ বাঙ্গাল 
ভাষাতত্বের আলোচন1-- সেটিও অরণ্যবিশেষ। ভাবাতত্বের সেই 
গহন বনে আপনাদিগকে প্রবেশ করাইতে আদৌ আমার মন 
সরিতেছে না। তাই মন:স্থ করিয়াছি যে আপনাদের 
নিরাপত্তার জন্যই জটিল ভাষারণ্যের শ্বাপদ-সন্কুল পথ পরিহার 
করিয়। অপেক্ষাকৃত সহজ সরল পথেই বিচরণ করিব। যে 
সমস্যাটি আজ উপস্থিত হইয়াছে তৎসম্বন্ধে যথাসম্ভব মোজ। 
কথাতেই সামান্য কিছু আলোচন। করিতে প্রয়াস পাইব। 
ব্যাপারটা সংক্ষেপতঃ এই । আজ যে বাঙ্গাল ভাষার 
রূপ-নিয়ন্ত্রণের এই প্রসঙ্গট। প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য-সম্মেলনের 
কর্তৃপক্ষগণ বিশেষ আগ্রহ সহকারেই আলোচন! করিতে চাহেন» 
ছহার কারণ শুধুই তাত্বিক জিজ্ঞাসা নহে ; বস্তুতঃ চাহিদাট। 


১৩ ১৪৫ 


তক্ুণিসা 


প্রধানতঃই ব্যাবহারিক-_-অর্থাৎ একেবারে দায়ে ঠেকিয়াই এ 
বিষয়ে একটা হেস্তনেস্ত করিবার প্রয়োজন ইহারা অন্থুভব 
করিতেছেন । ব্যাপারটা এই । সম্মেলনের কাধ্যতালিক। বা 
প্রোগ্রামের একটি বিশেষ অঙ্গ হইল বাঙ্গাল! ভাষার প্রচার ও 
প্রসার- প্রবাসী বাঙ্গালীদের মধ্যে এবং বিশেষ করিয়! 
অবাঙ্গালীদের মধ্যে । এই প্রচারকল্পসে সম্মেলনের পক্ষ হইতে 
নান! কেন্দ্রে, বঙ্গে ও বঙ্গের বাহিরে, ইহারা একটা বাষিক 
পরীক্ষা লইবার ব্যবস্থা করিয়াছেন। ছুই এক বৎসর পরীক্ষা 
লওয়াও হইয়াছে । সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, শাস্ত্গ্রন্থ, ইত্যাদি 
নানা বিষয়েই বাঙ্গালা ভাষায় পরীক্ষা গৃহীত হইয়া থাকে । 
এই সমস্ত পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা কি রকম বাঙ্গালায় উত্তর 
লিখিবে ? এই হইল প্রথম সনস্তা । কারণ আজকাল অনেক 
খ্যাত-নামা লেখক তাহাদের লেখায় ক্রমশঃই বেশী পরিমাণে 
নানাপ্রকার “চল্তি” ভাষার অবতারণা কর! হেতু, বালক- 
বালিকাদের মধ্যেও সেই অভ্যাস সংক্রামিত হইতেছে ; কাজেই 
নানাবিধ বাঙ্গাল। রূপের আবির্ভাব পরীক্ষার্থাদিগের উত্তরে 
দেখ! দিতেছে ।,এখন ইহাদের মধ্যে কোন্টি গ্রহণীয় ? এযাবত- 
প্রচলিত “সাধু” রূপ, না এই সব নয়া আমদানী “চলতি” 
ক্ধপ? এবিষয়ে একটা কিছু নির্দেশ পাইলে সম্মেলন উপকৃত 
হন। দ্বিতীয়তঃ, অবাঙ্গালীদের মধ্যে বাঙ্গাল! ভাষার প্রচার 
কলে ইহারা সহজ ব্যাকরণ ও শিক্ষাপুস্তকাদি রচনা করিতে 
চাহেন। কোন্‌ প্রকার বঙ্গভাষায় এই জব রচিত হইবে ? 


১৪৬ 


আাঙ্গাল। ভাবষান্স জপ. 


কোন্‌ প্রকার বঙ্গভাষার রূপ এই সব গ্রন্থে অবলম্বিত*ও প্রদশিত 
হইবে? মোটামুটি “একরপী” সাধু ভাষার, না৷ “বহুরূপী” 
চলতি ভাষার? এই নিমিত্তও একট। নির্দেশ আবশ্যক । 
আপনাদের সমক্ষে সমস্যাটি সংক্ষেপে উপস্থিত করিলাম । এই 
সমস্তার সুষ্ঠু সমাধান সম্মেলনের পক্ষে একান্তভাবে আবশ্যক 
হইয়া পড়িয়াছে। এখন এসম্বন্বে আমার যাহ। বক্তব্য তাহা 
সংক্ষিপ্তভাবে আপনাদের নিকট নিবেদন করিব। প্রসঙ্গব্রমে, 
বর্তমানে আবার বাণান-ঘটিত একট বিভ্রাট ঘটাইবার যে 
অপচেষ্টা হইতেছে, সে বিষয়েও সামান্ত কিছু বলিব। 

আপনার। সকলেই জানেন যে প্রায় এক শতাব্দী ধরিয়! 
নানাবিধ খ্যাতনামা লেখকদিগের চে্ার ফলে “লিখিত” বাঙ্গাল! 
ভাষার রূপের একট। কাঠাম একরপ ঠিক হইয়া আসিয়াছিল-- 
মোটামুটিভাবে বলিতে গেলে, শি্টপ্রয়োগে ভাষার একট। বূপ 
“সাধু” ব। সব্ধবজনসম্মত রূপ বলিয়া পরিগণিত হইয়া উঠিয়া- 
ছিল; এবং এই বূপগুলি প্রাচীন বাঙ্গালার নান! অঞ্চলে 
কথিত বূপের সমন্বয়ের ফলে ভাষা-বিবর্তনের স্বাভাবিক 
ধারাক্রমেই আকার ধারণ করিয়াছিল । উদাহরণ-ম্বরূপ বল? 
যাইতে পারে, যেমন কব্রিয়াপদের রূপগুলি £ করিয়া+আছি 
সকরিয়াছি, করিতে +আছি - করিতেছি, ইত্যাদি। স্বভাবত:ই 
এই সব রূপ উৎপন্ন হইয়াছে, কৃত্রিমভাবে নহে; এবং এই প্রকার 
রূপগুলিই লিখিবার সময়ে বড় বড় লেখকগণ ব্যবহার করিবার 
ফলে বাঙ্জালাতে এমন একটি সুসংহত ভাষা-রূপ দাড়াইয়। 


৯৪৭ 


ভর্ুণিস! 


যায়, যাহা! বাঙ্গীলার সর্বত্র_দাজ্জিলিং হইতে কলিকাতা; 
পর্যন্ত, চট্টগ্রাম হইতে মেদিনীপুর পধ্যন্ত_ _সব্ধত্রই ভাষার 
“সাধু” রূপ বা 5:9750910 হিসাবে গণ্য হয়, এবং সকলেই 
ইহা বুঝিতে পারে । এবং লেখক যে কোন জিলার অধিবাসী 
হউন না কেন, তিনি মুখে যে ভাষা-রূপই ব্যবহার করুন না 
কেন, লিখিবার সময়ে এই আদর্শ “সাধু” ভাষা-রূপই ব্যবহার 
করিতে থাকেন । বাঙ্গাল৷ ভাষায় যে সমস্ত রচনাকে ০195510 
বলা যায়, সে সমস্ত রচনাই-_রামমোহন, মৃতুাঞ্জয়। মাইকেল, 
বিদ্ভাসাগর হইতে বঙ্কিমচন্দ্র হেমচন্দ্র নবীনচন্দ্র, এমন কি 
প্রাক-নোবেল প্রাইজ. রবীন্দ্রনাথের পধ্যস্ত- প্রায় সমুদায় 
রচনাই এই “সাধু” ভাষায় রচিত। ইহাতে কাহারও বুঝিবার 
পক্ষে কোন অন্ুবিধা হইয়াছে বলিয়া কখনও শুন। যায় নাই। 
এইরূপ একটা! 562150910 “লৈখিক” ভাষার বিবর্তন--যাহা 
নান! জিলার বা! উপবিভাগের “মৌখিক” উপভাষ! বা 08150? 
হইতে কতকট। পৃথক্‌--ইহা! যে শুধু বাঙ্গালা ভাষাতেই দেখ 
যায় এমন নয়; অল্পবিস্তর সমস্ত জীবন্ত ভাষাতেই এইরূপ 
বিবর্তন দেখা যায়--ইংরাজীতে, ফরাসীতে, জাম্মাণে, সর্ধ্ত্রই 
এইরূপ হইয়াছে । বিশেষত লেখাপড়ার বা 1105:9০5-র 
সমধিক প্রসারে, এবং মুদ্রাযন্ত্রের কল্যাণে ছাপার বইএর 
অত্যধিক প্রচলনের ফলে “লৈখিক” ভাষার বূপের 
নিয়ন্ত্রণের দিকে লোকের বেশী নজর পড়ে। কাজেই 
নিয়ন্ত্রণও বনুল-পরিমাণে সংসাধিত হয়। “মৌখিক” 


১৪৮ 


ব্বাঙ্গাল। ভ্ভাবাব্ কাপ 


ভাষা ও “লৈখিক” ভাষার £0000-এর মধ্যেও 
যথেষ্ট তফাৎ আছে, এবং উপায়ের পার্থক্য ত আরও 
বেশী। “মৌখিক” ভাষা শুধু শ্রোতার অবগতির জন্ত ; 
“মৌখিক” কথাবার্তী শুধু ধ্বনির সাহায্যে শ্রোতার 
বোধগম্য হয়--একমাত্র শ্রবণেক্দ্িয়ই এ বিষয়ে কাজ করে। 
পরস্ত “লেখিক” রচন। লেখার আকৃতি বা বর্ণমালার রূপের 
সাহায্যে পাঠকদের বোধগম্য হয়-_এক্ষেত্রে দর্শনেক্দিয়ই প্রধান। 
সুতরাং “লৈখিক” ভাষায় রূপের একত্ব বা 02160177105 
নিতান্তই আবশ্যক, ধ্বনির তারতম্যে তেমন কিছু আসিয়া যায় 
না । যেমন ধরুন, ত-এ একার ল, “তেল” কথাটি ; আপনারা 
রাড দেশের লোক “তেল”-ই উচ্চারণ করিবেন ; আমরা 
বঙ্গদেশীয়গণ ব। বাঙ্গালগণ কিঞ্চিত বিবৃত উচ্চারণ করিয়। যাহ! 
বলিব, তাহা আপনাদের বর্ণমালায় লিখিলে রূপ ধারণ করিবে 
4ত্যাল” । কিন্তু এই স্থানীয় উচ্চারণ বিভ্রাটে “লৈখিক” রূপের 
কিছু আসিয়া যায় না । “তেল” ঠিক খাঁটিই থাকুক- উচ্চারণের 
ভেজাল উহাতে দিবার কিছুমাত্র প্রয়োজন দেখি না । আজকাল 
কিন্তু “মৌখিক” উচ্চারণামুঘায়ী বাণানের উৎকট প্রচেষ্টায় 
“মতো” দেখিতেছি, “যতো” দেখিতোছ, “ভালো” দেখিতেছি, 
“বিশেষতো।” দেখিতেছি--এমন কি, রবীন্দ্রনাথের “বিশ্বপরিচয়” 
বইখানিতে আমাদের সাবেকী চল্লিশ সেরী মণের “মোন” রূপও 
দেখিতেছি--এই সব দেখিয়া শুনিয়। হাস্যরসের সঞ্চার হয় 
দন্দেহ নাই ; কিস্তু সময় সময় আবার “মোন”টা খারাপ হইয়া 


১৪৯ 


ভক্রণিস। 


যায় ; এবং এই দৌন্মনস্যের ফলে মাঝে মাঝে “বোনে” 
যাইবার প্রবৃত্তিও যে জাগিয়া না উঠে এমন নহে । 

যাক্‌, ঝা বলিতেছিলাম । গোট। উনবিংশ শতাব্দী ধরিয়া 
বঙ্গভাষার চর্চা ও বিকাশের ফলে উহার একট অুনিদ্িষ্ট সর্বব- 
জনমান্য লিখিত “সাধু” রূপ গঠিত হইয়াছিল । ছুই চারিখান। 
“মৌখিক” ভাষায় কিখিত গ্রন্থ_-*“আঁলাঁলের ঘরে ছুলাল” 
প্রভৃতির ন্যাঁয়__-রচিত হইয়াছিল সত্য ; এবং নাটক উপন্যাসা- 
দিতে কথোপকথন প্রসঙ্গে কিছু কিছু “মৌখিক” রূপ বাবহাঁর 
হইত সত্য। কিন্তু মোটামুটিভাবে বলিতে গেলে এইগুলি লব্ঘু 
বা চুল রচনা । পরন্ত গন্ভতীর রচনায়, প্রবন্ধাদিতে, এমন কি 
উপন্যাস প্রভৃতিতেও কথোপকথন ভিন্ন অন্যস্থলে “সাধু” ভাষা 
ব্যবহৃত হইত । এই “সাধু” রীতির উপর প্রথম গ্রবল আক্রমণ 
আরস্ত হইল প্রায় পঁচিশ বৎসর পুর্রে_-“বীরবল” নামে পরি- 
চিত প্রমথ চৌধুরী মহাশয়ের সম্পাদিত “সবুজ পত্র” কাগজের 
মারফত. | রবীন্দ্রনাথ তখন সগ্চ নোবেল প্রাইজ পাইয়াছেন । 
তিনিও সহসা “মৌখিক” চল্তি-ভাষা-ভাষীদিগের দলে ভিডিয়া 
পড়িলেন ; রবি-দীপিত হইয়া “সবুজ পত্র” তরু তর্‌ বেগে বাড়িয়! 
উঠিয়া! দিকে দিকে কচি ও কীচা ডগার হরিৎ শোভ1 বিস্তার 
করিতে লাগিল ; এই শোভা বাঙ্গলার “তরুণ” সাহিত্যিক 
গণের উপর মায়ারও বিস্তার করিল নেহাৎ কম নয়। কিন্তু 
কয়েক বৎসর ধরিয়া শোভণ ও মায়! বিস্তার করিবার পর, 
কালের অলজ্ব্য বিধানে “সবুজ পত্র” ঝরিয়া পড়িল--“মৌখিক” 


১8৩ 


' ম্বাঙ্গালা আ্ঞাবাম্ম কপ 


দাপট উহাকে বাঁচাইয়া রাখিতে পারিল না । কিন্তু ঘটিল একটা 
অঘটন । “পত্র” ঝরিয়া পড়িয়া! লুপ্ত হইয়া গেল বটে ; কিন্তু 
“সবুজ*”টি রহিয়া গেল। ঠিক যেন 4১1০৪ 10 ড৬$০7067- 
191)0-এর সেই অপুব্ব চিত্র--001)291516 0০৪-এর ব্যাপার । 
সেই মার্ভার-পুঙ্গবের এক অদ্ভুত উৎকট হাস্ত ছিল--যাহাকে 
বলে £00. 7 এলিস্‌ খুকী সেই £া?ঃ,-সমন্বিত ০৪৮-এর দিকে 
তাকাইয়া থাকিতে থাকিতে দেখিতে পাইল যে ধীরে ধীরে 
ছায়ামুত্তির ম্যায় মার্জারটি মিলাইয়! যাইতেছে, অবশেষে 
একেবারেই অদৃশ্য হইয়া গেল; কিন্তু সেই হাসিটি লাগিয়া! 
রহিল-_-101)616 85 01700 ৫17 71006 0০ 0৪ 1 শুধু 
যে সবুজটি রহিয়া গেল তাহ। নহে ; গঙ্গাতীর হইতে বুড়ীগজ।- 
তট পধ্যন্ত, দিকে দিকে অঙ্গে-বঙ্গে-কলিঙ্গে সর্বত্র সেই 
“সবুজিমা” ছড়াইয়া পড়িল। এ. যেন সেই মদন-ভম্মের 
কাহিনীর পুনরাবুত্তি £ 
“পঞ্চশরে দগ্ধ ক'রে ক'রেছ একি সন্গ্যাসী 
বিশ্বময় দিয়েছ তারে ছড়ায়ে 1” 

“সবুজ পত্র”-এর আবির্ভাব ও তিরোভাবের ফলে ব্যাপার 
দাড়াইল এই যে, যে “গাঙ্গেয়” উপভাষা মোটামুটি রাঁঢ় 
অঞ্চলে প্রচলিত ছিল এবং কলিকাত। রাজধানী হওয়ায় 
স্বভাবতঃই যে ভাষার প্রভাবের কিঞ্চিং আতিশয্য 
হইয়াছিল, এবং ততকারণে পশ্চিম বঙ্গের লেখকদিগের 
লেখাতে কতকট। বেশী পরিমাণে ব্যবহৃত হইতে আরম্ক 


১৫১ 


তক্ষপিম' 


করিয়াছিল-বিশেষতঃ প্রমথ বাবু রবি বাবু প্রভৃতি বড় 
বড় লেখকদিগের দৃষ্টান্তে'সেই “গাঙ্গেয়” ভাষার মোহ 
ক্রমশঃ প্রায় সার বাঙ্গালারই তরুণ লেখকদ্িগকে আচ্ছন্ন 
করিয়া ফেলিল। রাজসাহী বিভাগ, ঢাকা বিভাগ, এমন কি 
পাগুব-বজ্জিত চট্টগ্রাম বিভাগ পধ্যস্ত এই ছোয়াচ হইতে রক্ষা 
পাইল না। এখন, আমাদের বাঙ্গালদের রকম সকম. ত 
আপনাদের জানাই আছে। আমরা বাঙ্গালরা-_চাটগীই 
বাঙ্গাল, ঢাকাই বাঙ্গাল, বাখরগঞ্জের বাঙ্গাল--আমি ত নিজে 
একজন বাখরগঞ্জের বাঙ্গাল, বাঙ্গালদের মধ্যে 5019765275 বা 
সেরা বাঙ্গাল-_-আমরা বাঙ্গালরা যদি একবার কোন কিছু 
আকড়িয়া ধরি-_তা। কি $21:011500, কি ০1৮1] 01500161706, 
কি কল্কান্তাই ভাঁষা_-কোঁন হুজুগে দি একবার মাতিয়! যাই, 
তবে একেবারে শেষ না দেখিয়। ত ছাড়ি না। তাহ আমাদের 
কোন্ঠীতে নাই । সুতরাং এই ভাষাক্ষেত্রেও তাহার কিছুমাত্র 
অন্যথা হইল না। খাস্‌ ক্যল্কেশিয়ানের চাইতেও বেশী মাত্রায় 
বাকা বাঁকা পশ্চিম। কল্কাত্তাই ভাষা! নবীন ঢাকাই, চাট্গাই, 
রঙ্গপুরী, ইত্যাদি লেখকেরা চালাইতে লাগিলেন । বস্তুতঃ এই 
রেঢো। “মৌখিক” ভাষা-_যাহা বঙ্গজ ব1 বারেন্দ্র লেখকদের পক্ষে 
কোন পুরুষে “মৌখিক” নয়, "লৈখিক” ত নয়ই--সেই ভাষা 
চালান যেন সাহিত্যিক তরুণিমার একট। 17811-7)2াং হইয়া 
দাড়াইল। যে উৎসাহ ও উদ্ধম এই বিষয়ে তরুণ উদ্দীয়মান 
বাঙ্গালা-লেখকগণ প্রদর্শন করিয়াছিলেন, আমাদের মূল সভাপতি 


১৫২ 


ব্বাজ্লল। সাবান আপ 


ব্রতচারী গুরুসদয় বাবু* মালকৌচ। মারিয়াও তদপেক্ষ। বেশী 
কিছু করিতে পারেন কিন। সে বিষয়ে আমার ঘোরতর সন্দেহ 
আছে । আমাদের বাঙ্গালদেশে একটা প্রবচন আছে-_“বোষ্টম 
যদি পীর হয়, তবে গোস্ত খায় ছুনা৮। এই প্রবচনান্থুসারে ' 
বাঙ্গাল লেখকগণ দ্বিগুণিত উৎসাহে “মৌখিক” গাঙ্গেয় বুলিকে 
তাহাদের “লৈখিক” ভাষায় রূপায়িত করিতে লাগিলেন ৷ এই 
অত্যৎসাহের ফলে মজার মজার শাব্দিক “পরিস্থিতি”-রও উদ্ভব 
হইতে লাগিল--তবে বিশেষ “গুরুত্বপূর্ণ” নয় এই যা রক্ষা । 
সাধুভাষার “আসিলে” শব্দ বঙ্গজদিগের হাতে পড়িয়া। “আস্লেন” 
আকার ধারণ করিল, রাট্রীয় মৌখিক “এলেন” পর্যন্ত আর 
পেৌছিল না। “সাথী” কথাটি এষাবৎ কল্প-লোকের কাব্যকাননেই 
পথের সাথী ছিল ; ইহার আটপৌরে গাগ্িক ব্যবহার বড় 
একটা ছিলই না; কিন্তু ভাবুকতাগ্রস্ত বাঙ্জালদিগের হাতে 
পড়িয়া ইহা একেবারে মাঠে ঘাটে হাটে বাজারে নিত্যসঙ্গী 
হইয়া ফীড়াইল। “জুতামোজ।” বাঁক হইয়া! একেবারে 
“জুতোমুজো” আকার ধারণ করিল । বা্ধ-গাঙ্গের়দিগের ণ' 
উৎসাহের তোড়ে বক্র গাঙ্গের় ভাষার প্লাবনের জলতরঙ্গ 
দ্বিগুণ বেগে প্রবাহিত হইল । 
ফলতঃ ব্যাপার ধ্াড়াইল এই যে, বিগত পঁচিশ বৎসরের _ 

* প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য-সম্মেলনের জামসেদপুরে মূল সভাপতি 
ছিলেন শ্রীযুক্ত গুরুসদয় দত্ত আই. সি. এস. | 

1 বুড়ী-গঙ্গা তীরবাসীদিগের । 


১৫৩ 








্্্প্্পিপস্পা। 


ভল্সভণিস। 


ভাষাগত ইন্খিলাফের ফলে এখন চিরপ্রচলিত স্ুপ্রতিষিত 
সর্ববজনমান্য লিখিত ভাষার সাধুরূপের ভিত্তি পর্যযস্ত কাপিয়। 
উঠিয়াছে। নাটক উপন্যাসাদির ত কথাই নই, গম্ভীর 
প্রবন্ধাদিতে, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক কিংবা এতিহাসিক 
আলোচনাদিতে পর্য্যন্ত “মৌখিক” রূপের প্রচলন অত্যধিক 
পরিমাণে চলিতেছে । প্রমাণের জন্য বেশী দূর যাইবার 
প্রয়োজন নাই । আমাদের এই সভাতেই তিন প্রস্থ সভাপতির 
অভিভাবণ পঠিত হইয়াছে । তন্মধ্যে আমাদের এই সাহিত্য- 
শাখার সভাপতিরূপে রায় মহাশয় উজ্জ্বলে মধুরে মিশাইয়া 
“বিনুর আত্মকাহিনী”-র বে উপভোগ্য চিত্রটি অস্কিত করিয়াছেন, 
শুধু সেইটির নয়, পরন্ত অপর ছুইটি গুরুগম্ভীরভাবে রচিত 
অভিভাবণেরও ভাব। অতি মন্মাস্তিকরূপেই “চলস্তিকা”। বস্তুতঃ 
যে কোন মাসিক-পত্র খুলিলেই দেখিতে পাইবেন, অদ্ধেক 
লেখ! “সাধু,” বাকী অদ্ধেক “অসাধু” । আপনারা হয়ত 
ভাবিতে পারেন যে “অসাধু” হইয়াও যদ্দি “চল্তি” ভাষ। বুঝিতে 
একটু সহজতর হয়, তবে মন্দ কি? কিন্তু বস্ততঃ তাহ। নহে। 
এই তথাকথিত “মৌখিক” রূপের মৌখিকত্ব থাকে প্রধানতঃ 
সর্বনাম ও ক্রিয়। পদের বিভক্তি ব্যবহারে, এবং বহুল-প্রচলিত 
ছুই একটি বিশেষ্য-বিশেষণের “বাকা” রূপের ব্যবহারে ; যেমন, 
“তাহাদের” স্থলে “তাদের””, “তাহাদিগকে” স্থলে “তাদেরকে” 
“করিয়াছি” স্থলে “করেছি”, “কিরিব” স্থলে “কর্ব”, “করিয়।” 
স্থলে “কারে” ; “পুজা” স্থলে “পুজো”, “ইচ্ছা” স্থলে “ইচ্ছে” 


৯৫৪ 


ব্বাঙ্গাল। জ্ভাষাম্স হ্দপ 

“অবশ্য” স্থলে “অবিশ্তি”, “খুড়া” স্থলে “খুড়ো”, “বুড়া” স্থলে 
“বুড়ো”, ইত্যাদি । এইগুলি বাদ দিলে তথাকথিত “মৌখিক” 
্টাইলের রচনার শব্দ-সমাবেশ প্রাবুটের ঘন-সমাবেশের হ্যায়ই 
গুরুগম্ভীর ঘোরঘটাচ্ছন্ন সংস্কৃতবহুল-_প্রাকৃত ইতর লোকের 
পক্ষে শুধু ুস্পাচ্য নয়, একেবারেই ছুষ্পাঠ্য। বুঝিবার 
পক্ষে একেবারেই স্তগম নহে । এবংবিধ রচনার “মৌখিক”? 
অভিধ। একেবারেই “পরিহাসবিজল্লিতং” । অথচ লাভের মধ্যে 
হইয়াছে এই যে এই অতি নিরর৫থক “মৌখিক” ফোড়ন 
রচন।-সম্ভারে মিশাল দেওয়াতে কতকগুলি ০010850০650 
এবং ০0:96] রূপ খামখ। ভাষাতে প্রবেশ করিয়া শুধু 
শুধু বাণানের বিশৃঙ্খলার আমদানী করিয়াছে । কোন উপকার 
যে হইয়াছে এমন ত দেখিতে পাই না। 

“করিয়াছি” এই সাধু ভাষার ক্রিয়াপদটি অপেক্ষা “করেছি” 
মৌখিক রূপটি বুঝিতে সহজতর, একথা বোধ করি কেহই 
বলিবেন না। তবে কিনা আজকাল [00012ণ0 1521 22176 
5720-এর যুগ--তাই চারি 9511201০-এর পরিবর্তে তিন 
551195]6-এর আমদানীতে কিঞ্চিৎ €100০-এর 2০018020% 
বা সময়-সংক্ষেপ হইতে পারে, এই পধ্যস্ত। কিন্তু অপরদিকে 
যে ঘোরতর গোলমাল। “করিয়াছি” ঃশব্দটির বর্ণবিস্যাস 
একেবারে সুস্থির নুদৃঢ়-কোন অনিশ্চয়তী, কোন হাঙ্গাম। নাই 
_ আর বাঙ্গালী মাত্রেই অক্রেশে বুঝিতে পারে। এখন “মৌখিক” 
রূপ ধরা যাউক। কত রকমারী রূপ হয় একবার দেখুন ? 


১৫৫ 


তরগগণিম। 


করেছি, করেচি, কোরেছি, কোরেচি ; ইহার উপর আবার কেহ 
কেহে ইলেক্‌ বা। 20950:0919-র পক্ষপাতী,--সেই ইলেক্‌-টি.ক 
সতে আরও ছুইটি রূপ শ্লাড়ায় £ ক'রেছি, ক'রেচি। মোট রূপ 
ধাড়াইল ছয়টি । কোন বঙ্গভাষাশিক্ষার্থী অবাঙ্গালী, নিরীহ 
সাধু “কিরিয়াছি” পদের স্থলে এই ““মীখিরূ” বড়ানন-রূপের 
ষড়যন্ত্রে বে একেবারে আকেল-গুড়ম হইয়। যাইবেন, ইহাতে 
আর আশ্চধ্য কি? তবুত একটা অতি সহজ দৃষ্টাস্ত দিলাম | 
যদি মনে করুন “করিতেছি” পদটি ধরিতাঁম, তবে শ্রাদ্ধ কতদূর 
গড়াইত একবার ভাবুন দেখি? করছি, করচি ; কোরছি, 
কোরচি ; কচ্ছি, কচ্চি; কোচ্ছি, কোচ্চি : কচ্ছি, কচ্চি : 
কোচ্ছি, কোচ্চি; ইত্যাদি ইত্যাদি। “করিলাম” পদটির 
অবস্থা কি দাড়ায় দেখুন দেখি ? করলাম, করলেম, 
করলুম ; কোরলাম, কোরলেম, কোরলুম ; কলাম, 
কল্লেম, কলমে ; কলাম, কলেম, কলুম ; ইত্যাদি । লাম- 
লুম-লেম-সংবলিত ত্রিধারার একেবারে উদ্দাম প্লাবন ! 
উপনিবদে যে লেখা আছে “একোহহং বহুঃ স্যাম” তাহার 
একেবারে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত (। গণিতজ্ঞ বলিয়া আমার কিঞ্চিং 
খ্যাতি আছে ; কিন্ত 706107808161012 2100 50005180012- 
-এর সহযোগে এক একটি “সাধু” বাঙ্গালা ভাষার ক্রিয়াপদের 
যে কতগুলি রূপাস্তর সম্ভব তাহা গণন! করিতে আমিও হিম্সিম্‌ 
খাইয়। ষাই। তবে মিছামিছি এই নিরর্থক পণুশ্রম কেন ? 
কোন দিক্‌ দিয়াই কোন সুবিধ! হয় না-_অর্থবোধও সুগম হয় 


৯৫৬ 


ব্বাঙ্গাজ? ভ্ঞাষান্স জপ 


না-শুধু শুধু বিশ পঞ্চাশ রকম বিচিত্র বাণানের অবতারণা 
করিয়া নিষ্কামভাবে বিশৃঙ্খল। স্থষ্টি করা কেন? ভাবাশিক্ষার্থী- 
দিগের পক্ষে--তা কি বাঙ্গালী কি অবাঙ্গালী শিক্ষার্থী-_ 
তাহাদের পক্ষে ত রীতিমত একট? বিভীষিকার স্যষ্টি হয় এই 
“মৌখিক” বঙ্গবুলি আয়ত্ত করিতে । 

শুধু “গাজেয়” মৌখিক ভাষার বূপেরই খেলা কিঞ্চিৎ 
দেখাইলাম । বাঙ্জালার অন্যান্য অঞ্চলের “মৌখিক” কূপ 
আমদানী করিলে ত বোধ করি ভূতের উপদ্রব মনে করিয়া 
আপনার সভাস্থল পরিত্যাগ করিবেন। তাই তাহা আর 
করিলাম না। বস্তুতঃ কোন সুপ্রতিচিত ভাষাতেই এইরূপ 
“মৌখিক” রূপের আমদানী করা হয় না--কারণ “মৌখিক” 
উচ্চারণ স্থানভেদে কালভেদে পাত্রভেদে পরিবন্তিত হইবেই, এবং 
তদন্ুসারে শব্দবিন্তাস করিতে গেলে কোন দিনই শব্দের রূপের 
স্থিরতা থাকিবে না। ধরুন ইংরাজী ভাষা । ইংলগ্ডেও নান 
স্থানীয় 18120 প্রচলিত আছে; 7009195095115-এর কথা 
আর $০1191016-এর কথা এরকম নহে ; আবার খাস 
লগুনের 0০০159০5-দের উচ্চারণ অন্যবিধ। কিন্তু “সাধু” 
ইংরাজী ভাষায় ওসব 9191০ ব্যবহৃত হয় না_-এমন কি 
রাজধানীর 0০০]100.655 019190-ও নহে । আমাদের বাঙ্গাল। 
দেশের মত বিলাত দেশে রাজধানী-গ্রীতি এতটা। উৎকটভাবে 
দেখ। দেয় নাই । একম কি, স্কচ লেখকরাও “সাধু” ইংরাজীতেই 
পুস্তকাদি লেখেন। তবে কোন কোন সময়ে ছুই একজন 


১৫৭ 


ভল্ষণিস। 


লেখক এসব উপভাষার নমুনা দেখাইবার জন্য তাহাতে কবিতাদি 
লেখেন, এই মাত্র-যেমন টেনিসনের টব 970196]0 চ2100021 
কিংবা 811555 এর 1007550515115 009617051 এখনও মনে 
পড়ে জর্জ ইলিয়টের *1৬11]] 01 01) 01095” উপন্তাসে ম্যাগি 
টালিভারের কথাবার্তায় গ্রাম্য ভাষার ব্যবহার কিরূপ অদ্ভুত ও 
অবোধ্য মনে হইত । বস্তরতঃ “সাধু” ইংরাজী ভাষার একটা 
কাঠাম দ্রাড়াইয়া গিয়াছে--লিখিবার সময়ে সকলেই সচরাচর 
সেই ভাষাতেই লেখেন--মৌখিকের ছড়াছড়ি করেন ন1। 
ফরাসীতেও তদ্রপ। “সাধু” ফরাসী রচনায় 7891015191) £910)18- 
এর অপভাষ। ব্যবহৃত হয় না, অন্য প্রদেশস্থ 08০15 ত নহেই । 
খামখা ভাবায় বিশৃঙ্খলা আনয়ন করিবার এই যে ছুশ্পবৃত্তি, 
ইহ! আমাদের বাঙ্গালীদেরই একট) একচেটিয়। বিশেষত্ব বলিয়া 
মনে হয়। এই জন্যই রবীন্দ্রনাথের সহিত আমার বাঙ্গাল। 
ভাষা-ঘটিত আলোচনা-প্রসঙ্গে আমি আক্ষেপ করিয়া! 
বলিয়াছিলাম, “জানি না কি অপরাধে “সাধু” বাঙ্গাল আপনার 
সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা হইতে বঞ্চিত হইল । “সাধু বাঙ্গাল ত 
আর কোন অপরাধ করে নাই। বঙ্গভাষাভাষীদের নানাবিধ 
প্রাকৃত বুলি বা 4191০6-এর একট সর্ববজনবোধ্য 501020.01 
0117) বা ০0092012012 1010107 স্যষ্টি করিয়াছে মাত্র । এই 
এঁক্যসাধন-প্রচেষ্টা ঘষে আধুনিক জন-গণ-মন-অধিনায়কদিগের 
বিষদৃষ্টিতে পতিত হইল, ইহা। খুবই বিচিত্র বটে। 
কিমাশ্চর্ধ্যমতঃপরং !” 


১৫৮ 


শ্বাঙ্গাল। ভ্ভাবাল্স জপ 


বন্ততঃ এই “মৌখিক” বুলির সাম্প্রতিক উৎপাঁত যদি 
দূরীভূত হয়, তাহা! হইলে “সাধু” বাঙ্গালা ভাষার ব্যবহারে 
বিশেষ বিশৃঙ্খল! থাকে না । ক্রিয়াপদের ও সর্ধবনামের রূপে 
ত কোনই বিশৃঙ্খলা নাই। এমন কি বিশেষ্য বিশেষণ 
প্রভৃতির মধ্যেও যে শব্দগুলি সংস্কতমূলক, তাহাদের রূপে 
কোন অনিশ্চয়তা নাই। শুধু সংস্কৃতেতর ভাষা হইতে 
আগত কিংবা খাটি দেশজ শব্দের বাণানে কিছু কিছু 
রূপান্তরের বা ৮21191)£-এর ব্যবহার আছে-__বাঙ্গালাতে ছুই 
জ, ছুই ন, তিন শ, এবং হৃত্ব-দীর্থের উচ্চারণ প্রায় একই রকম 
হইয়া দ্াড়ানর ফলে £ যেমন, জিনিষ, জিনিস ; খুসি, খুশি ; 
ইত্যাদি। আমরা আজ জামশেদপুরে উপস্থিত ; কেহ হয়ত 
তালব্য শ দিয়া লেখেন, কেহ দন্ত স দিয়া। এই ৮811973 
521115)5-এর ব্যবহার এমন কিছু গুরুতর নহে । সংস্কৃত যে 
এমন কঠিন ব্যাকরণের নিগড়ে আবদ্ধ ভাবা, তাহাতেও 
এবংবিধ রূপান্তর বিরল নহে; যেমন, শ্রেণী, শ্রেণি; 
আবলী, আবলি; ইত্যাদি হুত্ব দীর্ঘ ছই-ই হয়। এই 
সভাতেই হয়ত ডজন ডজন “অবনী" উপস্থিত আছেন ; 
কিন্ত সংস্কৃতে অবনী, অবনি, ছুই-ই হয়। আমরা 
ছেলেবেল। “কেশরী”কে তালব্য-শ-যুক্তই জানিতাম, এখন 
শুনি নাকি “কেসরী”-ও হয়। “বশিষ্ঠ” যুনিও তখৈবচ ; 
পুর্বে ধারণা ছিল তাহার দৌড় শুধুই তালব্য-শ পর্য্যন্ত, এখন 
গনি মুনিঠাকুর দন্ত্য-স কেও আয়ত্ত করিয়াছেন। তালব্য-শ- 


১৫৯ 


তন্রনণি€সা 


যোগে যে সমস্ত উপাদেয় খাগ্চসামগ্রীর “পরিবেশন” পূর্ব 
হইত, এখন মৃদ্ধন্য-ষ-যোগে “পরিবেষণ” হওয়াতেও তাহাদের 
উপাদেয়ত্বের কিঞ্চিন্মাত্রও হানি হয় নাই। তারপর শুহ্থুন 
অতি অত্যাশ্র্ধ্য বার্তী। সে দিন ““শব্দকল্পদ্রম” উল্টাইতে 
উল্টাইতে দেখি যে জনকনন্দিনী বৈদেহী সীতা-_ধাহার নাম 
আশ। করি আপনাদের সকলেরই স্ুবিদিত আছে--অবশ্ট এখন 
পর্য্যন্ত খুবই আশ করিতে পারি, তবে ভবিষ্য প্রগতিগ্রস্ত 
তরুণ যুগে কি হইবে বলিতে পারি না_-এমন যে সীতা, ভিনিও 
নাকি “শীত।” রূপে অবতীর্ণ হইতে পারেন । অপরং কিংবা 
ভবিষ্যতি? এই যে রূপ-বাহুল্য ইহাতে সংস্কৃত অচল বা 
অপাঙ্ক্তেয় হইয়া পড়ে নাই। তারপর ধরুন ইংরাজী । 
£৯০১ 4৯ (5010160610195 (00101561078 3 [২1051706 1২11706, 
নানাবিধ রূপই প্রচলিত । এমন কি আজ যে হাকিম সাহেব 
আমাদের সভাপতিরূপে অধিষ্ঠিত রহিয়াছেন, তিনি যখন 
এজলাসে বসেন, তখন বোধ করি রায় লিখিবার সময়ে )05- 
1706751 ও 10059176176 উভয়বিধ বর্ণবিশ্যাসই গ্রাহ্য করিয়া 
থাকেন--তাহাতে হুকুমের রদবদল হয় না। ইহাতে এই সহজ 
কথাটাই বুঝা যায় যে অল্প কিছু শবে যদি রূপবাহুল্য থাকেও, 
তজ্জন্ত সাতিশয় শিরঃগীড়ার কোন কারণ নাই । এই সব 
বহুরূপী শব্দেরও কালক্রমে বহুস্থলেই প্রয়োগে একটাই রূপ 
ঈাড়াইয়া যায়। অবশ্য, এই সব স্থলে কোন একটা বূপকেই 
সুপ্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা প্রশংসনীয় । কিন্তু এই প্রসঙ্গে বড়, 


১৬৩ 


বাঙ্গালা ভ্ভাষান্ম জপ 


কথা এই যে *সাধু” বাঙ্গাল। ভাষার শিষ্টপ্রয়োগে তেমন বেশী 
কিছু বিশৃঙ্খলা নাই ; এবং এই “সাধু” ভাষাই সচরাচর রচনাতে 
ল্লেখকদিগের ব্যবহার কর! উচিত ৷ 

তবে এই প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা কথা বল! যাইতে পারে। 
“মৌখিক” ভাষার প্রয়োগ কোন কোন স্থলে করিলে তেমন 
অনিষ্ট হয় না, যেমন কথোপকথন-স্থলে | নাটক বা উপন্যাসে 
যেখানে পাত্রপাত্রীর কথাবার্তী লিপিবদ্ধ হয়, সেখানে “মৌখিক” 
ভাষা ব্যবহার করিলে একটু বেশী স্বাভাবিক ও শ্রুতিমধুর 
হয় । সংস্কৃতেও এই রীতি অনেকটা প্রচলিত আছে । আপনারা 
সকলেই জানেন যে সংস্কৃত নাটকে 'যেখানে স্ত্রীলোকের এবং 
ইতর লোকের কথাবার্তা আছে, সেখানে প্রায়শংই প্রাকৃতের 
ব্যবহার ; আর যেখানে প্রধান নায়কেরা ব। উচ্চশ্রেসীস্থ পুরুষেরা 
কথাবার্ত বলেন, যেখানে সংস্কতের ব্যবহার । আজ এই সভায় 
অনেক মহিলা উপস্থিত আছেন - স্ত্রীলোক এবং ইতর লোককে 
এক পর্য্যায়ভূক্ত করায় তাহার! আমার প্রতি কুপিত। হইবেন 
না_দোষ আমার নহে: দোষ সেই প্রাচীন বুড়। সংস্কৃত কবিদের 
_উাহারাই এইরূপ বিধান করিয়া গিয়াছেন। বোধ করি সে 
আমলে £50210150)-এর রেওয়াজ ছিল না, তাই তাহারা 
এতটা ভরসা পাইয়াছেন । তবে কারণ যাহাই হউক, তাহাদের 
বিধানে নায়িকাদিগের শ্রীমুখ হইতে “অজ্জউত্ত” ব্যতীত “আধ্য- 
পুজ” সম্ভাষণ বহির্গত হইত ন। সংস্কৃতের নজীর বাঙ্গাল! নাটক- 
উপন্তাসেও বোধ করি চলিলে মন্দ হয় না। কিন্ত যেস্থলে 


১১ ১৬১ 


ভন্রনপণিস। 


লেখক নিজে কথা বলিতেছেন, পাত্রপাত্রীদের মুখ দিয়া বলাই- 
তেছেন না, সেই স্থলে “সাধু” ভাষারই প্রয়োগ করা বিধেয়। 
আমাদের বড় বড় ওপন্যাসিকগণ--শরৎ চট্টোপাধ্যায় মহাশয় 
পর্যস্ত--এই রীতিই অবলম্বন করিয়। গিয়াছেন। এইরূপ 
একটা! ৮1৪. 77699 বা মাঝামাঝি বন্দোবস্ত অশোভন মনে হয় 
না। আবশ্যক মত পাত্রপাত্রীদিগের সুখে বাঙ্গালার অন্যান্থয 
অঞ্চলের ''মৌখিক” বুলিও ব্যবহৃত হইতে পারে, এবং হইয়াও 
আনিতেছে । “মৌখিক” বুলির এই প্রকার সীমাবদ্ধ প্রয়োগে 
“মৌখিক”-এর বিশেষত্বও বেশ পরিস্ফুট হয়। 

আমার বক্তব্য প্রায় শে হইয়া আসিল । এখন বর্তমানে 
কয়েক বৎসর ধরিয়া যে “সাধু” ভাবার বাণান-সংস্কার ও বাণান- 
পরিবর্তনের একট? প্রয়াস দেখ। দিয়াছে_-বিশেষতঃ বোলপুরের 
বিশ্বভারতী ও গোলদীঘীর বিশ্ববিষ্ঠালয়-সংশ্লিষ্ট কতিপয় বাক্তির 
অতিরিক্ত উৎসাহের কফলে--তৎসম্পর্কে ছুই একটা কথা৷ বলা 
আবশ্যক মনে করি। আপনারা অনেকেই বোধ করি অবগত 
আছেন যে যখন এই প্রচেষ্টার প্রথম উদ্ভব হয়, তখন এ নিষয়ে 
আমি কিঞ্চিৎ প্রতিবাদ করি। সেই বাদ-প্রতিবাদের বিস্তৃত বিবরণ 
মত্প্রণীত “বাঙ্গালা ভাষা ও বাণান” গ্রন্থে পাইবেন। সেই বাদ- 
প্রতিবাদের ব্যাপারে বন্ধুবর স্থুনীতি চট্টোপাধ্যায় মহাশয় ছিলেন 
এক পক্ষে, আমি ছিলাম বিরুদ্ধ পক্ষে । অবশ্য বলাই বাহুল্য 
মাত্র যে তিনি ছিলেন শুক্লপক্ষ, আমি ছিলাম কৃষ্ণপক্ষ । 
আমার ভয় হইতেছে যে এই ভাবাগত পক্ষাঘাতের ফলে আমার 


১৬৭ 


বাঙ্গাল স্ডানান্স জপ 


সম্বন্ধে বোধ করি একট] 712101০6-ই দাঁড়াইয়া গিয়া থাকিবে 
যে উহার। যাহাঁই বলুন না কেন, আমি অগ্নি তাহার বিরুদ্ধতা 
করিব। সেই জন্যই এবিষয়ে কিছু বলিতে আমি একটু সঙ্কোচ 
অনুভব করি। সে যাহাই হউক, বর্ধমান ক্ষেত্র আমি যথাসম্ভব 
051001০0-বঞ্জিত হইয়া, রাগছ্েষবিষুক্ত হইয়া আমার বক্তব্য 
পরিস্ফুট করিতে চেষ্ট। করিব। সংস্কারকদিগের কাধ্যকলাপে 
আমার প্রধান আক্ষেপ এই যে যদিও “মৌখিক” ভাবার বিষম 
বাশ[ন-বিশৃঙ্ঘল দূরীভূত করিবার জন্য উহাদের প্রয়াসের স্ুত্র- 
পাত, কিন্ত সে বিষয়ে উহার? বিশেষ কিছুই করিলেন না, কিং! 
করিতে ভরস! পাইলেন ন।; “মৌখিক” ভাবার “লাম-লেম-লুম” 
সনই অবাধে স্বীকৃত হইল, “মত-মতে1”ভাল-ভালো।” ইত্যাদিও 
মানিয়া লওয়া হইল; এমন কি “কি-কী” সমস্তায় হস্তক্ষেপ 
করিতেও উহাদের সাহসে কুলাইল না। কিন্তু তৎপরিবর্তে 
উহারা করিলেন কি? না, “সাধু” ভাষার শবের ন্ুপ্রতিষিত 
বাণান পরিবস্তনে উঠিয়া! পড়িয়। লাগিলেন-_-তখন 51095977 
হইল “সরলী-করণ” । সেই ধাক্কায় “রাণী” হইল “রানি”, 
'“কাধ্য হইল “কার্ধ”, “ধন্ম” হইল 'ধর্ম”, “সর্ত” হইল 
“শত” “সৌখীন”? হইল “শৌখিন”, “পোষাক” হইল 
পোশাক”, ইত্যাদি ইত্যাদি। রেফের পরে কোন কোন 
বাঞ্জ"নর দ্বিত্বভাব--যাহ! বাঙ্গাল! ভাষাতে চির প্রচলিত ও ধ্বনি- 
সঙ্গত, এবং যাহা সংস্কত-ব্যাকরণান্থুমোদিত-_তাহার উপর 
একেবারে উহার খঙ্জাহস্ত হইলেন ; ফতোয়া জাহির হইল 


১৬৩ 


তলভগিস! 


যে আর সব সংস্কার-প্রস্তাব যদি তুলিয়াও লইতে হয়, 
তাহাও স্বীকার-_কিস্ত রেফের পরে ব্যঙ্জনবর্ণের দ্বিস্ব কিছুতেই 
চলিবে না_নৈৰব নৈব চ। এতাদৃশ অত্যুতৎসাহের ফল 
যাহ। হইবার তাহাই হইল; অর্থাৎ “মৌখিক” ভাষার 
বিশৃঙ্খলতা। ত পূর্ব অব্যাহত রহিলই, পরস্ত “সাধু" 
শুাষার বাণানে যে সব স্থলে কোন অনিশ্চয়তা ছিল 
না, সে সব স্থলেও নৃতন করিয়া বিশৃঙ্খলা! আমদাশী করা 
হইল । একেবারে “উপ্টা বুঝিলি রাম!" এখন দেখিতে 
পাইবেন, মাসিক-পত্রাদিতে পাশাপাশি প্রবন্ধে একটিতে 
চিরপ্রচলিত বাণান, অপরটিতে “নয়া” গুস্তাবিত বাণান সমানে 
চলিয়াছে । “সরলীকরণ”-এর ধাক্কায় ভাষার আছ্যশ্রাদ্ধ হইতে 
সপিশ্ভীকরণ পধ্যন্ত সংসাধিত হইবার উপক্রম হইয়াঁছে। এবিষয়ে 
আমার বক্তব্য অতি সংক্ষিপ্ত, এবং আমি আশা করি আপনারা 
সকলেই ইহার অন্থমোদন করিবেন । আমার বক্তব্য এই ! 
ভাঁবাতে যে শৰব্খের বর্ণবিন্যাসে কোন রূপান্তর নাই, কোনও 
অনিশ্চয়ত। (নাই, তথায় নৃতন করিয়া বিকল্প বা! রূপান্তর ব! 
পিশৃঙ্খল। আনয়ন করা অবিধেয়--তা কি উচ্চারণের খাতিরেঈ 
হউক,কি সরলীকরণের খাতিরেই হউক, কি ভাষাগত ব্যুৎপন্ভির 
খাতিরেই হউক। কারণ ভাষার প্রয়োগের বিশুদ্রভার আর 
কোন 617০০0০6105] 0656 নাই-_ব্যবহাঁর-বাছুল্য (588০) 
ও একরূপত্ব (21010710105) ব্যতিরেকে । এমন কি, এই 
প্রয়োগ-বাহুল্যের ফলে অনেক ব্যাকরণ-দুষ্ট পদকেও শেষট। 


১৬৪ 


বাঙ্গালা ভাষাব্স জপ 


নিপাতন-সিদ্ধ মনে করিয়া বৈয়াকরণিকদিগকে মানিয়। লইতে 
হয়__সংস্কৃতির মত 11614 ভাষাতেও ইহার ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত 
রহিয়াছে । ইংরাজীর ত কথাই নাই। এবিষয়ে আর অধিক 
বল। বাহুল্য মাত্র_বিষয়টি এতই সহজ এবং যুক্তি এতই 
সমীচীন । আশ! করি, অত্যুৎসাহী সংস্কারকগণ তাহাদের 
সঞ্চিকীর্যার বেগ কিঞ্চিৎ প্রশমিত করিয়া অতঃপর একটু কাণ্ড- 
জ্তানের পরিচয় দিবেন । 

আমার আর কিছু এপ্রসঙ্গে এখন বলিবার নাই । মাননীয় 
সভাপতি মহাশয় যে অন্ুগ্রহ-পূর্বক আমার বক্তৃতার নিমিত্ত 
“কালোহ্যয়ং নিরবধিঃ” বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন, এবং 
আপনারা যে অবিচলিত ধৈর্যসহকারে এই নীরস ভাষাতত্বের 
সম্পর্কে হয়ত আমার নীরসতর আলোচন। এতক্ষণ ধরিয়া শ্রবণ 
করিয়াছেন তজ্জন্য আপনাদের প্রতি আমি আন্তরিক ধন্যবাদ 
হ্লাপন করিতেছি । 


১৩ই পৌষ, ১৩৪৭। 


এল এ আস্ন আহ 


বৃহওর বজ 


[ প্রবাসী বঙ্গসাহিত্যসম্মেলনের জামশেদপুর অধিবেশনে 
“বুহভ্তর বঙ্গ” শাখায় প্রদত্ত বক্তৃতা ] 


বন্কিম চট্টোপাধ্যায় মহাশয় বলিয়া গিয়াছেন, “হিন্দ্ুকে 
হিন্দু না রাখিলে রাখিবে কে?” আপনাদের সমক্ষে বক্তৃতা৷ 
দিতে দণ্ডায়মান হইয়া সেই কথাটিই কিঞ্চিৎ পরিবন্তিত করিয়া 
আমার বলিতে ইচ্ছা! হইতেছে, “বন্ধুকে বন্ধু না মারিলে মারিবে 
কে?” আজিকার এই “বৃহত্তর বঙ্গ” শাখার সভাপতি ভাক্তার 
শ্রীযুক্ত কালিদাস নাগ মহাশয় আমার পঁচিশ বৎসরের বন্ধু ; 
তাই তিনি তাহার অতীব ওজস্বিনী ভাষায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতার 
পরে আমাকে এই বক্তৃতামঞ্চে সংএর মত ফাড় করাইয়া দিয়! 
বন্ধুরই কাঁজ করিয়্াছেন। ঠিক জানি আমার বর্তমান এই 
ছুরবস্থা বন্ধুবর কায়মনোবাক্যেই উপভোগ করিতেছেন ; কারণ 


১৬৯ 


তল্লসতণিমা। 
জাম্মাণ দার্শনিক মানব-চরিত্রবিৎ শোপেনহাউয়ার ঠিকই 


বলিয়াছেন, «0 9119561595 0168901:55 81০ ৪6 0৫ 
[01501601769 ০0 00: :127205” ! যাক্‌, সে ছুঃখের কথা 
আর বাডাইয়া লাভ কি? 

কবি শেক্স্লীয়ার একটা কথ নাকি বলিয়া গিয়াছেন, 
“৬৬1১205 1) 21320057008 ড51101] ০ ০901]] 2. 1096, 
[5 25 00161: 17091062 0010 9102]]1 95 9৮221 1” 
কিন্তু কবিবাক্য হইলেও কথাটা আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস হয় ন1। 
কারণ প্রকট দেখিতেছি । আপনার! সকলেই বোধ করি সেই 
সংস্কৃত উদ্ভট শ্রলোকটি জানেন £ 

উপমা কালিদাসস্ত ভারবেরর্৫থগৌরবম্‌ । 
নৈষধে পদলালিত্যং মাঘে সন্তি ত্রয়ো গুণাঃ ॥ 

আমাদের আজিকার সভাপতির নাম যদি কালিদাস ন। 
হইত, তবে কি তিনি এই মাত্র আপনাদের সমক্ষে যে বিরাট্‌ 
উপমার অবতারণা করিয়াছেন, তাহা করিতে পারিতেন ? 
একমাত্র কালিদাসেই এত বড় ব্যাপক উপম। সম্ভবে । তিনি 
বাঙ্গালী জাতির উখথান-পতনের ইতিহাসকে একেবারে মহা- 
ভারতের সহিত তুলিত করিয়াছেন ; এবং শুধু তুলিত করিয়াই 
ক্ষান্ত হন নাই, সেই মহাভারতের আদিপর্বব হইতে সুরু করিয়া 
সভাপব্ব-উদ্ভোগপর্ধবের মধ্য দিয়া শাস্তিপর্বব পধ্যস্ত টানিয়া 
আনিয়া তবে ছাড়িয়াছেন। মহেঞ্জোদড়ো। হইতে মন্খমের 
পর্যন্ত বিস্তৃত বিরাট পটভূমিকায় প্রসারিত করিয়! কালিদাস 


১৭০ 


শৃহতন্ন বঙ্গে 

বাবু প্রাগৈতিহাসিক যুগ হইতে আরম্ভ করিয়া আজিকার 
সমরোত্তর যুগ পর্ধ্যস্ত বাঙ্গালী জাতির এঁভিহা, তাহার বৃ-তত্ব, 
তাহার সমাজ-ব্যবস্থা, তাহার রাষ্ট্র-সমস্য! ইত্যাদির আলোচনা! 
করিয়াছেন । দ্রাবিড়-মঙ্গল-আধ্যজাতির বিচিত্র সংমিশ্রণে ও 
ঘাত-প্রতিঘাতে ভারতের এই প্রাচ্য প্রদেশে যে একটি বিশিষ্ট 
ভাবপ্রবণ তীক্ষপী জাতি সুদুর অতীত কাল হইতে ধীরে 
ধীরে গড়িয়া উঠিয়াছে, বন্ধুবর সেই জাতির বৈশিষ্ট্য ফুটাইয়া 
তুলিবার প্রয়াসে হাম্মুরাধির অনুশাসন হইতে আরস্ত করিয়া 
মানব-ধশ্মশাস্ত্র পধ্যন্ত তন্ন তন্ন করিয়। বিশ্লেষণ করিয়াছেন । 

তিনি ত এই পর্য্যস্ত কার্য সমাধা করিয়। নিবিবন্ধে আসন 
গ্রহণ করিয়াছেন । এখন আমি করি কি? কালিদাস বাবু ত 
কৌশলী লোক, তাই তিনি মহাভারতের ভীম্ম-্দ্রোণ-কর্ণ-শলা- 
পর্ব প্রভৃতি যুদ্ধপর্ধধের ধার দিয়াও যান নাই-_স্বুনিপুণ ভাবে 
এড়াইয়া গিয়াছেন । কারণও অবশ্য যথেষ্ট আছে । একদিকে 
রহিয়াছেন মহাত্মা গান্ধী স্বয়ং, অপর দিকে রহিয়াছে সরকারী 
[০657,০০ ০ 177019. 4৯০ ; স্থৃতরাং ওসব হিংসাত্মক বাপার 
লইয়া! নাড়াচাড়া করা বিপজ্জনক । আমিও মহাঁজনপন্থা 
অবলম্বন করিয়। উহ এড়াইয়! যাওয়াই নিরাপদ্‌ মনে করি। 
তবে আমার এই অসহাঁয় অবস্থায় সহায় একমাত্র ভগবান, 
বেদব্যাস। ভগ্বান্‌ বেদব্যাসের পরমায়ু অক্ষয় হউক ! তিনি 
মহাভারত রচনা করিতে গিয়া শাস্তিপর্ধেই শাস্তিবাচন করিয়া 
কাজে ইস্তফা দেন নাই, আরও কয়েকখানি পর্ব রচনা 


১৭১ 


ভব্রুণিস 


করিয়া গিয়াছিলেন-__তাই রক্ষা । তবে তাহার সবগুলির 
বিস্তৃত আলোচনা আবশ্যক করে না । 

মনে করুন, মুষলপর্ব। তা! বাঙ্গালা মুল্লুকে আমার পরম- 
শ্রদ্ধাম্পদ পিতৃবন্ধু মাননীয় ফজলুল হকৃ সাহেব যে মুঘল 
চালাইতেছেন, তার পর বোধ করি আর ওবিবয়ে বেশী কিছু 
বল। বাথাহুল্য মাত্র । আর বাঙ্গীলার বাহিরেও আপনাদের এই 
বৃহত্তর বঙ্গের বিহার-প্রদেশে মাননীয় শ্রীকৃষ্ণ সিংহের মুষল- 
প্রয়োগও বাঙ্গালীদিগের উপর নেহাৎ কম নহে । তবে শুনিলাম 
ষে তিনি নাকি সম্প্রতি বায়ু পরিবর্তনার্থ রাজকীয় অতিথিশালায় 
আতিথ্য গ্রহণ করিয়াছেন-_মহাত্মাজীর প্ররোচনায়__তাই 
রক্ষা * নচেৎ আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে আপনার! আজ তাহার 
রাজত্বে ভ্রামশেদপুরে বাঙ্গালীদের এই বিপুল কলরবের স্যপ্টি 
করিতে পারিতেন কিনা ; এবং আমি নিজেও হয়ত কৃষ্ণ প্রাপ্তির 
ভয়ে এতদূর পধ্যস্ত অভিযান করিতে সাহসী হইতাম না । 
স্রতরাং মুষল-পর্কবের বিস্তৃত আলোচনার আবশ্যকতণ দেখিনা 

তারপর ধরুন, ক্্রীপর্বব । আজকাল £517037)1570-এর যুগ; 
প্রাচীন্রা যাই বলুন ন। কেন, ক্ত্রীনায়ক শিশুনায়ক সমাজের 
সম্বন্ধে যতই কেন কটুক্তি করুন না, বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে 
এখন শিশুনায়ক স্ত্রীনায়কের ছড়াছড়ি-স্ত্রীনায়িকা ত 
আছেই । এমত অবস্থায় আমাহেন নিরীহ নেহাৎ পুরুষ 
মানুষের ভ্ত্রীপর্ষবের বিষয়ে বাঙ্নি্পত্তি করিতে সাহসে 
কুলাইতেছে না। | 


১৭২ 


ব্হগুন্স বত 


তারপর রহিল মহাপ্রস্থান ও ন্বর্গারোহণপর্র্। বাঙ্গালী 
যে আজ প্রায় মহাপ্রস্থানের পথে আসিয়া দাড়াইয়াছে এবং 
স্বর্গারোহণও যে তাহার অবিলম্বেই প্রত্যাসন্নঃ এবিষয়ে বোধ 
করি আজ আর বিশেষ মতভেদের অবকাশ নাই ; সুতরাং 
আমার বলার বিশেষ কোন অপেক্ষা রাখে না। 

তবে আমি বলি কি? ভাবিয়া দেখিলাম যে আর একটি 
পর্বব রহিয়াছে-সৌভাগ্যক্রমে সভাপতি মহাশয়ের শ্যেনচক্ষু 
সেদিকে পতিত হয় নাই-_-সে পঙ্জটি অশমেধপবব । সে বিষয়ে 
বলিতে কোন বাধাও দেখি না_-কারণ সেটা ঘোড়দৌড়- 
বিষয়ক ; সরকার সেট নিবষ্ধ করেন নাই, এবং গান্ধীজীও যে 
এবিষয়ে কোন ফতোয়া দিয়াছেন এমন ত মনে পড়ে না। 
সুতরাং অনন্যোপায় হইয়া এই অশ্বমেধ-পর্ধেরই কিঞ্চিৎ 
আ'লোচন। আমি করিতে প্রয়াস পাইব। 

অশ্বমেধপর্কব জরযাত্রার পর্ব । পাগুপুত্রগণ কুরুক্ষেত্রের 
নুছুস্তর সমরসাগর উত্তীর্ণ হইয়া আত্মপ্রতিষ্ঠ হইলে পর 
আসমুদ্রহিমাচল ভারতবধে প্রভূত্ব প্রতিষ্ঠিত করিবার নিমিত্ত 
জয়যাত্র। করিয়াছিলেন--অশ্বমেধ সেই জয়যাত্রারই প্রতীক | 
আমিও আপনাদিগের নিকট বাঙ্গালীর জয়ঘাত্রার কাহিনী 
কিঞ্চিৎ কীর্তন করিতে চাই । কালের বিচিত্র গতিতে কি রকমে 
ধীরে ধীরে বাঙ্গালাতে একট বলিট ন্বপ্রতিষ্ঠ সমাজ ও জাতি 
গড়িয়া উঠিল, তাহার বিবরণ কালিদাস বাবু বিস্তৃতভাবে 
আপনাদিগকে দিয়াছেন। সেই স্বপ্রতিষ্ঠ সমাজ ও জাতি কি 


১৭৩ 


ভল্রভণিসা। 


প্রকারে পাশ্চাত্য জাতির সংশ্রবে আসিয়। নূতন আলোক- 
সম্পাতে নববলে বলীয়ান্‌ হইয়া বাঙ্গালাদেশ হইতে দিখিজয়ে 
বহির্গত হইয়া আসমুদ্রহিমাচল ভারতবর্ষে নিজেদের প্রভুত্ব-_ 
নৈতিক প্রতুত্ব, চারিত্রিক প্রভূন্ব, সাংস্কৃতিক প্রভূত্ব-_বিস্তার 
করিয়াছিল অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীতে--তাহারই কিঞ্চিৎ 
বিবরণ আমি বিবুত করিতে চাই । আশা করি মাপনার! 
অধৈধ্য হইবেন না। 

বাঙ্গালীর বৈশ্ষ্ট্যের বিবরণ কালিদাসবাবূ কিঞ্চিৎ দিয়াছেন । 
এবিবয়ে আমি তাহার সঙ্গে একমত । সত্যসত্যই ভারতীয় 
সমাজের মধ্যে বাঙ্গালীর একট। বিশিষ্টতা, একট? স্বতন্ত্রত। 
আছে । ইহা শুধু একটা অহমিকার কথা৷ নহে; ইহ1এতিহাসিক 
সহ্য। আপনার সকলেই জানেন যে অতি প্রাচীন যুগে 
ভারতের এই অতি প্রাচ্য প্রদেশে বঙ্গ ও মগধ প্রভৃতিতে আধ্য 
প্রভাব অতি অল্পই ছিল। এই সব অঞ্চলেব অধিবাসী দিগকে 
“প্রাচ্যাঃ” (মেগাস্থিনিসের 4[28911” ) এই আখ্যায় অভিভিত 
করা হইত--যেমন কতকট! আজও রাঢ অঞ্চলের লোকের। 
পূর্বাঞ্চলের লোকদিগকে “বাঙ্গাল” বলিয়া নাসিকাকুঞ্চন 
করিয়া থাকেন । কথাট। দ্বণাবাঞঙক। এতরেয় আরণ্যকে 
লেখাই আছে “বয়াংসি বঙ্গাবগধাশ্চেরপাদা?” অর্থাৎ বঙ্গ ও 
মগধ ইত্যাদির লোক পাখীর ন্ঠায়। বস্তুতঃ এই সুদূর 
অনাধ্য-অধ্যুবিত অঙ্গ-বঙ্গ-কলিজ-সমতট অঞ্চলকে উত্তম-পশ্চিম 
'ভারতবর্ষে অবস্থিত আধ্যগণ কতকট দ্বণার চক্ষেই দেখিতেন ; 


১৭৪ 


স্বৃহভন্ম এজ 


এই সব অঞ্চল বিষয়ে তাহাদের জ্ঞানও ছিল যৎসামান্ত-__ 
(61009 11009110 বলিলেই হয়। তাই এই সব পাগুব-বঞ্জিত 
দেশে আজিলে আধ্যদিগকে “পতিত” হইতে হইত । এই ছিল 
গোড়াকার অবস্থা ৷ 

কিন্ত ধীরে ধীরে যখন আধ্য-উপনিবেশের ও সভ্যতার 
বিস্তার ক্রমশঃ প্রীচ্যদেশে উপনীত হইল, তখন পূর্বের 
অন্ঞতাঁজনিত অবজ্ঞ! তই থাকিয়া থাকুক, প্রাচ্যদিগের বৈশিগ্য 
ও বীরহ সম্বন্ধে তাহাদের খুব ন্থুস্পষ্ট জ্ঞান ও সম্ত্রমই জন্মিল। 
রঘুর দিগ্বিজয়-কাহিনীতে বণিত আছে যে বঙ্গদেশীয় ভূপতিগণ 
বিপুলবিক্রমে রণতরীযোগে রঘুর সৈন্যবাহিনীর সহিত নৌঘুদ্ধে 
প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন-_-কালিদাঁস “নৌসাধনোগ্যতাঁন্‌ বঙ্গান” 
বলির! বিশেষিত করিয়াছেন। পাগ্ুবদিগের অশ্বমেধ-অভিযানের 
সময়েও দেখিতে পাই যে বীরশ্রেষ্ঠ অজ্ঞুন একস্থানে মাত্র 
পরাভূত হইয়াছিলেন-__-০সও প্রাচ্দেশে মনিপুরের বন্রবাহনের 
নিকট । গ্রীকিগের বণিত (20821109০ বা গঙ্গারাটগণ 
অর্থাৎ গঙ্গাতীরবত্তা রাঢ বা! বঙ্গের অধিবাসিগণের কাধ্যকলাপ 
€ শৌর্ধ্যবীর্ধ্য মগধপ্রতৃত্বের যুগেও ভারতে সুবিদিত ছিল। 

বাঙ্গালার রাজপুত্র বিজয়সিংহ কর্তক সিংহলবিজয়ের 
কিংবদন্তী সকলেই অবগত আছেন। এই কিংবদস্ভতীর মূলে 
এতিহাসিক সত্য কতট। নিহিত আছে তাহা আঁমাঁদের সভাপতি 
মহাশয়ের ন্যায় ইতিহাসজ্ঞ পণ্তিতগণই নিরূপিত করিতে পারেন ; 
কিন্তু একথা অক্রেশে বলা যাইতে পারে ফে এই কিংবদস্তীর 


৯৭৫ 


তক্রুপণিসা। 


মূলে বাঙ্গালীর নৌবিগ্ভায় পারদশিতা। এবং 10৪৮৪] €891010185 
নিহিত রহিয়াছে । এই €710100 বা খাতির আর একটা 
নিদর্শন টাদ সদাগরের চৌদ্দডিঙ্গ। মধুকরের কাহিনী । তাত্রলিপ্তি 
হইতে ফাহিয়ান যে অর্ণবপোতে সমুদ্র-যাত্রা করিয়া সুমাত্রা' 
ষবদ্বীপ, চম্পা উত্তীর্ণ হইয়া মহাচীনে গমন করিয়াছিলেন, 
বঙ্গীয় নাবিক যে তজ্জাতীয় পোত চালন। করিত. তাহ! 
নিঃসন্দেহ। মধ্যযুগ ও মুসলমান-যৃগের মধ্য দিয়! বাঙ্গালীর 
এই 778%8] 08100 সমানভাবে চলিয়া আসিতেছে । 
মাজিও ব্রিটিশ বাণিজ্যপোত-সমূহের ভারতীয় নাবিক- 
ধিগের মধ্যে পূর্ধববঙ্গীয় ল্করগণই সংখ্যাবহুল। বস্তুতঃ 
দাদাজী আংগ্রিরার নেতৃত্বে ছত্রপতি শিবাঙ্গী যে মারাঠ। 
নৌবাহিনী গঠিত করিয়াছিলেন, সেই দৃষ্টান্ত বাদ 
দিল সমগ্র ভারতবর্ষে বোধ করি নৌবিগ্ভার সাধনায় 
বাঙ্গালীর সনকক্ষ আর কেহই নাই। আপনারা হয়ত 
শুনিয়। আশ্চধ্য হইবেন ষে আমাদের বরিশাল জেলায় 
বহু সন্ত্রান্ত কায়স্থ-পরিবার আছেন, যাহাদের উপাধি 
“মীর-বহর” অর্থাৎ £৯01001191 02 002 [715০শ্সম্ভবতঃ 
মোগল আমলে পদ্ম/-মেঘনা-বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনী 
পরিচালনার নিদর্শন । কবির বিশেবণ বুথ! হয় নাই যে, 
বঙ্গীয়গণ নৌসাধনোগ্ঠত । এট সত্যই বাঙ্গালীর একট! 
বিশেষব--এই স্ুুজল। সকল! নদী-বনুল। 92071110985 বঙগ- 
ভূমির পক্ষে স্বাভাবিক বটে । 


১৭৬ - 


স্বহত্ুন্ম শঙ্গ 


স্থলযুদ্ধেও বাঙ্গালীদের শৌধ্যের যে বিশেষ কোন ন্যুনতা! 
ছিল তাহা মনে করিবার কোন কারণ নাই; কারণ বিশাল 
মগধ-সাআ্াজ্যের পতনের পর বঙ্গে যে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গড়িয়া 
উঠিয়াছিল, ক্রমে ক্রমে সেই রাষ্ট্র উত্তর-ভারতের এক পরাক্রাস্ত 
রাষ্ট্েই পরিণত হইয়াছিল। পঞ্চগৌড়েশ্বর পরমভট্টারক 
সআট ধশ্মপাল উত্তর-ভারতে রীতিমত সাম্রাজ্যই স্থাপন 
করিয়াছিলেন । অবশ্য এবিষয়ে বাঙ্গালার বৈশিষ্টোর কোন দাবী 
কর! চলে না, কারণ সাময়িকভাবে সাআজ্য স্থাপন ভারতবর্ষে 
বহুঞ্রজাতিই করিয়াছে । 

কিন্তু যুদ্ধ-বিগ্রহের কথা৷ ছাড়িয়াই দিই । জ্ঞানের ক্ষেত্রে, 
ধন্ের ক্ষেত্রে, ০৫15076-এর ক্ষেত্রে বাঙ্গালীর বৈশিষ্ট্যের কথাই 
সংক্ষেপে বলি। 

পালবংশীয় বৌদ্ধ সম্রাটগণের শাসনকালেই বোধ করি 
বৌদ্ধপ্রভাব-_-বিশেবতঃ মহাযান ধন্মের প্রভাব__ বঙ্গে বিশেষ 
বিস্তুত হইয়াছিল । এই প্রভাবের বহু নিদর্শন পরবর্ভা বাঙ্গালায় 
পাওয়া যায়__ধন্ম-ঠাকুরের পুজা প্রভৃতি সেই বৌদ্ধ প্রভাবেরই 
চিহ্ন । কিন্তু এই মহাষান-ধন্ম সর্বাপেক্ষা বড় রকমের যে ছাপ 
রাখিয়। গিয়াছে বঙ্গীয় সমাজে-_-সেট। হইল বৌদ্ধ প্রভাবিত 
শৈব ও তান্ত্রিকধশ্মের প্রতিষ্ঠায় । সমাজতাত্বিকদিগের এটা! ঝড় 
একট গবেষণার বিষয়-_মহাযান-মতের সহিত তন্ত্রোক্ত শৈব ও 
শাক্তধম্মের সম্পর্ক কতট্ুকু। কিন্তু তদ্বিষয়ে সিদ্ধান্ত যাহাই 
হউক, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে বঙ্গদেশে ও বঙ্গীয়-সমাজে 


১২ ১৭৭ 


ভনব্রুণপিম? 


তন্্ প্রচারিত ধন্ম ও আচারের প্রভাব অসামান্য । গ্রামে গ্রামে, 
নগরে নগরে, গৃহে গৃহে, মহিষমদ্দিনী হছুর্গারূপে শক্তিপুজ 
বাঙ্গালায় যে ভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সমগ্র ভারতে আপামর- 
জনসাধারণের দ্বারা সে ভাবে কোথাও অনুষ্ঠিত হয় বলিয়া 
আমার জ্রানী নাই। একমাত্র মহীশুরে চামুণা দেবীর অন্থুরূপ 
পূজা দেখিয়াছি, তবে তাহাও ভ্বয়ং মহারাজেরই পুজা-_-ঘরে 
ঘরে পুজা হয় বলিয়! শুনি নাই। তন্্রোক্ত আচার-অন্ুষ্ঠান 
এবং শক্তিপুজা বাঙ্গালার এক বিশেষত্ব । 

সমাঁজ-গঠন ও বন্ধনের ক্ষেত্রেও বাঙ্গালার বিশিষ্টতা কম 
নহে--সেটি বাঙ্গালার কৌলীন্ত প্রথ। । কৌলীন্তপ্রথা পরবর্তী 
কালে অনেক দোবে দোধা হইয়া থাকিতে পারে কোন্‌ 
প্রথারই বা কালক্রমে বাভিচার হয় না? কিন্ত যে আদর্শে 
মহারাজ কল্লাল সেন এই প্রথার প্রবর্তন করিয়াছিলেন, তাহা 
অতীব উচ্চ আদর্শ । কুলীনের লক্ষণ বোধ করি আপনাদের 
মনে আছে £ 

'আচারো বিনয়োবিগ্ঠা প্রতিষ্ঠ। তীর্ঘদর্শনম্‌। 
নিষ্ঠাবৃত্তভিস্তপো-দানং নবধ। কুললক্ষণম্‌ ॥ 

বাহাকে বলে 21015600190 ০0 £8912176 210. 0178170661 
-_জগদ্বরেণ্য মনীষী প্রেটোর [6]8011০-এ কল্সিত-_৪ 90৪০ 
€০052060 05 156 1797 ! আজ বিদ্রপ করিয়া “কুকম্মেতে 
লীন” ব্যাসবাক্য-সহযোগে “কুলীন” শব্দটি নিষ্পন্ন করিতে 
পারি ; কিন্তু সেটা শুধু ব্যঙজ্ের কথামাত্র। কিন্ত বস্ততঃ শীলের 


১৭৮ 


স্বহৃতন্ম অ্ছ 


উপরই কুল নির্ভর করে, মহত্বের উপরই শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি, 
সচ্চরিত্রই সমাঁজপতিত্বের মুলীভূত উপাদান_এই আদর্শে 
কাধ্যতঃ সমাঁজ-গগন করিবার প্রচেষ্টা বাঙ্গালীর চিন্তেই স্থান 
পাইয়াছিল এবং বহুল পরিমাণে সাফল্য-মণ্ডিতও হইয়াছিল । 

আর এক দিক্‌ ধরুন । ভারতীয় হিন্দু সমাজবিধি মোটামুটি 
ভাবে মন্বাদি ধন্মশাস্্র ও সংহিতাদির উপরই প্রতিষ্ঠিত ; কিন্তু 
এ বিষয়েও ভারতের অন্যত্র অবশ্থিত হিন্লুসম'জ হইতে বঙ্গীয় 
হিন্সমাজের বিশেষ পার্থক্য রহিয়াছে । ভারতের অন্যান্য 
প্রদেশ মিতাক্ষরা-বিধি দ্বারা শাসিত । বঙ্গীয় প্রদেশ জীমৃত- 
বাহনের দায়ভাগ-বিধি দ্বারা শীসিত। এই প্রভেদের মূলীভূত 
কারণ বঙ্গদেশে গোষ্ঠীর অপেক্ষা বাষ্টির উপরে গ্রসক্তি, ব্যক্তিগত 
স্বাতন্ব্য ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস । বাঙ্গালার জাতীর 
ইতিহাসে এই ব্যক্তিম্বাতন্ত্য ও ব্যক্তিম্বাধীনতার উপরে ঝোকের 
বনু নিদর্শন পাইবেন। 

তারপর ধরুন নব্যস্ৃতি--যে স্মৃতি রঘুনন্দনের নামের 
সঙ্গে অচ্ছেছ্চভাবে জড়িত। নব্যন্থৃত্যুক্ত অন্থুশাসন ছার! 
বঙ্গীয় হিন্দুসমাঁজ মধ্যযুগের বিষম মুসলমান উপপ্লবের মধ্যেও 
আপনার অস্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠা অব্যাহত রাখিয়াছে, এবং আজ 
পর্যাস্ত এই অন্তুশাসনই বাঙ্গালার সমাজগঠনকে নিয়ন্ত্রিত করিয়! 
তা'সিতেছে। এই অনুশাসনের ফলে সমাজের বিধি-ব্যবস্থা 
কঠিনাকার ধারণ করিয়াছিল সত্য; কিন্তু কৃন্মপৃষ্টের ন্যায় 
সেই কাঠিন্তের আবরণের অন্তরালে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংহত 


১৭৯ 


ভল্ভণিস। 


করিয়া-_“কুন্মোহঙ্গানীব সর্বশঃ”- তৎকালীন প্রলয়-হূর্য্যোগের 
মধ্যেও বঙ্গীয় হিন্দুসমাজ আত্মরক্ষায় সমর্থ হইয়াছিল । 
তৎকালে এই কঠিন বর্দের উপযোগিতা যে কতটা ছিল, তাহা 
বর্তমানে বঙ্গীয় সনাজের শ্রথতা, তরলতা ও উচ্ছজ্থলতার 
উদ্দাম লীলার দিকে নেত্রপাত করিলেই অতি সুষ্ঠুভাবে হুদয়ঙ্গম 
হইবে। সময়ে সময়ে মনে হয় আত্মমধ্যাদাহীন, আত্ম- 
বিশ্বাসহীন বর্তমান বাঙ্গালার হিন্দ্-সমাজের ছুর্দম “প্রগতি” বা 
শোচনীয় অধোগতির শআ্োত রোধ করিতে নয়া রঘঘুনন্দনেরই 
আবির্ভাব আবশ্যক-নহিলে এ যৌবন-জল-তরঙ্গ রোধিবে 
কে? ভারতীয় হিন্দু সভ্যতার সংস্কৃতির আচারের সমুদয় 
অবদানই যে নিশ্চিহ্ভাবে ধুইয়া' মুছিয়া যাইবার উপক্রম ! 
যাক, যা বলিতেছিলাম। রঘুনন্দনের নব্যস্থৃতি বাঙ্গালীর 
সামাঞ্জিক দূরদশিতার একট? প্রকাণ্ড নিদর্শন । 

বাঙ্গালীর মনীবার অপর নিদর্শন নব্যন্যায়। কথিত আছে 
যে মিথিলায় গমন করিয়া পক্ষধর মিশ্রের শিশ্যত্ব গ্রহণ করিয়া! 
বাসুদেব সার্বভৌম সমস্ত ্যায়শান্ত্র মুখস্থ করিয়। আনিয়াছিলেন 
এবং তৎপরে ভাগীরথীভীরে নবদ্বীপে ন্ায়ের পুনঃ প্রতিষ্ঠা 
করিরাছিলেন। উপযুক্ত গুরুর উপযুক্ত শিষ্য রঘুনাথ সেই 
বিদ্ভার যে চরম উৎকর্ষ সাধন করিয়াছিলেন, তাহ। অগ্ভাপি 
পণ্তিত-সমাজকে চমতকৃত করিয়া দেয় । 

সাহিত্য ও শিল্পকলার দিক্‌ দিয়াও বাঙ্গালার বৈশিষ্ট্য ছিল । 
--সাহিত্যে এক প্রকার রচনারীতি গৌড়ীর রীতি বলিয়াই 


১৮ 


আখ্যাত হইত । স্থাপত্য ও ভাস্কধ্যেও বঙ্গীয় শিল্পীর এক 
বিশিষ্ট গঠনরীতি ও শিল্পাদর্শ ছিল । 

তারপর বাঙ্গালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান__ভারতের ধর্ম্ম-জগতে-_" 
গৌড়ীয় বৈষ্ঞব-ধন্ম। ভাবপ্রবণ প্রেমিক বাঙ্গালী প্রকৃতি 
এই ধন্মপ্রেরণায় উৎকর্ষের চরমে পৌছিয়াছিল। বৈষ্ণব ধর্ম 
আজিকার নয় ; বুন্দাবনে যমুনাপুলিনে ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণ কৰে 
লীলাখেল। করিয়াছিলেন, কবে কোন্‌ সুদূর অতীতে ম্যামের 
বাশরীতে বমুনা উজান বহিয়াছিল, গোগীগণ আত্মহার। 
হইয়াছিল, ইতিহাসজ্ঞের তাহা বিচার্যা-_কিস্ত নিঃসন্দেহে সে 
অতি প্রাচীন যুগের কথা । শ্রীকৃষ্ণের এণ্তিহোর সহিত জড়িত 
“ভাগবত” ধন্মের ধারা বহুকাল হইতে ভারতীয় সমাজে চলিয়া 
আসিতেছিল--মহাভাঁরতে ইহার বর্ণনা আছে। বেশনগরে 
আবিষ্ষত গীক-নুপভি 611500105-এর গরুড়স্তত্ত 
শ্রীকষ্তোপাসনার এক অতি প্রাচীন চাক্ষুষ নিদর্শন । কিন্ত 
সেই ভক্তিধর্মের ধাবা নান। যাগ-যজ্ঞ, পুজা-প্রতিষ্ঠান, বৌদ্ধ- 
শাক্ত-তান্ত্রিক আচারের উর মরুভূমিতে একরকম লুপ্তই হইয়া 
গিয়াছিল বলিলে হর। কিন্তু কবির সেই কথাই বাঙ্গালার 
বকে সতা হইয়া উঠিল £ 

“যে নদী মরুপথে হারাল ধার! 
জানি হে জানি তাও হয়নি হার] |” 

বাঙ্গালার শাস্ত শীতল সরস বক্ষে সেই লুপ্তপ্রায় ধারা পুনরায় 
উৎসারিত হইয়। উঠিল। জয়দেবের কোমলকাস্ত পদাবলীর মধ্য 


৯১৮৯ 


আন 


তল্পভণিহসা। 


দিয় প্রস্যত হইয়। বিদ্াপতি-চণ্তীদাসের ভাবোদ্বেল আবেগো- 
চ্ছল ভক্তিধারার সহিত সম্মিলনে সমৃদ্ধ হইয়া, সেই ভাগবতী 
ধারা ভাগীরথীতীরে পুণ্যভূমি নবদ্বীপে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের 
উন্মন্ত ভাবগঙ্গায় বিলীন হইয়া গিয়া যে প্রেমভক্তির বন্যায় 
সমাজকে প্লাবিত করিয়া ফেলিল, তাহ। অবর্ণনীয়। সেই প্রেম- 
ভক্তির উচ্ছ্বাস গ্রীচৈতন্তকে ঘরছাড়া করিল, বাড়ীছাড়া করিল, 
দেশত্যাগী করিল । সেই উচ্ছ্াসের তরঙ্গ তাহাকে দিকে দিকে 
ভাসাইয়া লইয়া চলিল-_নীলাচলে লইয়া গেল, সমস্ত দক্ষিণ 
ভারত অতিক্রম করিয়। পাপ্ত-কেরল-কুমারিকা পরধান্ত লইয়! 
গেল, আবার ঢেউ ফিরাইয়। কম্কণ-সহ্যাদ্বি-দগুকারণ্য-বিন্ধাগিরি 
অতিক্রম করিয়! শেষে যমুনাতটে বুন্দাবনে আনিয়া আছড়াইর 
ফেলিল । সহস্্ সহস্র বংসর পরে আবার প্রেমতরঙ্গে যমুনাবন্ষ 
টলমল করিতে লাগিল। গৌড়ীয় বৈষ্ঞবধন্থ উত্তর-ভারতে 
প্রতিষ্ঠিত হইল। মহাপ্রভু এক জ্যোৎক্রা-পুলকিত পৌর্ণমাসী 
নিশিতে শ্রীক্ষেত্রের সমুদ্রতটে মহাসাগরে বিলীন হইলেন--03০ 
96210 0০81150. 2100 0102 09215 কিন্ত যে প্রেমধারা ছিনি 
প্রবাহিত করিয়া গেলেন, সমবদ্ধবেগে সে ধারা- বাঙ্গালার 
প্রাণের অনবদ্য সেই রসধারা--সমগ্র ভারতের বক্ষকে জিগ্ধ 
রসসিক্ত করিয়া তুলিতে লাগিল । অধ্যাত্মজগতে ভারতবর্ধকে 
বাঙ্গালার ও বাঙ্গালীর এই শ্রেষ্ঠ দান। 

যাক্‌, এবিষয়ে আর বেশী কিছু বলিতে চাহি না। বাঙ্গালীর 
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাসে অনেক কিছু গৌরব করিবার 


১৮২ 


ব্রহতন্র শত 
সামগ্রী আছে--তাহার অতি যতসামান্যই কিছু উল্লেখ করিলাম । 
আচার্ষ্য হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাঁশয় সত্যই বলিয়াছেন, বাঙ্গালী 
এক আত্মবিন্মুত জাতি । আজ সেই আত্ম-বিম্মরণের যবনিকা। 
অপসারণের সময় আসিয়াছে । আশা করি মদপেক্ষ৷ যোগ্যতর 
নিপুণতর ব্যক্তিগণ সেই মহৎ কার্য্যের ভার গ্রহণ করিবেন। 
আমি এখন শুধু বর্তমান ব্রিটিশ যুগে বাঙ্গালীর কাধ্যকলাপের 
বিবরণ কিছু বর্ণনা করিতে চাঁই । 

বিধাতার আশীর্বাদে ভারতবর্ষের বনু স্থানে আমি বিচরণ 
করিয়াছি । বন্ধুবর কালিদাস বাবুর মত আমি ভু প্রদক্ষিণ করি 
নাই বটে,তবে ভারতভূমি-_-এমন কি আ-ত্রন্ষী”-স্তম্ব পত্যন্ত-_- 
প্রদক্ষিণ করিয়াছি বলিয়া দাবী করিতে পারি । ষাহাকে বক্তৃতার 
ভাষায় বলা হয়_হিমালয় হইতে কুমারিকা পধ্যস্ত-_তাহ' 
1161:811” আমি ভ্রমণ করিয়াছি । বস্তুতঃ কাশ্মীর হইতে 
কেরল পর্য্যন্ত, চট্টগ্রাম হইতে চামান পধ্যন্ত, মান্দ্রাজ হইতে 
মৌলমেন পরাস্ত আমার গতিবিধি হইয়াছে । এস্থলে আমার 
এই ভ্রমণ-বৃত্তান্তের কাহিনী উপস্থিত করিবার কারণ এই 
যে, ভারতের ও ব্রহ্মদেশের যে সব নানাস্থানে আমি পধ্যটন 
করিয়াছি, তাহার প্রায় অধিকাংশ স্থলেই আমি বাঙ্গালীর 
সন্ধান পাইয়াছি। শুধু সন্ধান পাইয়াছি বলিলে ঠিক হয় নাঁ_ 
বহুস্থলেই বাঙ্গালীদিগকে অতি সম্ত্রান্তভাবে সসম্মানে প্রতি চিত 
দেখিয়। হুষ্ট হইয়াছি। আজ শুনিতে পাই বাঙ্গালীকে নাকি 
কেহ দেখিতে পারে না- সর্বত্রই নাকি 21761-21759156 


১৮৩ 


শুক্ষিমা 

০77359046---ততসন্ত্বেও নানাস্থানে বাঙ্গালীকে সগৌরবে আজও 
অধিষ্ঠিত থাকিতে দেখিয়া সত্যই আনন্দে হাদয় উৎফুল্ল হইয়া! 
উঠিয়াছে। পুর্ধেধে ত অবশ্য বাঙ্গালীর ইহা অপেক্ষাও বেশী 
প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল। যে বৃহত্তর বঙ্গের সমস্যার আলোচনায় 
আজ আমরা নিষুক্ত, বের বাহিরে বাঙ্গালীদের উপনিবেশগুলিই 
ত সেই বৃহত্তর বঙ্ষ। 

বর্তমান যুগের এই বৃহত্তর বঙ্গের উৎপত্তির কারণ কি ? 
এবং কখন হইতে ইহার উৎপভ্ভি হইয়াছিল? প্রাগ-ত্রিটিশ 
যুগেও নানাস্থানে অবশ্য বাঙ্গালীর গতিবিধি ছিল : কিন্ত তখন 
যানবাহনের অস্থুবিধার জন্য দূরদেশে বেশী লোক যাইত না, 
তীধযাত্রাদি উপলক্ষ্যেই যা কিছু ঘাতায়াত ছিল ; খুব বেশী 
পরিমাণে সহুসংখ্াক বাঙ্গালী পরিবার বিদেশে বোধ করি 
বসবাস করিত না । অন্ততঃ আগ “য আকারে এবং বে কারণে 
নানাস্থানে বাঙ্গালীর বসতি হইয়াছে, তাহার উদ্ভব ব্রিটিশ 
যুগেই হইয়াছে । এবং হাছাড়া, ত্রিটিশ শাসন ও সভ্যতার 
সংস্পর্শ খুব বেশী পারমাণে বাঙ্গালীই সব্বাগ্রে প্রাপ্ধ হওয়ায় 
পাশ্চাত্য শিক্ষাদীক্ষায়ি ভারতবর্ষের মধ্যে বাঙ্গালীই অগ্রনী 
হইয়াছে । তাই আমি ব্রিটিশ যুগের বাঙ্গালীর জয়যাত্রার 
বিবরণই বর্ণনা করিব । 

আপনার! সকলেই জানেন যে যদিও স্ুুরাট, মাক্দ্রাজ, 
মস্থুলিপন্তন প্রভৃতি স্থানে ইংরাজদ্িগের কুঠি স্থাপিত 
হইয়াছিল বঙ্গে ইংরাজ আগমনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই-__কিস্ত 


১৮৪ 


স্বৃহতুষ্ম স্বচ্ছ 

তথাপি নানা এঁতিহাসিক কারণ বশতঃ ব্যাপকভাবে ইংরাজ- 
শাসনের প্রতিষ্ঠা প্রথমতঃ বঙ্গদেশেই হইয়াছিল। বাঙ্গালায় 
পলাশীর যুদ্ধে অপদার্থ নবাব সিরাঁজদ্োৌলার পরাজয় ও 
পলায়নের কলে কার্ধযতঃ বাঙ্গালার রাজদণ্ড ইংরাজদিগের হাতে 
আসিয়! পড়ে; নবাব মীরকাঁশিম কিছুদিন বীরবিক্রমে সেই 
রাজদণ্ড শিথিল করিতে প্রয়াস করিয়া অবশেষে পরাভূত হন ; 
বক্সারের যুদ্ধে অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলার পরাজয়ে প্রাচ্য 
ভারতে ব্রিটিশ শক্তি অপ্রতিদ্বন্বী হইয়া উঠে ; এবং তৎপরে 
দিলীর মোগল বাদশাহ শাহ আলমের নিকট হইতে ইংরাজ বঙ্গ- 
বিহার-উড়িয্যার দেওয়ানী গ্রহণ করিয়া রীতিমত রাজ্যশাসনে 
ব্যাপুত হয়। ১৭৫৭ হইতে ১৭৬৫ খুষ্টাব্দ পর্যান্ত এই ঘটনাবন্ল 
আট বৎসর কালের মধোই বাঙ্গালাদেশে ইংরাজ-শাসনের 
প্রতিষ্ঠী। এখন হইতে ইহা 'প্রায় ১৮০ বৎসর পূর্বেকার কথ:। 
সেই হইতেই পাশ্চাত্যের সহিত বাঙ্গালীর সাক্ষাৎ সম্পর্ক । 

কিন্তু সমগ্র ভারত ধরিতে গেলে, ইংরাজের সম্পর্ক অনেক 
পরে আসিয়াছে-_বনু যুদ্ধ বিগ্রহের পরে। বহু মারাঠা যুদ্ধ, 
শিখ যুদ্ধ, গুর্খ যুদ্ধ, এবং সর্বশেষে সিপাহী বিদ্রোহের পরে 
ঠিক বলা যাইতে পারে সমগ্র ভারতে ইংরাজ শাসন সু প্রতিষ্ঠিত 
হয়। ইঠ্ট ইগ্ডিয়া কোম্পানীর হস্ত হইতে মহারাণী ভিক্টোরিয়। 
স্বয়ং ভারতের শ।সনভার গ্রহণ করেন-_-১৮৫৮ খৃষ্টাব্দে ৷ বড়লাটি 
ভালহুসীর আমলে 91: 001381155 ৬৬০১০৭-এর 7.:৭0901028 
[6598:০1)-এর নির্দেশান্থুসারে, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে 


১৮৫ 


তব্রণিস। 


বিশ্ববিদ্ভালয় প্রতিষ্ঠ। হয় প্রথম ১৮৫৮ খুষ্টা্ে। রেল লাইন 
প্রভৃতি স্থাপনও প্রায় এই সময় হইতে আরম্ত হয়। বজ্ততঃ 
আমরা যে আধুনিক যান্থিক-শৃঙ্খলাবন্ধ পাশ্চাত্য সভ্যতালোকিত 
ভারতবর্ষের কাঠাম দেখিতে পাইতেছি, তাহার সুচনা হয় সিপাহী 
বিদ্রোহের পরে । আজ হইতে মাত্র প্রায় ৮* বৎসরের কথা। 
সিপাহী বিদ্রোহের পুরে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন এমন অনেক 
লোক আজও জীবিত রহিয়াছেন । সুতরাং মোটামুটি ধরিলে 
বাঙ্গালা ভারতের অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় প্রায় এক শতাব্দী 
পূর্বে পাশ্চাত্যের সম্পর্কে আসিয়াছে । 

ইংরাজ শুধু বাঙ্গাল। অধিকার ও শাসন করিয়াই ক্ষান্ত হয় 
নাই ২ ঘটনাচল্ের সমাবেশে বাঙ্গালা দেশকেই 95 বা 
কেন্দ্রভুমি করিয়া ইংরাজ ধীরে ধীরে সমগ্র ভারতে প্রভাব ও 
পরিশেষে রাজত্ব বিস্তার করিতে থাকে । সে এক অতি বিচিত্র 
কাহিনী । সে রাজাবিস্তার কখনও প্রতিহত হয় নাই; 
কোম্পানীর মুক্গুক বাড়িয়া চলিরাছে ; দূরদরশী পঞ্জাবকেশরী 
রণজিৎ সিংহ বলির গিয়াছেন, “সব লাল হো! যায়েগ। 1৮ এই 
অপ্রতিহত রাজ্যবিস্তারের কারণ কি? সামরিক অপেক্ষা 
নৈতিক কারণই বেশী । মোগল সাম্রাজ্যের পতনের পর সমুদায় 
অষ্টাদশ শতাব্দী ব্যাপিয়া যে অরাজকতা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি 
সমগ্র ভারতময় পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল, জনগণ তাহাতে 
একেবারে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছিল-_“মগের মুলুক” স্বর্গীর 
হাঙ্গাম?” প্রভৃতি প্রবচন সেই প্রচণ্ড আরাবের ক্ষীণ প্রতিধ্বনি 


২৮৬ 


বুহতল্স বত 


মাত্র। কিন্তু ব্রিটিশ কোম্পানী যেস্থানই অধিকার করিতে 
লাগিল, সেস্থানেই সুশৃঙ্খল শাসনপদ্ধতি প্রতিষ্টিত করিয়া 
শান্তি স্থাপিত করিল; লোকে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়। 
বাঁচিল, বলিতে লাগিল, কোম্পানীর মুলুকের মত আর মুল্পুক 
হয় না। সত্য কথা বলিতে কি, লোকে আবাহন করিয়! যেন 
52 81060915102-র প্রসার কামনা করিতে লাগিল। আজ 
হয়ত সে যুগের ভীষণ অবস্থা আমর! কল্পনাও করিতে পারি 
না; সেই ত্রস্ত ক্ষুক্দ আতঙ্কিত যুগের পর শত বর্ষেরও অধিক 
কাটিয়া গিয়াছে ; তথাপি আপনার! লক্ষ্য করিবেন যে শত 
ব্বরাজ-আন্দোলনের তীব্রতা সন্বেও ব্রিটিশ অধিকার হইতে 
দেশীয় রাজন্যদিগের অধিকারে কোন অঞ্চল ফিরিয়। যাইবার 
প্রস্তাব হইলেই তুমুল কলরব ও প্রতিবাদ উথ্িত হয় । শান্তি, 
সুশৃঙ্খল ও নিরুপদ্রবের আকর্ষণ এতই প্রবল । 

যাক্‌, এই নানাবিধ কাঁরণেন সমাবেশে, নৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক 
ও সামরিক ঘটনাঁপরম্পরাঁর ফলে--ইংরাজের প্রভাব ধীরে ধীরে 
ভারতের নানাদিকে বিস্তুত হইতে লাগিল। সঙ্গে অঙ্গে 
বাঙ্জালীরাও সেই সব দিকে যাইতে লাগিল--নানা কারণে 
ছড়াইয়। পড়িতে লাগিল । সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে কন্মচারী 
ভাবে যাইতে লাগিল ; রসদ বিভাগে, হিসাব বিভাগে, ডাক 
বিভাগে, ইত্যাদিতে কেরাণী ভাবে যাইতে লাগিল ; ব্যবসাক্সী 
হিসাবেও যাইতে লাগিল। তারপর যখন এক এক অঞ্চলে 
ইংরাজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হইতে লাগিল, তখন তথায় শিক্ষক- 


১৮৭ 


রুপি 


ভাবে, উকীল-ব্যারিষ্টার ভাবে, মুন্সেফ-ডেপুটি ভাবে, ডাক্তার- 
কবিরাজ ভাবে-_-০11] 115-এর নানাবিভাঁগেই বিভিন্ন শ্রেণীর 
বিভিন্ন স্তরে বাঙ্গালী যাইতে লাগিল। ইংরাজী শিক্ষা-দীক্ষায় 
বাঙ্গালীই আগে অগ্রণী হইয়াছিল তাহা। ত পূর্বেই বলিয়াছি ; 
তাছাড়া, বাঙ্গালার প্রধান সহর কলিকাতাই ছিল সমগ্র 
ভারতবর্ষের রাজধানী-_স্ুতরাং বাঙ্গালীই অধিক পরিমাণে 
পদস্থ ও সম্ত্ান্ত ছিল। এই সব কারণে শুধু ব্রিটিশ শাসন নহে, 
পাশ্চাত্য শিক্ষা, সভ্যত। ও প্রভাবের বাহনও ভারতের অন্যান্থ 
প্রদেশে প্রধানতঃ বাঙ্গালীরাই হইল | প্রত্যুত তন্ততপ্রদেশের 
লোকেরা ইংরাজকে অবশ্য রাঁজসম্মান প্রদান করিত, কিন্তু 
তৎপরেই বাঙ্গালীকে সন্মান করিত । এই সম্মানের প্রভূত 
কারণও ছিল-_-একটু পরেই বলিতেছি। 

এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়িল । বাঙ্গালীরা ইংরাজের 
রাজ্যবিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাবে যে ভারতময় ছড়াইয়। 
পড়িল, এই এ্রতিহাসিক ঘটনার আলোচন। প্রসঙ্গে বন্ধুবর 
শ্রীযুক্ত সুনীতিকুমার চট্টেপপাধ্যায় মহাঁশয় একদা বলিয়াছিলেন 
যে ইহাতে বাঙ্গালীর গৌর্বের বিষ ত কিছু নাই-ই, পরস্ত 
ইংরাজের তক্পসীবাহী হইয়া ভারতের অন্ঠান্ত প্রদেশে শাসন- 
বিস্তারের সহায়ক হওয়াতে এই ব্যাপার বাঙ্গালীর কলঙ্কের 
বিষয় ; অর্থাৎ আজ যাহাকে বৃহত্তর বঙ্গ বলিয়া আপনারা গৌরব 
করেন, তার উৎপত্তির ইতিহাস অতিশয় লজ্জাজনক | এবিষয়ে 
আমি বন্ধুবরের সহিত কিছুতেই একমত হইতে পারিলাম না । 


১৮৬৮৮ 


বহপ্ধন্ন শত 


আমি মোটেই একথ। মানিনা। কোন্‌ এঁতিহাসিক অবস্থার 
ফলে বা ঘটনার সমাবেশে কি প্রকারে কোন্‌ জাতি কোথায় 
গমন করে সেটা তত বড় কথা নহে, যতট। বড় কথা গমনানম্তুর 
সেই নূতন আবেষ্টনে, নৃতন দেশে প্রদেশে কি ভাবে তাহার! 
আচরণ করে, কি ভাবে কাধ্যপদ্ধতি পরিচালন। করে । 

মহম্মদ ঘোরী যখন দিল্ীশ্বর পুর্থীরাজকে তিরৌরীর 
রণক্ষেত্রে পরাভূত ও নিহত করিয়। ভারতে মুসলমান শাসনের 
সূত্রপাত করেন, তখন তাহার সঙ্গে তদীয় একটি ক্রীতদাস 
আসিয়াছিল-_সেই ক্রীতদাসটির নাম কুতবুদ্দীন আয়বক। 
(এই নামের প্রসঙ্গে একটা কথা ভয়ে ভয়ে বলি। মোগল- 
পাঠান আমলের যে সব নাম আমাদের বাল্যাবধি পরিচিত, 
বর্তমান এতিহাসিকের! বলেন যে, তাহার অধিকাংশই নাকি 
ভুল। ছেলেবেল। হইতে পাঠানসম্রাট আলতামসের নাম শুনিয়া 
আসিম়াছি_-এখন শুনি যে তিনি নাকি ইল্তুত মিস্‌ । খিলিজী 
হইয়াছেন খালজী। এ ত সামান্য কথা । পাঠান-সাম্্রাজ্য 
পর্য্যন্ত উড়িয়া গিয়াছে গবেষকদের ফুৎকারে--আলাউদ্দীন 
খিলিজী ও মহম্মদ তোগলক যে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত পদানত 
করিয়া বিশাল সাম্রাজ্য স্থাপন করিলেন, সেট। নাকি সাঁআজ্যই 
নহে-_পাঠান ত নহেই, উহা নাকি শুধু আফগানদের দিল্লীর 
্থুলতানী মাত্র । মঙ্গলবংশসম্ভূত এমন যে ইতিহাসবিশ্রুত মোগল 
সআাট-বংশ-_-পাশ্চাত্য সমাজে ধাহারা (8:62. 140£91 বলিয়। 
পরিচিত--তাহার। নাকি মৌগল নহেন, মুঘল। আমার ভয় 


১৮৯ 


ভন্রুণিমা। 


হইতেছে যে কোন্‌ দিন বা এঁতিহাসিকদের অন্থুসন্ধিংসার 
দাপটে কুতবুদ্দীন আয়বক কুতবুদ্দীন বুড়বক বনিয়া যান। 
যাক, আমি যদি কিছু ভুলচুক করিয়া ফেলি নাম বিষয়ে, 
ইতিহাসজ্ঞ কালিদাস বাবু যেন বিনামা হস্তে প্রস্তুত থাকিয়! 
আমাকে শোধরাইয়া দেন। ) এই 'কুতবুদ্দীন আয়বক 
ইতিহাসপ্রসিদ্ধ দাসবংশীয় পাঠান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা । 
তিনি ক্রীতদাস হইয়া ভারতে পদার্পণ করিয়াছিলেন বলিয়া 
তৎপ্রতিষ্িত সাত্্রাজ্যের মর্য্যাদা কিছুমাত্র কমে নাই, কিংবা 
কুতব মিনারের উচ্চতাও কিছুমাত্র খাট হয় নাই। মানুষ কি 
প্রকারে স্বযোগ পায় সেটাই আদত কথা নহে ; সেই সুযোগের 
কি প্রকার সদ্যবহার করে সেইটাই আসল কথা। 

একথা সত্য যে বাঙ্গালী নানাভাবে ইংরাজের সহযোগী 
হইয়া ভারতের অন্যত্র গমন করিয়াছিল । কিন্তু বাঙ্গালী যদি 
মাত্র কেরাণীগিরি, কি অন্ত চাকুরী, কি ব্যবসায় করিয়া অন্যদেশ 
হইতে অর্থাজ্জন করিয়াই সন্তষ্ট থাকিত, তবে বাঙ্গালীর এত 
মধ্যাদা, এত সম্মান হইত না সেই সব দেশে । আজও বাঙ্গাল! 
মুল্লুকে, ভিন্ন-প্রদেশবাসী নানা! লোকে নানা ভাবে আসিরা 
অর্থোপার্জন করে-সৃত্যভাবে, পুলিস-দ্ারোয়ান ভাবে, 
কেরাণী ভাবে, ব্যবসায়ী ভাবে, মোটর-চালক ভাবে, উচ্চপদস্থ 
কন্মচারী ভাবে, কিন্ত তন্মধ্যে যাহাদের দ্বার৷ বাঙ্গালী সমাজের 
বা জাতির কোন কল্যাণ কোন উন্নতি হয় না, তাহারা ত 
বাঙ্গালাতে কোন সম্মানের বা সন্ত্রমের অধিকারী হয় না। 


১৪০ 


বৃহতন্ম ভি 


বাঙালী সারা ভারতে যে সন্মান ও প্রতিপত্তি অর্জন 
করিয়াছিল উনবিংশ শতাব্দীতে,তাহ। তাহার! জীবিকাব্যপদেশে 
নানাস্থানে ছড়াইয়া! পড়িয়াছিল বলিয়।! নয়; পরস্ত তাহার! 
তাহাদের নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি-শক্তি অনুযায়ী সেই সব স্থানের 
ও স্থানীয় ব্যক্তিদিগের কল্যাণকর নানাবিধ প্রচেষ্টা ও 
প্রতিষ্ঠানের স্থত্রপাত করিয়াছিল বলিয়া । 

প্রথমতঃ, বিদেশে বাঙ্গালীদিগের একট সজ্ঘবদ্ধত1 ছিল ; 
এখনও উত্তর-পশ্চিম ভারতের প্রায় প্রত্যেক বড় সহরেই-- 
পেশোয়ারে, রাওলপিণ্তীতে, দিলীতে, সিমলাঁতে- বঙ্গের 
নিকটতর স্থানগুলিতে ত বটেই-_বাঙ্গালীর কালীবাড়ী, 
বাঙ্গালীদের সহিত সংস্কৃতি সংরক্ষণের একটা মস্ত কেন্দ্র। 
দ্বিতীয়তঃ, উচ্চতর পাশ্চাত্যভাবাপন্ন শিক্ষাদীক্ষা প্রাপ্ত হওয়ায় 
প্রবাসী বাঙ্গালীরা নিজেদের উপর খুবই আস্থাসম্পন্ন ছিলেন । 
এবং তাহাদের অনেকেরই মনে এই কামনার উদয় হইয়াছিল 
যে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত তদ্দেশবাসীদিগকে শিক্ষা দ্বারা, 
সমাজসংস্কার দ্বারা, ধন্মসংস্কার দ্বারা, রাষ্ট্রনৈতিক আলোচনাদি 
দ্বারা, সংবাদপত্রাি প্রতিষ্ঠা দ্বারা উন্নততর সভ্যতর করিয়! 
তুলিবেন। মধ্যভারতে ঝান্সী-গোয়ালিয়রে যান, উত্তরভারতে 
দিল্লী-লাহোরে যান, যুক্তপ্রদেশে কাশী-প্রয়াগ-লক্ষৌতে যান, 
আসাম-বিহার-উড়িক্যার ত কথাই নাই-_ ইহারা ত সেদিন পধ্্যস্ত 
বঙ্গের অঙ্গীভূতই ছিল- বাঙ্গালীর হাতে মানুষ বলিলেই হয়-_ 
প্রায় সর্বত্রই দেখিবেন যে তত্রত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তত্রত্য 


১৯৯ 


ভল্সণিসা। 


সংবাদপত্র, তত্রত্য সমাজ-সংস্কার প্রচেষ্টার গোড়ায় রহিয়াছেন 
বাঙ্গালী। ভারতভ্রমণে আমার যেটুকু অভিজ্ঞত। হইয়াছে, 
তাহাতে এক দাক্ষিণাতো বাঙ্গালী-প্রভাব ততটা লক্ষ্য করি 
নাই; তাছাড়ী প্রায় সর্বত্রই লক্ষ্য করিয়াছি। বাঙ্গালী 
নিজ বাঙ্গালাদেশে যে সমস্ত আন্দোলনের যে সমস্ত সংস্কার- 
প্রচেষ্টার যে সমস্ত শিক্ষা-পদ্ধতির স্ত্রপাত করিয়াছিল, 
কায়মনোবাক্যে চেষ্টিত হইয়াছিল সমগ্র ভারতে তাহা প্রচলিত 
করিতে, সমগ্র ভারতকে তাহার ফলভোগ করাইতে । তাই 
উনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালী বর্তমান নব্য-ভারতের শিক্ষাগ্ডর 
দীক্ষাগুরু হইয়াছিল-_শুধু কেরাণীগিরি ওকাল্তী হাকিমী ব। 
ব্যবসায় দ্বারা অর্থোপজ্জন করিয়। নহে। 

বাঙ্গালী রামমোহন ধন্মসংস্কার আন্দোলনে প্রবৃত্ত হইয়! 
ব্রাহ্ম-সমাজ স্থাপন করিলেন, মহযি দেবেন্দ্রনাথ ত্রহ্মানন্দ 
কেশবচন্দ্র তাহার আদর্শ সভারতময় ছড়াইঘ্া। দিলেন-_ফলে 
পশ্চিন ভারতে প্রার্থনা-সমাজ, পঞ্চনদে আধ্য-সমাজ প্রতিষ্ঠা 
সম্ভব হইল । বাঙ্গালী মহাপুরুষ রামকৃঞ্ণচ পরমহংসদেবের আদর্শ 
ও বাণী বাঙ্গালী সন্াসী বিবেকানন্দ প্রচার করিলেণ; সার! 
ভারতময় সেই আদর্শ ঘেই বাণী যেন তরুণ মনে আগুন 
ধরাইয়া দিল । বাঙ্গালী স্ুুরেন্দ্রনাথ সমগ্র ভারতে এক 
মহাঁজাতি-সংগঠনের স্বপ্ন দেখিলেন, মহারাষ্ট্র হইতে সাড়। 
আসিল, জাতীয় মহাসমিতির স্ুত্রপাত হইল । তারপর বঙ্গ- 
ভঙ্গের প্রচণ্ড আন্দোলনের তরঙ্গ বাঙ্গালার বিপিনচন্দ্র বাঙ্গালার 


৯১৪৯২, 


ব্বহতন্ম বঙ্গ 


অরবিন্দের জ্বলস্ত উৎসাহের ফলে আসমুদ্রহিমাচল ছড়াইয়া 
পড়িয়া ভারতে নবজাগরণ আনয়ন করিল। ভারতের উন্নতির 
জন্য__যে প্রদেশে বাঙ্গালী উপনিবেশ স্থাপিত করিয়াছে সেই 
প্রদেশের সর্বববিধ কল্যাণের জন্য বাঙ্গালী-_ঘরের বাঙ্গালী এবং 
বাহিরের বাঙ্গালী- আপ্রাণ চেষ্টা করিয়াছে এবং জাতিকে গড়িয়। 
তুলিয়াছে। তাই সমগ্র ভারত বাঙ্গালীকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখি- 
মাছে । বৃহত্তর বঙ্গের এই অপরূপ বিকাশে লজ্জার কোন কারণ 
নাই-_বস্ততঃ এই ইতিহাস বাঙ্গালীর পরম গৌরবের বিষয় । 

উনবিংশ শতাব্দীর বাঙ্গালীর কথ বলিতেছিলাম । অনেক 
কথাই মনে পড়ে । বঙ্গের বাহিরে এই অপরূপ এশ্বর্্য বাঙ্গালী 
প্রকটিত করিল কি প্রকারে? কেনন। বঙ্গের ভিতরেও 
এশ্বর্ধের অবধি ছিল না। বাঙ্গালার জাতীয় জীবনে প্রাণশক্তি 
যেন উপচিয়া পড়িতেছিল--তাহাঁরই কণিকামাত্র যেন বাঙ্গালার 
বাহিরে গিয়। সারা ভারতকে কৃতার্থ করিয়াছিল । বঙ্গীয় 
প্রতিভার সে কি অপুর্ব স্ফুরণ ! হিন্দু ও মুসলমান সভ্যতার 
সংঘাত ও সংস্পর্শে ষোড়শ শতাব্দীতে মহা প্রভুর যুগে সেই এক 
বঙ্গপ্রতিভার স্ফুরণ হইয়াছিল; নৈয়ায়িক রঘুনাথ, স্মার্ত 
রঘুনন্দন, তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ, বৈষ্ণব শ্রীচৈতন্ত__বান্ুদেব 
সার্ধভৌমের এক এক দিকপাল শিষ্য-_-জাঁতীয় জীবনের এক 
এক দিক্‌ যেন উজ্জ্বল করিয়াছিলেন। আর তারপর প্রাচ্য ও 
প্রতীচ্য সভ্যতার সংঘাত ও সংস্পর্শে উনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গ- 
প্রতিভার আর এক অনুরূপ বিচিত্র স্কুরণ দেখ। গিয়াছিল। 


১৩ ১৯৩ 


ভল্লতণিমা। 


জাতীয় জীবনের প্রত্যেক বিভাগে--কি সাহিত্যে, কি ধন্মে, কি 
রাজনীতিতে, কি সমাজ-সংস্কারে__ প্রত্যেক বিভাগেই কি ভাস্বর 
এক জ্যোতিষ্ষমগ্ডলী বাঙ্গালার গগনকে উদ্ভাসিত করিয়া 
তুলিয়াছিল! নাম আর কত করিব? সাহিত্যে মাইকেল- 
রঙ্গলাল-দীনবন্ধু-ভূদেব-বঙ্কিম-রমেশ-হেম-নবীন-গিরিশ-দ্বিজেক্্র- 
অমৃত-রবীন্দ্রনাথ, ধনম্মে রামমোহন-দেবেক্দ্রনাথ.কেশবচন্দ্র- 
শিবনাথ-বিজয়কৃষ্ণ-রামকৃষ্কচ-বিবেকানন্দ, রাজনীতিতে কুষ্খদাস- 
হরিশ্চন্দ্র-স্ুরেন্দ্রনাথ-রাসবিহারী-বিপিনচক্্র-অরবিন্দ-অশ্বিনী- 
কুমার-চিত্তরঞ্জন, সমাজসংস্কারে বিদ্যাসাগর-রাজনারায়ণ-রাম- 
তনু ; আর কত নাম করিব? এ যেন একটা 29195 0£ 50215 | 
আমার মনে হয় যে কোন এক.যুগে একই দেশে এতগুলি অদ্বি- 
তীয় মনীষীর আবিরাব কখনও হইয়াছে কিন সন্দেহ__-এতদ- 
পেক্ষা বেশী যে হয় নাই সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ । 1৮000 
507980165 একখান! গ্রন্থ লিখিয়াছেন__আপনার। সকলেই 
জানেন--121001756106 ৬1060119185 ; আমার মনে হয় যে ঢ0৫- 
16156 ৬1000101205 11) 0361059] সম্বন্ধে লিখিলে বোধ এক- 
খানি বৃহত্তর গ্রন্থ রচিত হইতে পারে। বাস্তবিকই উনবিংশ শতাব্দী 
-_বাঙ্গাল। ও বাঙ্গালীর ইতিহাসে.এক চিরন্মরণীয় যুগ-_ রোমের 
£0805091 ৪£০-এর সঙ্গে ইহ। তুলিত হইবার যোগ্য । 
বাঙ্গালীর প্রতিভার এই যে অভাবনীয় বিকাশ, নানাদিক্‌ 
দিয়। বাঙ্গালীর প্রচেষ্টার এই যে চিস্তাতীত সাফল্য--বাঙ্গালার 
ভিতরে এবং বাহিরে- ইহার অস্তনিহিত কারণ কি? কারণ 


১৯৪ 


শবহওন্ম এঙগে 

ছাড় কাধ্য সম্ভবে না--তা। চ75152155618 যাই বলুন না কেন। 
তবে কারণ অতি সহজ-_-তখনকার বাঙ্গালীর ভিতর পদার্থ ছিল । 
এবং অতি ছুঃখ ও ক্ষোভের সহিতই স্বীকার করিতে হয় যে 
বর্তমান বাঙ্গালী সমাজে শত বাহ চাকচিক্য সত্বেও এই পদার্থেরই 
যেন একাস্তু অভাব ঘটিয়াছে। সে যুগের বাঙ্গালী জীবনকে 
কন্মপ্রচেষ্টাকে 51905 ভাবে গ্রহণ করিত : আদর্শে তাহাদের 
নিষ্ঠা ছিল, আর সাধনায় ছিল একাগ্রতা । সকলেই যে তাহারা 
এক পথের পথিক ছিলেন, এক ভাবের ভাবুক ছিলেন, এক আদর্শে 
বিশ্বাসী ছিলেন, এমন নহে । নান বিভিন্ন আদর্শের দিকে তাহাদের 
গতি ছিল, তদ্ধেতু সংঘাত-সংঘর্ষও তাহাদের মধ্যে কম হইত না ; 
কিন্তু সে সংঘর্ষ ছিল বারের সংঘর্ষ--কারণ স্ব স্ব আদর্শের 
প্রতি নিষ্ঠা তাহাদের একাস্তিক ছিল। তাহাদের সেই 
আদর্শের অনুসরণে অতি বড় নিধ্যাতন উৎপীড়নও তাহাদিগকে 
দমিত করিতে পারিত না। তাই এত বেগবান্‌ প্রাণবান্‌ হইয়া 
উঠিয়াছিল তাহাদের জীবন। তাহার জানিতেন এবং বিশ্বাস 
করিতেন যে চেষ্টা ছাড়া সাফল্য হয় না, সাধন। ব্যতীত সিদ্ধিলাভ 
হয় না । 51010-০00-এ তাহারা বিশ্বাস করিতেন ন। ; ফাকি 
দিয়। স্বর্গলাভে তাহাদের আস্থা ছিল না--তাই তাহার! ফাকি 
দিতে চেষ্টা করিতেন ন । কি জ্ঞানান্বেষণে, কি কর্মপ্রচেষ্টায় কি 
ধর্দসাধনায় ভাহারা ছিলেন 0:0:058% ; অখণ্ড প্রচেষ্টার ছারা 
জীবনের সমগ্রতাকে সার্থক করিতে প্রয়াস তাহারা পাইতেন। 
তাই তাহাদের জীবন সত্য সত্যই সার্থক হইয়াছিল। 


১৯৫ 


ভল্নণিসা। 


স্বামী বিবেকানন্দ একদ1 বলিয়াছিলেন, “চালাকী ছ্বার! 
কোন মহৎ কাধ্য সম্পন্ন হয় না 1” কথাটা একেবারে খাঁটি । 
চালাকী দ্বারা অনেক কিছু মতলব সিদ্ধি সাময়িক ভাবে হইতে 
পারে বটে : কিন্তু যা কিছু মহৎ, জাতীয় জীবনে যা কিছু স্থায়ী 
সম্পদ্‌ দান করিতে পারে, এমন কিছু চালাকী দ্বার সম্ভব 
নহে । সস্তা রকমের চটুলত। দ্বার, তরলত। দ্বার, পণ্ডিতম্মন্যতা। 
দ্বারা, শুধু 21190177178 ধরণের শ্রদ্ধাহীন নাস্তিকতার দ্বারা 
জীবনকে গড়িয়া তোল। যায় না। আমরা অনেক সময়ে 
আভ্কাল আক্ষেপ করিয়া থাকি- মুসলমান আমাদের 
পিষিয়া ফেলিল, বিহারীর। আমাদের কোণগাসা করিল । সত্য 
কথ! বলিতে কি, এ কথায় আমি বিশ্বাস করিনা । 
ভিতরে যদি পার্থ থাকে, তবে কেহ কাহাকেও কোণঠাসা 
করিয়া পিষিয়া মারিয়া ফেলিতে পারে না ট৪0925 ০৮ 
01761055169 26 00806 1 নিজেদের অপদার্থতার প্রতি 
অন্ধ হইয়া, নিজেদের দোষ-ত্রটীর প্রতি দষ্টিহীন হইয়া, অন্তের 
বির্পতার উপর প্রতিদ্বন্বিতার উপর দোষ চাপাইয়া, কীাছনী 
গাওয়ায় একরকম আরাম পাওয়। যাইতে পারে বটে, কিন্ত 
তদ্দারা অপদার্থতা-দোৰ দূরীভূত হয় না, ব্যাধির কোন 
প্রতিকার হয় না । এই কীাছনী, এই ড/1)10105, আমার ভাল 
লাগে না । চাই অন্তর্ঘষ্টির তীক্তা, চাই বিশ্লেষণের নৈপুণ্য, চাই 
চিত্তের অকুতোভয়ত। ৷ যে বাঙ্গালীজাতি উনবিংশ শতাব্দীতে 
ভারতের শীর্ষস্থান অধিকার করিয়। মুকুটমণির ন্যায় শোভ। 


১৯৬ 


বৃতত্ুব্ব শত 


পাইত, সেই বাঙ্গালী জাতি কেন আজ ধাপের পর ধাপে 
নামিয়া আসিতেছে, জীবন-সংগ্রামে ক্রমাগত হটিয়। 
আদিতেছে-এই অবস্থা-বিপর্যায়ের কারণ কি. নিজেদের 
গলদ কোথায়-নিভাঁকভাবে ধীরস্থিরভাবে এই বিষয় 
আলোচনা! করিতে হইবে, বিশ্লেষণ করিতে হইবে । ব্যাধির 
নিদান নির্ণয় করিতে হইবে_-তবেই ত প্রতিকার সম্ভব | 

এই বিশ্লেষণ আমি একটু করিতে চাই। চারিত্রিক লঘ্ঘুতা 
ও অবনতির বিষয়ে যা একটু ইঙ্তিত এইমাত্র করিলাম তাহা 
ত যেন আছেই: তদ্বাতীত বিগত পঁচিশ-ত্রিশ বৎসরের 
রাষ্ট্রনৈতিক ঘটনা-পরম্পরা এবং বাঙ্গালীদিগের অবলম্থিত 
রাষ্থীয় কন্ম প্রস্ট্টোর ধারাও বর্ধমানে বাঙ্গালীর অধোগতির 
নিমিত্ত অনেকটা দায়ী । এই সত্য অন্বীকার করিলে চলিবে 
না। অবসর-মত রাজনীতি-চচ্চার কু-অভ্যাস আমার আছে-_ 
আজ এই অবসরে আপনাদের সমক্ষে কিঞ্চিৎ রাজনীতি-চর্চচ 
করিতে চাই-__-আশা করি আপনার। অধৈর্য হইবেন না। 

উনবিংশ শতাব্দী ধরিয়া! জাতীয় জীবনের নানাবিভাগে 
সমগ্র ভারতের উপর বাঙ্গালী যে নেতৃত্ব করিয়াছিল, বিংশ 
শতাব্দীর প্রারন্তে-_বিশেষ করিয়া রাষ্ত্রীয আন্দোলনের ক্ষেত্রে 
বাঙ্গালীর সেই নেতৃত্ব পরিক্ফুট হইয়াছিল। সেই রাষ্তরীয় 
আন্দোলন ব্যাপক আকারে বাঙ্গালাতে দেখা দেয় ইতিহাস- 
বিখ্যাত ত্বদেশী আন্দোলনে । এই আন্দোলন প্রধানত: 
রঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে আরব্ধ হইলেও, ইহ! 


১৯৭ 


তব্শিস। 


কালক্রমে সর্বাঙ্গীণ জাতীয় মুক্তি-আন্দোলনের আকার 
ধারণ করে, এবং ইহারই প্রভাবে সমগ্র ভারতবর্ষে একটা 
জাতীয় নবজাগরণের সাড়া পড়িয়া যায়। বন্ধুবর 
কালিদাস বাবু ম্বদেশী আন্দোলন সম্বন্ধে কিছু 
বলিয়াছেন। আমিও তাহারই কথার পুনরাবৃত্তি করিয়৷ 
বলিতেছি যে বাঙ্গালায় তেমন আন্দোলন আর দেখিলাম 
না। স্বদেশী আন্দোলনের পর অনেক রকমের আন্দোলন 
দেখিয়াছি--অহিংস অসহযোগ বা 100-51016171 0010 
০০-০921:901097) দেখিয়াছি--সামগ্টিক এবং বৈয়িক, 
1082855 2130 17901510091], আইন-অমান্য বা ০1৮11 15- 
01১80121)০2-ও দেখিয়াছি-_-আর চোখের সামনে আজিকার 
এই নোটিস দিয়। ছুটিছাটা-বড়দিন-মহরম বাদ দিয়া অবসর 
মাফিক সমর-বিরোধী সত্যাগ্রহের তামাসাও দেখিতেছি_-যে 
সত্যাগ্রহকে মহাত্মাজী বলেন 5০12506৮০ সত্যাগ্রহ, এবং ইতর 
জনে বলে 215০0৮০ সত্যাগ্রহ, অর্থাৎ সামনের ০1০6101)-টা। 
স্থগম করিবার নিমিত্ত সত্যাগ্রহ, তাহাও দেখিতেছি-_কিস্তু 
তেমনটি আর দেখিলায় না। স্বদেশী আন্দোলন বাঙ্গালার 
মন্মকোষকে যেরূপ গভীরভাবে আলোড়িত করিয়। বাঙ্গালার 
প্রাণকে কর্মে, ভাবে, কাব্যে, গানে স্বতংস্ফুর্ত বিকাশ দান 
করিয়াছিল--আবেগের সে গভীরতা, আদর্শের সে নিষ্ঠা, মুক্তির 
সে পিপাসাআর দেখিলাম না। রাস্ত্রীয় জগতে, বাঙ্গালার 
ও বাঙ্গালীর চরমতম ও শ্রেষ্ঠতম দান স্বদেশী আন্দোলন ; এবং 


১৯৮ 


স্বহতন্স বত 

এই আন্দোলন বন্ছল পরিমাণে সার্থক ও সফল হইয়াছিল, 
কারণ এই আন্দোলন বাঙ্গালী দেশভক্ত ও দূরদর্শী নেতৃগণের 
দ্বারা পরিচালিত হইয়াছিল--ভাবুকতাঁর সহিত বিচক্ষণতার 
অপূর্বব সংমিশ্রণের ফলেই আন্দৌলন জয়যুক্ত হইয়াছিল 

বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ায় আন্দোলন জয়যুক্ত হইল বটে ; কিন্তু 
এতিহাসিকের দৃষ্টিতে দেখিতে গেলে, ইহার পর হইতেই রাষ্তীয় 
প্রতিপত্তির দিক্‌ হইতে বাঙ্গালীর পশ্চাদপসরণ আরম্ভ হইল। 
প্রথমতঃ, বঙ্গভঙ্গ রহিত হইলেও পূর্বের বাঙ্গালা__ 
বিহার-উড়িষ্যা-সমেত বাঙ্গালা--ফিরিয়া আসিল ন। ; বিহার- 
উড়িসবা! স্বতন্ত্র প্রদেশ হইয়া গেল ; তাছাড়া, খাঁটি বঙ্গভাষাভাষী 
অনেক জিলাও নৃতন বন্দোবস্তে বাঙ্গালার প্রত্যন্ত দেশে কিন্তু 
বাঙ্গালার বাহিরে পড়িয়া রহিল--সিংহতূম, মানভূম, শ্রীহউ, 
কাছাড়, প্রভৃতি জিলা । একই শাসনের অন্তর্ভুক্ত থাকাতে 
বাঙ্গালীর উচ্চতর শিক্ষা দীক্ষার হেতু এ সব প্রদেশে বাঙ্গালীর 
যে প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল তাহা বহুল পরিমাণে ক্ষু্ হইল । 

দ্বিতীয়তঃ, ভারতবর্ষের রাজধানী কলিকাতা হইতে 
দিলীতে স্থানাস্তরিত হইল। এই অভাবনীয় ব্যাপারে 
বাঙ্গালার ক্ষতি হইল আরও প্রচুর। ব্রিটিশ শাসনের সুত্র- 
পাতের সময় হইতেই কলিকাতা ছিল ব্রিটিশ অধিকারভূক্ত 
ভারতের রাজধানী- প্রায় দেড় শতাব্দীর কথা-_তাই 
এইখানেই পাশ্চাত্য শিক্ষাসভ্যতার প্রথম প্রচার। তাছাড়া, 
বড়লাট হইতে আরস্ত করিয়া শাসনযস্ত্রেরে সমস্ত হোম্রা- 


৯১৯৪) 


ভনক্রণিস! 


চোম্র! ব্যক্তি, ব্যবস্থা-পরিষদ্‌ প্রভৃতি সমস্তই কলিকাতাতে 
থাকায়, ভারতের সমস্ত প্রদেশ হইতেই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ, দেশীয় 
রাজন্যগণ, কলিকাতাতেই, প্রতিনিয়ত সমবেত হইতেন ; শাসনের 
কেন্দ্র কলিকাতায় থাকাতে স্বভাবতঃই বাঙ্গালীর প্রভাব শাসন- 
বস্ত্রর উপরও কতকট! বেশী ছিল; ভারতসরকারে চাকুরী- 
বাকুরী হিসাবে ত বাঙ্গীলীর সুবিধ বেশী ছিলই । মোটের 
উপর বাঙ্গালীর প্রাধান্তযের ভাব খুবই বজায় ছিল। কিন্তু হঠাৎ 
ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সরিয়। যাওয়ায় দাড়াইল এই 
যে যেস্থান ছিল সদর, সেস্থান হইয়া পড়িল মফঃম্বল : এবং 
সদর ও মফস্বলের মনোবৃত্তি ও প্রভাবের যে কতট। তফাৎ 
তাহা! আপনার! সকলেই বুঝিতে প্ণরেন । যে বিশিষ্ট স্ুুবিধাটা! 
ছিল বাঙ্গালার, ভারত-সরকারে চাকুরী প্রভাব প্রতিপত্তি 
হিসাবে, সেই সুবিধা চলিয়' গেল উত্তর-পশ্চিম ভারতে । 
কিন্ত হঠাৎ এইবূপ অবস্থাবিপর্ায় সত্বেও তখন পর্য্যস্ত 
বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠতা1 এতট। বেশী ছিল, উপযুক্ত নেতৃস্থানীয় বাঙ্গালী 
তখনও এত বত্ুস খ্যক ছিলেন, ঘে সহস বাঙ্গালীর পশ্চাদ্‌্গতি 
অনুভূত হইল না। এই পশ্চাদগতি ক্রমে ধরা পড়িতে 
লাগিল। ক্রমেই দেখ। যাইতে লাগিল ঘে নিখিল-ভারতীয় 
ব্যাপার ও আন্দোলনাদির উপর বাঙ্গালীর যে প্রভাব ও 
নেতৃত্বের স্থান, তাহা কমিয়া যাইতেছে । বিগত মহাযুদ্ধের 
পর মন্টেঞ্"শাসন-সংস্কারের প্রবর্তনের পর হইতেই এই 
ব্যাপারটি বিশেষভাবে প্রকট হইতেছে । মহাত্মা গান্ধী নৃতন 


ক ০০ 


সবৃতুত্ভব্ম বত 
শাসন-সংস্কারের বিরুদ্ধে অসহযোগ নীতি অবলম্বন করিলেন, 
ভারতের অন্ঠান্ত প্রদেশের বহু নেতা এই নীতি সমর্থন 
করিলেন । বাঙ্গালাতেও চিত্তরঞ্জন-প্রমুখ অনেক নেত। প্রথমে 
বিরুদ্ধতা করিয়ী শেষটা এ নীতিই "সমর্থন করিলেন- সঙ্গে 
সঙ্গে গান্ধীজী সুসলমানী খিলাফতী আন্দোলন-_-মূলের সঙ্গে 
পুনশ্চ হিসাবে ুড়িয়া দ্িলেন। ফল এই হইল যে, সার! 
ভারতময়ই হিন্দুর প্রভাব কমিয়া যাইতে লাগিল- বিশেষ 
করিয়া বাঙ্গালায়, যেখানে হিন্দু সংখ্যায় ভূয়িষ্ঠ নহে। ইহার 
বছর সাতেক পরে, ১৯২৭ খুষ্টাব্দে, নবতর শাসন-পদ্ধতি নির্ণয় 
করিবার জন্য সাইমন কমিশন বসিল--আবার হিন্ু 981০ 
মহল হইতে ফতোঁয়। বাহির হইল, 0০ 730] 91290 ; এবং 
স্থানে অস্থানে সর্ধত্রই কমিশন কুষ্ণ-পতাঁকাযোগে অভিনন্দিত 
হইতে লাগিল । কিন্ত মুসলমানেরা মোটামুটিভাবে কমিশ- 
নের সহযোগিতা করিতে লাগিল। কিন্তু এতাদৃশ লাঞ্চন। 
সত্বেও, সাইমন কমিশনের সভ্যগণ তাহাদের রিপোর্টে ষে 
সমস্ত প্রস্তাব নিদ্ধারণ করিলেন, সেগুলি যথেষ্ট মূলাবান্‌ ছিল । 
তাহার! হিন্দু-মুসলমান সমস্যা সম্বন্ধে যে বাবস্থা নিদ্দেশ 
করিয়াছিলেন তাহাই যর্দি অবলম্বিত হইত, তবে আজ আর 
(201777001721 4৯ড7৪:এ-এর, এবং তছৃপরি গোদের উপর 
বিস্ফোটক হিসাবে, 79018 ৪০৮-এর চাঁপে পড়িয়া বাঙ্গালী 
হিন্দুর ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়িতে হইত না। তাহার! 
প্রদেশ-গঠন সম্বন্ধে যে 809010081% (00101005510 


২০৯ 


ভল্লনুগিমা। 

নির্দেশ করিয়াছিলেন, তাহ! অন্ুস্যত হইলে আজ আর 
এই সিংহভূম-মাঁনভূম-শ্রীহট্র-কাছাড়ের বাঙ্গালী “ন ঘরকা 
ন ঘাটক।” অবস্থায় বাঙ্গালার বাহিরে পভিয়। থাকিত না । কিন্ত 
তখন গান্ধী-উৎসাহ টগবগ. করিতেছে , সেই উৎসাহের 
আতিশয্যে ঘোষণা বাহির হইয়া গেল--71:0৮৮ 0179 
১117017 1২210016 1700 0106 /8502-1091961 0851521 ! 
সেই আস্কালনের ঠেলা এখন সাম্লান আপনারা | 

যাক্‌, সাইমন রিপোর্ট ত আবজ্জনাস্তপে নিক্ষিপ্ত হইল ; 
তৎস্থলে বিলাতে 7২০01291081012 0501765121,0০-এ গান্ধীজীর 
কাগুকারখানার ফলে উৎপন্ন হইল 11175071665 7৪8০ এবং 
তাহারই সাক্ষাৎ সম্ভতি 00700770109] 4৯5৪১ এবং তছুপরি 
গান্ধীজীর অনশনের ফলে গজাইল বিখ্যাত [0098 ৪০৮ 
মহাত্মাজীর প্রতি অচলা ভক্তির ফলে বাঙ্গালার হিন্দু রাষ্ট্র- 
নৈতিক নির্বাণ হইল আসন্ন। ভক্তিগদগদতার যাহ! ফল 
হইবার তাহাই হইল-_রাস্থীয় ব্যাপারে শুধু ভক্তিতে কুলায় না, 
কিঞ্চিৎ পরিমাণে যুক্তিও আবশ্যক | 

যাক, আরও আধুনিক ইতিহাসে আসিতেছি । ১৯৩৭ 
খৃষ্টাব্দে নূতন অর্থাৎ বর্তমান শাসন-পদ্ধতি প্রবন্তিত হইল । 
বাঙ্গালা দেশে ব্যবস্থাপরিষদে মুসলমানদিগের প্রভাব বহুগুণ 
বদ্ধিত হইল। ছুই প্রধান মুসলমান নেতার মধ্যে প্রচণ্ড নির্ববাচন- 
ছন্দ উপস্থিত হইল । আমাদের বরিশাল জিলারই পটুয়াখালী 
মহকুমায় ফজলুল হক্‌ সাহেবের সহিত খাজ! নাজিমুদ্দিন 


ইহ 


বুহতব্ বঙ্গ 


সাহেবের দ্বন্দ হইল। দ্বন্দে হক্‌ সাহেবই জয়ী হইলেন। 
সেই ভোটের ব্যাপারে হিন্দুরা তাহাকে যথেষ্ট সাহায্য 
করিয়াছিলেন ; এবং হকৃ সাহেবও জয়ী হইয়া মন্ত্িত্-গঠন 
ব্যাপারে হিন্দুনেতৃগণের সাহায্য প্রার্থনা করিয়াছিলেন । 
চেষ্টার ক্রটি তিনি করেন নাই, হিন্দু নেতাদের বাড়ী বাড়ী 
তিনি ধর্ণ। দিয়াছেন আমাদের বাঙ্গালার “মেজদা” শরৎ 
বন্থ মহাশয়ের বাড়ী যাইতেও তিনি কু্ঠিত হন নাই ; কিন্তু 
সব্ধত্রই কংগ্রেসী হিন্দু নেতৃবর্গের দ্বারা তিনি প্রত্যাখ্যাত 
হইলেন | (09201070158] £১%/৪10 সত্তেও অবস্থাগতিকে ষে 
সুযোগ বাঙ্গালায় উপস্থিত হইয়াছিল একট জাতীয় ভাবাপন্ন 
মন্ত্রিগুল গঠন করিবার, সে সুযোগও নষ্ট হইল। আজ 
ফজলুল হক্‌ সাহেবের উপর কটুক্তি করিলে কি হইবে ? সাধক 
রাম প্রসাদের আক্ষেপোক্তিই থাকিয়া থাকিয়া মনে পড়ে £ 
“দোষ কারও নয় ত গো ম 
স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা |” 

প্রচণ্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্বেও ফজলুল হক্‌ সাহেবের সহিত এক- 
যোগে কাজ করিতে নাজিমুদ্দিন সাহেব রাজী হইলেন-_-পাকা'- 
পোক্ত মুসলমান-প্রধান মন্ত্রিমগুলী বাঙ্গালাতে নু প্রতিষ্ঠিত হইল। 

মুসলমান নেতাদিগের কাধ্যকলাপে আমার কি মনে হয় 
জানেন? রাজনৈতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে তাহারা চমতকার 
খেলিতেছেন-__0০5 21:25 01551105 01612 08105 [081৬61- 
1070291% ৬6]] ! বস্তুতঃ আমর। হিন্দুরা আমাদের বুদ্ধির 


২০৩ 


ভল্রভণিসা 


বড়াই করি বটে, কিন্ত মুসলমানদিগের নিকট হইতে আমাদের 
অনেক কিছু শিখিবার আছে রাষ্ীয় ক্ষেত্রে। আমাদের 
হইয়াছে অতিবুদ্ধি ; এবং আমাদের দেশে প্রাচীন প্রবাদেই 
রহিয়াছে “অতি-বুদ্ধির গলায় দডি”-_-তাহাই আমাদের ভাগ্যে 
ঘটিয়াছে। নিজেদের মধ্যে ঈর্য1 ছন্দ দলাদলি মুসলমানদের 
মধ্যেও যথেষ্ট আছে ; কিন্ত বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে-_হউক 
না তাহা সাম্প্রদায়িক স্বার্থ তাহার. খাতিরে নিজেদের 
ব্যক্তিগত স্বার্থবুদ্ধি তাহারা সংঘত করিয়া একযোগে কাজ 
করিতে পারেন । তাই, হক্‌-খাজার বিরোধ-বিতণগ্ডা ঘুচিল। 
কিন্তু আমাদের হিন্দু বাঙ্গালার ছুই কংগ্রেসী দলের ঝগড়া- 
কোলাহল আজও মিটিল না । ছুই পক্ষ-__বর্তমানে বস্ুপক্ষ এবং 
গান্ধীপক্ষ--সমানেই লড়াই চালাইয়া যাইতেছেন । কোন্টি 
শুক্লপক্ষ কোন্টিই বা কৃষ্ণপক্ষ তাহ? নিদ্ধারণ করিতে গিয়া পক্ষ- 
পাত প্রদর্শন করিতে চাহি না; কিন্ত উভয় দলের এই নিরন্তর 
পক্ষ-সন্তাড়নের ফলে বাঙ্গালাযর় কংগ্রেসী রাজনীতির প্রচেষ্টা 
পক্ষাঘাত গ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছে সকলেই দেখিতে পাইতেছেন । 
'তছুপরি মজার কথা এই যে, আজ যখন মুসলমাঁন-শাসন 
বাঙ্গলায় সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়! চাপিয়া বসিয়াছে, তখন মুসলমানের 
খোসামুদী ও স্তাবকতা করিবার লোকের কোন অভাব দেখা 
যাইতেছে না--এমনকি গরমতম অতি £চ০01%/810৮ কংশ্রেসী 
মহলেও। কলিকাতা কর্পোরেশন-_ যেখানে 00200002291 
4৯৬৪৭ নাই, যুসলমানদিগের সংখ্যাধিক্য নাই--সেখানেও 


২০৪ 


স্বহৃতুন্ন শু 

সিদ্দিকী-ইস্পাহানীর দলের সহিত চুক্তি করিয়া অ-বাঙ্গালী 
সিদ্দিকী সাহেবকে মেয়রের তক্তে বসাইয়া স্ুভাষ-ভক্ত 
79001০6-এর দল কর্পোরেশনে পধ্যস্ত মুসলমান-প্রভৃত্ব কায়েমী 
করিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন । 

আরও আশ্চর্য ঘটনা আছে-দায়ে পড়িলে স্তাবকতা। 
কতদূর যাইতে পারে, তাহারই অতি বিচিত্র নিদর্শন । নবাব 
সিরাজদ্বৌলা-_উচ্ছৃ্খল-প্রকৃতি লম্পট-স্বভাব নৃপকুলকলঙ্ক 
অপদার্থ নবাব সিরাজদ্দৌলা-যাহার অত্যাচারে উৎপীড়নে 
কামান্ধতায় জঙ্জরিত হইয়? অষ্টাদশ শতাব্দীর বাঙ্গালার শ্রেষ্ঠ 
জননায়কগণ হিন্দু-মুসলমান-খৃষ্টান নির্বিশেষে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ 
হইয়াছিলেন তাহার উচ্ছেদ সাধন করিতে এবং কৃতকাধ্্যও 
হইয়াছিলেন--সেই “পুণ্যশ্লোক" সিরাজদ্দৌলার “পবিত্র স্মৃতি” 
হইতে কলহ্ক-কালিম। ক্ষালন করিবার নিমিত্ত আজ হিন্দু যুবক- 
যুবতী কারাবরণ করিতেছেন ! 0 06 90955 ০৫ [২201 
[3199151 ! এবং এই অতি স্ুমহৎ প্রচেষ্টার নায়ক আমার 
স্েহভাজন বন্ধু তরুণ হিন্দু নেতা শ্রীমান্‌ সুভাষচন্দ্র বস্তু! 
কিমাশ্চধ্যমতঃপরম্‌ ! হিন্দুর রাষ্রীয় নিব্বাণের আর বিলম্ব কি? 

[ এই সময়ে সভাস্থলে স্থভাষ-পন্থী কতিপয় ব্যক্তি “১:০7, 
$£01১”” বলিয়া চীৎকার করায় সভায় কিছু গণ্ডগোল উপস্থিত 
হয়; কিন্তু কিছু পরেই উহ! থামিয়। যায়। ] 

কেহ কেহ আমার কথাতে উত্তেজিত হইয়াছেন দেখিতে 
পাইতেছি। গভীর মনোছ্‌ঃখেই হিন্দু নেতাদের আত্মঘাতী 


২০৫ 


ভনব্রণিস। 


নীতির সমালোচনা আমাকে করিতে হইয়াছে । কাহারও 
মনে ছঃখ দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নহে । কেহ যদি আমার 
কথায় ছুঃখ বোধ করিয়া থাকেন, তজ্জন্য আমি হুংখিত। 
কিন্তু আমি একটিও অন্যায্য কথা বলি নাই। যাহ। যাহা 
বলিয়াছি প্রত্যেকটিই অপ্িসংবাদিত এতিহানিক সত্য । 
আমার বক্তব্যও প্রার শেব হইয়। আমদসিল। বৃহত্তর বঙ্গের 
অধিবাসী বাঙ্গালীর--অর্থা২ৎ আজকালকার ভাষায় প্রবাসী 
বাঙ্গালীর--সমস্যার আলোচনায় প্রবৃত্ত হইয়া, কি হেতু আজ 
বাঙ্গালী, বিশেষতঃ হিন্দু বাঙ্গালী মাত্রেরই, ছুর্বলতার দিকে 
ুর্গতির দিকে নৈরান্তযের দিকে ছর্দম বেগে গতি হইতেছে-_ 
তাহার কিঞ্চিৎ আলোচন। করিলাম । এই আলোচনার আবশ্য- 
কতা আছে । যদি বুল পরিমাণে নিজেদের কম্মদোষেই এই 
অবস্থাবিপর্যায়ে বাঙ্গালী-_কি স্বদেশের কি বিদেশের-- আজ 
পড়িয়া থাকে, তবে শুধু অদৃষ্ঠের উপর দোবারোপ করিয়া, কিং 
ইংরাজ কি মুসলমান কি বিহারী ইত্যাদির প্রতি কটুক্তি করিয়া 
ত এই ছুরবস্থার অবসান হইৰে না। ধরিয়া লউন, অন্যান্য 
সম্প্রদায় হিন্দু বাঙ্গালীদের উপর বিরূপ । তাহারা প্রতিদ্বন্দ্বী 
সম্প্রদায়, তাহাদের বিরূপতা ত স্বাভাবিক-_যতই কেন 
অপ্রীতিকর হউক না। আমাদের নিজেদের গলদ কোথায়, 
আমাদের কণ্মপ্রচেষ্টার ক্রটি কোথায়, আমাদের চরিত্রে 
অপদার্ধথত। কোথায়-__নিশ্মম ভাবে সে বিষয়ে জাতির হিতাকাতক্ষী 
প্রত্যেক ব্যক্তির আলোচন! করিতে হইবে । নৈরাশ্য আর 


২০৬ 


বৃহত্ল্প বহ্ছ 
ক্রেব্য আর হৃদয়দৌর্ববল্য দ্বারা ত দুর্দশার নিরসন হইবে না ॥ 

“ক্রেব্যং মান্ম গমঃ পার্থ নৈতত্য্যুপপদ্তে | 

কদ্রং হৃদয়দৌর্ব্বল্যং ত্যাক্তোণত্তিষ্ঠ পরন্তপ!॥” 
গীতার এই মহাবাণী স্মরণ রাখিতে হইবে । 

বাঙ্গালীর যে আকম্মিক ও কৃত্রিম স্থবিধ! হইয়াছিল উনবিংশ 
শতাব্দীতে তাহ। আজ নাই বটে, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের 
অধিবাসিগণও এখন আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করিয়া! জীবন- 
সংগ্রামে অগ্রসর হইতেছে বটে-এবং তাহাদের এই উন্নাতি 
ও অগ্রগতি ত আনন্দেরই বিষয়--বাঙ্গালীর ইহাতে ছুংখ কিং! 
ঈর্ষ্যা করিবার কোনই কারণ নাই ; সমগ্র ভারতই সমভাবে 
উন্নত হউক, শিক্ষিত হউক, সমৃদ্ধ হউক--ইহা সকল দেশ- 
হিতৈষীরই কাম্য । কিন্ত বাঙ্গালীর ছঃখ এই যে আগে আগে 
চল। দূরে থাকুক, এখন সে আগে কেন, অন্তান্ত ভারতবাসীর 
সঙ্গে সমান তালেও পা ফেলিয়, চলিতে পাঁরিতেছে না । 
ইহা! ত ছুঃখের বিষয় বটেই। ইহার প্রতিকার কোথায় ? 
প্রতিকার বাঙ্গালীর নিজের হাতে । 
বাঙ্গালীর জননায়কগণের শুধু ভাবালুত। দ্বার পরিচালিত 

হইলে চলিবে না, বুদ্ধি ও বিচক্ষণত।ও অবলম্বন করিতে হইবে ; 
আর সর্বোপরি শোধন করিতে হইবে নিজেদের চরিত্র । বিশেষ 
করিয়। প্রবাসী বাঙ্গালীর দায়িত্ব এবিষয়ে অত্যন্ত গুরুতর । 
প্রত্যেকটি প্রবাসী বাঙ্জালী এক হিসাবে সমগ্র বাঙ্গালী জাতির 
প্রতিনিধি । তাহার আচরণ ও ব্যবহারের মাপকাঠির 


২*৭ 


তক্রণিম! 


দ্বারাই অন্যদেশীয়গণ বাঙ্গালীর জাতীয় চরিত্রের পরিমাপ করিয়া 
থাকে । বিগত যুগে প্রবাসী বাঙ্গালীদের মহনীয় রূপের সহিত 
তাহার পরিচিত হইয়াছিল বলিয়াই সমগ্র ভারতে সকলেই 
বাঙ্গালীকে অতি শ্রদ্ধার চক্ষে দেখিত । বাঙ্গালীর সেই মহনীয় 
চরিত্র, সেই উদার সমদর্শিতা, সেই তেজস্ষিতা, সেই কল্যাণমৃত্তি 
ফিরাইয়া আনিতে হইবে বৃহান্তর বাঙ্গালায়। আমি বিশ্বাস 
করি যে ব্যবহারের মাধুর্যো, আচরণের গুদাধ্যে, চরিত্রের 
দাঢে্ বাজালী যদি আবার মহীয়ান্‌ হইয়ী উঠে, তবে 
বাঙ্গালী-__কি স্বদেশে কি নিদেশে--কোথাও পশ্চাৎপদ হইয়া 
পড়িয়া থাকিবে না । 

আমাদের সকলের মধ্যে-সমস্ত বাঙ্গালীর মধ্যে এই 
আত্মবিশ্বাস, আত্মমধ্যাদাভ্ঞান, আজ্মসন্মানবোধ ফিরিয়া 
আস্মুক, ইহাই আমার একান্তিকী প্রার্থনা । কুরুক্ষেত্রের সমর- 
প্রাঙ্গণের মব্যস্থলে দণ্ডায়মান হইয়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে উদাত্ত 
বাণী প্রচার করিয়াছিলেন-__অবসাদগ্রস্ত মুমুর্বু জাতির পক্ষে 
যে বাণী মুতসঞ্জীবনীতুল--সেই অমুতময়ী বাণী আমাদের 
সকলের কন্মপ্রচেষ্টার মূলমন্ত্র হউক £ 

“উদ্ধবেদাত্নাক্সানং নাআানমবসাদয়েৎ । 
আশস্বৈব হ্যাত্সনে। বদ্ধুরাত্মৈব রিপুরাজ্মনঃ ॥” 


১৪ই পৌষ, ১৩৪৭ । 


ভলাতিিত্ভ্ও 
৩ঞ্মভ্লাপ শু শ্বাস 


সাহিত্যে প্রলাপ ও বিলাপ 


| বৃঙ্গপুর সাবন্বত সম্মেলনের বাষিক অধিবেশনে 
সভাপতির অভিভাষণ ] 

রঙ্গপুর সারম্বত সম্মেলনের অগ্যকার এই বাধিক অধিবেশনে 
আমাকে যে আপনারা সভাপতিপদে বরণ করিয়াছেন তজ্জন্ত 
আমি নিজেকে সাতিশয় গৌরবান্বিত বোধ করিতেছি । এ 
বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশমাত্র নাই । তবে আপনাদিগকে 
এই জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতে কিন্তু একটু ইতস্ততঃ 
করিতেছি । কারণ এই যে, বিগত কয়েকদিনের মধ্যে আপনা- 
দিগের এই সম্মেলনের পুর্রেকার ইতিহাস ও কার্য্যধার! সম্বন্ধে 
যেটুকু তথ্য সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি, তাহা হইতে জানিতে 
পারিয়াছি যে পুর্বে পূর্ব্বে বাঙ্গালার বহু লোকবরেণ্য মনীষী 
আপনাদের এবংবিধ অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করিয়! গিয়াছেন। 


২১১ 


ভব্রণিম। 


এ তাহাদিগের স্থলাভিষিক্ত হইঈর পড়াতে মাদশ ব্যক্তি 
তঃই কিঞ্চিৎ বিপন্ন বোধ করিতেছে ; এবং এই বিপদের 
মধ্যে আপনারা আমাকে টানিয়। আনিয়াছেন। ুতরাং 
ধন্যবাদ দিতে একটু ইতস্তত; করিলে নেহাৎ দোষ দিতে 
পারেন না। আমার নিজের কিন এবিষয়ে কোন দোষ নাই, 
কারণ “প্রাংগুলভ্ো ফলে লোভাছুদ্বানহুরিব বামন5 হইয়। 
সভাপতিপদপ্রার্থীর উপহাস্তত বরণ করিবার লোভ আমার 
বিশেব নাই । আপনারা ধরিয়া বাবধিয়া আমাকে উপহাস্ত 
করিয়। তুলিলে আমি আর কি করিতে পারি বলুন ? 
তবে আপনাদিগের এবিধ নির্পসাচন সম্পর্কে আমি হে 
একটু গবেবণা। না করিয়াছি এমন নহে । গবেষণার নিধ্যাসটুকু 
আপনাদিগকে সেবন করাইতেডি ! শুনা যায় যে প্রাতঃক্থারনয় 
র'জা হবুচক্র এবং তত্ত মন্থ্ী গবচ-ক্ষল পািন লীলা-নিকেতন 
ছিল এই রঙ্গপুর, এবং ভাহাদিগের বিস্ময়কর কার্যকলাপ 
বিশ্ব-বিশ্রুত। সুতরাং তাহাদিগের বঙ্গভুনি রঙ্গপুরে যতই কেন 
অভাবনীয় ব্যাপার ঘটুক ন|, ভাত তে আর নৃতন করিয়া বিস্ময় 
উৎপাদনের কারণ নাই । কাজেই রী জর দেশবাসী 
আপনার বাছিয়। বাছিয়। যে দেবুচ ভাপতির আসনে 
বসাইবেন, তাহাতে আর আশ্চর্য, কি ? যাক, যখন বসাইলেনঈ, 
খন দায়িত্ব আপনাদের । আমি বসিরাই খালাস । দেখিবেন 
যেন আর কোন অঘটন না! ঘটে । তাত হইলেই সভাবসানে 
আমি মুক্তকণ্ঠে আপনাঁদিগকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতে পারিব ! 


২৯২, 


সাহিচঢভ্য প্রলাপ ও ন্িবলাপ 


আপনাদের রঙ্গপুরের রঙ্গমঞ্চে আমার আবিরাব বেশী 
দিনের নহে। বংসরাধিক কাল হইল একবার রঙ্গপুরের 
তরুণেরা আমাকে ভাগীরঘথীর তীর হইতে টানিয়। ভ্রিআোতার 
এই তটদেশ পধ্যন্ত আনিয়াছিলেন ; কিন্তু আমি আবার 
পলারন করিয়। নির্কিদ্বে ভাগীরথীভীর-সমাশ্রিত হইতে পারিয়।- 
ছিলাম। কিন্তু কিছুকাল পরে আবার রঙ্গপুরের প্রবীণেরা 
মামাকে গ্রেপ্তার করিষা আনিলেন। তাহার? প্রবীণ লোক 
কিনা-কাজেই তাহাদের বন্দোবস্তও কিছু পাকা ও কায়েমী 
রকমের । সুতরাং সহজে পলায়ন করিতে পারিলাম ন।। 
এমন কি, সেই ঘে ছেলেবেলায় উদ্চট শ্লোক শুনিয়াছি__ 
রবেং কবেঃ কিং সমরন্থ সারং 
কৃষেভয়ং কিং কিমদস্তি ভূঙ্গাঃ 
সদ ভন চাপাভয়ঞ্চ কেষাম্‌ 
ভাগীরথীতীরসমাশ্রিতানাম্‌ ॥ 
_যে শ্লোকের নিদ্ধেশান্রসারে ভাগীরধীতীরসমাশ্রিতদিগের 
কোন ভয়ের কারণ ব্দাপি হইতে পারে না সেই সনাতন 
নির্দেশও এই প্রবীণদিগের চক্রান্তেই বোধ করি বাতিল হইয়া! 
গেল। এমনভাবেই কলকাঠি তাহার। ঘ্ুরাইয়ী দিলেন যে 
প্রতীচ্যের যুদ্ধ প্রাচ্যে আসিয়। পড়িল, দিগ্থিজয়ী সম্রাট রাজেন্দ্র- 
চোল-প্রতিষিত সিংহপুর হইতে বুটিশ-সিংহের পাততাঁড়ি 
গুটাইতে হইল, ফলে এই কাল্গন-সন্ধ্যায় দোলপুণিমার উজ্জ্বল 
জ্যোতস্গালোকে মলয় হইতে ভাসিয়া আসিতে লাগিল--মলয়- 


২১৩ 


তব্রুণিম? 


মারুত নহে, পাপিয়ার তান নহে- আসিতে লাগিল বোমার 
বিক্ফোরণ, কামান-গজ্জন, দস্তোলি-গ্ভীর ভীবণ ঝঞ্চাবাত-__আর 
আলোকমালাসজ্জিত ইন্দ্রপুরীসতৃশ গঙ্গাতরস্থ মহানগরীর নকল 
আলোক নিবিয়া গেল সেই ঝঞ্চাবাতে- রহিল শুধু বহিঃকৃষ্ণ 
(13120-030-এর অন্ধকার । তাই আর গঙ্গাযাত্রা করিতে 
সাহসে কুলাইল না, আপাততঃ রক্পুরেই রহিয়। গেলাম । অত্র, 
প্রবীণদিগের চক্রান্তজাল এমনই ছুর্ভেছ্ । এখন শুধু সংবাদপত্র 
পড়িতেছি, আর কালসাগরের লহরী গণিতেছি, আর রাঙ্া- 
সাম্রাজ্যের উত্থানপতনের লীল। স্তম্তিতভাবে প্রতান্* করিতেছি । 
আব্রন্গস্তম্ব-পধ্যন্ত যে সমরানল প্রজ্ছালত হইয়াছে, তাহাতে 
ব্রন্মে ত আগুন ধরিয়াছেই, আমরা যে স্তপ্ধ বা খড়কুট] মাত্র 
আমাদের দাহ কবে আরম্ত হইবে সন্ত্রস্চিত্ে তাহ'রই প্রতীল্ষ' 
করিতেছি । সংক্ষেপতঃ আমার বিগত কয়েক নানের ধঙগপুর- 
প্রবাসের ইহাই ইতিহাস । 

কেহ কেহ বলিতে পারেন, এই ডামাডোলের মধ্যে আবার 
সাহিত্যিক মজলিস কেন? কার্তিকেরের এই কোদগু-্টঙ্কারের 
মধ্যে দেবী বীণাপাণির বীণ।-নিকণের অবকাশ কোথার ? একটা! 
সহজ উত্তর অবশ্য অনায়াসেই দেওয়া যাইতে পারে । বাহিরের 
জগতে যতই তাণগুডব-লীল! চলিতে থাকুক না কেন, দৈনন্দিন 
জীবনের চিরন্তন কাধ্যধারার বিশেব ব্যাঘাত ত তদ্দার। ঘটিবার 
নহে। রান্নাবাড়া, বাজার করা, আহারশনিদ্র। ইত্যাদি ত 
মোটামুটিভাবে চলিতেই থাকিবে । সমরাগ্নি যতই কেন উত্তপ্ত 


জাছিতত্য প্রলাপ ও বিলাপ 


হউক না, জঠরাগ্নিকে ত প্রশমিত রাখিতেই হইবে। কাজেই এই 
গুরুতর গণ্ডগোলের মধ্যেও মোটামুটিভাবে সংসারের কাজকর্ম 
চলিবেই । তাই যদি চলে, তবে কাজকর্মের ফাকে ফাকে একটু 
অবসর-বিনোদন, একটু অবকাশ-রঞ্জন, একটু কাব্যামৃত-রসান্াদন 
করিলে ক্ষতি কি? আর কিছু না হউক, উৎকট বাস্তবের 
নিম্মম বিভীষিকা হইতে ক্ষণিকের ভন্যও ত মনটাকে নিম্মুক্ত 
করিয়া! আনন্দ লাভ করা যায়। ইহাই কি কম লাভ? 

কিন্তু শুধু এইটুকু কৈফিয়ৎ দিয়াই ক্ষান্ত হইতে আমি রাজী 
নহি। আরও একটু তলাইরা দেখিতে চাহি। সাহিতা- 
বিকাশের মুলে হইল মানবচিত্ডের স্থভ নী-শক্তি। ঘটনাচক্রের 
ঘাত-প্রতিঘাতভে মাঁনবমনে যে প্রতিক্রিয়া উপস্থিত হয়, সেই 
প্রতিক্রিয়ার একটা স্বাভাবিক প্রকাশ মানুষের সাহিত্যে ; এবং 
চিত্ত যদি সজীব থাকে. তবে আঘাত যত প্রবল হয়, গ্রতিক্রিয়াও 
ততই প্রবল হয়, এবং সাহিতা-স্যষিও ততই সতেজ ও সঙ্গীর 
হয়। ইতিহাসে ইহার দৃষ্টান্তের অভাঁব নাই। এলিজাবেথের 
যুগে ইংরাজী সাহিত্যের, জুলিয়াস্‌ সীজার ও অগাষ্টাস্‌ সীজারের 
যুগে রোমক সাহিত্যের, পেরিক্লিসের যুগে গ্রীক সাহিতোর, 
ফরাসী বিপ্লবের যুগে ইউরোপীয় সাহিত্যের, বিক্রমাদিত্যের যুগে 
ভারতীয় সাহিত্যের অপরূপ ক্ষুত্তি ও বিকাশ এই সত্যেরই 
জ্বলস্ত দৃষ্টাস্ত । আমাদের একান্ত নিজেদের এই বাঙ্গালা দেশেও 
স্বদেশী আন্দোলনের অগ্নিময় যুগে বঙ্গীয় সাহিত্য-প্রতিভার অপৃব্ব 
স্বুরণও ইহার অপর এক দৃষ্টান্ত । ইহাদিগের কোনটাই নিছক 


২১৫ 


ভব্রণিস। 


শান্তিময় যুগ ছিল না: পরন্ত ছিল বিপ্রব-বিক্ষুবন্ধ ঝর্ীময় যুগ । 
এই রকম যুগেই ভয়াল নস বটিকাবর্তে তরঙ্গিত হইয়া মানবের 
চিন্তবীণা৷ শীর্দুলবিক্রীড়িত ছন্দে বস্কৃত হইয়া উঠে ; আর সেই 
রুদ্রবস্কার মুমুষূর্ জাতির প্রাণেও নবজীবনের সঞ্চার করে । তাই 
বাহারা প্রচার করেন যে, পরিপূর্ণ শান্তিময় আবেষ্টনেই সাহিত্যের 
প্রকৃষ্ট বিকাশ সম্ভব, যাহারা মনে করেন যে সাহিতাচচ্চ। 
কাব্যালোচনা শুধু নিরুদ্ধেল নিস্তরজ্গ জীবনের বিলাসলীলা মাত্র, 
তাহার! ভ্ান্ত। জাতির প্রাণের সাধনার ধনকে তাহারা শুধু 
প্রসাধনসামগ্রী মনে করিয়া ভ্রম করেন । তাই বলিতেছিলাম, 
সমর-বিপ্লব জাতীয় সাহিত্য-সাধনীর মোটেই প্রতিকূল নহে। 

বস্তৃতঃ সাহিতোর সহিত জাতির প্রাণের যোগ অতি 
গভীর, অতি নিবিড়। সাহিত্য শুধু ব্যক্তিগত খেয়ালের 
নিবৃত্তি মাত্র নহে, ক্ষণিকের হেলাফেলার লীলাখেলা নহে 
কাজেই সাহিত্য যাহার চচ্চ। করেন, কাব্য ষাহার। রচন। 
কেরন, তাহাদের দায়িত্ব গুরুতর | 

একট বিবয় লক্ষ্য করিয়াছি এবং নৈরাশ্যের সহিতই লক্ষ্য 
করিয়াছি যে, সাহিত্যজ্রষ্টাদিগের এই যে গুরু দারিত্বভার, 
ইহার বোধ যেন ক্রমশঃই কমিয়া আসিতেছে । সমাজের 
মঙ্গলের সহিত, দেশের কল্যাণের সহিত সাহিত্যের সম্পর্ক যে 
কত ঘনিষ্ঠ, তাহার অনুভূতি যেন ব্রমশঃই ক্ষীণতর হইয়া 
আসিতেছে । শুধু যে বর্তমান অতি-আধুনিক বা “সাম্প্রতিক” 
নামে আখ্যাত বাঙ্গালা-সাহিত্য লক্ষ্য করিয়াই এই কথা আমার 


, ২৯৬ 


সাহিত্ভ্য প্রলাপ ও বিলাপ 


মনে হইয়াছে তাহা নহে, প্রায় সকল দেশেই, বিশেষতঃ 
পাশ্চাত্য দেশে, বিগত মহাসমরের পরবন্ভা যুগের সাহিত্য- 
প্রচেষ্টার ভিতরে এই ভাব অথব! অভাব পরিলক্ষিত হইতেছে । 
পূর্বতন সাহিতাচাধ্যগণের মধ্যে যে নিষ্ঠা সন্ত্রম গান্তীধ্য 
দায়িত্বজ্কান দেখ। বায়, তাঁহার ক্রমিক অবসান হইয়া সাহিত্য 
শুধু একট চটুলতা, একটা কায়দা, একট? বাহাছুরী, একটা 
কসরতে পরিণত হইবার লক্ষণ দেখ। দিয়াছে। শুধু 17765110০- 
[051 6৮1))109510105) 60131810050 ব! কার্দার কসরত, বাক্য- 
বিন্যাঃসর অন্বাভাবিক মোচড়--যেন বেহালার 01221০900-7 
হরুচ্চ' ধা শব্রাশির সাড়ম্বর সমাবেশ, আর ছন্দের বা 
নৈশ্ছন্দেব পাগলাঝেরা-ইহাতেই ঘেন সমরোত্তর “সান্প্র- 
তিক” কাব্যের “আধুনিকতা” । সমাজনীতি হিসাবে শ্লীলতা- 
অশ্লীলতার প্রসঙ্গ ত ছাড়িয়াই দ্রিলান। সেব্ষিয়েতকর 
হিসাবে আধুনিকেরা একেবারেই নিরঙ্কুশ । কিন্তু ভুহারা 
ভালয়া যান যে “শ্রীল” ও “শ্রীল” বন্তভঃ একই অভিন্ন শব্দ 
কারণ “রলরোরভেদ£” ; সুতরাং যাহ শ্লীন নহে তাহ? যথার্থ 
শ্রীল বা শ্রীম্ডিত হইতে পারে না, যাহা অশ্লীল তাহ? কুশ্রী 
অন্গুন্দর অশোভন । কাজেই সাহিতোর বিগারালয়ে 20153 
এবং £১550560105-এর নির্দেশ উভয়ই তুলা । রচনার ভিতরে 
সংযমের অভাব, শৃঙ্খলার অভাব, শালীনতার অভাব, নিষ্ঠার 
অভাব--10০927,02 বা অধোগতির এই সমুদয় লক্ষণই 
এখনকার সাহিত্যে অতিমাত্রায় প্রকটিত হইতেছে । তাই 


২১৭ 


তব্রুণিস। 


সুগভীর মনঃক্ষোভে বিলাতের একজন আধুনিক কবি 
11,02085 7700100015 এই নিরর৫থক নিব্বীষ্য স্বৈরাচারের 
প্রতিকৃতি কয়েকটি পঙক্ততে ফুটাইয়া তুলিয়া নিজের 
মন্মবেদন! প্রকাশ করিয়াছেন £ ্‌ 


+১৬৬০ 02:00 130 00016 0 10291011956 60 001 50105 

10210 ০111055 001200010135 01 2. 07160705 105; 

17020, (31210277798 ২1051705৬৮০ 9010), 5001) 59,005 
10০910105 


10 51701911105 10910 9100. 1019110-0105600 0603£0£790. 
৬৬1)20 €156 15 1216 05? (50700 8125 00399 8730 06695 
/৯1)0 5177105 00102705 0102 ৬9190 ৬10০0010191) 15125. 
1১111079015 101 23 8 563106 01৮৮ 01101555 10295, 
/৯100 11162. 1960005 1011170 0: 108.115050 0951125.৮ 

শুধু এই বর্তমান যুগেই যে এই মানসিক ব্যাধির লক্ষণ 
সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম দেখ। দিয়াছে এমন নহে । বস্তুত" 
যখনই সামজিক আবেষ্টন এবং জীবনযাত্রা-প্রণালী অতিমাত্রা 
কৃত্রিম হইয়া পড়িয়া শুধু বিলাস-লালসারই ইন্ধন যোগায়, 
জীবন্ত প্রাণধারা লুপ্তপ্রায় হইয়া 51857961015 বা ক্রেদাত্ড 
নিশ্চল অবসাঁদের স্ষ্টি করে, তখনই প্রাণের যোগ হইতে 
বঞ্চিত হইয়৷ সাহিত্য-প্রচেষ্টা শুধু একটা কৃত্রিম আলঙ্কারিকত: 
এবং কারিকরীতে পধ্যবসিত হয় । 76০8061) যুগের সংস্কৃত 
সাহিত্যেও ইহার উদ্াহরণের অভাব নাই। কত কত অদ্ভুত 
রকমের শ্লোকের স্থষ্টি হইয়াছে সে যুগে তাহাতে শব্দে 
সমাবেশের কি কারুকাধ্য, অক্ষর-বিন্যাসের কি বাহাছুরী. 


১৮ 


সাহিত্ভ্য প্রলাপ ও ন্বিলীপ 


“সর্ববতোভদ্র”“ চক্রবন্ধ”, প্রভৃতি ছন্দোবন্ধের কি বিচিত্র চাতুরী-- 
লম্বালম্থি পাশাপাশি কোণাকুণি যে দিক্‌ দিয়াই পড়া যায় একই 
রকম হইবে--বেন এক একখানা 209510 500812 বা ০:9595- 
৬৮০: 7221 আর কি! এমন সব কাব্য রচিত হইয়াছে 
সে যুগে, যাহাদের রচনার এমনই বাহাছুরী এমনই শ্লেষের 
বাহার যে এক অর্থে পড়িলে হয় রামায়ণের কাহিনী, আর এক 
অর্থে পড়িলে হয় মহাভারতের আখ্যান । এই সকলের রচনী- 
কৌশলের তারিফ করিতে হয় সন্দেহ নাই, কিন্তু ব্বতঃস্ফন্ 
রসন্থষ্টি ইহাকে বলে না, প্রাণবান্‌ সাহিতা ইহাকে বলে ন!! 
কাব্লক্্মীর প্রাণ হইয়াছে অস্তমিত, রহিয়াছে যেন শুধু তাহার 
নিষ্প্রাণ দেহবল্পরীর প্রসাধন করিবার নিরথক প্রফাস। ইহ; 
প্রাণহীণ নিস্তেজ 060921)০০-এরই পরিচায়ক । 

বর্তমানে যে তরুণম্মস্ত 06০891)0০-এর আবর্তে আমরা 
পড়িয়াছি তাহাতে তারুণ্য কতটা আছে বলিতে পারি ন, 
তবে আছে একট) অকালপকত। । ইহার একট। প্রধান লক্ষণ 
হইল দাম্তিকতা-_ পুর্বব পুর্ব যুগের সাহিতঃ্রষ্টাদিগের প্রতি 
একট! অপরিসীম অবজ্ঞীর ভাঁব। রসজ্ঞন যেন শুধু 
আজিকালিকার “সাম্প্রতিক”-দিগেরই একচেটিয়া সামণ্জী--আট 
সম্বন্ধে তাহারাই যেন একমাত্র সমঝ দার_-এই প্রকার একটা 
আত্বন্তরিতা তাহাদের রচনার পত্রে পত্রে ছত্রে ছত্রে ফুটিয়! 
উঠিতে দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে একট ঘটনা মনে পড়িয়া 
গেল। দে আজ প্রায় বছর পাঁচ ছয়েক হইল, আমি 


২৯৯ 


তল্রভণিস! 


কলিকাতার এক ছাত্রসভায় এক প্রবন্ধ পাঠ করি- বিষয় ছিল, 
“বঙ্গসাহিত্যে অব্বাচীন যুগ ।” তাহাতে অবশ্য আমার স্বভাবসিদ্ধ 
তীব্র সমালোচনা কিছু গুচুর পরিমাণেই ছিল: এবং প্রসঙ্গক্রমে 
আজিকালিকার বাঙ্গালী তরুণ কবিদিগের এবং উনবিংশ 
শতাব্দীর বিখাত বাঙ্গালী কবি রঙ্গল'ল, মাইকেল, হেমচন্দ্র, 
নবীনচন্দ্র প্রভৃতির আলোচনাও ছিল। সভাবসানান্তে একটি 
যুবক আমাকে বলিলেন, “দেখুন, আপনি ত উনবিংশ শতাব্দীর 
বাঙ্গালী কবিত্দর সম্বন্ধে এত বলিলেন, কিন্তু ওসব কি আবার 
কবি? ধরুন, নবীন সেন। নবীন সেন ত আর কৰি 
নহেন।” এমন অগ্নানবদনে যুবক এই কথাটি বলিলেন ষেন 
নবীন সেন যে কবি নকৃহন, ইহ জ্যামিতির একখানি স্বতঃসিদ্ধ । 
ক্ষণেকের জন্য আমি ভ্তন্তিত হইয়া গেলাম । তারপর সামলা- 
ইয়া! লইয়া বলিলাম, “দেখ, নবীন মেন একেবারে কবিই নহেন, 
এ অমূল্য তথাটি কোথা হইতে আবিষ্কার করিলে ? রঙ্গলাল- 
মাইকেল-হেমচক্রও বোধকরি ভোমার কাছে একেবারেই বাতিল 
হইয়া গিয়াছেন। রবি ঠাকুরও বুঝি যান যান। তাহ! হইলে 
বাকী থাকিবে বাঙ্গালা দেশে ছুইটি কবি-_-একটি তুমি, আর 
একটি আমি । কি বল?” আনার শ্লরেষ তাহার বোধগম্য 
হইল কিনা তাহ! অবশ্য আমি অবগত হইতে পারি নাই । 
এইবূপ বিন্ধাপ্রমাণ ধৃষ্টতা কিংব! ধাষ্টমে। আমাদের এই 
সমরোন্তর অর্ধাচীন যুগের একটি অতি স্ুপ্রকট লক্ষণ । শুধু 
এদেশে নয়, বিদেশেও । এই “সাম্প্রতিক” অহমিকা এবং 


২২২০ 


সান্িতভ্য প্রলাপ ও ব্বিলাপ 


আড়শ্বর সম্পর্কে অতি সম্প্রতি বিলাতের এক বিখ্যাত 
সমালোচনাপত্রে একটি অতি সুন্দর বর্ণন! প্রদন্ত হইয়াছে 
[12 600৮110600255 0৫6 40700611015, ৪0০161- 
15176 01016101510--6102 16290110501 ৮1301010192. 90915 
£5):1105 5০006 220 2. 01:22975 001105100 ৮509 6০9 
(17517 210615---00162902109 €0 0৮671252100 00 
0109101৮2 11621916075. 165 01016 17650201001010 3 
[0081 10056 (10170550105. ৮৮21০ ৮৮1100210 0০101:2 1920 
210 010501666 109027050 0105 2%00165500 00 ৮1055 0: 
0:0517)5 70110. ০৬৮ ০70155510125১ 00 ০0001010099 
যো 10005050101 002 201001121)005 ০ 100%৮ 35210555 
_-010010010, 1390 1105৮ 52175251701) 172৮০ 20002100 
5110৩ 0106 1256 ড্/2] 15105৮20 10000 100), 
01101005210. 12008] 80001791010. 50901061635 ০ 
৬2100110507 51020019010 (10111106175 510৮৮ 219200, 
200 00210010215 2:50191]7 2201. 0100:5 50100 101 
01221005100 51070170100 :6100100. 0 1701:10200, 
€:506০110 ৪1011001197, 00015 200 ০০৫-০০5 [0 
০0121] 0105001:0 1015601:1021 2139. 910 0111:091001051051 
21171510275. ০0৮61155265 ০0৫ 70 2000010 01)1555 
01105 102৬০ 2 1027 471061017 0100010%. 0০210105915 


1700 61016 6101169 11 11)001010180101)) 0131253 0130 ০31) 


২২১৯ 


ভক্রুণিসা। 


২1015 00 70:091796000015 01 210. 201502000910951021 
5০1701772 ড৮1)101 5221505 0 25502011518 2 01011990101) 
0৫110561215 0000, (7777155 111670170) ১1101915775771) 
পাশ্চাতা সাহিতা-সমাঁজের 'এই আধুনিক চিত্রখানি 
পাশ্চাত্যের নকলনবীশ আমাদিগের আধুনিক বাঙ্গালার 
“সাম্প্রতিক” সাহিতাসম'জেও ভুবহু খাটিয়া যায়। ১৯২০ 
খুষ্টাবের পুর্বে যাহা কিছু সাহিত্যসম্ভতার আহত হইয়াছে, 
তাহা আলোচনার যোগ্যই নহে, আবজ্ঞনা মাত্র-_ইহাই 
বাঙ্গালার “সাম্প্রতিক” লেখকগণেরও বছমূল সংস্কার বলিয়া 
বোধ হর়। রাজনীনিক্ষেত্রেও অনুরূপ অহমিকার দৃষ্টান্ত 
অপ্রতুল নহে । যেমন গান্ধীভক্ত খন্দরবিলাসীদিগের আস্ফালন 
--১৯১০ খ্ুষ্ট'কের পুবেব আবার ভারতে রাভনৈতিক আন্দোলন 
ছিল নাকি? কৌগানবন্ত হইয়াই ত আমরা ভাগাবন্ত হইতে 
স্নরু করিয়াছি । এই দান্তিকতার দাপটে আমাদের 921556 
0 ৪1095 পরধ্ান্ত লোপ পাইবার উপক্রম হইয়াছে ! এই 
প্রসঙ্গে কবি কালিদাসের সেই পুরাতন উপদেশ মনে উদিত হয় £ 
পুরাণমিত্যেব ন সাধু সর্কবং ন চাপি কাব্যং নবমিত্যবদ্ম্‌। 
সন্ভঃ পরীক্ষ্যান্যতরভ্জন্তে মূঢঃ পরপ্রতায়নেয়বুদ্ধিঃ ॥ 
তবে ঈষৎ বদলাউয়া বলিতে ইচ্ছ। হয় ঃ 
“নবীনমিত্যেব ন সাধু সব্বং ন চাপি কাবাং পুরাণমবদ্াম্‌।” 
যাক, এই আড়ম্বর-আক্ষালন-অহমিকা ত গেল আধুনিক 
.050906:706-এর একট দিক্‌ । 


২২. 


সাহিতেভ্য প্রলাপ ও ন্বিলাপ 


আরও একট দিক আছে। কিছুকাল হইতে সেটা 
বিশেষভাবে দেখা দিয়াছে । সেটাকে সংক্ষেপে বলা যাইতে 
পারে 00911051120 বা সর্বগ্রাসী দিক । অর্থাৎ আধুনিক- 
দিগের মধ্য ধাহারা কোন এক বিশেষ মতবাদের ভক্ত 
না কোন বিশেষ ভাবের ভাবুক, তাহাদিগের দাবী এই ষে 
যাহা কিছু সাহিত্য রচিত হইবে, তাহা কি গগ্ কি পছ্য, কি 
উপন্যাস কি প্রবন্ধ, সকলই সেই মতবাদ ও ভাবের প্রচারে 
নিয়োজিত হওয়া চাই । ভক্তির আতিশয্যে এবংবিধ দাবীতেও 
তাহাদের আশ মিটিতেছে ন। তাহাদের অনুশাসন আরও 
সুদূরপ্রসারী । তীহারা কতোয়! জ্তারী করিতেছেন যে, যে সমস্ত 
রুনা উক্ত মতবাদ ও ভাবের প্রসার ও প্রচার কল্পে প্রনীত ন। হয়, 
ভাভা সাহিতাযই নহে _অর্থ1ৎ 70799215098 সাহিত্যই একমাত্র 
সাহিতা, আর যা কিছু তাহ? নিতান্তই অপোগগ্ড সাহিত্য ৷ 
ইহাদিগের অনেকের মধ্যে আবার অতি দ্রুত মত-পরিবর্তন 
পরিলক্ষিত হয়। কিছুকাল পূর্বেও ইহাদিগের বেদবাক্য ছিল 
৮ £০ £৯৮৪5895০-শিল-কলা-সাহিতো কোন উদ্দেশ্য 
থাকিতে পারে না ; যদ্দি থাকে, তবে উহা হইয়া পড়িল ০:990110, 
আর আর্ট-পদবাচ্য রহিল না-_আর্ট হইবে স্বপ্রতিষ্ঠ*আত্মন্তেবা- 
তন। তৃষ্টঃ”--ইহার কোন নীতি,,কোন রীতি, কোঁন লক্ষ্য, কোন 
উদ্দেন্তয থাকিতে পারে না । অর্থাৎ সাহিতোর উৎকর্ষ আলাপে 
নয়, প্রলাপে-ইহাই ছিল ইহাদিগের মত। হঠাৎ একেবারে 
মত বদলাইয়া ঘড়ির দোলকের ন্তায় একেবারে দোলনের 


২২৩ 


তক্রশিস! 


অপর প্রান্তে গিয়া ইহারা রান্ারাতি উপনীত হইয়াছেন । 
এখন ইহাদিগের মত এই যে আট-শিল্স-কলা-সাহিতোর 
উদ্দেশা ত থাক্কিতেই হইবে ; তবে নানাবিধ উদ্দেশা থাকিলে 
চলিবে না, একই ছাাচে ঢালা এক এবং অদ্ভিতীয় উদ্দেশ্টোর 
দিকে সমস্ত আর্ট সমস্ত সাহিতাকে নিয়োজিত করিতে হইলে 
অর্থাৎ একেবারে “একমেবাদ্বিতীরম্‌।৮” এবং যেহেতু এখন 
বিশ্বের বিধি-ব্যবস্থা সে রি উচ্দশোর জর্নব্তাভাবে অনুকুল 
হইয়া উচঠ নাই, সুতরাং অধুনা সাহিত্যরচরিতাদিগের একমাত 
কর্তব্য হঈনেছে তি বয়ে প্রতিবাদ করা, কোলাহল কর, 
চীৎকার করা, ভ্রন্দন কর'__গছ্যে, পছ্যে, ছন্দে, চিত্রে, গাণন_- 
অর্থাং এখনকার নতে সাহিত্যের উৎকর্ষ আলাপে নয়, বিহাপে। 
কাজেই আনাদের মত নিরীহ সাহুবকী ধরণের লোকদিগের 
বর্তমানে “পরিস্থিতি” দাড়াইযাছে বড়ই পগুরুবরপুন”- একদিকে 
প্রলাগী “আধুনিক”, অন্থা দিকে বিলাগা সাম্প্রতিক” 
এতছৃভয়ের ন.ধ্য পড়িয়া আনরা যে ভদ্রলোকের মত ছদণ্ 
বৈঠকে বমির সাহিত্যিক রসালাপ কর্রিন তাহাও ছুক্ষর হ 
ঈাড়াইয়াছে । 

উদ্দেশ্যবাদেগণের উদ্দেন্ মহৎ সন্দেহ নাউ_ুআর উৎসাহ 
ত অভুগ্র বটেই ; অভাপ যা কিড়ু তা শুধু রসন্ঞ।নের | 
তবে কিনা, সাহিত্য হইল রদসেরই সামগ্রী _প্রাচীনেরাও একথা 
জানিতেন, তাই তাহারা বলিয়। গির়াছেন, “কাব।ং রসাজ্মকং 
বাক্য । ষে কোন নি রচনাই সাহিভ্য-পদবীতে 


২২৪ 


সাহ্িতভ্য প্রলাপ ও বিলাপ 


উন্নীত হইতে পারে, যদি উহ রসাল হয়। এই কারণেই 
ইতিহাসের, দর্শনের, এমনকি বিজ্ঞানেরও অনেক গ্রন্থ 
যাহারদদিগকে সচরাচর সাহিত্যের পর্যায়ে ফেল। হয় ন1--- 
_শুধু লিপিচাতুর্য ও রসালতার গুণে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যরূপে 
পরিগণিত হইয়াছে । আবার, এই রসবস্তর অভাবের দরুণই 
অনেক কাব্য-উপন্াসও সাহিত্যের কোঠায় স্থান পায় নাই । 
বস্তুতঃ সাহিত্যের বৈশিষ্টা ততট 108065-4এ নহে যতটা 
107912761-4 ) ততটা বস্তুতে নহে যতট। রূপে, ততট। অঙ্েতে 
নহে যতট। রঙ্গে । তাই যে শিল্পী রূপকার, যে লেখক বূপদক্ষ, 
তাহার তৃলিকাতে তাহার লেখনীতে শিল্প ও সাহিত্য রসমৃত্তি 
পরিগ্রহ করে। তাই ভাববাদিগণের ভাবের উগ্রতা যতই 
হউক না কেন, তাহাতে যদি রস-সঞ্চার তাহার না করিতে 
পারেন, তবে তাহাদের 0:09789£91;08 কখনও সাহিত্য হইয়া 
উঠিবে না। 

আরও একটা কথা এ বিষয়ে বলিবার আছে । প্রাচীন 
একট) শ্লোক আছে £ 

তরবোহপি হি জীবস্তি জীবস্তি মুগপক্ষিণঃ | 
স জীবতি মনো যস্তয মননেন হি জীবতি ॥ 

জীবনধারণ ত তরুলত' পশুপক্ষী সকলেই করিয়া থাকে; 
কিন্তু তাহাঁকেই প্রকৃতপ্রস্তাবে জীবন্ত মানুষ বলা যায় যিনি 
মনন দ্বারা জীবন ধারণ করেন । শিল্পীর জীবনের বিশেষত্বই 
এই মননে । বৃহৎ যন্ত্র সহযোগে এক ছণচে ঢালিয়া 


১৫ স৫ 


০ 


ভনব্রুণিস! 


হাজার হাজার দ্রব্যের যুগপৎ উতপাদন-_অর্থাৎ 170650159171220 
10995-1090856101, তাহাতে যেমন আর্ট হয় না, তেমনই এই 
সাহিত্যিক সব্ধগ্রাসীদিগের যে আদর্শ, অর্থাৎ সকল মন্ুত্যের 
চিস্তকেই একই ছণচে গড়িয়া তোলা, তাহাতে অনেক কিছুই 
হয়ত স্যষ্ট হইতে পারে--ছ5৪56550) হইতে পারে, ৪2150 
হইতে পারে, এমনকি 1010618601:911 0£ 00০ 79015151281 
পর্ধ্যস্ত হইতে পারে-_কিন্তু সরস সুস্থ সাহিত্য স্থষ্টি হয় না। 
এই সর্বগ্রাসী মনোবৃত্তিকে লক্ষ্য করিয়াই এক বিখাত পাশ্চাত্য 
মনীষী বলিয়াছেন 2 

*] 522 হা 00212000017 ০010 ৭1001071185 
1510128 0£6 ৬0911010181255 510:260 17061), 17680-191206 
21150. ৮৮101 509৮. 

মানব-চিত্তের 02017917129. 07955-01090০61012 প্রচেষ্টার 
ইহাই অবশ্যস্তাবী ফল। 

অতিমাত্রায় অন্নুচিকীর্ু আমাদের আধুনিক বাঙ্গালী সমাজে 
পশ্চিমের দেখাদেখি এই প্রকার 7:979858129156-দিগের 
উৎপাত কিছুদ্দিন ধরিয়া] বেশ প্রবলভাবেই দেখা দিয়াছে । 
ইহাদের বেশীর ভাগই নাকি 25215156 অর্থাৎ বন্কমানের 
9951০ বা “সভায়ত” (অর্থাৎ কৃষক-শ্রমিকদিগের সভ। দ্বারা 
নিয়ন্ত্রিত ) রুশ সমাজ-পদ্ধতির মহাভক্ত | “সভায়ত” রুশতন্ক্রের 
, শ্রুতি অতি-ভক্তিতে কাহারও আপত্তির কারণ থাকিতে পারে 
না-আর আমাদের চিরমুখর বাঙ্গালাদেশে ত সভাসমিতির 


২৬ 


সানিতভ্য প্রলাপ ও ্িলাপ 


প্রাহভাব যে প্রকার, তাহাতে এখানে “সভায়ত”-তন্ত্র প্রতিষ্ঠা 
করিতে বিশেষ বেগ পাইতে হইবে বলিয়াও মনে হয় না; কিন্ত 
তথাপি কলম ধরিলেই যে রুশ-প্রশস্তি রচন। করিতে হইবে, এ 
রকম হুকুম হইলে যেন বড় জুলুম বলিয়া মনে হয় । আমাদের 
স্থানীয় 921-585015 বন্ধুগণই ব। ছাড়িবেন কেন? উত্তাপ 
ত তাহাদিগেরও কম নহে । বল্‌ মা তার! দাড়াই কোথা ? 
বস্তুতঃ প্রলাপ এবং বিলাপ-_-এই যে দ্বিবিধ ব্যাধি, 
ইহাদিগের কবল হইতে সাহিত্যকে রক্ষা করিতে হইবে, 
সাহিত্যকে সুস্থ সবল স্বাধীন করিতে হইবে । আবেষ্টনের সজ্বাতে 
বাষ্টি-মনের যে প্রতিক্রিয়া-_তাহার সহজতা, স্বাভাবিকৃতা এবং 
স্বতন্্রতা রক্ষা করিতে হইবে । তবেই জীবন্ত সাহিত্য গড়িয়। 
উঠিবে। কোন মনগড়। ক্ষণস্থায়ী 0১০০: বা মতবাদের খাতিরে 
সমস্ত স্বাধীন মনন-শক্তি নিম্পিষ্ট করিয়! মানবসমাজকে মস্তিক্ষ- 
বিহীন ক্রীড়নক বা £০৮০-এর সমষ্টিতে পরিণত করিবার 
প্রচেষ্টা করিলে চলিবে না । অপর পক্ষে, সাহিত্যকে কেবলমাত্র 
ব্যক্তিগত খেয়াল বা! উচ্ছ.জ্খল প্রবৃত্তির ক্রীড়নকরূপে দেখিলেও 
চলিবে না, শুধু অবসর-বিনোদনের অলস-বিলাসের সামগ্রী মনে 
করিলেও চলিবে না; কারণ এইরূপ করিলে সা হিত্যপ্রচেষ্টা 
সমাজকল্যাণের পরিপন্থী হইয়া উঠিতে পারে, এবং তাহ! হইলে 
কি সমাজ কি ব্যক্তি কেহই “মহতী বিনষ্টি”-র হাত হইতে পরিত্রাণ 
লাভে সমর্থ হয় ন।। তাহাদিগের সমুদয় সাহিত্য-প্রচেষ্টার 
মধ্যে ঘদি আমাদের লেখকগণ এই সংযম, এই সামঞ্জস্ত, এই 


২২৭ 


ভল্লভণিসা। 


কল্যাণাদর্শের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া রসম্থষ্টি করিতে পারেন, তবেই 
তাহাদিগের সমস্ত শ্রম সার্থক হইবে । 
আর সর্ধোপরি আমাদিগকে স্মরণ রাখিতে হইবে যে,সমস্ত 
স্থষ্টির মুলে-_কি জীবস্থষ্টি, কি সমাজস্ণ্রি, কি সাহিত্যস্ষ্টি-_ 
সকলেরই মূলে চাই বীধ্য, চাই তেজ, চাই প্রাণ। জাতীর জীবনের 
প্রাণধারার সঙ্গে অব্যাহত যোগ রাখিতে হইবে সাহিত্িকের-__ 
নচেৎ সাহিত্য হইয় পড়িবে শু, উর, নিক্ষল । জাতির বিবিধ 
জটিল সমস্তার সম্মুখীন হইতে হইবে সাহিত্যিকের__পলায়নী- 
মনোবৃন্তি লইয়া, 55০8715€ হইয়া, দ্বিরদ-রদ-নিশ্মিত বিলাস- 
স্তম্তোপরি কল্পলোকের আশ্রয় লইলে চলিবে না। নিভীক ভাবে 
বীর্যের সঙ্গে তেজন্িতার সহিত সমস্ত প্রতিকূল অবস্থার সহিত 
সংগ্রাম করিতে হইবে । আমাদের -এই অতি প্রাচীন দেশে যে 
অতি দীন দরিদ্র লক্ষ লক্ষ জনগণ বসবাস করিতেছে, তাহাদের 
এই সব মৃঢ় নান মূক মুখে 
দিতে হবে ভাবা ; এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে 
ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশ! । 
কবি ও সাহিত্যিকের সাড়। দিতে হইবে রবীন্দ্রনাথের 
আকুল আহ্বানে £ রি 
কবি, তবে উঠে এস-_যদি থাকে প্রাণ, 
তবে তাই লহ সাথে, তবে তাই কর আজি দান ! 
বড় দুঃখ, বড় ব্যথা-_-সম্মুখেতে কষ্টের সংসার 
বড়ই দরিদ্র, শুন্য, বড় ক্ষুদ্র, বদ্ধ, অন্ধকার । 


২২৮ 


সাহিঢভ্য প্রলাপ ও ব্বিলাপপ 


অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলে। চাই, চাই যুক্ত বায়ু, 

চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জবল পরমায়ু, 

সাহস-বিস্তত বক্ষপট ! এ দেন্য-মাঝারে, কবি, 

একবার নিয়ে এস ব্বর্গ হতে বিশ্বাসের ছবি ! 

বাঙ্গালার দেশতক্ত কবি রবীন্দ্রনাথ এই যে ভান্বর আদর্শ 
স্থাপন করিয়া গিয়াছেন, তাহ! আমাদের সাহিত্যব্রতিগণের 
কাধ্যে পরিণত করিতে হইবে-_রঙ্গময়ী কল্পনার মায়ার ছলনে 
প্রলুন্ধ হইয়া সেই কর্তব্যে অবহেল। করিলে প্রত্যবায় হইবে । 
আজ বাঙ্গালার গৌরবময় অগ্নিযুগের স্বদেশী আন্দোলনের 
অন্যতম গীঠস্থান রঙ্গপুরে সমাসীন হইয়া_-“বন্দে মাতরম্” 
মন্ত্রের খষি বঙ্কিমচন্দ্রের *“আনন্দমমঠ” ও “দেবী চৌধুরানী”-র 
অমরশ্মৃতি-বিজড়িত রঙ্গপুরের এই পুণ্যভূমিতে অধিষ্ঠিত 
হইয়া --এবিবয়ে বেশী বল। বাহুল্য মাত্র । 

আমাদিগের সারব্বত সমাজের সমস্ত চেষ্টা, সমস্ত সাধনা, 
সমগ্র শক্তি নিয়োজিত হউক দেশের ও সমাজের সর্বাঙ্গীণ 
কল্যাণকল্পে--পরিপুর্ণ  মুক্তিকন্পে। ভগবতী ভারতী 
আমাদিগকে আশীর্বাদ করুন । বন্দে মাতরম্‌ । 

দোলপুণিমা 
১৭ই ফাল্ভন, ১৩৪৮ । 


ভিহন্ল-্ব্ছে স্পিল্কা-ভলক্ষভি 


ছিন্ন-বঙে শিক্ষা-সন্কট 


[ নিখিল-বঙ্গ শিক্ষক-সম্মিলনীর বিষুপুর অধিবেশনে 
সভাপতির অভিভাষণ ॥ 

আজ নিখিল-বঙ্গ শিক্ষক-সন্মিলনীর অধিবেশনে সভাপতি- 
রূপে কাধ্য করিবার জন্য আপনারা যে আমাকে আহ্বান 
করিয়াছেন তজ্জন্য আপনার আমার আস্তরিক ধন্যবাদ 
জানিবেন। বিশেষতঃ বাঙ্গালার ও বাঙ্গালীর আজিকার এই 
অভাবনীয় সঙ্কটের সময়ে আমাকে যে আপনারা আপনাদের 
এই গুরুদাধিত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররূপে নিযুক্ত করিয়াছেন, 
ইহা আমার প্রতি আপনাদের আন্তরিক স্নেহ ও প্রগাঢ় 
'আস্থারই পরিচায়ক । আপনাদের সেই স্সেহের উপর ভরস৷ 
করিয়াই আপনাদের আহ্বানে সাড়া দিতে আমি সাহসী 


২৩৩ 


ভক্রণিস' 


হইয়াছি। আশা করি আমার দোষ-ক্রটি-অক্ষমতা আপনারা 
স্েহগুণে মার্জনা করিবেন, এবং অধিবেশনের কাধ্য যাহাতে 
স্ুসম্পন্ন হয় তজ্জন্ত আপনারা! সকলে পরিপুর্ণ সহযোগিতা 
করিতে কার্পণ্য করিবেন না। আমি বিশ্বাস করি যে সকলের 
সমবেত প্রচেষ্টা থাকিলে জম্মিলনীর বর্তমান অতি গুরুত্বপূর্ণ 
অধিবেশন অবশ্যই সাফল্যমণ্ডিত হইবে । 

আমার বিশেষ ভরস। এই যে আমি আপনাদের ও 
আপনাদের প্রতিষ্ঠানের নিকট নিতান্ত অপরিচিত নহি । বহুদিন 
যাবৎ আপনাদের শিক্ষক-সমিতির ধাহারা কর্মকর্তা, তাহারা 
অনেকেই অন্ুগ্রহপূর্বক আমাকে বন্ধৃভাবে গ্রহণ করিয়া বাধিত 
ও সম্মানিত করিয়াছেন । এখনও মূনে পড়ে চারি বৎসর পুর্বে 
১৯৪৬ সনের এপ্রিল মাসে, আপনাদের এই সম্মিলনীর 
দিনাজপুর অধিবেশনের কথা । আমি তখন রঙ্গপুরে ছিলাম । 
সেই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করিয়াছিলেন বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক 
আমার শ্রদ্ধাম্পদ বন্ধু ডাক্তার শ্রীযুক্ত মেঘনাদ সাহা মহাশিয়। 
ঠিক তাহারই অনতিপূর্ধেব আমারই আহ্বানে ডাক্তার সাহ' 
রঙ্গপুরে গিয়াছিলেন। তাহাকে সঙ্গে করিয়া আমি রঙ্গপুর 
হইতে রওয়ান। হইয়া! এক সৃর্ধ্যালোকিত প্রভাতে দিনাজপুর 
শৌছিয়াছিলাম। তারপর আপনারা আমাকে সম্মিলনীর 
অধিবেশন উদ্বোধন করিতে আহ্বান করিয়া! সাতিশয় সম্মানিত 
করিয়াছিলেন । সেদিন সভাতে সম্মিলনীর প্রতিনিধিদিগের 
মধ্যে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করিয়াছিলাম,তাহ। আজিও 


৩৪ 


ছিল-ন্বচঙ্গ শ্িক্ষা-সহ্কট 

আমার স্মৃতিপটে স্পষ্টরূপে অস্কিত রহিয়াছে । তখনও অনেক 
সমস্যা ছিল, অসন্তোষের অনেক কারণ ছিল, শিক্ষকদিগের 
আঘথিক ছ্রবস্থা ও তাহাদিগের প্রতি সরকারী ওদাসীন্ 
সকলকে শীড়। দিতেছিল-্-এ দকলই ছিল; কিন্তু তথাপি 
সেদিনের সঙ্গে এদিনের অনেক প্রভেদ। এই চারি বৎসরের 
মধ্যে আমাদের দেশের ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে অনেক কিছু 
ঘটিয়া গিয়াছে । তাহার ফলাফল আজ হাড়ে হাড়ে আমব! 
সকলে অনুভব করিতেছি । 

সেদিন যখন সমস্তার উদ্ভব হইত এবং তজ্জনিত চাঁঞ্চলা 
উপস্থিত হইত, তখন আমরা ভাবিতাঁম যে শাসনযন্ব যখন 
ব্ছল পরিমাণে বিদেশীর করকবলিত, তখন ত সৌন্তন্য ও 
সহান্থভৃতির অভাব হইতেই পারে। কিন্তু জানিতাম যে 
বিদেশীর শাসনের অবসান আসন্-_দ্রুতবেগে তখন ভারতের 
রাষ্থ্রমঞ্চে পট-পরিবর্তন হইতেছিল-_কাজেই চিত্তের অস্তঃস্থলে 
এই আশাই তখন উদিত হইত যে আর কয়টা দিন কোনমতে 
কাটাইয়! দিতে পারিলেই হয়, কোনমতে সবুর করিতে 
পারিলেই হয়। কোন ভয় নাই; অচিরেই যখন রাষ্ট্রযন্ত 
আমাদিগের নিজেদের ও নিজেদের প্রতিনিধিস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের 
করায়ত্ত হইবে, তখন আমাদের সকল সমস্তার সমাধান হইবে, 
সকল কষ্টের অবসান হইবে । কাজেই আশা, উৎসাহ ও 
উদ্দীপনার তখন কোন অভাব ছিল না--ততকালীন সমস্ত 
প্রতিকূল অবস্থা সত্বেও । 


২৩৫ খু 


ভল্রভণিসা 


কিন্ত আজ সে অবস্থার বিপুল পরিবর্তন হইয়াছে। বিদেশীর। 
চলিয়। গিয়াছে__দেশের নেতৃবর্গের হস্তে সম্পূর্ণ শাসনভার ন্যস্ত 
করিয়া। রাষ্ট্রনৈতিক হিসাবে আমাদের এই সুপ্রাচীন ভারতভূমি 
স্বাধীনতা লাভ করিয়াছে । আনন্দের বিষয় সন্দেহ নাই ; 
কিন্ত আনন্দের সঙ্গে সঙ্গে গুরুতর দায়িত্বও আসিয়। পড়িয়াছে । 
পৃবের্ব যখনই কোন অন্যায় অবিচার অনাচার ঘটিত, আমরা 
তখনই অচিরাৎ বিদেশী শাসনকর্তীকে তজ্জন্য দায়ী এবং 
অপরাধী ঘোষণ। করিতাম, এবং নিজেদের ক্রটি ও অকর্ম্মণ্যতার 
দায়িত্ব বহুল পরিমাণে লাঘব করিবার প্রয়াস পাইতাম । কিন্তু 
আজ আর সেই সহজ সুবিধাটুকু নাই--দোষ ও গুণ সবটুকুরই 
পরিপূর্ণ দায়ি এখন নিজেদের স্কন্ধেই লইতে হইতেছে । 
তথাপি স্বশাসন, স্বাতন্ধ্য, স্বাধীনতা-_ইহার মস্ত একট? নৈতিক 
মূল্য আছে-_পরিপুর্ণ মন্ুত্যত্বের পথ ইহাতে সুগম করিয়! 
দেয়। নিজেদের সমস্ত! নিজেরা সমাধান করিবার প্রচেষ্টা এবং 
সেই প্রচেষ্টায় সাকল্য-লাভ জাতীয় জীবনে নবশক্তি ও নুতন 
প্রেরণার সঞ্চার করে । 

আক্ষেপের বিষয় এই যে, রাষ্ত্রীয় পরিবন্তন ভারতের 
স্বাধীনতাই শুধু আনয়ন করে নাই, ভারতের অঙচ্ছেদও 
আনয়ন করিয়াছে । সাময়িক সুবিধা ও স্বস্তি লাভের জন্য, 
সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষববিষ কথঞ্চিৎ প্রশমনের নিমিত্ত, সস্তায় ও 
স্লভে স্বরাজ পাইবার লোভে, এক দূর্বল মূহুর্তে, জাতীয় 
কংগ্রেসের নেতৃবর্গ, ভারতবর্ষের জনগণের মতামতের অপেক্ষা 


২৩৬ 


ছিল্স-ব্ত্্গে ন্পিক্ষা-সহ্কট 


না করিয়াই, মাতৃভূমির অঙ্গচ্ছেদ অঙ্গীকার করিয়া লইলেন। 
সেই মাতৃঘাতের প্রায়শ্চিত্ত আজ সকলেরই করিতে হইতেছে 
-_-এই দীর্ঘ তিন বৎসর ধরিয়া আর কতদিন করিতে হইবে 
বিধাতাপুরুষই বলিতে পারেন। কিন্তু এই প্রায়শ্চিত্তের প্রধান 
অংশ গ্রহণ করিতে হইয়াছে পঞ্চনদের ও বঙ্গভূমির--তিন বৎসর 
পূর্বে পঞ্চনদ বিধ্বস্ত হইয়া গিয়াছে, আজ বঙ্গভূমি বিধ্বস্ত প্রায়। 

ফল দীড়াইয়াছে এই যে, পূর্বের যে সমস্ত সমস্ত ছিল 
তাহ! ত পুরাপুরি আছেই--তা। কি শিক্ষা বিষয়ে, কি অন্নবস্ত্রে 
বিষয়ে, কি অন্যান্য বিষয়ে; তছুপরি অন্বাভাবিকভাবে 
দেশ-বিভাগ ও তৎফলে সমাজ-বিভাগের দরুণ নৃতন নূতন 
নানাবিধ উতৎকট জমস্তা দেখা দিয়াছে । ইহাদের আশু 
সমাধানের প্রচেষ্টা না হইলে সমগ্র বাঙ্গালী সমাজ ও 
বাঙ্গালী জাতির ভবিষ্যৎ ভয়াবহ মনে হইতেছে । 

আজ আমরা শিক্ষক-সম্মিলনীতে সকলে সমবেত হইয়াছি 
-_-স্ৃতরাং শিক্ষা সম্পর্কে যে সঙ্কট উপস্থিত হইয়াছে তদ্দিষয়েই 
সবিশেষ আলোচনা আবশ্যক । বর্তমানে বাঙ্গালাদেশের 
শিক্ষা-সঙ্কট কি? সকলেই জানেন যে কংগ্রেসী নেতৃবর্গ খন 
ভারতবর্ষের অঙ্গচ্ছেদে সম্মতি দান করিলেন, তখন বাঙ্গালার যে 
অংশ বহুল পরিমাণে হিন্দু-অধ্যুষিত, অন্ততঃ সে অংশ যাহাতে 
পাকিস্তানের অস্তভূক্ত হইয়া ইস্লামী আওতায় পড়িয়৷ বিপন্ন 
না হয়, তজ্জন্য আন্দোলনের ফলে বাঙ্গালার পশ্চিমাংশ ভারতের 
অন্তভুক্ত হইল, কিন্তু পূর্ববাংশ পাকিস্তানে পড়িয়া রহিল । 


২৩৭ 


তক্রশিসা। 


“সর্বনাশে সমুৎপন্ে অর্ধং ত্যজতি পণ্তিতঃ |” বঙ্গেরও অঙ্গচ্ছেদ 
হইল ; বৃহত্তর অংশ অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ থাকিয়। গেল ভারতবর্ষের 
বাহিরে-ইস্লামী আওতায় । এবং এই ছুই অংশ শুধু দুইটি 
প্রদেশমাত্র রহিল না, ইহার। দুইটি পৃথক্‌ স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের অন্তভূ্তি 
হইল; এক বঙ্গের অধিবাসী অপর বঙ্গে বিদেশী ব! 
£0::21£7591 হইয়া গেল । অথচ, বাঙ্গালী সমাজ অবিচ্ছেছ্ত ; 
পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনে সমগ্র বাঙ্গালার সমস্ত জেল 
সমস্ত অংশ একনুত্রে গ্রথিত। যানবাহন ও অর্থনৈতিক 
সম্পর্কেও উভয় অংশ অবিচ্ছ্ছ্ভ। অুতরাং একট স্ুসংবদ্ধ 
সুগঠিত জীবদেহকে মাঝখান দিয়! কাটিয়া ফেলিলে যে অবস্থা 
হয়, ঘেই অস্বাভাবিক অবস্থার স্ষ্টি হইল এই দেশ-বিভাগে । 
বাঙ্গাল'র পক্ষে বিশেষ করিয়া অদৃষ্টের পরিহাস এই যে, 
৪৫ বৎসর পুর্ববে এই বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ উপলক্ষ্য করিয়াই 
স্বদেশী আন্দোলনের সূত্রপাত হইয়াছিল--যঘে আন্দোলন 
কালক্রমে স্বাধীনতা-সংগ্রামে রূপান্তরিত হইয়া সমগ্র ভারতবর্ষে 
প্রসারিত হইয়া অবশেষে বিদেশী শাসনের অবসান ঘটাইতে 
সমর্থ হইল; মার আজ মেই বিদেশী শাসনের অবসানে 
স্বাধীনভার প্রথম প্রভদ্তে সেই বঙ্গেরই অঙ্গচ্ছেদ মন্মান্তিক 
ভাবে সজ্ঘটিত হইল । বিধির বিড়ম্বন। আর কাহাকে বলে? 
যাক্‌। আজ প্রায় তিন বংসর হইল এই অঙ্গচ্ছেদ 
ঘটিয়ছে। সমস্ত পুর্বববঙ্গে সেই সময় হইতেই ইস্লামী 
রষট্রতন্ত্রের প্রভাবে হিন্দুর প্রতিকূল একট। হাওয়া বহিতে 


৩৮ 


ছিল-চক্গ শ্শিক্ষা-সহ্ুট 

লাগিল । নান। কারণে, সামাজিক চাপে, অর্থ নৈতিক কৃচ্ছ.তায়, 
ধন্্ম ও আচারমূলক বৈষম্যে, শিক্ষার আদর্শের প্রতিকূলতায়, 
ক্রমশঃই পুর্বববঙ্গবাসী বিশাল হিন্দু-সমাজের মেরুদণ্ড ভাঙ্গিয়। 
পড়িতে লাগিল । তাহার। বোধ করিতে লাগিলেন যে পুর্বববঙ্গে 
হিন্দুর কোন ভবিষ্যৎ নাই ; তাহাদের সন্তানসম্ভতির খাটিয়! 
খাইবার, উপার্জনপুর্বক সসম্মানে জীবনধারণের কোন 
সম্ভাবন। নাই ।. সুতরাং ধাহাদের সামর্থ্য আছে তাহারা ধীরে 
দরে ভারতবর্ষে-__বিশেষতঃ পশ্চিমবঙে_ চলিয়া আসিবার 
জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলেন। পূর্ববঙ্গের বিগ্ভালয়গুলি 
অধিকাংশই হিন্রুদিগের প্রতিষ্ঠিত এবং হিন্দুদ্বার! পরিচালিত ; 
শিক্ষকগণও বেশী পরিমাণেই হিন্দু । হিন্দ্দিগের ক্রমিক 
দেশত্যাগের দরুণ কাজেই এই সমস্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলি__ 
কি স্কুল, কি কলেজ, সবগুলিই, অল্লাধিক পঙ্গু হইতে লাগিল । 
এই ত গেল পূর্ববঙ্গের অবস্থার ক্রমিক পরিণতি । পশ্চিমবঙ্গে 
এতগুলি নূতন আগন্তকের আবির্াবে অন্যবিধ সমস্যার 
উদ্ভব হইল। একেই পশ্চিমবঙ্গ আয়তনে সন্কীর্ণ__সমগ্র 
বঙ্গদেশের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আন্দাজ-_তারপর অত্যন্ত 
স্তনবহুল ; ন্ুতরাং আগন্তক পুর্ববঙ্গবাসীর চাপে ক্রমশঃ 
পশ্চিমবঙ্গ বিব্রত বোধ করিতে লাগিল। সহানুভূতির অভাবে 
নহে, সামর্থ্যের অভাবে । 

তবুও দেশ-বিভাগের পর প্রথম আড়াই বংসর কাল 
পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের অবস্থা হিন্দুদিগের পক্ষে কষ্টকর ও 


৩৯ 


ভল্রল্গণিমা 

অসম্মানজনক হইলেও, কতকটা সহনীয় ছিল। বরঞ্চ ধীরে 
ধীরে অনেকের মনে আশা হইতেছিল যে-_কি হিন্দু বাঙ্গালী, 
কি মুসলমান বাঙ্জালী-_বাঙ্গালী মাত্রেরই যে একটা নিবিড় 
বন্ধন আছে, আচার-ব্যবহার, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ভাষা-সাহিত্যের 
মধ্য দিয়া সেই বন্ধন অচিরে পুনরায় হিন্দ্ু-মুসলমাঁনকে 
ভ্রাতৃত্ব-বন্ধনে আবদ্ধ করিবে, রাষ্ট্রনৈতিক কারণে যে সাম্প্রদায়িক 
ঈর্ধ্যাদেষের বিষবাম্প সমাঁজ-শরীরকে অবসন্ন করিয়াছিল তাহ? 
কাটিয়া গিয়। বাঙ্গালী হিন্দ্র-মুসলমানকে সৌই্রাত্র্যে পুনদবরক্ষিত 
করিবে । 

কিন্তু অকন্মাৎ সে আশা ধুলিসাৎ হইয়া গেল। বিগত 
শিবরাত্রির পুণ্য সপ্তাহে যে অশিব তাগুব সুরু হইল সমগ্র 
পুর্বববঙে-_ভূত-প্রেত-পিশাচ-প্রমথের তাখখবও বুঝি তাহার 
নিকট নিষ্্রভ হইয়া যায়। আড়াই বংসর ধরিয়া ইস্লামী 
জনগণের ভিতরে হিন্দুর বিরুদ্ধে যে প্রতিকুল বায়ু বহিতেছিল, 
সেই বাঁযু সহসা ভীম প্রভঞ্জনে পরিণত হইয়া সমস্ত বিশাল 
বিস্তৃত পুর্বববঙ্গের_ পদ্মা-মেঘন। কর্ণফুলী-সুরমা৷ কীর্তনখোলা- 
মধুমতী বিধৌত সমগ্র পূর্ববঙ্গের ব্রাহ্গণ-চণ্ডাল, উচ্চ-নীচ, 
ধনী-নিদ্ধন, সমস্ত স্তরের -হিন্ু-সমাজের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে 
ঝটিকাবর্তের মুখে শুক্কপত্রের ন্যায় উড়াইয়া লইয়া! চলিল। 
এরূপ আকম্মিক- প্রচণ্ড সব্বগ্রাসী বিপ্লবের তুলন। বোধ করি 
ঈতিহাসে বড় একটা মিলে না_অথবা শুধু মিলে স্বাধীন 
ভারতের প্রথম বৎসরে পঞ্চনদের আলোড়নের সঙ্গেই মাত্র । 


২৪০ 


ছিল-বঢঙ্গ শিক্ষা-সহ্ট 


বাঙ্গালার যে সম্কট, বিশেষতঃ পশ্চিম বাঙ্গালার যে সমস্যা, 
ধীরে ধীরে ঘনাইয়া আসিতেছিল, অকম্মাৎ তুমুলবেগে সেই 
সমস্যা ও সঙ্কট আছিয়া পড়াতে দেশ এখন হাবুডুবু 
খাইতেছে। কি সরকারী কর্তৃপক্ষ, কি জনসাধারণ, সবাই 
দিশাহারা হইয়! পড়িয়াছেন__এই বিষম সঙ্কটে কি কর! যায় 
--বাঙ্গালীকে, তাহার সংস্কৃতিকে, তাহার জীবনাদর্শকে, তাহার 
ভবিষ্যংকে কি প্রকারে বাঁচাইয়া রাখ। যায়, ইহা! ভাবিয়]। 
বিষম সমস্তা-সত্যই বাঙ্গালীর পক্ষে একেবারে জীবন-মরণ 
সমস্যা । আমি সমালোচনা করিতে চাহি না__-দোষ-ক্রটি 
আমাদের সকলেরই আছে--সরকারের গুদাসীন্য আছে, কর্মে 
অপটুতা আছে, জনসাধারণেরও কন্ম-বিমুখতা ও জড়তা 
আছে-_সবই ঠিক। কিন্তু আজ এই সঙ্কট-মুহূর্তে দোষান্ুসন্ধানের 
অবকাশ নাই; সকলের সঙ্গে পরিপূর্ণ সহযোগিতায় কি 
গ্রকারে এই ছিন্নমূল ছন্নছাড়া যাযাবরে পরিণতপ্রায় বাঙ্গালী 
সমাজকে রক্ষা করা যায়, আশ্রয় দেওয়া যায়, পুনরায় 
সুপ্রতিষ্ঠিত কর! যায়, তাহাই আশু চিস্তনীয়। 

শুধু শিক্ষার বিষয়েই একবার দৃষ্টি দেওয়া যাউক। শিক্ষক 
ও শিক্ষার্থদিগের কি ছুরবস্থা হইয়াছে তাহাই দেখা! যাউক। 
পূর্বববঙ্গে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় বার শত 
হাইস্কুল ছিল, মাইনর ও প্রাইমারী স্কুলের কথা ত ছাড়িয়াই 
দিলাম । বিগত ফাল্কুন-চৈত্রে পূর্ববঙ্গের বীভৎস তাগুবের ফলে 
এই সমস্ত বিগ্ভালয়ের অধিকংশই বন্ধ হইয়া গিয়াছে। 


১৬ ২৪১ 


ভল্পভণি্সা। 


হিন্দু শিক্ষকগণ প্রাণভয়ে সপরিবারে চলিয়া আসিয়াছেন, 
হিন্দু ছাত্রগণও বহুল পরিমাণে পড়াশুন। ত্যাগ করিয়াছে । গড়ে 
মোটে আট জন শিক্ষক প্রতি স্কুল হইতে চলিয়া আসিয়াছেন 
আন্দাজ করিলেও প্রায় দশ হাজার হিন্দু অভিজ্ঞ শিক্ষক 
বাস্ত-হার। জীবিকা-হারা হইয়া পশ্চিমবঙ্গে শরণাথী হিসাবে 
আসিয়া পড়িয়াছেন ধরিতে হইবে । মাইনর ও প্রাইমারী স্কুলের 
শিক্ষকগণকে গণনা করিলে বোধ করি আরও হাক্তার দশেক 
হইবে । এই যে ধিশ হাজার দরিদ্র অভিজ্ঞ শিক্ষাত্রতী বিপত্তির 
ও অসহায়তার নিয়তম কুপে নিমজ্জিত হইয়া! আপনাদিগের 
দ্বারস্থ হইয়াছেন, ইহাদিগের কি ব্যবস্থা আপনারা করিবেন ? 
আমি জানি আপনাদের সহানুভূতির অভাব নাই । কিন্তু শুধু 
সহানুভূতি দ্বারা ত সমস্যার সমাধান সম্ভবপর নহে। 
আবশ্যক ধীর স্থির স্ুসংবদ্ধ পরিকল্পনা, এবং আশু তাহাকে 
কাধ্যে পরিণত করা । আপনাদের শিক্ষক-সমিতি এ বিষয়ে 
যথাসাধ্য চেষ্টা ও য় করিতেছেন, তাহা আমি জানি; এবং 
তজ্জন্য সমগ্র পুর্ববঙ্গবাসী শিক্ষক-সমাজের পক্ষ হইতে আমি 
আপনাদিগকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিতেছি । 
কিন্তু শুধু এই সমিতির একার ত একাজ নহে; প্রধানত 
দরকার, সরকারী পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা । 

সরকারী তরফ হইতে আজকাল নানা প্রকার শিক্ষাসন্বন্ধীয় 
01592759] ব। বিকেন্দ্রীকরণ অর্থাৎ ছড়াইয়! দিবার প্রচেষ্টা 
হইতেছে । এই প্রসঙ্গে শরণাগত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদিগের 


২৪২ 


ছিল-ন্বচ্গে শ্পিক্ষা-সম্কট 

বিষয়ে একট কথা মনে হইতেছে । এ যাবৎ পূর্র্ববঙ্জ হইতে 
যত লোক আসিয়। পড়িয়াছে তাহার সংখ্যা বোধ করি পঞ্চাশ 
লক্ষের কাছান্ডাছি হইবে । পরে হয়ত আরও আসিবে । 
সে কথা এখন থাকুক । এই বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে যাহার। 
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থা ছিল পূর্বববঙ্গে, তাহার! তত্রত্য বিদ্যালয়সমূহেই 
পঠনপাঠন করিত, অর্থাৎ বার শত হাই স্কুলে এবং বু মাইনর 
ও প্রাইমারী স্কুলে। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গেও সেই পরিমাণ 
স্কুলের বাবস্থা করিলে শিক্ষার্থদিগেরও শিক্ষার বন্দোবস্ত হয়, 
এবং তাহাদের শিক্ষাকার্য্যে শরণার্থী শিক্ষকগণকে নিযুক্ত করিলে 
তাহাদের জীবিকাসমস্যারও কতকট সমাধান হয় । একেবারে 
নৃতন করিয়া 'এতগুলি বিদ্যালয় স্থাপন অত্যন্ত ব্য়সাধ্য, এবং 
খুব তাড়াতাড়ি করিয়া উঠা সম্ভবপর মনে হয় না। তাই 
একট কথা আমার মনে হইতেছে । আপনাদের অবগতির 
জন্য তাহা নিবেদন করি । 

জনসাধারণে ও সরকারে মিলিয়া ভাল ভাল কেন্দ্রে 
যতগুলি নৃতন বিদ্যালয় স্থাপন করিতে পারেন করুন; কিন্তু 
তদ্বতীত, পশ্চিমবঙ্গে এখনই ষে প্রায় হাজারখানেক হাই- 
স্কুল রহিয়াছে, তাহাদেরই সঙ্গে বন্দোবস্ত করিয়া সকালে 
ছুপুরে সময়-ব্যবস্থা (বা 521) করিয়া, তথায় শরণার্থী 
শিক্ষকদিগকে এই নূতন শাখা-বিগ্ভালয়গুলিতে নিযুক্ত করিবার 
ব্যবস্থা করিলে স্বল্পব্যয়ে এবং অল্পলময়ের মধ্যেই শরণাগত 
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদিগের সমস্যার যুগপৎ অনেকট। সমাধান 


২৪৩ 


ভব্রুণিম' 


হইতে পারে । এই প্রস্তাবকে কাধ্যে পরিণত ক'রলে, সরকারের 
0151921581] প্রচেষ্টাও বহুল পরিমাণে ফলবতী হইবে ; কারণ 
পশ্চিম বাঙ্গালার বিভিন্ন জেলার সদরে, মহকুম1-কেন্দে ও 
গ্রামদেশে এই সমস্ত বিদ্ভালয়গ্চলি অবস্থিত । যে সমস্ত লক্ষ 
লক্ষ বাস্ভহার। পরিবার পূর্ববঙ্গ হইতে আসিতেছে, তাহাদিগকে 
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সহরে ও গ্রামে বসাইতে পারিলে এই 
প্রস্তাব কাধ্যে পরিণত করা যাইতে পারে । এই ভাবে শুধু 
কলিকাতা মহানগরীতে কেন্দ্রীভূত না করিয়া পশ্চিমবঙ্গের 
সর্ধবত্র ভূমির, জীবিকার ও বসবাসের ব্যবস্থা যদি সরকারী 
প্রচেষ্ট। দ্বারা সম্ভব হয়, তাহা হইলে শরণার্থী পূর্বববঙ্গবাসীর 
আশ্রয়দান ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার একট! পাকাপাকি ব্যবস্থা হয়, এবং 
সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদিগের জীবিক। ও শিক্ষালাভেরও 
একট স্ুবন্দোবস্ত হয় । হাইস্কুল সম্বন্ধে যাহ। বলিলাম, মাইনর 
ও প্রাইমারী স্কুল সন্বন্ধেও সেই কথাই প্রযোজ্য । পশ্চিমবঙ্গে 
বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বিদ্ভালয়গুলিতেই একটা নৃতন শাখা 
স্থাপন করিবার এই যে প্রস্তাব, ভরসা করি আপনারা সকলে 
এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্ভালয় ও সরকারী শিক্ষা-বিভাগের 
কর্তৃপক্ষগণ সন্দয়তার সহিত তাহ বিবেচন। করিয়। দেখিবেন । 
পশ্চিমবঙ্গে সমস্যাটি যে আকারে দেখা দিয়াছে, এই গেল 
তাহার সমাধানের একটা ইঙ্জিত। 

আর পূর্ববঙ্গের সমস্যার কথা? সেখানে ত বলিতে 
প্রেলে শিক্ষা-ব্যবস্থা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান একেবারে ভাঙ্গিয়াই 


২৪৪ 


ছিল-বঢঙ্গে শিক্ষা-সন্ষট 


পড়িয়াছে-বিশেতঃ হিন্দু অধিবাসীদের পক্ষে । কাধ্যতঃ 
একেবারে ০০119759 বলিলেই হয়। তদ্বিষয়ে আপনাদের 
শিক্ষক-সমিতি বর্তমান রাষ্ট্রনৈতিক পরিবেশে বিশেষ যে কিছু 
করিয়া উঠিতে পারিবেন এমন ভরসা করা শক্ত । কারণ 
অবস্থার চাপে আপনাদের কন্মের পরিধি ক্রমশঃই বুল 
পরিমাণে পশ্চিমবঙ্গের ভিতরেই সীমাবদ্ধ হইয়া আসিতেছে ॥ 
আমর শুধু এখানে পশ্চিমবজে বসিয়া এইটুকুই কামন! 
করিতে পারি যে হিন্দ-সমাজের ষে অংশ এখনও পূর্বববঙ্গে 
রহিয়াছেন,তাহারা যেন যথাসাধ্য চেষ্টা করেন তাহাদের নষ্টপ্রায় 
মনোবল পুনরায় সংহত করিতে, যাহাতে নিতান্ত প্রতিকূল 
অবস্থার ভিতরেও তাহারা সসম্মানে নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতি- 
স্বাতন্ত্া বজায় রাখিতে পারেন । 

দেশ-বিভাগ-ঘটিত সমস্যা ও শরণাগত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী- 
দিগের ছুরবস্থ। সম্বন্ধে আলোচনা কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হইয়া গেল, 
অপরাধ মাঁজ্ছনা করিবেন । সমস্যার গুরুত্ব বিধায় ও ছবরবস্থার 
বাপকত। বিধায় ভরস। করি আপনারা আমার ক্রটি 
লইবেন না । 

কিন্তু হঠাৎ দেশের উপর আপতিত এই উৎকট সমস্যা 
ছাড়াও আমাদের দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার সম্বন্ধে অনেক কিছু 
ভাবিবার আছে । বহুদিন হইতেই এই সব বিষয়ে আন্দোলন- 
আলোচন। চলিতেছে ; উন্নতি বিশেষ কিছুই পরিলক্ষিত হয় 
নাই ; বরঞ্চ অনেক বিষয়ে যথেষ্ট অবনতি ঘটিয়াছে। বিশেষ 


২৪৫ 


ভল্লনুলিচ্সা। 


আক্ষেপের ও লজ্জার বিষয় এই যে প্রায় তিন বৎসর হইল 
আমাদের দেশের শাসনতন্ত্র বিদেশী প্রভাবযুক্ত হইলেও, এবং 
আমাদের স্বদেশীয়গণদ্বার। রাষ্ট্রযন্্র পরিচালিত হইতে থাকিলেও, 
শিক্ষা-বিষয়ে যে পরিমাণ দরদ, দূরদৃষ্টি ও ন্যায়নিষ্ঠা আশা কর! 
গিয়াছিল কর্তপক্ষগণের নিকট হইতে, তাহার বিশেষ কিছুই 
পাওয়া যায় নাই। 

তাছাড়া, নৈতিক আদর্শের দিক হইতে দেখিতে গেলে, বিগত 
বৎসরে বাঙ্গালার শ্রেষ্ঠ বিদ্া প্রতিষ্ঠান যে কলিকাত। বিশ্ববিদ্ভালয়, 
তাহার বিবিধ বাপারে যে সব গলদ ও ছুর্নীতি জনসাধারণের 
সমক্ষে উদঘাটিত হইয়াছে, তাহাতে শিক্ষিত বাঙ্গালীমাত্রেই 
লজ্জায় অধোবদন হইয়াছেন ।. এতৎসম্পর্কে কমিটির পর 
কমিটি নিযুক্ত হইয়াছে, আলোচনার বাদ-বিতগ্ারও অন্ত নাই, 
অথচ এযাবৎ কোন প্রতিকার-ব্যবস্থা' ত দূরের কথা, অন্থুসন্ধান 
কমিটির বিবরণ ব। রিপোর্ট পর্যন্ত সাধারণ্যে প্রকাশের কোন 
ব্যবস্থা হয় নাই। গভীর লজ্জা ও পরিতাপের কথা৷ 
ছাত্রসমাজের উচ্ছ.জ্ঘলতা ও ছুর্নমাতির কথা ত আমরা অহরহঃই 
শুনিতে পাই : কথাটা অলীক নহে, পরস্ত বহুল পরিমাণে 
সত্য ও সর্ববথ। নিন্দনীয়, সন্দেহ নাই । কিন্তু প্রাচীন শাস্ত্রবাকা 
ত ভুলিলে চলিবে না--“শ্রদ্ধাবান্‌ লভতে জ্ঞানং”-_ শ্রদ্ধাই 
জ্ঞানলাভের উপায় । কিন্তু যদি শিক্ষিত-সমাজের শীর্ষস্থানীয় 
ব্যক্তিবর্গের কাধ্যকলাপে তাহাদের প্রতি শ্রদ্ধাই ছাত্রসমাজ 
হারাইয়। ফেলে, তবে ছাত্র-সমাজের চারিত্রিক উন্নতি ও প্রকৃত 


২৪৬ 


ছিল-বতঙ্গে শিক্ষা-সম্ক্ট 


জ্ঞানার্জনের সম্ভাবনা আর থাকে কোথায়? শিক্ষকদিগের, 
বিশ্ববিচ্ভালয় ও শিক্ষা-বিভাগের সহিত সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তি- 
দিগের, দায়িত্ব গুরুতর : সে বিষয়ে তাহাদিগকে সচেতন হইতে 
হইবে। মনে রাখিতে হইবে, “যদ যদাচরতি শ্রেষ্ঠঃ 
তত্তদেবেতরো জন$১? “আপনি আচরি ধম্ম অপরে শিখাও” 
প্রভৃতি আমাদের দেশ-প্রচলিত উপদেশগুলি ফাকা কথা। নহে । 
বস্ততঃ এই সমস্ত বাণীর সত্যত ও সার্থকতা শাশ্বত ও সনাতন । 
ইহাদের উপরই সমাজ-কল্যাণ নির্ভর করে। ভরসা করি 
সমাজপতিগণ এই শাশ্বত উপদেশ বিস্বৃত হইবেন না| 

তারপর, শিক্ষক-সমাজের প্রতি সরকারী কর্তৃপক্ষের পরম 
ওদাসীন্যের কথা । বক্তৃতার সময়ে আমর! শিক্ষকের মহনীয় 
আদর্শ সম্বন্ধে পঞ্চমুখ হই ; কথাটাও মিথ্যা নহে; আদর্শ 
বাস্তবিকই মহৎ । কিন্ত শিক্ষককে যদি সেই আদর্শ অন্থুসারে 
জীবনযাপন করিতে হয়, তবে অন্ততঃ তাহার জীবনরক্ষা' হইতে 
পারে এমন ব্যবস্থা ত সমাজ ও রাষ্ট্রের করিতেই হইবে । জীবনই 
যদি দুর্বহ হইয়া উঠিল, জীবনযাপনই যদি ছুঃসাধ্য হইয়া উঠিল, 
প্রাণ রাখিতেই যদি প্রাণান্ত হইল, তাহ! হইলে আদর্শ 
অনুসরণের আর অবকাশ রহিল কোথায় ? একটা গল্প মনে 
পড়িল। এক সভাতে জনৈক বক্তা আধ্যাত্মিক ধরণের বক্তৃতা 
করিতে করিতে শ্রোতাঁদিগকে লক্ষ্য করিয়া গম্ভীরভাবে বলিলেন, 
1121 0095 1500 1152 705 10128 ৪10172 ; একজন শ্রোতা 
তছুত্তরে বলিয়া উঠিলেন, ২০৪, 1) 91509 12001125 00060০1 | 


২৪৭ 


ভক্ষণিম। 


গল্প টতে যথেষ্ট শিক্ষার বিষয় আছে । আমাদের এই বাঙ্গালাদেশে 
07659. 2220. 0065: এখন আল্নাক্কারের স্বপ্নবিলাস মাত্র, 
সামান্য ডাল-ভাতের সংস্থান করাই শিক্ষকের পক্ষে অসাধ্য 
হইয়া পড়িয়াছে। ১৯৩৯ সনের অর্থাৎ মহা-সমর-পূর্বব 
বৎসরের দ্রব্যমূল্য-মানকে ১০০ ধরিয়া লইয়া অর্থবিদগণের 
নির্ণীত বর্তমান প্রব্যমূল্যের 1100 17111071021 বা স্চকসংখ্য! 
দাড়াইয়াছে ৪০০-র কাছাকাছি, অর্থাৎ চতুগণ, আর যদি 
১৯০০ সালের দ্রবামুলা-মান ধর। যায়, তাহা হইলে বোধ করি 
বর্তমান ত্রব্যমূল্য দাড়াইবে চতুদ্দঘশগ্চণ। সুতরাং ১৯০০ সনে 
বদি কোন শিক্ষক বেতন পাইতেন ৫০২ টাক! (এবং অনেকেই 
তাহা পাইতেন ), দ্রব্যক্রয়-শক্তি হিসাবে তাহার বেতনের মূল্য 
বন্তমানের ৭০০ টাকার সমান । স্কুলের কোন শিক্ষক আজ 
৭০০২ টাকা বেতন পাইতে পারেন, ইহা তাহার কল্পনারও 
অতীত । বর্ধমান বাজারেও হাইস্কুল শিক্ষকের গড়ে মাসিক 
বেতন বোধ করি ৭০২ টাকার অধিক হইবে নী, অর্থাৎ ১৯০০ 
সনের ৫২ টাক! বেতনের সমাঁন। ইহার উপরে আর মন্তব্য 
নিশ্্রয়োজন । 

শিক্ষকদিগের এই অবর্ণনীয় দুরবস্থা ও অর্থ-সঙ্কটের বিষয়ে 
বহু আলোচনা হইয়াছে ; আপনাদের সনিতির পক্ষ হইতেও 
যথেষ্ট আন্দোলন হইয়াছে ; কর্তপক্ষগণের নিকট অনেক দরবার 
হইয়াছে, অনেক ৭6006800 গিয়াছে ; কিন্তু পরিতাপের 
বিষয় যে আড়াই-হাজারী তিন-হাজারী মন্ত্রী মন্সবদারগণের 


২৪৮ 


ছিল ঢঙে শিক্ষা-সহ্কঃট 


নিকট হইতে মৌখিক কিছু কিছু আশ্বাসবাণী ব্যতীত বিশেষ 
কিছুই স্বফল পাওয়া যায় নাই। শিক্ষা-বিষয়ে ও শিক্ষক 
সম্পর্কে সরকারী ওঁদাসীন্ঠ ও কার্পণ্য ত এই প্রকার; অথচ 
নানাবিধ বিলাসব্যসনে পোষাঁকী আভম্বরে সরকারী বদান্যতার 
অন্ত নাই। মহা-চীন হইতে পেরু পধ্যস্ত নানা দেশ-বিদেশে 
ছাপ্পান্ন দফা ভারতীয় রাজদূতাবাস বসিয়া গিয়াছে ; কোটি 
কোটি সুদ্রা ব্যয়ে সেই সব দেশে রাজসিক ধরণে বিভিন্ন প্রাসাদ 
ক্রয় কর! হইয়াছে ; তদনুপাতী বেশ-ভূষা, সাজ-সরঙ্জাম, যান- 
বাহন প্রভৃতির জন্যও বরাদ্দের সীম নাই। কমিটি, কমিশন, 
ডেলিগেশন প্রভৃতিরও অবধি নাই। প্রজাসাধারণের ব্যয়ে 
বিমানযোগে মন্ত্রী ও প্রতিনিধিদিগের বিশ্ববিহার ত লাগিয়াই 
আছে; এমন অবস্থা হইয়াছে যে একটা প্রবচনই দাঁড়াইয়া! 
গিয়াছে] 01 005 (0ড৮010012061)6 0 10019. 2100 5০০ 
076 40114 ! কলিকাতার তলদেশ খনন করিয়া নল-মার্গ 
প্রবেশ করান যায় কি না, বঙ্গোপসাগরে গভীর জলের মাছ 
ধরিবার ব্যবস্থা করা যায় কি না, এই সব বিষয়ে গবেষণা 
করিবার জন্য ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞত। সঞ্চয় করিবার নিমিত্ত 
কোন মন্ত্রী চলিলেন প্যারিসের 01927-৬0117-4, কোন 
কর্মচারী উড়িলেন ডেন্মার্কে, ইত্যাদি । রাজদসিক আড়ম্বরের 
অন্ত নাই। কিন্তু বিগ্ভালয়ের দরিদ্র শিক্ষকদের বেলায় 
সরকারের প্রসারিত অঙ্গুলি একেবারে সম্কুচিত হইয়৷ যায়। 
[092175559 4১1109/91)০5 বরাদ্দ হয় মবলগ মাসিক ৫২ টাকা। 


২৪৯ 


ভল্রণিস' 


অর্থাৎ পঞ্চ তঙ্কা, বা ৮০ আনা বা ৩২০ পয়সা; সঙ্গে সঙ্গে 
আরও কফতোয়। জারী হয় যে, কোন স্কুল-কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা ও 
সামর্থ্য থাকিলেও ১০২ টাকার বেশী 1.4. দিতে পারিবেন 
ন। ( বলাই বাহুল্য, উক্ত ১০২ টাকার মধ্যে মহামান্য সরকার 
বাহাছর প্রদত্ত ৫২ টাকাও ধর! হইবে ), এবং *্য্দি কোন স্কুল- 
কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত দয়াপরবশ হইয়া এই আইন অমান্য করে 
এবং একুনে ১০২ টাকাঁর অধিক [).4৯. দিয়া ফেলে, তবে সেই 
বে-আদবীর ফলে সেই স্কুলের £181)0-11)-810 বা সরকারী 
সাহায্য বন্ধ হঈয়! যাইতে পারে । হাল ১৯৫০ জনে প্রচারিত 
সরকারী £1212-11)-510 101655-এর অনুশাসন এবম্প্রকার । 
বেতনাদি সম্বন্ধেও যে স্কেল সরকার খাঁড়া করিয়াছেন তাহাও 
এইরূপ হৃদয়হীন কুপণতারই পরিচায়ক । এ ত গেল অর্থের 
দিক্‌ দিয়া । 

শিক্ষকের অধিকারের বিষয়েও আলোচন। করা যাউক। 
শিক্ষাসংস্কার সম্পর্কে কমিশন বসিয়াছে নেহাত কম নহে--এই 
সেদিনও রাধাকুষ্ণন্‌ মহাশয়ের সভাপতিতে এক কমিশন 
বসিয়াছিল, এবং তাহার রিপোর্টও যথারীতি প্রকাশিত 
হইয়াছে । ভাল ভাল 32171756176 তাহাতে পাওয়া যায়। 
তেত্রিশ বৎসর পূর্বে যে স্তাডলার কমিশন বসিয়াছিল, 
তাহাতেও ভাল ভাল আদর্শ পরিকল্পনার কোন ক্রটি ছিল না; 
কিন্তসে কমিশনের বড় বড় তের ভল্যুম পোকাতেই কাটিতেছে। 
রাধাকৃষ্ণন্‌ কমিশনের ভল্যুমগ্চলির কি অবস্থা হইবে, তাহাও 


২৫০ 


ছিল-চ্্গ শিক্ষা-সম্কট 

সরকারী বিধাতারাই বলিতে পারেন। এ ছাড়া সার্জেন্ট 
সাহেবের রিপোর্টও বছ দিন পুর্ব বাহির হইয়া এতদিনে 
পুরাতন হইয়া গিয়াছে । কিন্তু এই সকল পরিশ্রমই নেহাৎ 
গ্ীতোক্ত নিষ্কাম কন্ম ; সফল করা বা কার্যে পরিণত করা৷ সহজ 
নহে: ইহার মুখ্য কারণ হইল “মুদ্রা-দৌষ”, অর্থাৎ চিরন্তন 
অর্থাভাব_ অবশ্ঠ শিক্ষা-বিষয়ে | 

শিক্ষকের অধিকারের কথ বলিতেছিলাম ৷ শিক্ষা-বিষয়ক 
যে সমস্ত আইন-কান্ুন-বিধি প্রবত্তিত হয়, তাহা দৃষ্টে ইহাই 
অন্কমিত হয় যে শিক্ষা-বিষয়ে কথ! বলিতে, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত 
করিতে, শিক্ষা-পরিষদ্‌ প্রভৃতিতে যোগদান করিতে আর সকলেরই 
অধিকার আছে-_মোক্তারের আছে, ডাক্তারের আছে, ব্যবসা- 
দারের আছে, সরকারী কর্মচারীর ত কথাই নাই-_নাই কেবল 
শিক্ষকদিগের । উদাহরণ হাতের কাছেই আছে। সম্প্রতি 
পশ্চিমবঙ্গে যে 5200739915 [7:00০80101 4০ পাস হইয়াছে, 
যাহ দ্বারা যাবতীয় স্কুল ও স্কুলের শিক্ষা-ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ 
করা হইবে, তাহাতে মূল যে বোর্ড স্থাপিত হইবে, 
তাহাতে সভ্য-সংখ্যা মোট হইবে ৪৪ জন, তন্মধ্যে স্কুলের 
শিক্ষকগণের মধ্য হইতে প্রতিনিধি থাকিবেন কয় জন 
আন্দাজ করিতে পারেন? ৫ জন পুরুষ শিক্ষক ও ২ জন 
শিক্ষযিত্রী--একুনে মোট ৭ জন। স্বদেশী সরকারের এই 
সব বিধি-ব্যবন্থা' দৃষ্টে ধৈর্্যাবলম্বনপূর্বক আলোচনাদি করাই 
কঠিন হইয়া পড়ে । 


২৫১ 


তল্রণশিস! 


তারপরে, পাঠ্যনিব্বাচন বা সিলেবাস সম্বন্ধে । এ বিষয়ে 
কর্তৃপক্ষের কেহ যে অভিনিবেশপূর্ববক কদাপি চিন্তা করেন, 
তাহার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সিলেবাস সম্বন্ধে হুই 
প্রকার কম্মধারার পরিচয় পাওয়া যায়। হঠাৎ হয়ত একজন 
পগ্ডিতম্মন্ত ব্যক্তি এবিষয়ে কর্ণধার হইয়। বসিলেন, তিনি স্থির 
করিলেন, একট “নতুন কিছু* অবশ্যই করিতে হইবে ; সুতরাং 
তিনি পুর্বাপর বিশেষ বিবেচনা না করিয়াই অনতিবিলম্বে 
একট “নতুন কিছু” করিয়াই বসিলেন ; নিরুপায় অসহায় ছাত্র 
ও শিক্ষকবুন্দ ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়িতে লাগিলেন ; সুতরাং 
কিছুদিন পরে সেই “নতুন কিছু” নাকচ হইয়া গেল । এই হইল 
এক প্রকার কন্মধারা । অপর এক কন্মধারা হইল প্রাতঃম্মরণীয় 
নিউটন সাহেবের 1:56 7৪৬ 0£ 1%00101-এর কিংবা [8৬ 
0 [7)27019-র অনুযায়ী £ অর্থাৎ যাহা! আছে তাহাই থাকুক, 
বিশেষ উচ্চবাচা বা সোরগোল ব! ধাক্কাধাক্কি না হইলে কে 
আবার অদলবদল ককুর? এই দ্বিবিধ ধারার কোনটিতেই 
মস্তিষ্ষ পরিচালনার বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায় না। সুতরাং 
'অচলায়তন অচলই থাকিয়া যায় । 

যাহা হউক, এ বিবয়ে আর পুঁথি বাড়াইতে চাহি না। 
আপনারা অসহায় নিরুপায় শিক্ষকগণের প্রতিনিধি হইলেও 
একত্র হইয়া একটা সভায় যখন সমবেত হইয়াছেন, তখন 
আপনাদের ধৈধ্যেরও একটা সীমা আছে। আমি সেই 
সীম| লঙ্ঘন করিতে ভরসা! করি না। আমার শুধু আপনাদের 


৫২. 


ছিলস-ব্বত্গে শিক্ষা সম্কট 


নিকট এই নিবেদন ও এই প্রার্থনা যে, অতীব নৈরাশ্টজনক 
ও প্রতিকূল অবস্থার আবেষ্টনী সত্বেও আপনার! বিশ্বাস ও 
সাহস হারাইবেন না। আপনারা অনেক সম্য করিয়াছেন, 
দেশের অসীম ছর্গতি হইয়াছে, ছুঃসহ সঙ্কটের মধ্যে আমরা 
সকলে পড়িয়াছি-__কিস্ত ভরসা আছে পরম করুণাময় বিধাতা 
একদিন মুখ তুলিয়। চাহিবেন, এবং দেশভক্ত কবি দ্বিজেন্দ্রলালের 
উজ্জ্বল ভবিষ্যদ্বাণী অচিরে সফল হইবে £ 

যদিও ম! তোর দিব্য আলোকে 

ঘিরে আছে আজি আধার ঘোর, 
কেটে যাবে মেঘ, নবীন গরিম। 


ভাতিবে আবার ললাটে তোর । 
আমরা ঘৃচাব মা তোর কালিমা__ 


মানব আমরা, নহি ত মেষ । 
দেবী আমার, সাধনা আমার, 
স্বর্গ আমার, আমার দেশ । 


বন্দে মাতরম্‌ 


৩১শে আবাঢ, ১৩৫৭ । 


্বিতুম্ু-্লু ছিব 


বিবেক-বুদ্ধি 


মনে পড়ে থিয়োডোর পাক্কারের জীবনীতে পড়িয়াছিলাম 
যে, পার্ক:র যখন বালক মাত্র, তখন একদিন তিনি একটি কর্ম 
দেখিতে পাইয়া তাহাকে বধ করিতে উদ্যত হইলে, হঠাৎ তাহার 
হৃদয়ের মধ্য হইতে কে যেন বলিয়ী উঠিল, “কি কর, কি কর, 
উহাকে মারিও না,” এবং তিনিও সে বাক্য অনহেলা করিতে 
পারিলেন না। তিনি বাটীতে ফিরিয়া! জননীকে জিজ্ঞাসা 
করিলেন, “মা” আমাকে ওরূপ করিয়া কে নিষেধ করিল ?” 


জননী বলিলেন, “উহার নাম বিবেক, সর্বদা উহার কথ। 
শুনিয়। চলিও 1” 


২৫৭ 
১৭ 


ভক্মণিসা। 


এই আখ্যায়িকাটিতে ষে বিবেকের কথা উল্লেখ করা হইল, 
সাধারণ ধর্মশাস্ত্রে ও নীতিজ্ঞানমূলক গ্রন্থাদিতে ইহাকে খুব 
উচ্চস্থান প্রদান কর হয়। সাধারণতঃ বিবেক-বুদ্ধি সম্বন্ধে 
যেরূপ ধারণ! প্রচলিত আছে, তাহ কতকট। এই প্রকার 
যে, সংসারে নান! প্রলোভন নানা বিপদের মধ্যে মান্থৃষের 
যে চিত্ববৃত্তি তাহাকে সর্ধদ সতপথে পরিচালিত করে, 
ধর্মের দিকে উৎসাহিত করে, তাহাই বিবেক । বিবেক কখনও 
মিথ্যার অধন্মের অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয় না, স্লতরাং সব সময়েই 
বিবেকান্থমোদিত পথে বিচরণ করাই শ্রেরঃ ও যুক্তিযুক্ত। 
সংসার-সমুদ্রে গন্তব্য পথ নির্ধারণ পক্ষে বিবেকই অন্রান্ত 
দিডনির্ণায়ক যন্ত্। 

একথা নিঃসন্দেহ যে, যদি এই প্রকার কোন আশ্চর্য 
ক্ষমত। মানুষের অন্তরে থাকিয়। থাকে, তবে মানুষ ভাগাবান্‌। 
কিন্ত প্রশ্ন এই *যে, এই রকম কোন ক্ষমত। মান্ুষের বাস্তবিক 
আছে কিনা, বিবেক বলিয়। কোন অভ্রান্ত বুদ্ধি মানুষের চিত্তবৃত্তির 
মধ্যে স্থান পায় কিনা ? হঠাৎ শুনিয়া মনে হইতে পারে যে, 
এ প্রশ্ন নিরর্থক ; কারণ, আমর বিবেকের বাণীর কথা এতই 
অহরহ শুনিয়া আসিতেছি যেঃ বিবেকের অস্তিত্বে সন্দেহ করা 
পরম ছুঃসাহসের কথা বলিয়া মনে হয়। কিন্ত প্রকৃত পক্ষে 
প্রশ্নটি মোটেই অলীক অথবা কাল্পনিক নহে । মানুষ দেশ-কাল- 
পাত্র নিবিবশেষে সমস্ত অবস্থায় সকল বিষয়ে নৈতিক বিচার 
ও ন্যায়ান্যায়ের সমাধান বিশুদ্ধবূপে এবং অভ্রানস্তরূপে করিতে 


৫৮ 


নিন্বেক-বুদ্ি 

পারে কিনা, তাহ। গুরুতর সন্দেহের বিষয় । এমন কি যদি 
ধীর ভাবে বিচার ও আলোচন। করিয়া দেখি, তবে বরং ইহাই 
আমাদের চক্ষে পড়ে বে কালভেদে দেশভেদে ও অবস্থাভেদে 
মান্থুবের নৈতিক বুদ্ধির গুরুতর তারতম্য ঘটিয়া থাকে । 

বিবেক-বুদ্ধিকে আমরা এই জন্যই উচ্চস্থান দিয়া থাকি যে 
তদ্দারা আমরা নৈতিক বিচার, সত্য-মিথ্য। নিদ্ধারণ, ন্যায়ান্তায় 
নিরূপণ নিভূল রূপে করিতে পারি । কোন একট সামাজিক 
রীতি ভাল কি মন্দ, কোন একট? কাধ্য করণীয় অথব। পরিহার্্য, 
এই মস্ত বিচার আমরা ঘাহ। দ্বার করিয়া থাকি, তাহারই নাম 
দিঘ। থাকি বিবেক | কিন্তু মানুষ এই প্রকার বিচার সব সময়ে 
সব অবস্থাতে একই রকমে করে না। যদি বিভিন্ন সমাজের বিষয় 
আলোচন! করি-__-এমন কি, একই সমাজের বিভিন্ন অবস্থার 
প্রতি দৃষ্টিপাত কবি-_ তাহ হইলে দেখিতে পাই ঘষে একই 
বিষয়ে বিভিন্ন সমাজে ও একই সমাজে বিভিন্ন অবস্থায়, মতামত 
কতই বিভিন্ন। যে আচাঁর-পদ্ধতি এক সমাজ নীতি ও ধন্ম 
বিগহিত বলিয়া মনে করিতেছে, সেই একই আঁচার-পদ্ধতিতে 
অন্য এক সমাজ কোন দোষ দেখিতে পাইতেছে না । দৃষ্টান্তের 
অভাব নাই । ধরা ঘাউক বিবাহের পদ্ধতি । কোন সমাজ বাল্য- 
বিবাহ সমর্থন করে, কোন সমাজ ইহাকে বিষবৎ ত্যাগ করে » 
কোন সমাজ অন্থুরাগ-মূলক বিবাহকে খুব উচ্চস্থান দেয়, কোন 
সমাজে উহাকে ছুর্নীতিরই নামান্তর বলিয়া ধরা হয়; কোন 
দেশে বিধবাদের বিবাহ অবাধে প্রচলিত, অপর দেশে বিধবা-বিবাহ 


১৫৯ 


ভল্রভণিসা। 


সমাজের চক্ষে নিতান্ত হেয় এবং ঘ্বুন্য। এই মত-বৈবম্যের 
ভিতরে কোন্টাকে ঠিক মত বলিয়! গ্রহণ করিব? অবশ্য যথার্থ 
ধান্সিক পুরুব--ধাহাদিগকে আমরা বিবেকী পুরুষ বলিয়া 
নিব্বিবাদে গ্রহণ করিতে পারি--ঠাহাঁরা সব দেশেই অছেন। 
কিন্তু তাহাদের বিবেক এই সমস্ত প্রথা-পন্ধতি বিষয়ে কি 
উপদেশ দেয়? উপদেশ যাহাই হউক তাহাতে এইকমত্য 
নাই, ইহা আমরা নিঃসন্দেহে বলিতে পারি । 

কথা উঠিতে পারে যে, যে দৃষ্টান্তগুলি উপরে প্রদন্ত হইল 
অথবা সহজে এ প্রকার যে সব মত-বৈবমোর দরষ্টাম্ত দেওয়। 
যাইতে পালে, তাহা বাস্তবিক ধন্ম-জগক্তর ভিতরের কথা নক ; 
এগুলি কতক প্রমাণে বাুপুরর. জিনিষ, স্ুভরাং এ বিষদুয় 
যথার্থ বিবেকবান লোকের ভিতরে ও মতান্তর হওয়া সম্ভব : কিন্ত 
এমন কতকগুলি সত্য আছে, এমন কতকগুলি নীত আছে, 
ঘাহাদের উল্লেখমাত্রেই সকল লোকে এক বাক্যে স্বীকার করিরা 
থাকে, হী, ইহাই ঠিক বটে, এবং এ.সন্বন্ধে কোন ছুই মত উঠিতেই 
পারে না। এই বিবয়েও একটু আলোচন প্রর়োজন। যদি ধরিয়া 
লই যে, নৈতিক জগতে কতকগুলি অবিসংবাদিত বিঘয় আছে, 
তাহা হইলেও আনরা বিবেককে সহজে বাচাইতে পারি না। 
কারণ একথা ঠিক যে,এ কয়েকট।অবিসংবাদিত বিবয় অবলম্বন 
করিয়াই মানব-সমাজের যাবতীয় ক্রিয়'শকলাপ অনুষ্ঠিত 
হইতেছে না। সুতরাং 'এমন অনেক বিষয় আমাদের প্রতাহ 
বিচার করিতে হয়, যাহ! অবিসংবাদিতের কোঠায় পড়ে না| 


২৬০ 


বিঢ্বেক-বুদ্ধি 


কাজেই সেগুলি সম্বন্ধে বিভিন্ন বিবেকী লোকেরও বিভিন্ন মত 
হওয়া সম্ভব । বিবেকের অন্রাস্ততা সুতরাং রহিল কোথায় ? 

দ্বিতীয়তঃ, কোন অবিসংবাদিত নৈতিক সত্য আছে কিনা, 
সেটাও তর্কের নিষয়। ছুই একট? দৃষ্টান্ত দেওয়া যাউক। 
মিথ্যাভাষণ দূবণীয়, নরহত্য। মহাপাপ, পরম্বাপহরণ অন্যায়-_-এই 
সব নীতিকে সর্ধবাদিলম্মত বলিয়া আমরা একরকম নেট মুটি 
ধরিয়া লইতে পারি। শাদ। কথাগুলি এইভাবে লিপিবদ্ধ 
করিলে ইহাতে বিশেষ মতভেদও হইবে না । কিন্তু দেশ-কাল- 
পাত্রাভিদে অবস্থার বিপর্যায়ে এই সকল নীতিতেও সকলে সম্মতি 
প্রদান করেন কিনা সন্দেহের বিষয় । নর্হভা। যে মহাপাপ, 
আজ্িকালিকার সভ্য সমাজে মোটামুটি সব্বত্তই সেকথা স্বীকৃত 
তয়; কিন্তু যখন এক সমাজের সহিভ অন্য সমাজের স ঘৰ 
উপস্থিত হয়, জাতিতে জাতিতে সংগ্রাম বাধিয়া উদ্ে, তখন 
নরহত্যা সম্বন্ধে লোকের বিবেক কি বলে ১ তখন কি শক্রহস্ছ। 
লোক-চক্ষে ঘ্বণিত হয়, অথবং সন'জে খ্যাতিলাভ করে ? 
নিজের মনেও কি সে অভ্রান্ত লজ্জিত থাকে,অথবা দেশের শত্রুর 
নিধন-সাধনে সমর্থ হইয়াছে কলিয়। আত্ম প্রসাদ অনুভব করে ? 
সময়োপযোগী নীভিশাস্্ তখন ঘোষণা করিত থাকে, 
“আ(তভায়িবধে দোষে। নহি ভবতি কশ্চন |” 

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল তাহ!র “হাসির গানে *একস্থলে ব্যঙ্গ ক।রয়। 
বলিয়াছেন, “অমন অবস্থায় পড়লে সকলেরই মত বদলায় |” 
বাস্তবিকই বিবেক-বিভ্রটি অবস্থা! বিপধায়েই ঘটিয়া থাকে । এই 


২৬৯ 


ভক্রভ্ণিসা 


মাত্র যে দৃষ্টান্ত দিলাম, ইহা ত বর্তমান সভ্য মানব সমাজের 
নৈতিক বিচার-ব্যতিক্রমের একটি দৃ্টান্ত। বিভিন্ন যুগের সমাজের, 
বিভিন্ন স্তরের সমাজের মতামত আচার-ব্যবহার পধ্যালোচন। 
করিলে ব্যতিক্রম আরও স্পষ্টরূপে প্রতীত হইবে । সতীদাহ 
ভাল না মন্দ? এখন আমরা ইহাঁকে -মন্দই মনে করিয়া 
থাকি, কিন্তু বহু শতাব্দী ধরিয়া হিন্দ-সমাজের বিবেকের 
ইহা সম্পূর্ণ অনুমোদিত ছিল; এমন কি এখনও সতীধর্মের 
মাহাত্ম্য সম্বন্ধে ধাহারা অতিরিক্ত মাত্রায় জাগরূক, তাহার 
জ্বলন্ত অগ্িশিখায় সতীর স্বেচ্ছায় দেহ-তাঁগের ভিতরে 
সৌন্দধা ও মহিমাই দর্শন করিয়া থাকেন । নরবলি ভাল 
না মন্দ? এই প্রশ্ন করিতেও এখন আমরা শিহরিয়া! উঠি : 
কিন্তু ইহ! এক কাল প্রায় প্রত্যেক দেশে প্রতোক জাতির মধো 
ধন্মের অঙ্গরুদপ অনুষ্ঠিত হইত । সেকালের ও তত্তদ্দেশের 
বিবেক ইহার বিরুদ্ধবাদী ছিল নাঁ। দৃষ্টান্ত বাড়াইবার আর 
বোধ হয় প্রয়োজন নাই। দেশ কাল ও অবস্থা ভেদে নৈতিক 
বিচারের ব্যতিক্রম এতই সাধারণ এবং সব্ধদ। পরিদৃষ্ট 
হয় যে, এ বিষ্য়ে বেশী দৃষ্টি আকধণ কর বাহুল্য বলিয়াই 
মনে হয়। কিন্ত ইহাতে বিবেকের নিশ্চয়তা ও ভ্রান্তিহীনতা 
থাকে কোথায় ? 

বিবেকের ভ্রাস্তিহীনতা এবং নিশ্চয়তা যদি ন। থাকে, যদি 
বিবেকের বিচার অবস্থার তারতম্যের উপর নির্ভর করে, 
অন্থুরাগ ও বিরাগ দ্বারা আন্দোলিত হয়, সমাজের আবেষ্টনের 


২৬২ 


বিতেবক-নুদ্ধি 

দ্বার। নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে বিবেক বলিয়া একটা অপৌরুষেয়, 
অভ্রান্ত ও নিশ্চিত চিত্তবৃত্তির কল্পনা আমর খাড়। করি কেন? 
বস্ততঃ নিরবলম্ব নিরপেক্ষ অপরিরত্বনীয় নিশ্চিত বিবেক বাস্তবিকই 
এক অলীক কল্পন। মাত্র বলিয়া মনে হয় । 

তবে কি ইহাই আমাদের স্বীকার করিতে হইবে যে 
নৈতিক জীবনে যে অভিজ্ঞতা হইতে বিবেকের অস্ভিহ অনুমিত 
হইয়াছে, সে অভিজ্ঞতাও অলীক? পার্কারের যে গল্প এই 
প্রবন্ধের প্রারন্তে উল্লিখিত হইয়াছে, বাস্তবিকই কি আমাদের 
প্রত্যেকের নিজের জীবন হইতে এ প্রকার ঘটনার সাক্ষ্য দিতে 
পরি না? মানুষ যখন একটা কাজে প্রবৃত্ত হয়, তখন কি 
এ জাভীয় নান! প্রকার নিষেধ দ্বিধ। দ্বন্ব উখিত হয় না? 
এই সব অভিজ্ঞতার যাথাঞ্চয অস্বীকার করিলেও ত চলিবে না। 
এই সব প্রশ্ন, এই সব দ্বিধা, এই সব নিষেধ যদি সত্য সত্যই 
আমাদের মনে জাগে, তবে ইহার কারণ কি? 

ইভার কারণ এক কথায় বলিতে গেলে, সংস্কার । কোন 
জীবই নিরবলম্ব, আত্মস্থ, আবত্মপ্রাতিষ্ঠ নহে । সে এক বিরাট 
সমাজের অঙ্গীভূত-_-যে সমাজ তাহাকে/ক্রোড়ে ধারণ করিয়াছে, 
তাহার পিতপিতামহকে ক্রোড়ে ধারণ করিয়াছে, তাহার সমস্ত 
পুর্ধব-পুরুষকে আপনার আবেষ্টনীর'ভিতরে'বদ্ধিত করিয়াছে, 
আপনার ভাবধারায় তাহাদের মানস-শরীরকে পুষ্ট করিয়াছে । 
সেই 'ভাবের ও সেই আবঝেষ্টনের প্রভাব নবজাত জীবের শরীরে 
ও মনে নিহিত রহিয়াছে । তার পরে শিশু যখন বাড়িয়। 


২৬৩ 


তক্রণিম 


উঠিতে থাকে, তখনও ত সে সমাঙ্গকে এড়াইতে পারে না ; 
সমাজের আচার-বাবহার রীতি-নীতি শিল্প-সাহিতা তাহার 
মনকে এক বিশেষ ছচে গড়িয়া! তুলে; তাহার নৈতিক জ্ঞান 
ও সংস্কার সমাজের প্রচলিত সংস্কারের অন্ুরূপভাবেই মোটামুটি 
বিকশিত হইয়া উঠিতে থাকে । স্থুতরাং বিভিন্ন সমাজের ভিতরে 
প্রচলিত সংস্কার ও অবস্থা! যে পরিমাণে পৃথক, সেই সেই 
সমাজের বাক্তিগণের নৈতিক ধারণা ও বিবেক সেই 
পরিমাণেই পথক্‌। যে সমা্ত যে সনস্ত আচার-ব্যবহাঁরকে নিজের 
রক্ষা! ও পুষ্টির অনুকূল বলিয়া নিজের বহুকাল-সঞ্চিত অভিজ্ঞত। 
হইতে বুঝিতে পারে, সেই সমাজ সেই সমস্ত আচাঁর- 
ব্যবহারকেই অন্থমোদন এবং ধস্ম-সঙ্গত বলিয়া মনে করে । 
অনন্ত এমন কতকগুলি ব্যাপার আছে যাহ। প্রায় সকল 
সমাজেই তুলারূপে নিন্দিত হইয়া আসিতেছে-_যেমন নরহত্যা। 
মানব-জাতির শৈশব অবস্থর মানুষের সন'জ-বদ্ধন দৃঢ় ছিল না, 
একরকম ছিল ন। বলিলেই হয় । তন্মধ্যে বে সমস্ত মানব- 
মণ্ডলীর মধ্যে বেশী সন্ভাব ছিল, সেই সব নগুলী জীবন-যুদ্ধে 
অপরাপর মগ্লীকে পরাস্ত কারয়। জরী হইয়াছে এ জগতে 
টিকিয়া রহিরাছে। তাহার। দেখিল যে, তাহাদের নিজেদের 
মধ্যে পরস্পরের হত্যা যদি চলিতে থাকে, তবে তাহারা কখনই 
পার্শ্ববর্তী অন্যান্য মণ্ডলীর সহিত যুদ্ধ করিয়া টি'কির। থাকিতে 
পারিবে না। ম্ুতরাং সমাজের মধ্যে নরহত্যা। অত্যন্ত গুরুতর 
অপরুপ বলিয়। সাব্স্ত হইল । কিন্তু সমাজের বাহিরে নরহতা। 


২৬৪ 


বি০বিক-বুদ্ছি 


অর্থাৎ অন্য সমাজের লোককে হত্যা কর! কিছুমাত্র দুধণীয় মুন 
হইল ন!। অবশ্য ক্রমে সমাজের গণ্তীর প্রসার হওয়তে নরহতা। 
সম্বন্ধে প্রতিকূলতা ও ঘ্বণ! ক্রমেই বদ্ধমূল হইতে লাগিল, এবং 
নির্দোষ নরহত্যার গণ্তী ক্রমশঃই সন্ধীর্ণ হইতে লাগিল। কিন্ত 
এখনও নির্দোষ নরহত্যার ধারণ। যে লুপ্ত হইয়াছে তাহ] নহে_- 
বর্তমান সভ্য মানবের যুদ্ধ-বিগ্রহই তাহার প্রমাণ । সে বাহ হউক, 
মান্ুবের নৈতিক সংস্কার প্রধানতঃ পিতৃ-পরম্পরাঁগত সমাজ- 
প্রচলিত সংস্কারের ছায়। মাত্র । অবশ্য এই সক্কারও যে সব্বদাই 
একরপ অপরিবর্তশীয় স্থাণু হইর। বসিরা আছে তাহাও নহে । 
মান্ত্রষের অভিজ্ঞতার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এই সংস্কার সকলও 
উন্নত ও প্রসারিত, পরিবন্তিত ও পরিমাঞ্জিত হইয়া উঠিতেছে 
এবং অনন্থার আবেষ্টনীর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বুদ্ধ 
ও সংস্কার অভিব্ক্ত ও বিকশিত হইয়া উঠিতেছে বলিয়া 
মানুষ জগতের সংগ্রামে এখনও টি'কিরা আছে । 

এই সহজ এবং অজ্জিত, 1010116502৭ 2০0081190, 
উভয়বিধ সংস্কারের সমাবেশেই মানুষের নৈতিক জীবনের ভিন্তি। 
ইহার উপরে নির্ভর করিয়াই মানুষ তাহার যত প্রশ্নের সমাধান 
করিয়া থাকে । ন্যার-মন্যাঝু। উচিত-অন্ুচিত, ভাল-মন্দ 
প্রভৃতির মাপকাঠি এই সংস্কারেই নিহিত। ইহা বাতিরেকে 
কোন দৈবলব্ধ প্রত্যক্ষ 1800101৬ বিচার-প্রনালী নাই-_থাকিলে 
বিচার-প্রণালী সর্ধত্র সমান হইত । মান্ুৰ যখন কোন কাজে 
অগ্রসর হয়, তখন যদি তাহা এই সংস্কারের বিরোধী হয়, তবে 


২৬৫ 


তক্লাপিম। 


এই সংস্কারই নিষেধ-আজ্ঞা প্রচার করে, সংশয় আনয়ন করে, 
ঘ্বিধা-ঘ্বন্দের সৃষ্টি করে। ব্যক্তিগত সুখ-লাভের জন্য যখন 
লোকে চেষ্টিত হয়, তখন তাহার ভিতরের সামাজিক স্তীবটি 
হয়ত বাকিয়! বসে, হয়ত বলে, উহা করিও ন1। 

সামাজিক প্রয়োজনই মূলতঃ বিবেকের স্থষ্টিকর্তা হওয়ায় 
বিবেকের সঙ্গে আর একটি জিনিষের কতকট? সাদৃশ্য ও সাহচর্য্য 
দেখ! যায়। সে জিনিবটি লোকমত । অধিকাংশ স্থলেই 
বিবেক ও লোৌকমত অভিন্ন । ইহাই স্বাভাবিক । মানুষ যখন 
সমাজেরই সন্তান, তখন সমাজ-প্রচলিত মতামত ও তৎসমাজস্থ 
মানুষের বিবেক প্রায়ই পরস্পর পরস্পরের অন্ুবূপ : এবং 
বিবেকের দংশন এবং লোকনিন্দা১জনিত মন£গীড়া, ইহাদের 
ভিতরেও গুণগত অনেকট] সৌসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। অব্য 
একথা ত্বীকার্যা, এমন লোক আছেন, ধাহাদের বিবেক এতটা 
উন্নত যে লোকমত অগ্রাহা করিরা তাহার তাহাদের বিবেকান্ধু- 
মোদিত কাধ্য করিয়া সন্তুষ্ট থাকিতে পারেন । ইহার কারণ এই 
যে, তাহারা প্রচলিত সামাজিক সংস্কারকে তাহাদের নিজেদের 
যুক্তিবলে কতকটা অতিক্রম করিতে পারিয়াছেন। 

লোকনত এবং বিবেকের সাহচর্ধ ত প্রতিদিনই আমর! 
দেখিয়া থাকি । যে লোকের বিবেক-বুদ্ধি বিশেষ প্রথর নহে, সেও 
লোকের নিন্দার ভয়ে বল পরিমাণে মন্দ কাধ্য হইতে নিবৃত্ত 
থাকে এবং বিবেক-বুদ্ধি-সম্পন্ন ব্যক্তিও লোকমতের প্রাবল্য হইতে 
অনেকটা সাহায্য পাইয়। থাকেন॥ নিজের বিবেকের অনম্থমোঁদিত 


২৬৬ 


বিত্বেক বুদ্ধি 


কোন কাধ্য করিতে উদ্যত হইলে মনে যেমন একট খটক৷ 
উপস্থিত হয়, লোকমতের বিরুদ্ধে কাধ্য করিতে গেলেও 
সাধারণতঃ সেই রকমই দ্বিধা! উপস্থিত হয়; এবং এই ছুই 
দ্বিধার গুণগত বা! 009119055 বিশেষ কোন পার্থক্য নাই । 
এই জন্যই ইংরাজীতে একটা কথা আছে, 00250151902 
13 00০ 001521৮9015 21611721216 117 10011702 1020016- 
বিবেকই মানুষের চরিত্রের ভিতরে সংরক্ষণী বৃত্তি। নূতন 
কিছু করিতে গেলে, অনভ্যস্ত কিছু অনুষ্ঠান করিতে গেলে, 
অনধিকার কিছু চচ্চ। করিতে গেলে বিবেক আসিয়া বাধা 
দেয়। বাস্তবিক সেই বাধ! গ্রাহ্য কর উচিত কিনা, সেই 
দ্বিধার জন্য পিছাইয়! পড়া ঠিক কিনা, সেট! সব সময়ে 
ঠিক করিয়া বল। যায় না। যুক্তি দ্বার! বিচার করিয়া সে স্থলে 
কর্তব্য নিগ্ধারণ করিতে হয় । 

বিবেক যুক্তি নহে, প্রধানতঃ ভাব; 15890] নহে, 
£৪117)5--অবশ্য সেই £52]11175 বা ভাব বা সংস্কারের 
পশ্চাতে যথেষ্ট যুক্তি যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রহিয়াছে । কিন্তু 
মানুষের মনে যখন বিবেকের কোন বাণী উত্থিত হয়, তখন 
সেট! যুক্তির দোহাই দেয় না, সেট? মানুষের মনের ব্বতঃস্ফূর্ত 
প্রতিক্রিয়া । ভাব-প্রধান বলিয়াই বিবেক সনাতন-পথাবলম্বী, 
নৃতনকে সে বিশেষ পছন্দ করে না, বরঞ্চ সন্দেহের চক্ষেই 
দেখিয়া থাকে, এবং গম্ভীর ভাবে সাবধান করিয়। দেয় 
“অবিবেকঃ পরমাপদাং পদম্‌।” 


২৬৭ 


বিবেকের এই যে ব্যাখ্যা, জীববিদ্কার তরফ হইতে দেখিলে, 
সামাজিক ইতিহাসের দিক্‌ দিয়৷.দেখিলে, ইহাই মনে হয় সঙ্গত 
বাখাা। এই ব্যাখ্যাই বিবেকের বিচাক্ধ-বিভ্রাটের সমাধান করে, 
ইহাই বিবেককে তাহার কাল্পনিক উচ্চ সিংহাসন হইতে নামাইয়। 
আনিয়া তাহার প্রকৃত পদবীতে অর্বিঠিত করে। ইহাতে 
আমাদের আত্মভিমানের কিঞ্চিৎ হানি হইলেও, বিবেকের 
প্রকৃত মর্যাদার যে বিশেষ কোন হানি হয়, তাহ। ভ মনে 
হয় না । বিবেক সংস্কার মাত্র হইলেই যে তাহ! ভূচ্ছ করিবার 
জিনযু তাহ।ত নহে: সে সস্কাবের পশ্চাতে একজন ক্ষুদ্র 
, বাক্তিমানবের ভ্রান্তি-সঙ্কুল যুক্তিতর্ক এবং মতিভ্রমকারী রাগঘ্ধেষ 
অতপক্ষা বহুগুণে স্থিরনিশ্চিত বিরাট মানব-সমাজের বিপুল 
অভিজ্ঞতা বন্মান। সেই অভিজ্ঞতাই পিতৃপুরুষক্রমে 
সমাজে স্ক্রামিত হইয়া মানব-সমাজকে বিধুত রাখিয়াছে। 
ধন্মে কম্মে, আচারে অনুষ্ঠানে, সেই অভিজ্ঞত। অন্ধুস্থ্ুত হইয়াই 
সমাজের প্রাণধার। অক্ষপ্র এবং অব্যাহত রাখিয়াছে । সুতরাং 
ব্যক্তিব পক্ষে বিবেককে দৈববামী বলিলে বিশেষ কিছু অসঙ্গত 
হয় না। কারণ, সাক্ষাৎ দেবলোক হইতে আহত না হইলেও, ইহা 
পিড়লোক হইতে প্রান্ত মানুষের উত্তরাধিকার ₹ এবং এই উত্তরা" 
ধিকারকে অবিকৃত অপরিষ্নান রাখিয়। মানুষ যদি এই রিকৃথকে 
আরও নিশ্মল, আরঙ উজ্জ্বল, 'আারও শ্ুন্দর করিয়া ভুলিতে 
পাবে, তবেই তাহার সন্তান-ধন্ম সফল হয়। 
আবা6, ১৩৩৪ ।